মিয়ানমার নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদ ঐক্যমত্যে পৌঁছতে পারেনি। চীন সময় চেয়েছে। অন্য দিকে পুলিশ সু চির বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেছে।
বিজ্ঞাপন
মিয়ানমার নিয়ে সরব হয়েছে জাতিসংঘ। সোমবারই জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল আন্তনিও গুতেরেস টুইট করে বিশ্বের সমস্ত শুভবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষকে মিয়ানমারের সেনা অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে সরব হওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। যদিও বুধবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে মিয়ানমারের ঘটনা নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়নি। চীন আরো সময় চেয়েছে। এ দিকে মিয়ানমার পুলিশ জানিয়েছে, অং সান সু চির বিরুদ্ধে আমদানি-রপ্তানি আইনে মামলা করা হয়েছে।
মিয়ানমারে অভ্যুত্থানের দিনটি যেমন গেল
সোমবার সকালে মিয়ানমারে অভ্যুত্থান ঘটিয়ে একবছর মেয়াদি জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে৷ অং সান সু চি-সহ অনেক নেতাকে আটক করা হয়েছে৷ তারপর থেকে সে দেশে কী পরিস্থিতি দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: AFP via Getty Images
জরুরি অবস্থা ঘোষণা
‘মিয়ানমার রেডিও অ্যান্ড টেলিভিশন’ এমআরটিভিতে একবছর মেয়াদি জরুরি অবস্থার ঘোষণা দেয়া হয়৷ ছবিটি টিভি থেকে নেয়া৷
ছবি: AFP
ক্ষোভ প্রকাশ
৩২ বছর বয়সি জিজাওয়া বলেন, ‘‘আমার রাগ হচ্ছে৷ আমি আর সামরিক শাসন চাই না৷ তারা যেভাবে কাজ করে তা স্বৈরতন্ত্রের মতো৷ আমরা জানি, আমরা কাকে ভোট দিয়েছি৷’’ প্রতিশোধের আশঙ্কায় তিনি তার পুরো নাম প্রকাশ করতে চাননি৷ অভ্যুত্থানের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর মিয়ানমারের সাবেক রাজধানী ইয়াঙ্গনের বেশিরভাগ এলাকায় ভয়, রাগ আর হতাশার পরিবেশ দেখা গেছে৷ ছবিতে ইয়াঙ্গনের প্রখ্যাত শোয়েডেগোন প্যাগোডা দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: AFP
অভ্যুত্থানের সমর্থক
অভ্যুত্থানের সমর্থনে ইয়াঙ্গনে জাতীয় পতাকা উড়িয়ে সমাবেশ করেছেন সেনাপ্রধান মিন অং লায়িংয়ের সমর্থকরা৷ সমাবেশে এক বৌদ্ধ ভিক্ষু বলেন, ‘‘আজকে এমন একটা দিন যেদিন মানুষ খুশি৷’’
ছবি: AFP/Getty Images
অভ্যুত্থানের দুদিন আগের চিত্র
শনিবারের এই ছবিতে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর সমর্থক বৌদ্ধ ভিক্ষুদের দেখা যাচ্ছে৷ সেদিন তারা দেশটির নির্বাচন কমিশন, নির্বাচিত সরকার ও ইয়াঙ্গনের বিভিন্ন বিদেশি দূতাবাসের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছিলেন৷
ছবি: Shwe Paw Mya Tin/REUTERS
ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট
ছবিতে যিনি বিবৃতি পড়ছেন তার নাম মিয়েন সোয়ে৷ পাশে বসে আছেন সেনাপ্রধান মিন অং লায়িং৷ মিয়েন সোয়ে একজন সাবেক জেনারেল৷ এতদিন তিনি ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন৷ অভ্যুত্থানের পর তাকে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট করা হয়েছে৷ ২০০৭ সালে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের বিরুদ্ধে নৃশংস অভিযান চালিয়ে পরিচিতি পেয়েছিলেন মিয়েন সোয়ে৷ মিয়ানমারের সরকারি টেলিভিশন থেকে স্ক্রিনশটটি নেয়া হয়েছে৷
ছবি: MRTV/Handout/REUTERS
ব্যাংকের সামনে লাইন
অভ্যুত্থানের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর এটিএম থেকে টাকা তুলতে দীর্ঘ লাইন পড়ে গিয়েছিল৷ কিন্তু ইন্টারনেট সংযোগ বাধাগ্রস্ত হওয়ার কারণে এটিএম মেশিন কাজ করছিল না৷ এছাড়া ব্যাংকগুলো জানিয়েছে, তাদের কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে বাধ্য করা হয়েছে৷ অনেকে বাজারেও ভিড় জমিয়েছিলেন৷
ছবি: REUTERS
সংসদের রাস্তায় সেনা
মিয়ানমার সংসদে যাওয়ার পথে অবরোধ গড়ে তুলেছেন সেনারা৷
ছবি: AFP via Getty Images
সরকারি ভবনে সামরিক গাড়ি
ইয়াঙ্গন শহর কর্তৃপক্ষের কার্যালয়ের সীমানায় একটি সামরিক গাড়ি দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: REUTERS
ইয়াঙ্গনের রাস্তায় পুলিশ
শহরের উপকণ্ঠের এক রাস্তায় পুলিশের কয়েকটি গাড়ি দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: Thein Zaw/AP Photo/picture alliance
9 ছবি1 | 9
গত সোমবার মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থান হয়। অং সান সুচির নেতৃত্বে দেশে যে গণতান্ত্রিক সরকার গঠিত হয়েছিল, তা উৎখাত করে সেনাশাসন ঘোষণা করা হয়। আগামী অন্তত এক বছর এই ব্যবস্থাই চলবে বলে তারা জানিয়ে দেয়। সু চি সহ দেশের একাধিক নেতা-মন্ত্রীকে গ্রেফতার করা হয়। সু চির বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, শেষ নির্বাচনে তিনি ব্যাপক কারচুপি করেছেন। তবে বাস্তবে তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশ ভোটে কারচুপির মামলা করেনি। পুলিশ জানিয়েছে, তাঁর বাড়ি থেকে ১০টি রেডিও পাওয়া গিয়েছে। বেআইনি ভাবে তা বিদেশ থেকে আনা হয়েছিল। সে কারণেই তাঁর বিরুদ্ধে আমদানি-রপ্তানি আইনে মামলা হয়েছে। অপরাধ প্রমাণিত হলে সুচির সর্বোচ্চ তিন বছরের জেল হতে পারে।
মিয়ানমারের ঘটনা নিয়ে প্রথম থেকেই সরব জাতিসংঘ। বুধবার এ বিষয়ে জাতিসংঘে বিশেষ বৈঠক বসে। জাতিসংঘের সেক্রেটারি জেনারেল আন্তনিও গুতেরেস টুইটে লিখেছেন, সকলের এই ঘটনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা উচিত।
এদিনই জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে মিয়ানমার নিয়ে বৈঠক হয়। কিন্তু সেখানে ঐক্যমত্য ভাবে মিয়ানমারে সেনা অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাব নেওয়া যায়নি। কারণ, চীন সময় চেয়েছে। চীন সম্মতি না দিলে নিরাপত্তা পরিষদে নিন্দা প্রস্তাব নেওয়া সম্ভব নয়। এর আগে রোহিঙ্গা নিধনের সময়েও মিয়ানমারের পাশে দাঁড়িয়েছিল চীন এবং রাশিয়া। প্রকাশ্যে তারা মিয়ানমারের কাজকে সমর্থন করেছিল। এবার সেনা অভ্যুত্থানকেও তারা মান্যতা দেবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে।
বিশ্ব জুড়ে সমালোচনা হলেও, মিয়ানমারের সেনা প্রধানরা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, নিজেদের অবস্থান থেকে সরে আসার আপাতত কোনো প্রশ্নই নেই। আগামী অন্তত এক বছর দেশ সেনার অধীনে থাকবে।