1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মুক্তিযুদ্ধকে কতটা তুলে ধরছে সংস্কৃতি?

রেশমী নন্দী
৮ ডিসেম্বর ২০১৭

মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বাঙালি জাতির আত্মপরিচয় অর্জনের ইতিহাস৷ তখন বাঙালি অস্ত্র হাতে নিয়েছিল, সংস্কৃতিকর্মীদের কাছে সংস্কৃতিই হয়ে উঠেছিল হাতিয়ার৷ নতুন প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধকে কতটা তুলে ধরছেন সাংস্কৃতিক কর্মীরা?

ছবি: AP

১৯৫২ সাল থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত মুক্তির যে ধারাবাহিক সংগ্রাম, তাতে দেশের সংস্কৃতি কর্মীরা ঝুঁকির পরোয়া না করে কাজ করে গেছেন নিঃশঙ্কচিত্তে৷ দাবি আদায়ের যুদ্ধে হাতিয়ার হিসেবে কাজ করেছে গান, নাটক, কবিতা৷ শত প্রতিকূলতা ও বৈরিতার মধ্যেও শিল্পীদের অব্যাহত লড়াই একদিকে যেমন প্রেরণা জুগিয়েছিল যোদ্ধাদের, তেমনি এ জনযুদ্ধের প্রতি সারা বিশ্বের জনমত তৈরি করতে রেখেছিল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা৷

মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে অমূল্য ভূমিকা রেখেছে সেই সময়ের দেশাত্মবোধক ও জাগরণী গান৷ শত বাঁধা-বিপত্তি পেরিয়ে এসব গান পৌঁছে যায় কোটি-কোটি মুক্তিকামী মানুষের কানে, বাজতে থাকে রণাঙ্গনের অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধাদের রেডিওতে৷ ‘জনতার সংগ্রাম চলবেই’, ‘ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য’, ‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে’, ‘মানুষ হ মানুষ হ’, ‘জয় বাংলা, বাংলার জয়, হবে হবে হবে হবে নিশ্চয়’, ‘মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি’, ‘তীর হারা এই ঢেউয়ের সাগর পাড়ি দেবো রে’– এমন আরো অসংখ্য কালজয়ী গান যুদ্ধের ভয়াবহতার মধ্যেও ছিল সঞ্জিবনী সুধার মতো৷ যুদ্ধ চলার সময় ‘বাংলাদেশ মুক্তি সংগ্রামী শিল্পী সংস্থা’র কন্ঠযোদ্ধা ছিলেন শিল্পী শাহিন সামাদ৷ সেই সময়ের স্মৃতিচারণ করে ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘সেই সময় কেবল ভাবতাম, আমাদের নিজেদের একটা দেশ চাই৷’’ এসব জাগরণী গান স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে প্রচারের ফলে বেজেছে শরণার্থী শিবিরে, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে ও মুক্তাঞ্চলে৷ সেই উত্তাল দিনের স্বাক্ষী সেসব গান এখন শুধু বাজে বিশেষ দিবসে বা বিশেষ দিবসকে সামনে রেখে৷ শাহিন সামাদ তাই এক ধরনের হতাশা থেকেই বলেন, ‘‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা দেখা যায় কেবল ২১ ফেব্রুয়ারি, ১৬ ডিসেম্বর, ২৬ মার্চ এলে৷ কিন্তু মাসব্যাপী অনুষ্ঠান প্রচারের পরই সব আবার ঝিমিয়ে পড়ে৷’’

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা দেখা যায় কেবল ২১ ফেব্রুয়ারি, ১৬ ডিসেম্বর, ২৬ মার্চ এলে: শাহিন সামাদ

This browser does not support the audio element.

একই ভাবনা নাট্যজন রামেন্দু মজুমদারেরও৷ দিবসভিত্তিক নাট্যচর্চার যে প্রচলন রয়েছে, তাতে করে সারা বছর এর উপেক্ষার জায়গাটি প্রকট হয়ে ওঠে৷ তবে তিনি স্বীকার করেন, ‘‘সংস্কৃতি কর্মীদের ক্ষমতা সীমিত, চারদিকে যখন সামাজিক বা রাজনৈতিক শক্তি মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে, তখন মুক্তিযুদ্ধ বা অসাম্প্রদায়িক সমাজ গঠনের চেতনা নিয়ে কাজ করা কঠিন হয়ে পড়ে৷’’ যে মঞ্চনাটককে মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষ ফসল হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তাতে আজকাল কতটা স্বাধীনতার সংগ্রাম উঠে আসছে– এমন প্রশ্নের উত্তরে নাট্যজন, বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান রামেন্দু মজুমদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘অন্যান্য ক্ষেত্রের তুলনায় মঞ্চনাটকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মুক্তিযু্দ্ধ অনেক বেশি এসেছে, তবে আরো অনেক বেশি কাজ করার সুযোগ রয়েছে৷’’

সংস্কৃতি কর্মীদের ক্ষমতা সীমিত: রামেন্দু মজুমদার

This browser does not support the audio element.

একই আক্ষেপ চলচ্চিত্র নির্মাতা মোরশেদুল ইসলামের কন্ঠেও৷ ‘চাকা’, ‘দীপু নাম্বার টু’, ‘আমার বন্ধু রাশেদ’ এবং ‘অনিল বাগচির একদিন’-এর মতো চলচ্চিত্রের নির্মাতা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে উল্লেখ করার মতো বেশ কিছু চলচ্চিত্র আমাদের হয়েছে৷ তবে যতটা হওয়া উচিত ততটা কিন্তু হয়নি৷’’ ১৯৭০ সালে মুক্তি পায় শহীদ চলচ্চিত্রকার জহির রায়হানের ‘জীবন থেকে নেয়া’৷ স্বাধীনতা প্রত্যাশী বাঙালির কাছে এটিই প্রথম চলচ্চিত্র, যার ভিত্তি '৫২-এর ভাষা আন্দোলন ও '৬৯-এর গণ-আন্দোলন হলেও ইঙ্গিত ছিল চূড়ান্ত বিজয়ের৷ দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এক বছরের মধ্যেই মুক্তি পায় চাষী নজরুল ইসলামের ‘ওরা ১১ জন’ ও সুভাষ দত্তের ‘অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী’৷ এরপর মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে চলচ্চিত্রের তালিকায় এ যাবত যোগ হয়েছে আরো বেশ কিছু নাম, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘ধীরে বহে মেঘনা’, ‘অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী’, ‘মেঘের অনেক রং’,  ‘মুক্তির গান’, ‘নদীর নাম মধুমতি’, ‘একাত্তরের যীশু’, ‘আগুনের পরশমণি’, ‘হাঙর নদী গ্রেনেড’, ‘শ্যামল ছায়া’, ‘খেলাঘর’, ‘জয়যাত্রা’, ‘আমার বন্ধু রাশেদ’, ‘গেরিলা’৷ বেশ কিছু স্বল্পদৈর্ঘ চলচ্চিত্রও হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে৷ এর মধ্যে ‘আগামী’, ‘হুলিয়া’, ‘চাক্কি’, ‘নরসুন্দর’, ‘একাত্তরের রং পেন্সিল’ দর্শক, সমালোচকদের প্রশংসা কুড়িয়েছে৷ নির্মাতা মোরশেদুল ইসলামের মতে, মুক্তিযুদ্ধের মতো বড় একটি ঘটনাকে নানা দিক থেকে দেখা ও প্রকাশের সুযোগ থাকলেও কিছু প্রত্যক্ষ বাধা নির্মাতাদের নিরুৎসাহিত করে৷ এর মধ্যে বাজেট সমস্যা ও বাণিজ্যিক সফলতা না পাওয়ার আশঙ্কা যেমন উল্লেখযোগ্য, তেমনি রাজনৈতিক পরিস্থিতির ভূমিকার বিষয়টিও ভুলে গেলে চলবে না ৷ মোরশেদুল ইসলামের ভাষায়, ‘‘অনেক সময় মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যেমন কাজ করতে চাই, তেমনটা করা সম্ভব হয় না৷ দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এক্ষেত্রে অনেকটাই প্রভাব বিস্তার করে৷ অনেকেই বলেন, বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কেন ছবি নির্মাণ করা হয় না৷ তার কারণ, আমি যদি তাঁকে নিয়ে ছবি বানাই, তাহলে অনেক কিছুই আসবে৷ মহামানব হলেও মানুষ তো, ভালোমন্দ সবই আমি তুলে ধরতে চাইবো, যেটা করা হয়তো সম্ভব হবে না৷’’ 

অনেক সময় মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে যেমন কাজ করতে চাই, তেমনটা করা সম্ভব হয় না: মোরশেদুল ইসলাম

This browser does not support the audio element.

স্বাধীনতা-উত্তরকালে সংস্কৃতি চর্চার উপকরণ ও বিষয়ের পরিধি বিস্তৃত হলেও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বহুমাত্রিক কাজের গুরুত্ব অপরিসীম বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন৷ বিশেষ করে মানবিক নানা সংকটের মুখোমুখি হয়ে নতুন করে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কাজের গুরুত্ব উপলব্ধি করেন সংস্কৃতিকর্মীরা৷ শিল্পী শাহিন সামাদ বললেন, ‘‘মানবিক নানা সংকটের মুখে ভাবি, নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের কথা জানাতে হবে, জানাতে হবে মুক্তিযোদ্ধারা দেশের জন্য কী করে গেছেন৷’’

প্রিয় পাঠক, আপনি কিছু বলতে চাইলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে...

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ