1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা থাকবে শুধু অবচেতনে?

রেশমী নন্দী
১ ডিসেম্বর ২০১৭

যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মধ্য দিয়ে কলঙ্ক মুছে একদিকে মুক্তিযুদ্ধের গৌরবের পথে এগিয়ে যাওয়া, অন্যদিকে ধর্মনিরপেক্ষতার প্রশ্নে অনিশ্চিত যাত্রায় প্রশ্নবিদ্ধ বাংলাদেশ – এ সবের মধ্যেই এবার উদযাপিত হচ্ছে বিজয়ের ৪৬তম বার্ষিকী৷

বাংলাদেশের পতাকা
ছবি: DW/M. Mamun

পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হয়ে বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ নামের নতুন একটি দেশের জন্ম হয় ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর৷ অর্জিত হয় নিজস্ব ভূখণ্ড আর সবুজের বুকে লাল সূর্য খচিত নিজস্ব জাতীয় পতাকা৷ ১৯৪৭ সালে ধর্মের ভিত্তিতে রাজনৈতিক মীমাংসা খোঁজার গোড়াতেই ছিল তার বীজ৷ পাকিস্তান জন্ম নেয়ার খুব অল্প সময়ের মধ্যেই বিভাজন সামনে এসে পড়ে ভাষার প্রশ্নে৷ একদিকে ভাষার প্রশ্নে অধিকার সচেতন বাঙালির আবেগ, অন্যদিকে রাজনীতির মারপ্যাঁচ – আসে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন৷ ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েই বাঙালি শুরু করে নিজের অস্তিত্ব খোঁজার নিজস্ব সংগ্রাম৷ জাতীয় জীবনের অপরিমেয় ত্যাগের বিনিময়ে অবশেষে অর্জিত হয় বহুল কাঙ্খিত বিজয়৷

‘বাংলাদেশ’ শব্দটির সাথে যেমন জড়িয়ে আছে অসংখ্য মুক্তপ্রাণ মানুষের স্বপ্ন ও লাখ লাখ মানুষের আত্মত্যাগের কাহিনি, তেমনি আছে এ দেশের কিছু মানুষের মানবতাবিরোধী ভূমিকা৷ স্বাধীনতা লাভের দীর্ঘ ৩৯ বছর পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরুর মধ্য দিয়ে কলঙ্ক মোচনের পথে একধাপ এগোয় বাংলাদেশ৷ দেশীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্ত সামাল দিয়ে এ পর্যন্ত ২৯ জনের বিচার প্রক্রিয়া শেষ করা সম্ভব হয়েছে৷ তারপরও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের পথ মসৃণ হয়নি৷

রাজাকারদের মধ্যে কিন্তু কোনো বিভেদ নেই, অথচ আমাদের মধ্যে বিভেদ আছে: সাইদুর রহমান

This browser does not support the audio element.

প্রজন্ম একাত্তরের প্রতিষ্ঠাতা সাইদুর রহমানের মতে, এর প্রধান কারণ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির অনৈক্য৷ তিনি মনে করেন, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে, শহিদের আত্মাহুতি নিয়ে ভেদাভেদ করে কখনো মুক্তিযু্দ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন সম্ভব নয়৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘রাজাকারদের মধ্যে কিন্তু কোনো বিভেদ নেই, অথচ আমাদের মধ্যে বিভেদ আছে৷ এভাবে এখানে আমার ছিল, ওখানে আমার অবদান ছিল, এ সব বলে লাভ হবে না৷ অখণ্ড মুক্তিযু্দ্ধকে ফেরত আনতে হবে, যেখানে গুটিকয়েক রাজাকার বাদ দিলে বাকি সবাই মুক্তিযুদ্ধের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুক্ত ছিল৷’’

কেবল অখণ্ড মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে নানা বিভক্তিই নয়, বিভক্তি তৈরি হয়েছে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি নিয়েও৷ রাজনীতির খেলায় ধর্মনিরপেক্ষ দেশের স্বপ্নেও আঁচড় লেগেছে বারবার৷ রাষ্ট্রধর্ম নির্ধারণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ যেন হাঁটতে শুরু করেছে একাত্তরের উল্টো পথে৷ পাহাড়ে শান্তি ফিরিয়ে আনার চুক্তি হলেও বাস্তবায়ন হয়নি৷ অন্যদিকে, দেশের বিভিন্ন এলাকায় কথিত ধর্ম অবমাননার অভিযোগে হামলা হচ্ছে সংখ্যালঘুদের উপর৷ অনেকেই মনে করেন, সাম্প্রদায়িকতার আড়ালে রয়েছে অর্থনৈতিক স্বার্থ৷ গবেষক আফসান চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বললেন, ‘‘বাংলাদেশের মানুষ গোটা ইতিহাস জুড়েই অসাম্প্রদায়িক৷ এখনকার যে সাম্প্রদায়িক চরিত্র, তার সাথে স্বার্থের বিষয় জড়িত৷ নাসির নগরের ঘটনা থেকে শুরু করে সব ঘটনার ক্ষেত্রেই তাই৷ এই যে হিন্দু মন্দিরে আক্রমণ, এটা তো হয় দেবোত্তর সম্পত্তি দখল করার জন্য৷ স্বার্থের সংঘাত থেকেই এ সব শুরু হয়৷ তারপর সবার উপর সে দোষ চাপিয়ে দেয়া হয়৷’’

বাংলাদেশের মানুষ গোটা ইতিহাস জুড়েই অসাম্প্রদায়িক: আফসান চৌধুরী

This browser does not support the audio element.

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িক চরিত্রের এ বিচ্যুতি সংশোধনে প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা৷ যুদ্ধাপরাধের দায়ে দলগতভাবে জামায়াত ইসলামির বিচার এখনো সম্ভব হয়নি, বরং ভোটের মাঠে দলটি গুরুত্বপূর্ণ শরিক হিসেবে বিবেচিত হয়৷ আর তারই পথ ধরে দীর্ঘদিন দেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ‘ফ্যাক্টর’ হয়ে দাঁড়িয়েছে একাত্তরে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া এ দলটি৷ অন্যদিকে, মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে কট্টর ইসলামি অনেক সংগঠনও৷ এমনকি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি হিসেবে দাবি করা আওয়ামী লীগও ভোটের রাজনীতিতে হাত মিলিয়েছে উগ্রপন্থি ধর্মীয় গোষ্ঠির সাথে৷

আওয়ামী লীগের কাছ থেকে আমরা আরো অসাম্প্রদায়িক ব্যবহার আশা করেছিলাম: তারেক আলি

This browser does not support the audio element.

তবে বৈশ্বিক পরিবর্তনের প্রেক্ষিতে বর্তমান সরকার কৌশলগত অবস্থান নিয়েছে বলে মনে করেন অনেকে৷ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি তারিক আলি বলেন, ‘‘জামায়াত ইসলামির বিষয়ে কথা বলার কিছু নেই, কারণ তারা বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ধারণাতেই বিশ্বাস করে না৷ বিএনপির ক্ষেত্রে তারা ইসলামের লেবাস পড়া একটি দেশ চায়, তাদের সম্পর্কেও তাই বলা কিছু নেই৷ তবে আওয়ামী লীগের কাছ থেকে আমরা আরো অসাম্প্রদায়িক ব্যবহার আশা করেছিলাম৷ কিন্তু আমি এটাও দেখছি যে সারা পৃথিবীতে যে হাওয়া বইছে, আওয়ামী লীগের কিছুটা ছাড় দিয়ে চলতে হবে যদি আগামীতে সরকার গঠন করতে চায়৷’’ তিনি বলেন, যদিও এ মুহূর্তে দেশে সাম্প্রদায়িকতা মাথা চাড়া দিয়েছে, তবে বাংলাদেশের মানুষ ঐতিহাসিকভাবেই বহুত্ববাদে বিশ্বাসী আর তাই এ দেশের মাটিতে কখনো কট্টর কোনো মতবাদ শেষ পর্যন্ত টিকতে পারবে না৷

তবে শহিদ সন্তান সাইদুর রহমান বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে রাজনীতিবিদ থেকে শুরু করে নীতি-নির্ধারকরা যথার্থ পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি এত বছরেও৷ আর তাই রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে ইতিহাসের অখণ্ড সত্যকে সামনে না আনা গেলে ‘মু্ক্তিযুদ্ধের চেতনা’ শব্দটি শেষপর্যন্ত কেবল ‘কথার কথা’ হয়ে দাঁড়াবে৷

প্রিয় পাঠক, আপনি কিছু বলতে চাইলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে...

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ