মিয়ানমারে সামরিক শাসন ও দমননীতির বিরোধিতা করল জি৭। সেখানে এখন রোজ বিক্ষোভ চলছে। বিক্ষোভ থামাতে গুলিও চালানো হচ্ছে।
বিজ্ঞাপন
মিয়ানমারে সেনাশাসনের প্রবল নিন্দা করল গ্রুপ অফ সেভেন বা জি৭। এই গ্রুপে আছে অ্যামেরিকা, যুক্তরাজ্য, ক্যানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইটালি ও জাপান। জি৭-এর পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা একটি বিবৃতিতে জানিয়েছেন, নিরস্ত্র বিক্ষোভকারীদের উপর গুলি চালানোর সিদ্ধান্ত কোনোভাবে মানা যায় না। তাঁদের আবেদন, সেনা যেন খুবই সংযত থাকে এবং মানবাধিকার ও আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলে।
সেনাবাহিনী দেশের শাসনভার নিয়ে নেয়ার পর থেকে মিয়ানমারের শহরগুলিতে লাগাতার বিক্ষোভ চলছে। গণতন্ত্রের দাবিতে এবং তাঁদের নেত্রী সু চি সহ অন্যদের মুক্তির দাবিতে বিক্ষোভ দেখানো হচ্ছে। সেনা শাসকরা জরুরি অবস্থা জারি করেছেন এবং এক বছরের মধ্যে নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। সেই সঙ্গে তারা জোর করে বিক্ষোভ থামাবার চেষ্টা করছেন। সোমবার গোটা দেশ জুড়ে বিশাল বিক্ষোভ হয়েছিল। মঙ্গলবারও বিক্ষোভ হয়েছে, তবে তা আগের দিনের তুলনায় ছোট ছিল।
এদিকে মালয়েশিয়া জানিয়েছে, তারা এক হাজার ৮৬ জন মিয়ানমারের নাগরিককে সেদেশে ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছে। কুয়ালালামপুরের হাইকোর্ট এই ফেরত পাঠানোর উপর স্থগিতাদেশ জারি করেছিল। হাইকোর্টে মামলা করেছিলেন অভিবাসন প্রত্যাশীরা এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। কিন্তু আদালতের নির্দেশও সরকার মানেনি।
মিয়ানমারের শান রাজ্যের ইন্থা জাতিগত গোষ্ঠী সম্প্রতি দেশটির সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে ব্যতিক্রমী এক প্রতিবাদ কর্মসূচির আয়োজন করে৷ সেখানকার ইনলে লেকে নৌকায় চড়ে প্রতিবাদ জানিয়েছেন তারা৷
ছবি: Robert Bociaga
বিস্তৃত প্রতিবাদ
মিয়ানমারে ০১ ফেব্রুয়ারি সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে দেশজুড়ে প্রতিবাদ কর্মসূচি চলছে৷ গত ১৮ ফেব্রুয়ারি দেশটির জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র ইনলে লেকের কাছের বাসিন্দারা সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের দাবিতে এক অভিনব প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নেন৷
ছবি: Robert Bociaga
নৌকায় করে প্রতিবাদ
সব শ্রেণির মানুষ নৌকায় করে প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন৷ তাদের হাতে ছিল মেগাফোন এবং প্ল্যাকার্ড৷ প্রতিবাদকারীরা সমস্বরে বিপ্লবী গানও গেয়েছেন৷
ছবি: Robert Bociaga/DW
সামরিক অভ্যুত্থান
মিয়ানমারের ঊধ্বর্তন সামরিক কর্মকর্তারা চলতি মাসের শুরুতে শাসন ক্ষমতা নিজেদের দখলে নিয়ে নেন৷ তাদের দাবি, দেশটিতে গত নভেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপি হয়েছিল৷ সেই নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করেছিল অং সান সু চি’র দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্র্যাসি৷
ছবি: AP Photo/picture alliance
আইন অমান্য
সামরিক অভ্যুত্থানের পর থেকে হাজার হাজার মানুষ মিয়ানমারে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার দাবিতে আন্দোলনে অংশ নিচ্ছেন৷ সামরিক জান্তার জারি করা বিভিন্ন আইন দল বেঁধে অমান্য করছেন তারা৷ তবে, আন্দোলনকারীদের দমনে সামরিক জান্তাও কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে, যার মধ্যে প্রতিবাদকারীদের গ্রেপ্তার, দমনপীড়নের ঘটনাও ঘটেছে৷ ইতোমধ্যে কয়েকজন প্রতিবাদকারী নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে প্রাণও হারিয়েছেন৷
ছবি: REUTERS
নিষেধাজ্ঞাকে স্বাগত জানিয়েছে লেকের প্রতিবাদকারীরা
পশ্চিমা দেশগুলো অভ্যুত্থানকারী নেতাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে এবং সু চিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি দাবি করেছে৷ ইনলা লেকের প্রতিবাদকারীরা এই নিষেধাজ্ঞাকে স্বাগত জানিয়ে বলেছে সেনাবাহিনীর ক্ষমতা খর্ব করতে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে, যা একটি ভালো ব্যাপার৷ তবে তারা আবারও ঊধ্বর্তন সামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমঝোতায় যেতে রাজি নন, যা সু চির নীতি ছিল৷
ছবি: Robert Bociaga
গণতন্ত্রই সমাধান
ইন্থা জনগোষ্ঠী মনে করে দেশটির সংখ্যালঘুদের ঐতিহ্য রক্ষার একমাত্র উপায় হচ্ছে গণতান্ত্রিক এবং বিকেন্দ্রীভূত ব্যবস্থা৷ এ কারণে মিয়ানমারে কেন্দ্রীয় গণতন্ত্র প্রয়োজন বলে মনে করেন এক প্রতিবাদকারী৷
ছবি: Robert Bociaga
গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার
যদিও সু চি’র এনএলডি পার্টি গণতান্ত্রিক যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, সেসব পূরণ করেনি, তারপরও ইনলে লেকের বাসিন্দারা দলটির প্রতি অনুগত থাকতে আগ্রহী৷ তবে বৃহস্পতিবারের প্রতিবাদকারীরা তাদের কর্মসূচিকে এনএলডি’র পক্ষের কোনো সমাবেশ নয়, বরং গণতন্ত্র পুনরাদ্ধের জন্য প্রতিবাদ হিসেবে বিবেচনা করছেন৷
ছবি: Robert Bociaga
সেনানিয়ন্ত্রিত পর্যটন
ইনলে লেক পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণের জায়গা হলেও স্থানীয় ইন্থা সম্প্রদায় তা থেকে খুব একটা লাভবান হতে পারছেন না বলে জানিয়েছেন৷ সেখানকার অধিকাংশ হোটেল এবং অন্যান্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিকানায় রয়েছেন সেনাবাহিনীর সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা৷ সামরিক অভ্যুত্থানের আগে স্থানীয়রা পর্যটন খাত থেকে যতটুকু লাভবান হতে পারতেন, এখন তা-ও পারছেন না৷
ছবি: Robert Bociaga
8 ছবি1 | 8
মামলাকারীদের যুক্তি ছিল, এই অভিবাসন প্রত্যাশীদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠালেই সেখানে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তাদের ফেরত পাঠানো হলে মালয়েশিয়া আন্তর্জাতিক চুক্তি ভাঙবে।
মালয়েশিয়ার অভিবাসনের দায়িত্বে থাকা এক কর্মকর্তার দাবি, অভিবাসন-প্রত্যাশীরা স্বেচ্ছায় চলে গিয়েছেন। তাঁরা রোহিঙ্গা না কি অন্য কেউ তা তিনি জানাননি। তাঁর দাবি, কাউকে জোর করা হয়নি, সকলে নিজের ইচ্ছায় ফিরে গেছেন। কর্মকর্তাদের দাবি, এক হাজার ২০০ জনকে তাঁরা ফেরত পাঠিয়েছেন।
মিয়ানমারে সেনা শাসন শুরু হওয়ার পর মালয়েশিয়া সেদেশের সামরিক শাসকদের সঙ্গে সমঝোতা করে। জাহাজ ভর্তি করে অভিবাসন প্রত্যাশীদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো নিয়ে সমঝোতা হয়।