কাথেরিন দেন্যোভ ও আরো ১০০ জন ফরাসি মহিলা শিল্পী ল্য মঁদ দৈনিকে প্রকাশিত একটি খোলাচিঠিতে #মিটু আন্দোলনে পুরুষদের বিরুদ্ধে অভিযোগের স্রোতের নিন্দা জানিয়েছেন৷
বিজ্ঞাপন
প্রখ্যাত অভিনেত্রী দেন্যোভ ও তাঁর সতীর্থদের মতে পুরুষদের বিরুদ্ধে নির্বিচারে যৌন হয়রানির অভিযোগ অতীতের ডাইনি খোঁজার সমতুল এবং এর ফলে নারী-পুরুষের যৌন স্বাধীনতা বিপন্ন হতে পারে৷
#মিটু নারীবাদী সোশ্যাল মিডিয়া আন্দোলনের ফরাসি সংস্করণ হলো #বালঁস-তোঁ-পর (‘তোমার শূকরটিকে বের করে আনো')৷ মঙ্গলবার ল্য মঁদ পত্রিকায় প্রকাশিত খোলাচিঠিতে এ ধরণের প্রচার অভিযানের বিরুদ্ধে ‘‘পবিত্রকরণের নীতিবাগীশ'' জোয়ার আনার অভিযোগ করা হয়েছে৷
খোলাচিঠির প্রায় শ'খানেক স্বাক্ষরকারীর মধ্যে রয়েছেন অভিনেত্রী কাথেরিন দেন্যোভ, লেখিকা কাথেরিন মিলে, প্রকাশক জোয়েল লোসফেল্ড এবং জার্মান অভিনেত্রী ও গায়িকা ইনগ্রিড কেইভান৷
‘‘ধর্ষণ একটি অপরাধ, কিন্তু নাছোড়বান্দা হয়ে বা পরোক্ষভাবে কাউকে প্রলুব্ধ করার চেষ্টা অপরাধ নয় – যেমন কোনো পুরুষ ভদ্র ব্যবহার করলে তাঁকে পৌরুষ প্রদর্শন মনে করার কোনো কারণ নেই,'' চিঠিতে বলা হয়েছে৷ ‘‘শুধুমাত্র কোনো মহিলার হাঁটু স্পর্শ করার জন্য বা একটি চুম্বনের প্রচেষ্টার জন্য অনেক পুরুষকে গুরুতর দণ্ড দেওয়া হয়েছে কিংবা তাদের চাকুরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে৷''
ধর্ষণ আর অপহরণের শিকার রোহিঙ্গা এতিম শিশুরা
মিয়ানমার সেনাদের সীমাহীন নির্যাতনের কারণে গত আড়াই মাসে ছয় লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা মুসলমান বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছে৷ সবচেয়ে দুর্বিষহ পরিস্থিতির মুখে পড়েছে শিশুরা৷ জন ওয়েনস এর ছবিতে উঠে এসেছে সেইসব দুর্দশার কিছু কথা৷
ছবি: DW/J. Owens
গুলি আর ছুরিকাঘাত
গত আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত ছয় লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে পালিয়েছে৷ তাদেরই একজন মোহাম্মদ বেলাল৷ দৌড়ে পালাতে পেরেছিল ১০ বছর বয়সি এই কিশোর৷ সে জানায়, ‘‘সেদিন সেনাবাহিনী এসে পুরো গ্রাম পুড়িয়ে দেয়৷ আমার মা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল, সেসময় তাঁকে গুলি করা হয়৷ আমার বাবা হাঁটতে পারছিলেন না, তারা তাঁকে ছুরি দিয়ে আঘাত করে৷ আমি নিজ চোখে এসব দেখেছি৷’’
ছবি: DW/J. Owens
আতঙ্কগ্রস্ত
মোহাম্মদ বেলালের বোন নূরও হত্যাযজ্ঞ দেখেছে৷ নিঃসঙ্গ হয়ে সে আর তার ভাই এখন বাংলাদেশে শিশুদের একটি আশ্রয়কেন্দ্রে আছে৷ এখানে সে নিয়মিত খাবার পাচ্ছে এবং খেলতে পারছে৷এ এক অদ্ভুত বৈপরীত্য৷ মিয়ানমারে থাকার সময় তাদের দুই ভাই-বোনকে বেশিরভাগ সময়ই না খেয়ে থাকতে হতো৷ তারপরও সাম্প্রতিক এই ট্রমা থেকে কিছুতেই বের হতে পারছে না সে৷ ‘‘আমি আমার বাবা-মা, বাড়ি আর দেশ, সবকিছুই ভীষণ মিস করছি,’’ জানায় নূর৷
ছবি: DW/J. Owens
গভীর সঙ্কট
৭০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মিয়ানমারে চলছে এই সঙ্কট৷ সংঘাতে ২০১৬ সাল থেকে এ পর্যন্ত দু’ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা গেছে৷ সাম্প্রতিক সেনা নিপীড়নের অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে ১২ বছর বয়সি রহমান বলে, ‘‘তারা আমার বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়৷ অসুস্থ ছিল বলে আমার মা পালাতেও পারেনি৷’’
ছবি: DW/J. Owens
শিশুদের বাঁচাও
বাবা-মাকে হত্যার দৃশ্য নিজ চোখে দেখার পর দিলু আরা তার বোন রোজিনার সাথে পালায়৷ এখন ক্যাম্পে আছে ৫ বছর বয়সি এই শিশু৷ ‘‘আমি খুব কাঁদছিলাম আর পুরোটা সময়ই আমাদের মাথার উপর দিয়ে বুলেট উড়ে যাচ্ছিল৷ কোনো রকমে আমি পালিয়ে এসেছি,’’ বলে শিশুটি৷ বাবা-মা ছাড়া কুতুপালংয়ে আসা এই শিশুদের সাহয়তা দিচ্ছে আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন৷ বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের শতকরা ৬০ ভাগই শিশু৷
ছবি: DW/J. Owens
পশুদের মতো শিকার
জাদেদ আলমও বাবা-মা ছাড়া কুতুপালংয়ে এসেছে৷তবে ভাগ্য ভালো বলে সে তার চাচীকে সাথে পায়৷চাচীই এখন তার দেখাশোনা করছেন৷ সে বলছিল ‘মান্দি পাড়া’ নামে এক গ্রামে বেড়ে উঠেছে সে৷ ফুটবল খেলতেও সে খুব পছন্দ করতো৷ তবে সেনা অভিযানের পর থেকে সবকিছুই বদলে যায়৷ সে জানায়, ‘‘তারা আমাদের বাড়ি ছেড়ে যেতে বলে৷ আমি আমার বাবা-মা’র সাথে দৌড়ে পালাচ্ছিলাম, এমন সময় তাঁদেরকে গুলি করে সেনারা৷ সাথে সাথে মারা যায় তারা৷’’
ছবি: DW/J. Owens
শিশু অপহরণ
এসব ঘটনার সময় সব পরিবারকেই যে আলাদা হতে হয়েছে, তা নয়৷ গত কয়েক সপ্তাহ ধরে রহমান আলী নামে এই ব্যক্তি এই ক্যাম্পে আছেন৷ তবে এখন তিনি তার ১০ বছর বয়সি ছেলে জিফাদকে খুঁজে পাচ্ছেন না৷ ক্যাম্প এলাকায় প্রায় সারা বছরই শিশু অপহরণের গুজব শোনা যায়৷ রহমানের আশংকা, তাঁর ছেলেও পাচারকারীদের হাতে পড়েছে৷ ‘‘আমি খেতে পারছি না, ঘুমাতে পারছি না৷ আমি মনে হয় পাগলই হয়ে গেছি,’’ বলে রহমান৷
ছবি: DW/J. Owens
‘আমি স্বাভাবিক নেই’
যখন গুলি শুরু হয়, তখন সকিনা খাতুন তাঁর বাচ্চাদের বাঁচাতে প্রাণপণে চেষ্টা করেছে৷ তারপরও ১৫ বছরের ইয়াসমিন আর ২০ বছরের জামালিকে বাঁচাতে পারেননি৷ ঘটনার সময় তারা পাশের গ্রামে ছিল৷ সকিনা বলছিল, ‘‘দাদা-দাদীর সামনে তাদের গলা কেটে হত্যা করা হয়৷ আমি এতটাই অনুভূতি শূণ্য হয়ে পড়েছি যে, এই কষ্টও অনুভব করতে পারছি না৷ তাই এই মুহূর্তে আমি স্বাভাবিক নেই৷’’ দুই সন্তানকে হারালেও বাকি নয় জনকে রক্ষা করতে পেরেছেন তিনি৷
ছবি: DW/J. Owens
হামলা, ধর্ষণ এবং লুটপাট
ইয়াসমিনের বয়স ১৫-র কাছাকাছি৷ তবে তাকে তার চেয়েও কম বয়সি বলে মনে হয়৷ গ্রামে থাকার সময় সে মার্বেল খেলতো আর বাড়ির কাছের মাঠে খেলতো৷ এখন অবশ্য ভিন্ন স্মৃতি তাড়িত করছে তাকে৷ মিয়ানমারের সেনারা তার বাবা ও ভাইদের প্রথমে মারধর ও পরে হত্যা করে৷ একদল সেনা তাকে ধর্ষণও করে৷ এখন ইয়াসমিন কেবল এটুকু বলতে পারে,‘‘আমার শরীরে ভীষণ ব্যথা৷’’
ছবি: DW/J. Owens
8 ছবি1 | 8
অতীতের ডাইনি অপবাদ এবার পুরুষদের?
খোলাচিঠির স্বাক্ষরকারীদের মতে ‘‘মহিলারা, বিশেষ করে তাদের পেশাগত জীবনে যে ধরণের যৌন সহিংসতার শিকার হন, তার বিরুদ্ধে বৈধ প্রতিবাদ... ডাইনির খোঁজে'' পর্যবসিত হয়েছে৷
‘‘মহিলাদের সাহায্য করার পরিবর্তে এই উন্মত্ততা বস্তুত যৌন স্বাধীনতার শত্রুদের, যেমন ধর্মীয় উগ্রপন্থি ও নিকৃষ্টতম প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীগুলিকে সাহায্য করছে৷ নারী হিসেবে এই নারীবাদের মধ্যে আমরা নিজেদের খুঁজে পাই না, যে নারীবাদ ক্ষমতার অপব্যবহারের নিন্দা ছাড়িয়ে সামগ্রিকভাবে পুরুষ ও যৌনতার প্রতি ঘৃণায় পরিণত হয়৷''
কাথেরিন দেন্যোভের বিতর্কিত মতামত
এককালে অস্কারের জন্য মনোনীত ফরাসি তারকা কাথেরিন দেন্যোভ ইতিপূর্বেও পুরুষদের বিরুদ্ধে মহিলাদের যৌন হয়রানি নিয়ে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া অভিযান সম্পর্কে তাঁর বিরক্তি প্রকাশ করেছেন৷
#মিটু এবং #বালঁস-তোঁ-পর হ্যাশট্যাগ দু'টি সম্পর্কে তিনি মন্তব্য করেন যে, এই পদ্ধতি ‘মাত্রাতিরিক্ত'৷ ‘‘তোমার শূকরটিকে বের করে আনো-র পরে কি আসবে? ‘তোমার বণিতাটিকে বের করে আনো?'' গতবছর বলেছিলেন দেন্যোভ৷
গত মার্চ মাসে দেন্যোভ আবার চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেন৷ তখন তিনি চিত্রপরিচালক রোমান পোলানস্কির প্রতি সমর্থন জানিয়েছিলেন৷ ১৯৭৭ সালে এক ১৩ বছর বয়সি কিশোরীকে ‘সংবিধিবদ্ধ ধর্ষণের' দায়ে পোলানস্কি আজও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ফেরারি আসামী হিসেবে গণ্য৷ পোলানস্কির ক্ষেত্রে ‘ধর্ষণ' কথাটির ব্যবহার তাঁর চিরকালই ‘মাত্রাতিরিক্ত' বলে মনে হয়েছে, বলে দেন্যোভ একটি টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে মন্তব্য করেন৷
এসি/এসিবি (এএফপি, ইএফই)
২০১৪ সালের এই ছবিঘরটি দেখুন...
আলোচিত এক হ্যাশট্যাগের কথা
নাইজেরিয়ায় প্রায় দুই শতাধিক ছাত্রীকে অপহরণের ঘটনা নিয়ে সারা বিশ্বে এখন বেশ আলোচনা হচ্ছে৷ কিন্তু শুরুতে বিষয়টা তেমন নজড় কাড়তে পারেনি৷ একটি হ্যাশট্যাগ এক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে৷
ছবি: Screenshot Facebook
দুই শতাধিক ছাত্রী অপহরণ
জঙ্গি গোষ্ঠী বোকো হারাম নাইজেরিয়ার একটি স্কুল থেকে প্রায় দুই শতাধিক ছাত্রীকে অপহরণ করে৷ ঘটনা ঘটে ১৪ এপ্রিল৷ তার একদিন পর সেটা নিয়ে রিপোর্ট করে এএফপি৷ কিন্তু তখনও বিষয়টা বিশ্বের নজর কাড়তে পারেনি৷ পরে টুইটারে শুরু হয় বহুল আলোচিত #bringbackourgirls বা ‘আমাদের মেয়েদের ফিরিয়ে আনো’ প্রচারণা৷
ছবি: picture alliance/abaca
প্রচারণার যেভাবে শুরু
এর অন্যতম উদ্যোক্তা হাদিজা বালা উসমান এএফপিকে বলেন, এত বড় একটা অপহরণের ঘটনা বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে না পারায় তিনি ও তাঁর ছয় বন্ধু সেটা প্রচারের উপায় খুঁজতে শুরু করেন৷ এভাবেই প্রচারণার শুরু৷
ছবি: Twitter
গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির সহায়তা
প্রচারণায় গতি আনতে উসমান’রা তাঁদের অনলাইন আলোচনায় বিশ্বব্যাংকের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ওবিয়াগেলি এজেকওয়েসিলিকে যুক্ত করেন৷ তিনি বিষয়টা শেয়ার করেন তাঁর প্রায় দেড় লক্ষ টুইটার অনুসারীর সঙ্গে৷ এভাবেই অপহরণের সংবাদটি সবার আলোচনার মাঝে চলে আসে৷
ছবি: Photo by Slaven Vlasic/Getty Images
মিশেল ওবামা
হ্যাশট্যাগ প্রচারণায় যে কাজ হয়েছে এই ছবি তার প্রমাণ৷ যুক্তরাষ্ট্রের ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা ছবিটি তুলে টুইটারে পোস্ট করেছেন৷ সঙ্গে লিখেছেন, ‘‘নাইজেরিয়ার অপহৃত ছাত্রী ও তাদের পরিবারের জন্য রইলো শুভকামনা৷’’
ছবি: Twitter
হিলারি ক্লিন্টন
সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিন্টন ছাত্রী অপহরণের ঘটনাকে ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড’ বলে আখ্যায়িত করেছেন৷
ছবি: Screenshot Twitter
মালালা ইউসুফজাই
হ্যাশট্যাগ প্রচারণায় যোগ দিয়ে মালালা অপহৃত ছাত্রীদের নিজের ‘বোন’ বলে সম্বোধন করেছেন৷
ছবি: Screenshot Twitter
অ্যাঞ্জেলিনা জোলি
অপহরণের ঘটনা সম্পর্কে ফ্রান্সের একটি টেলিভিশনকে জোলি বলেন, ‘‘আমি খুবই বিরক্ত, ক্ষিপ্ত....এরকম একটা কাজ যে কেউ করতে পারে, তা সত্যিই আমার কল্পনার বাইরে৷’’
ছবি: Reuters
অ্যান হ্যাথাওয়ে
অস্কারজয়ী অভিনেত্রী অ্যান হ্যাথাওয়ে ও তাঁর স্বামী অ্যাডাম শুলমানকে ‘আমাদের মেয়েদের ফিরিয়ে আনো’ প্রচারণার সমর্থনে আয়োজিত একটি ব়্যালিতে অংশগ্রহণ করেন৷