মিয়ানমারে সহিংসতা থেকে বাঁচতে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের সীমান্ত থেকে আবার সেদেশে ফেরত পাঠিয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশ৷ সোমবারও রোহিঙ্গাদের বহনকারী কয়েকটি নৌকাকে বাংলাদেশের সীমান্তে প্রবেশ করতে দেয়নি সীমান্তরক্ষীরা৷
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি'র চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া রোহিঙ্গাদের তাঁর দেশে আশ্রয় দিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন৷ তবে সেই আহ্বানে সাড়া দেয়নি সরকার, বরং রোহিঙ্গাদের বহনকারী নৌকাগুলোকে নাফ নদী থেকেই ফেরত পাঠিয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী৷ সোমবারও রোহিঙ্গাদের বহনকারী অন্তত আটটি নৌকা ফেরত পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে গণমাধ্যম৷
রোহিঙ্গাদের অভিযোগ, রাখাইন প্রদেশে তাদের উপর ধর্ষণ, নির্যাতন এবং হত্যা করছে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী৷ তাই জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে প্রবেশের চেষ্টা করছে তারা৷ তাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ও অনুরোধ করেছে৷ তবে বাংলাদেশ সরকার মনে করে, রোহিঙ্গাদের বিষয়টি মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সমস্যা এবং তাদের রক্ষায় মিয়ানমার সরকারকে আরো উদ্যোগ নিতে হবে৷
বাংলাদেশে শরণার্থী, বাংলাদেশের শরণার্থী
জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা, ইউএনএইচসিআর-এর এক প্রতিবেদন বলছে, বিশ্বের শরণার্থী আশ্রয়দাতা দেশের তালিকায় নবম স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ৷ তেমনি বাংলাদেশ থেকেও অনেকে বিশ্বের অন্যান্য দেশে শরণার্থী হয়ে যাচ্ছেন৷
ছবি: Reuters
বাংলাদেশ নবম
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর-এর ‘গ্লোবাল ট্রেন্ডস-২০১৩’ শীর্ষক বার্ষিক প্রতিবেদনে বলছে, বিশ্বের শরণার্থী আশ্রয়দাতা দেশের তালিকায় বাংলাদেশের স্থান নবম৷ প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের অর্থনীতির তুলনায় ধারণক্ষমতার দিকে থেকে বাংলাদেশ পৃথিবীর নবম শরণার্থী আশ্রয়দাতা দেশ৷
ছবি: Shaikh Azizur Rahman
কতজন শরণার্থী?
দক্ষিণ-পূর্ব বাংলাদেশে দুটি সরকারি শরণার্থী শিবিরে ৩০ হাজারের মতো মিয়ানমারের (রোহিঙ্গা) শরণার্থী বসবাস করছে বলে জানিয়েছে ইউএনএইচসিআর-এর প্রতিবেদন৷ শিবিরের বাইরে আছে আরও দুই থেকে পাঁচ লাখ অনিবন্ধিত ব্যক্তি৷
ছবি: AP
আশ্রয়প্রার্থী
হ্যাঁ৷ বাংলাদেশেও কেউ কেউ আশ্রয় প্রার্থনা করেছেন৷ ইউএনএইচসিআর ওয়েবসাইটের বাংলাদেশ পাতায় এমন আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা নয়জন বলে জানানো হয়েছে৷ ২০১৪ সালের ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত সংখ্যাটা এমন ছিল বলে উল্লেখ করা হয়৷
ছবি: DW/Shaikh Azizur Rahman
বাংলাদেশের শরণার্থী
উন্নত জীবনের আশায় বাংলাদেশ থেকে অনেকেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমাচ্ছেন৷ অনেকক্ষেত্রে তাঁরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাগর পথে রওনা দেন৷ কেউ গন্তব্যে পৌঁছে গ্রেপ্তার হয়ে ফিরে আসেন৷ কেউ বা শরণার্থী পরিচয় পান৷ বাংলাদেশের এমন শরণার্থীর সংখ্যা ৯,৮৩৯ জন৷
ছবি: Reuters
বাংলাদেশের আশ্রয়প্রার্থী
উন্নত বিশ্বে কোনোভাবে ঢুকে গিয়ে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনার চল অনেকদিন ধরেই চলছে৷ জাতিসংঘের হিসেবে বাংলাদেশের এমন আশ্রয়প্রার্থীর সংখ্যা ২২,১২৮ জন৷ সংখ্যাটা ২০১৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত প্রযোজ্য৷
ছবি: Reuters
স্বপ্নের শুরু টেকনাফে
বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়ার মতো দেশে যাওয়ার চেষ্টা করেন অনেক বাংলাদেশি৷ এ জন্য তাঁরা দালালদের অনেক অর্থও দিয়ে থাকেন৷ তাঁদের এই যাত্রা শুরু হয় টেকনাফ থেকে৷
ছবি: DW/Shaikh Azizur Rahman
ছোট নৌকা থেকে বড় নৌকায়
টেকনাফ থেকে প্রথমে ছোট নৌকায় যাত্রা শুরু হয়৷ তারপর একসময় মাছ ধরার বড় নৌকা বা কার্গোতে যাত্রীদের তুলে দেয়া হয়৷ সাধারণত অক্টোবর থেকে পরবর্তী পাঁচ মাসকে সমুদ্র যাত্রার জন্য সঠিক সময় বলে বিবেচনা করা হয়৷
ছবি: Asiapics
খাবার, পানির অভাব
ইউএনএইচসিআর-এর একটি প্রতিবেদন বলছে, যাঁরা সাগর পথে বঙ্গোপসাগর পাড়ি দেয়ার চেষ্টা করেন তাঁদের অনেকে খাবার ও পানির অভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন৷ এছাড়া দালালরা অনেক সময় তাঁদের সঙ্গে খারাপ আচরণও করে৷
ছবি: Reuters
8 ছবি1 | 8
মিয়ামনার সরকার অবশ্য দাবি করেছে, রোহিঙ্গাদের নয়, গতমাসে পুলিশ চেকপোস্টে হামলাকারী ‘সন্ত্রাসীদের' ধরতে অভিযান চালাচ্ছে সেনাবাহিনী৷ তবে জাতিসংঘ মনে করে, মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে যা হচ্ছে তা একটি জাতিকে নির্মূল করার প্রয়াসের সঙ্গে তুলনীয়৷
এদিকে, রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতনের বিভিন্ন স্যাটেলাইট ছবিও প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম৷ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশ্ন উঠেছে, রোহিঙ্গাদের রক্ষায় সেদেশের শান্তিতে নোবেল জয়ী জননেত্রী অং সান সূচি কী করছেন? নিজের দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সরব সূচি অবশ্য রোহিঙ্গা ইস্যুতে বেশ নীরব৷ তাঁর তরফ থেকে সর্বশেষ খবর হচ্ছে, আগামী মাসে পূর্বপরিকল্পিত ইন্দোনেশিয়া সফর পিছিয়ে দিয়েছেন তিনি৷ রোহিঙ্গাদের রক্ষার দাবিতে সেদেশে বিক্ষোভ চলায় এবং জাকার্তায় মিয়ানমারের দূতাবাসে বোমা হামলার পরিকল্পনার কথা জানাজানি হওয়ার পর এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সূচি৷
উল্লেখ্য, এ পর্যন্ত ত্রিশ হাজারের মতো রোহিঙ্গা মিয়ানমার ত্যাগ করে অন্যত্র চলে গেছেন৷ তাদের একটি বড় অংশই অবস্থান করছে পাশের দেশ বাংলাদেশে৷ মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেয়া হয় না৷ ফলে স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষাসহ সাধারণ নাগরিক সুযোগ-সুবিধাও পান না তারা৷ শুধু তাই নয়, স্বাভাবিক সময়েও মিয়ানমারে তাদের চলাফেরা বেশ সীমিত৷