সেনা অভ্যুত্থান ও সু চি-র মুক্তির দাবিতে মিয়ানমারে লাখো মানুষের বিক্ষোভ। ২০০৭-এর পর এতবড় বিক্ষোভ আর হয়নি।
বিজ্ঞাপন
মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থান ও সু চি সহ বিভিন্ন নেতাকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে রাস্তায় নামল সাধারণ মানুষ। তাও কয়েকশ বা কয়েক হাজার নয়, লাখ লাখ মানুষ প্রতিবাদ করলেন সেনা শাসনের বিরুদ্ধে। দেশের প্রধান শহর ইয়াঙ্গন সহ অন্তত ১২টি ছোট-বড় শহরে বিক্ষোভ হয়েছে। বিক্ষোভকারীরা গর্জন করেছেন, 'আমরা সেনার শাসন চাই না, আমরা গণতন্ত্র চাই।'
সেনা অবশ্য এই বিক্ষোভ নিয়ে মুখ খোলেনি। তবে দিনভর ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ ছিল। রাতের দিকে তা আবার চালু হয়।
সেনার দাবি ছিল, নভেম্বরের নির্বাচনে জালিয়াতি করে জিতেছে সু চি-র দল। তারা অবশ্য এই অভিযোগের সমর্থনে কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি। কিন্তু সু চি, প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট ও তাঁর দলের প্রধান নেতাদের বন্দি করে রাখা হয়েছে। দেশে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও এই বিশাল প্রতিবাদ হলো।
মিয়ানমারে অভ্যুত্থানের দিনটি যেমন গেল
সোমবার সকালে মিয়ানমারে অভ্যুত্থান ঘটিয়ে একবছর মেয়াদি জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে৷ অং সান সু চি-সহ অনেক নেতাকে আটক করা হয়েছে৷ তারপর থেকে সে দেশে কী পরিস্থিতি দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: AFP via Getty Images
জরুরি অবস্থা ঘোষণা
‘মিয়ানমার রেডিও অ্যান্ড টেলিভিশন’ এমআরটিভিতে একবছর মেয়াদি জরুরি অবস্থার ঘোষণা দেয়া হয়৷ ছবিটি টিভি থেকে নেয়া৷
ছবি: AFP
ক্ষোভ প্রকাশ
৩২ বছর বয়সি জিজাওয়া বলেন, ‘‘আমার রাগ হচ্ছে৷ আমি আর সামরিক শাসন চাই না৷ তারা যেভাবে কাজ করে তা স্বৈরতন্ত্রের মতো৷ আমরা জানি, আমরা কাকে ভোট দিয়েছি৷’’ প্রতিশোধের আশঙ্কায় তিনি তার পুরো নাম প্রকাশ করতে চাননি৷ অভ্যুত্থানের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর মিয়ানমারের সাবেক রাজধানী ইয়াঙ্গনের বেশিরভাগ এলাকায় ভয়, রাগ আর হতাশার পরিবেশ দেখা গেছে৷ ছবিতে ইয়াঙ্গনের প্রখ্যাত শোয়েডেগোন প্যাগোডা দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: AFP
অভ্যুত্থানের সমর্থক
অভ্যুত্থানের সমর্থনে ইয়াঙ্গনে জাতীয় পতাকা উড়িয়ে সমাবেশ করেছেন সেনাপ্রধান মিন অং লায়িংয়ের সমর্থকরা৷ সমাবেশে এক বৌদ্ধ ভিক্ষু বলেন, ‘‘আজকে এমন একটা দিন যেদিন মানুষ খুশি৷’’
ছবি: AFP/Getty Images
অভ্যুত্থানের দুদিন আগের চিত্র
শনিবারের এই ছবিতে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সমর্থক বৌদ্ধ ভিক্ষুদের দেখা যাচ্ছে৷ সেদিন তারা দেশটির নির্বাচন কমিশন, নির্বাচিত সরকার ও ইয়াঙ্গনের বিভিন্ন বিদেশি দূতাবাসের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছিলেন৷
ছবি: Shwe Paw Mya Tin/REUTERS
ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট
ছবিতে যিনি বিবৃতি পড়ছেন তার নাম মিয়েন সোয়ে৷ পাশে বসে আছেন সেনাপ্রধান মিন অং লায়িং৷ মিয়েন সোয়ে একজন সাবেক জেনারেল৷ এতদিন তিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন৷ অভ্যুত্থানের পর তাকে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট করা হয়েছে৷ ২০০৭ সালে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের বিরুদ্ধে নৃশংস অভিযান চালিয়ে পরিচিতি পেয়েছিলেন মিয়েন সোয়ে৷ মিয়ানমারের সরকারি টেলিভিশন থেকে স্ক্রিনশটটি নেয়া হয়েছে৷
ছবি: MRTV/Handout/REUTERS
ব্যাংকের সামনে লাইন
অভ্যুত্থানের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর এটিএম থেকে টাকা তুলতে দীর্ঘ লাইন পড়ে গিয়েছিল৷ কিন্তু ইন্টারনেট সংযোগ বাধাগ্রস্ত হওয়ার কারণে এটিএম মেশিন কাজ করছিল না৷ এছাড়া ব্যাংকগুলো জানিয়েছে, তাদের কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে বাধ্য করা হয়েছে৷ অনেকে বাজারেও ভিড় জমিয়েছিলেন৷
ছবি: REUTERS
সংসদের রাস্তায় সেনা
মিয়ানমার সংসদে যাওয়ার পথে অবরোধ গড়ে তুলেছেন সেনারা৷
ছবি: AFP via Getty Images
সরকারি ভবনে সামরিক গাড়ি
ইয়াঙ্গন শহর কর্তৃপক্ষের কার্যালয়ের সীমানায় একটি সামরিক গাড়ি দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: REUTERS
ইয়াঙ্গনের রাস্তায় পুলিশ
শহরের উপকণ্ঠের এক রাস্তায় পুলিশের কয়েকটি গাড়ি দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Thein Zaw/AP Photo/picture alliance
9 ছবি1 | 9
ইয়াঙ্গনে মানুষ লাল শার্ট পরেছিলেন। হাতে লাল বেলুন নিয়েছিলেন। লাল হলো সু চি-র দলের রঙ। বাস ও গাড়ি থেকে সমানে হর্ন বাজানো হয়। মানুষ তিন আঙুলের স্যালুট করেন। এই অঞ্চলে স্বৈরাচারী শাসকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে এই স্যালুট করা হয়।
ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রেখেও প্রতিবাদ থামানো যায়নি। প্রতিবাদে অংশ নেয়া মানুষের সংখ্যা সমানে বাড়তে থাকে। অনেকের হাতে ধরা ছিল পোস্টার, তাতে লেখা, 'আমাদের ভোটের দাম আছে'।
ইয়াঙ্গনে ২০০৭ সালের পর এত বড় বিক্ষোভ আর হয়নি। তখন বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা সেনা শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে রাস্তায় নেমেছিলেন। তাই তার নাম হলো গেরুয়া বিপ্লব। বিক্ষোভকারীরা সুলে প্যাগোডা পর্যন্ত মিছিল করে যান। তবে সব চেয়ে বেসি পুলিশ মোতায়েন ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে। তবে ইয়াঙ্গন থেকে সংঘর্ষ বা সহিংসতার খবর এখনো আসেনি। তবে কিছু ছোট শহরে পুলিশ রবার বুলেট ছুড়েছে।
বিক্ষোভকারীরা জানিয়েছেন, তাঁরা সেনাশাসনে থাকতে চান না। তাঁরা ভয়ের পরিবেশ চান না। তাঁরা মাদার সু-র মুক্তি চান।