মিয়ানমারের একাধিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করল অ্যামেরিকা, যুক্তরাজ্য এবং ক্যানাডা। সুচির বিরুদ্ধে নতুন অভিযোগ।
বিজ্ঞাপন
ঠিক এক বছর আগে সেনা বিদ্রোহে ক্ষমতা হারিয়েছিল মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক সরকার। ক্ষমতা দখল করেছিল সেনা জুন্টা। এরপর বহু ঘটনা ঘটে গিয়েছে মিয়ানমারে। বহু মানুষের প্রাণ গেছে। মিয়ানমারের প্রধান নেতা অং সান সুচিকে কারাদণ্ড দিয়েছে দেশের প্রশাসন।
অভ্যুত্থানের পরেই মিয়ানমারের সেনাশাসকদের বিরুদ্ধে একাধিক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল অ্যামেরিকা, যুক্তরাজ্য-সহ একাধিক পশ্চিমা দেশ। এক বছর পর ফের নতুন নিষেধাজ্ঞা জারি হলো। মিয়ানমারের সেনা কর্তৃপক্ষের অ্যাটর্নি জেনারেল থিডা উ, সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি টুন টুন উ, অ্যান্টি কোরাপশন কমিশন চেয়ারম্যান টিন উ-সহ একাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। অ্যামেরিকা, যুক্তরাজ্য, ক্যানাডা যৌথভাবে এই নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে।
মিয়ানমারের জঙ্গলে সেনা শাসকদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র লড়াইয়ের প্রস্তুতি
অং সান সু চি-সহ সব রাজনীতিবিদদের মুক্তি এবং গণতান্ত্রিক সরকারকে ক্ষমতায় ফেরানোর দাবিতে মিয়ানমারে বিক্ষোভ চলছে গত ফেব্রুয়ারি থেকে৷ এর বাইরে জঙ্গলে চলছে সশস্ত্র সংগ্রামের প্রস্তুতি৷ বিস্তারিত ছবিঘরে...
ছবি: REUTERS
কেন সশস্ত্র সংগ্রাম?
গত ১ ফেব্রুয়ারি অং সান সু চি ও তার দলের নেতাদের গ্রেপ্তার করে ক্ষমতার দখল নেয় সেনাবাহিনী৷ তারপর থেকেই দেশ জুড়ে চলছে সেনাসরকার-বিরোধী বিক্ষোভ৷ স্থানীয় মানবাধিকার সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হামলায় এ পর্যন্ত অন্তত ১৩০০ বিক্ষোভকারী প্রাণ হারিয়েছেন৷ তাই বিক্ষোভকারীদের একটি অংশ মনে করছে, এখন সশস্ত্র সংগ্রামও দরকার৷ তাই কারেন প্রদেশের জঙ্গলে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন তারা৷
ছবি: REUTERS
সরকারি চাকরি ছেড়ে জঙ্গলে
মিয়ানমারের পূর্বাঞ্চলের কারেন প্রদেশের থাইল্যান্ড সীমান্ত সংলগ্ন জঙ্গলের প্রশিক্ষণ শিবিরে রয়েছেন শ’ খানেক বেসামরিক নাগরিক৷ ঘরে তৈরি বোমা ছুঁড়ে মারা এবং রাইফেলে গুলি ভরার প্রশিক্ষণ নিতে দেখা গেছে তাদের৷ প্রশিক্ষণরতদের মধ্যে এমন তরুণও আছেন যারা মিয়ানমারে ভালো বেতনের চাকরি করতেন৷ অনেক কষ্টার্জিত গণতান্ত্রিক শাসনের অবসান ঘটানো সেনা-সরকারের পতন ঘটাতে অস্ত্র হাতে তুলে নিচ্ছেন তারা৷
ছবি: REUTERS
গোপনে প্রশিক্ষণ
কারেন প্রদেশের জঙ্গলে সশস্ত্র প্রশিক্ষণের কিছু ছবি ও ভিডিও বার্তা সংস্থা রয়টার্সের হাতে আসে গত সেপ্টেম্বরে৷ এ বিষয়ে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বক্তব্য জানার চেষ্টা করেছে রয়টার্স৷ তবে সেনাবাহিনীর মুখপাত্র কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি৷
ছবি: REUTERS
সু চি-র নেতৃত্বের স্বাধীনতা হরণ
পাহাড়ের গহিন জঙ্গলে ছোট ছোট অস্থায়ী তাঁবুতে থেকে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন শ’ খানেকের মতো তরুণ৷ ৩৪ বছর বয়সি এক সাবেক ফিটনেস ট্রেনারও তাদের একজন৷ তার সারা শরীরে লেখা ‘ফ্রিডম টু লিড’, পিঠে রয়েছে অং সান সু চি-র অবয়বের বিশাল এক ট্যাটু৷
ছবি: REUTERS
গণ সুরক্ষা বাহিনী
মিয়ানমারের তিন লাখ সদস্যের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে সশস্ত্র সংগ্রামের জন্য প্রশিক্ষণ নিচ্ছে সমাজের বিভিন্ন অংশ থেকে আসা কিছু মানুষ৷ বিভিন্ন মতাদর্শের মানুষ রয়েছেন সেখানে৷ তাই তারা সম্মিলিতভাবে নিজেদের নাম দিয়েছেন পিপল ডিফেন্স ফোর্স (পিডিএফ)৷
ছবি: REUTERS
যে কারণে কারেন প্রদেশে
পিডিএফ-এর সশস্ত্র সংগ্রামের অঙ্গীকারের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছে মিয়ানমারের সবচেয়ে বড় সশস্ত্র জাতিগত সংগঠন কারেন ন্যাশনাল ইউনিয়ন (কেএনইউ)৷ কারেন প্রদেশে কয়েক হাজার বিক্ষোভকারীকে আশ্রয় দিয়েছে তারা৷ পিডিএফ সদস্যদের জঙ্গলে প্রশিক্ষণও দিচ্ছে কেএনইউ৷ তবে প্রশিক্ষণ শিবির সংক্রান্ত সব তথ্য যাচাই করে সেসবের সত্যতা নিশ্চিত করতে পারেনি রয়টার্স৷
ছবি: REUTERS
6 ছবি1 | 6
এদিকে এই নিষেধাজ্ঞা জারি হওয়ার পরে নতুন অভিযোগ আনা হয়েছে সুচির বিরুদ্ধে। বর্তমানে তিনি জেলের শাস্তি ভোগ করছেন। এবার তার বিরুদ্ধে নির্বাচনে কারচুপি, দেশের তথ্য বাইরে পাচার করার মতো অভিযোগ আনা হয়েছে। ফের তার বিচার শুরু হবে। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, ৭৫ বছরের সুচির বিরুদ্ধে এই অভিযোগগুলি প্রমাণিত হলে তার ১০০ বছরের কারাদণ্ড হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, বিচারের নামে প্রহসন চলছে মিয়ানমারে। ফলে কয়েকমাসের মধ্যেই মিয়ানমার প্রশাসন সুচির বিরুদ্ধে নতুন অভিযোগগুলি আদালতে প্রমাণ করে দেবে।
গত একবছরে প্রবল সংকটের মধ্যে কাটিয়েছেন মিয়ানমারের সাধারণ মানুষ। সেনা অভ্যুত্থানের পর থেকেই দেশের গণতন্ত্রপন্থিরা লাগাতার রাস্তায় নেমে আন্দোলন করেছেন। এখনো পর্যন্ত দেড় হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে পুলিশের অত্যাচারে। এখনো আন্দোলন চলছে। তারই মধ্যে সুচির বিরুদ্ধে শাস্তি ঘোষণা হয়েছে।