1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মুক্তিযুদ্ধকে খাটো করার অপচেষ্টা ও অন্তবর্তী সরকারের ভূমিকা

১২ ডিসেম্বর ২০২৫

মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পরানো হয়েছে, ভাঙা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের অসংখ্য ভাস্কর্য৷ এসবের পাশাপাশি চলেছে জুলাই অভ্যুত্থান ও মুক্তিযুদ্ধকে এক কাতারে দাঁড় করানোর চেষ্টা৷ সরকার কি তাহলে মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করে না?

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাঙচুর করা ছবি
১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি করে মুজিবনগর সরকার গঠন করা হয়েছিল।ছবি: Mohammad Ponir Hossain/REUTERS

বাংলাদেশে ১৯৭১-এর মুক্তিযুদ্ধকে খাটো করতে একটি মহল খুব তৎপর৷ মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা পরানো হয়েছে, ভাঙা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের অসংখ্য ভাস্কর্য৷ এসবের পাশাপাশি চলেছে জুলাই অভ্যুত্থান ও মুক্তিযুদ্ধকে এক কাতারে দাঁড় করানোর চেষ্টা৷ 
কিন্তু কোনো ক্ষেত্রেই অন্তর্বর্তী সরকারের তরফ থেকে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। সরকার কি তাহলে মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করে না?
কয়েকদিন আগে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম অবশ্য সাংবাদিকদের বলেছেন, “এই সরকার মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করছে না, এর একটি প্রমানও দেখাতে পারবেন না। বরং এই সরকার যা করছে তা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে যায়।”

মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে মুছে ফেলা হয়েছে স্মৃতিফলক

১৪ই ডিসেম্বর শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস। মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে স্মৃতিফলক থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম মুছে ফেলা হয়েছে। এখন স্মৃতিফলকটি শুধুই একটা সাদা বোর্ড। মিরপুর বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ ঘুরে এসে সাংবাদিক ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক আবু সালেহ রনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, “নানাভাবে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি মুছে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে। মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে যে স্মৃতিফলকটি ছিল, গত বছর সেটা ঢেকে রাখা হয়েছিল। এবার সেখানে থাকা লেখা মুছে ফেলা হয়েছে। ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে মিরপুরের এখানেই হত্যা করে রেখে যাওয়া হয়েছিল এই দেশের সবচেয়ে আলোকিত সন্তানদের রক্ত, যন্ত্রণা আর ইতিহাস। স্বাধীনতার পর স্মৃতিসৌধের ফলক, যেটি ১৯৭২ সালের ২২ ডিসেম্বর উদ্বোধন করেছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ওই স্মৃতিফলকে এটাই লেখা ছিল। এখন সেখানে শুধুই সাদা বোর্ড। এটা শুধু অবহেলা, নাকি পরিকল্পিত? বঙ্গবন্ধুকে, ইতিহাসকে এবং হাজার বছরের আত্মত্যাগকে ঢাকা কতটা সহজ! বাংলাদেশ কি সত্যিই স্বাধীন?”

মুজিবনগর স্মৃতি কমপ্লেক্সে বিধ্বস্ত ভাস্কর্য

মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার গঠিত হয় মেহেরপুরের মুজিবনগরে। ১৯৭১ সালের ১৭ এপ্রিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে রাষ্ট্রপতি, সৈয়দ নজরুল ইসলামকে উপরাষ্ট্রপতি এবং তাজউদ্দীন আহমদকে প্রধানমন্ত্রী করে মুজিবনগর সরকার গঠন করা হয়েছিল। সেই সরকারের শপথ নেওয়ার স্থান বৈদ্যনাথতলা আম্রকাননকে আরও তাৎপর্যপূর্ণ করে তুলতে গড়ে তোলা হয় মুজিবনগর স্মৃতি কমপ্লেক্স। সেখানে একটি মানচিত্রের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধের সেক্টরগুলো তুলে ধরা হয়। স্থাপন করা হয় মুক্তিযুদ্ধের স্মারক ম্যুরাল।

গত বছরের (২০২৪) ৫ আগস্ট রাজনৈতিক পালাবদলের পর ভাঙচুর হয় সেখানকার ছোট-বড় তিন শতাধিক ভাস্কর্য। মুক্তিযুদ্ধের ১১টি সেক্টরে যুদ্ধের বর্ণনা-সংবলিত ছোট ছোট ভাস্কর্য গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। স্মৃতিসৌধের প্রধান ফটকটি ভেঙে নিয়ে যাওয়া হয়। ১৫ মাস পেরিয়ে গেলেও সেখানে কোনো সংস্কার কাজ হয়নি। শুধু এই ভাস্কর্য নয়, সারা দেশে মুক্তিযুদ্ধের কোনো ভাস্কর্যই সংস্কার করা হয়নি।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ বীর বিক্রম ডয়চে ভেলেকে বলেন, “একটি রাজনৈতিক দল মুক্তিযুদ্ধের সময় বিরোধিতা করেছিল, পাকিস্তানি হানাদারদের দোসর হিসেবে খুন, ধর্ষণ, লুটপাটে জড়িত ছিল, এখন তারাই মুক্তিযুদ্ধকে খাটো করার চেষ্টা করছে। আওয়ামী লীগের যে ন্যারেটিভ ছিল, মুক্তিযুদ্ধ এক ব্যক্তির অর্জন, সেখান থেকে ওই রাজনৈতিক দলটি মনে করছে, তারা রাজত্ব ফিরে পেয়েছে। কিন্তু তাদের সেই চেষ্টা কোনোদিন সফল হবে না। দেশের মানুষের কাছে মুক্তিযুদ্ধ গৌরবের হয়েই থাকবে।”

বর্তমান সরকার মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করে কিনা জানতে চাইলে হাফিজ উদ্দিন বলেন, “এই সরকার যে মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করছে, তার কোনো আলামত তো আমরা পাচ্ছি না। বরং সরকারের বিভিন্ন জায়গায় জামায়াতের লোকজনকে বসানো হয়েছে। তারাই মুক্তিযুদ্ধকে খাটো করার চেষ্টা করছে। এমনকি কেউ কেউ জুলাই অভ্যুত্থানের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধকে মেলানোর চেষ্টা করছে। মুক্তিযুদ্ধ ছিল পুরো দেশের মানুষের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ। আর জুলাই অভ্যুত্থান তো একটি স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে রাজধানীকেন্দ্রিক একটা আন্দোলন। আমরা দু’টোকেই ধারণ করি। কিন্তু কোনোভাবে মুক্তিযুদ্ধকে খাটো করার চেষ্টা আমরা মেনে নেবো না।”

মুক্তিযুদ্ধের স্মারকগুলো যেন ধ্বংসস্তূপ

ধানমন্ডি ৩২ নম্বর গুঁড়িয়ে দিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি মুছে ফেলার চেষ্টাও হয়েছে।  বুলডোজার দিয়ে তিন দিন ধরে ভাঙা হয় মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত ধানমন্ডি ৩২। তারপরও মুক্তিযুদ্ধকেন্দ্রিক বিভিন্ন দিবসে অনেক মানুষ সেখানে ছুটে যান। সেখানে গিয়ে হেনস্তার শিকার হয়েছেন অনেকে। 
কারও হাতে একনলা বন্দুক; কেউ বন থেকে নিয়ে এসেছেন গজারি কাঠের লাঠি; ফসলের মাঠ থেকে ছুটে আসা কৃষকের হাতে কাস্তে- মুক্তিযুদ্ধের সময়ের এসব দৃশ্য তুলে ধরেই গাজীপুর শহরের মুক্তমঞ্চে তৈরি করা হয়েছিল ‘সশস্ত্র প্রতিরোধ’ ভাস্কর্য। মুক্তিযুদ্ধের সময় প্রথম সশস্ত্র প্রতিরোধ যেখান থেকে শুরু হয়েছিল, ঠিক সেই জায়গাতেই নির্মাণ করা হয় সশস্ত্র প্রতিরোধে অংশ নেওয়া বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ৯ জনের প্রতীকী ভাস্কর্য। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বিকেলে সেই ভাস্কর্য বিনা বাধায় ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয় কিছু লোক। ভাস্কর্যের সামনের দিকে আগুন ধরিয়ে তারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা উল্লাস করে। ১৩ ফুট উচ্চতার প্রতিটা ভাস্কর্য ওপর থেকে হাঁটু পর্যন্ত ভেঙে ফেলা হয়েছে। সামনের দিক থেকে এখন আর ভাস্কর্যের কিছুই দেখা যায় না। ব্যানার-ফেস্টুনে ঢাকা পড়েছে পুরো বেদি। সেখানে বসানো হয়েছে ফল আর সবজির দোকান।

একাত্তরের বীরঙ্গনাদেরও নানাভাবে হেয় করার চেষ্টা চলছে। মুক্তিযুদ্ধের সময় ‘ডাক্তার আপা’ খ্যাত ফাওজিয়া মুসলিম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এখন দেশের যে সামগ্রিক পরিস্থিতি এগুলো তারই অংশ। আমরা দেখছি, নানাভাবে মুক্তিযুদ্ধকে বিতর্কিত করার চেষ্টা হচ্ছে। আমরা মনে করি, যারা স্বাধীনতার বিরোধী শক্তি এটা তাদেরই রাজনৈতিক পরিকল্পনা। নারীর অগ্রগতিতে যারা ভুমিকা রেখেছেন, তাদের অপমান করা সেই চেষ্টারই অংশ। রাষ্ট্রের এই নিষ্ক্রিয়তা, নিলির্প্ততা আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য না। দেশের একটা বড় জনগোষ্ঠীর কাছে এটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য না।”

মুক্তিযুদ্ধ ও একাত্তরের গণহত্যার দুর্লভ সংগ্রহ নিয়ে খুলনা নগরীর সাউথ সেন্ট্রাল রোডে তৈরি হয় দেশের একমাত্র গণহত্যা জাদুঘর। ২০২৪ সালে প্রায় ৩২ কোটি টাকা ব্যয় করে সেখানে আধুনিক জাদুঘর ভবন নির্মাণ করে সরকার। ওই বছরের মে মাসে দৃষ্টিনন্দন জাদুঘর ভবনটি দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। এটি চালু ছিল মাত্র এক মাস। ২০২৪ সালের ২০ জুলাই সংস্কার কাজ করা ও কারফিউর কারণে জাদুঘর বন্ধ করে দেওয়া হয়। তারপর সেটি আর চালু হয়নি। ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট গুলিবিদ্ধ শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা না দেওয়াকে কেন্দ্র করে জাদুঘরের সামনে একটি হাসপাতালে ভাঙচুর চালায় বিক্ষুব্ধ আন্দোলনকারীরা। তখন জাদুঘরের প্রধান ফটকও ভাঙচুর করা হয়। গণঅভ্যুত্থানের পর নিরাপত্তা বিবেচনায় প্রধান ফটক টিন ও বাঁশ দিয়ে বন্ধ করে তালা ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। গত ১৭ মাসেও সেই তালা খোলা হয়নি। এখন জাদুঘরটি বন্ধ।

মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক ভাস্কর্য, স্থাপনা এবং মুক্তিযোদ্ধাদের মর্যাদাহানির চলমান অপপ্রয়াসের বিষয়ে সিনিয়র সাংবাদিক, বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা হারুন হাবীব ডয়চে ভেলেকে বলেন, “মুক্তিযুদ্ধ বাঙালি জাতির অনেক গর্বের, অনেক অহঙ্কারের। কারণ, সেই জনযুদ্ধের ধারাবাহিকতায় ৯ মাসের সশস্ত্র সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধকে যেমন অতি ব্যবহার করা বাঞ্ছনীয় নয়, তেমনি মুক্তিযুদ্ধ যেমন শ্বাসত সত্য, বাংলা ও বাঙালির জন্য সেই সম্মানকে পিছিয়ে নিয়ে যাওয়ার যে চেষ্টা সেটাও গ্রহণযোগ্য নয়। মুক্তিযুদ্ধ একটা ইতিহাস। যতদিন বাংলাদেশ নামক এই রাষ্ট্র থাকবে, ততদিন এ জাতির ভিত্তিমূল হিসেবে মুক্তিযুদ্ধ টিকে থাকবে। সত্যি অবাক হয়ে লক্ষ্য করছি, নানা পালাবদলের পর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস মুছে ফেলার একটা চেষ্টা লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু ইতিহাসের নিজস্ব একটা শক্তি থাকে তার সত্যটাকে প্রতিরক্ষা দেবার। আমার মনে হয়, যারা রাষ্ট্রের জন্মসূচককে অপমানিত করার চেষ্টা করেন, তারা কখনোই সফলকাম হতে পারবেন না।”

মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কি নতুন বয়ান তৈরি করা হচ্ছে?

10:57

This browser does not support the video element.

‘এটা স্বাধীন দেশে হতে পারে না’

টাঙ্গাইলের ভূয়াপুরের বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেক মণ্ডলকে অপমান-অপদস্ত করার প্রতিবাদে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী বলেছেন, “বাংলাদেশে বাস করে মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করা কাম্য নয়। মুক্তিযোদ্ধাকে অপমান করার অর্থ বাংলাদেশকে অপমান করা। এটা স্বাধীন দেশে হতে পারে না।”

বীর মুক্তিযোদ্ধা মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম ডয়চে ভেলেকে বলেন, “একটা শক্তি আছে যারা মুক্তিযুদ্ধকে আক্রমণ করছেন, ইতিহাসকে পেছন দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। সুপরিকল্পিতভাবে এটা করা হচ্ছে। সরাসরি এরা মুক্তিযুদ্ধের শত্রু। এদের প্রতিহত করতে হবে। আমরা অস্ত্র জমা দিয়েছি, কিন্তু ট্রেনিং জমা দেইনি। মুক্তিযুদ্ধের আরেকটা ক্ষতি হয়েছে আওয়ামী বয়ানে। ওই বয়ানের কারণে জনগনের মধ্যে একটা বিরূপ প্রভাব পড়েছে। আওয়ামী লীগ এটাকে একজন ব্যক্তির ও একটা দলের নির্মাণ হিসেবে প্রচার করেছিল। তখন কিন্তু নারী ধর্ষণ, খুন, লুটপাট সবকিছু মুক্তিযুদ্ধের নামে করা হয়েছিল। আওয়ামী লীগের ওই ন্যারেটিভ বদলাতে হবে। কারণ, যুদ্ধটা সবার ছিল। জামায়াতে ইসলাম এখন যেটা প্রচার করছে, তার বিরুদ্ধে আমাদের সত্যিটাকে সামনে আনতে হবে। এই দায়িত্ব আমার, আপনার - সবার।”

২০২৪ সালের ডিসেম্বরে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই ওরফে কানুকে গলায় জুতার মালা পরিয়ে লাঞ্ছিত করা হয়। ২০২৫ সালের জুন মাসে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার, বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল হুদাকেও জুতার মালা পরিয়ে অপদস্থ করা হয়।
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলের টকশোতে একাধিক ব্যক্তি মুক্তিযুদ্ধের নানা বিষয় নিয়ে নানা ধরনের আপত্তিকর মন্তব্য করছেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানকে ছোট করার চেষ্টাও করছেন কেউ কেউ।  

এ বিষয়ে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা ইশতিয়াক আজিজ উলফাত ডয়চে ভেলেকে বলেন, “একটি মাত্র রাজনৈতিক দল এই কাজ করছে। তাদের ইতিহাস আমরা সবাই জানি। তারা আগের সেই অবস্থান থেকে সরে আসেনি। বরং তাদের আগের অবস্থানকে তারা জাস্টিফাই করার চেষ্টা করছে। এ চেষ্টা কিন্তু তাদের মধ্যে কয়েকজন মানুষের। সারা দেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করে। আসলে সত্যি বলতে কি, দেশ স্বাধীনের পর এবারই তারা এমন সুযোগ পেয়েছে। মনে করছে, রাষ্ট্র ক্ষমতায় চলে এসেছে। অথচ তারা বিএনপির সহযোগিতায় সর্বোচ্চ ১৩টি আসন পেয়েছিল। ভোট হলে তারা বুঝতে পারবে আসলে দেশের মানুষের কাছে তাদের অবস্থা কী।” 

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার বক্তব্য

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা তো মুক্তিযুদ্ধ এবং বিজয় দিবসকে অনেক মহান করে দেখি৷ এটা দেশের মানুষের শ্রেষ্ঠ অর্জন৷ আগে এক ধরনের ন্যারেটিভ ছিল যে এটা দল করেছে, গোষ্ঠী করেছে৷এখন এটা আমরা সার্বজনীন করে দিচ্ছি৷’’
আসন্ন  বিজয় দিবস উদযাপনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘এবারের বিজয়ের অনুষ্ঠানটাকেও আমরা সেরকম করছি৷ সারা দেশব্যাপী জেলায়, উপজেলায় বিজয় মেলা হবে তিন দিনব্যাপী৷ ফলে নারী, পুরুষ, শিশু সবাই এনজয় করবে৷ বিজয়ের গৌরবটা সবারই পাওয়া উচিত৷’’ 
মুক্তিযুদ্ধের নানা স্মৃতিচিহ্ন, ভাস্কর্য ভেঙে ফেলার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘‘এগুলো আমরা সংস্কার করছি৷ অনেকটা করা হয়েছে. বাকিগুলোও করা হবে৷’’
বুদ্ধিজীবীদের স্মৃতিফলক মুছে ফেলার বিষয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজমের দাবি, ‘‘ না না না, এটা তো ঠিক আছে৷’’ 

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ