1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জামায়াতে বিভক্তি না দল বাঁচানোর কৌশল?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

মুক্তিযুদ্ধে দলটির ভূমিকা নিয়ে ক্ষমা চাওয়া এবং দলের সংস্কার বিষয়টি আবারো আলোচনায় এসেছে৷ এই ইস্যুতে এক নেতা দেশের বাইরে থেকে পদত্যাগ করেছেন৷ আরেকজন হয়েছেন বহিস্কার৷ প্রশ্ন উঠেছে এটা নতুন কৌশল কিনা৷

ফাইল ছবিছবি: picture-alliance/ZUMA Press/Z.H. Chowdhury

জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারী জেনারেল ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক এখন লন্ডনে অবস্থান করছেন৷ তিনি সেখান থেকে শুক্রবার দলের আমির মকবুল আহমেদের কাছে লিখিত পদত্যাগপত্র পাঠান৷ তার দীর্ঘ পদত্যাগ পত্রে দু'টি বিষয় স্পষ্ট৷ আর তা হলো, জামায়াতের সংস্কার এবং মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারে তাদের অবস্থান৷ তিনি বলেছেন, ‘‘১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ভূমিকা এবং পাকিস্তান সমর্থনের কারণ উল্লেখ করে জামায়াতকে জাতির কাছে আন্তরিকভাবে ক্ষমা চাওয়া উচিত৷''

এই দু'টি বিষয় নিয়ে পদত্যাগী এই জামায়াত নেতা ডয়চে ভেলের সঙ্গে লন্ডন থেকে টেলিফোনে কথা বলেছেন৷ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে তিনি জামায়াতের ভূমিকা বলতে কী বোঝাতে চেয়েছেন ? তার জবাবে বলেন, ‘‘আমি মিন করেছি যে, ১৯৭১ সালে জামায়াত রাজনৈতিকভাবে স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছে এবং পাকিস্তানের পক্ষ নিয়েছে৷ এজন্য জামায়াতকে জাতির আছে ক্ষমা চাইতে হবে৷''

‘ক্রাইসিস থেকে বাঁচার জন্য নয়’: রাজ্জাক

This browser does not support the audio element.

ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক মানবতাবিরোধী আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধাপরাধের অপরাধে অভিযুক্ত শীর্ষ জামায়াত নেতাদের আইনজীবী ছিলেন৷ তিনি তাদের পক্ষ হয়ে ওই অপরাধকে ডিফেন্ড করেছেন৷

তাহলে এখন তিনি কী মনে করেন? জামায়াত নেতারা যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যার সঙ্গে কি জড়িত ছিলেন? তারা তো দণ্ডিত হয়েছেন৷ এ ব্যাপারে ব্যারিস্টার রাজ্জাক বলেন, ‘‘এখানে দু'টি বিষয়৷ একটি হলো পাকিস্তানকে সমর্থন করা৷ এজন্য ১৯৭২ সালে একটি আইন ছিল, কলাবোরেটর অর্ডিন্যান্স, যা পরে বাতিল হয়ে যায়৷ আরেকটা হলো যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ৷ যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ জামায়াত নেতাদের ওপর আসছে ২০১০ সালে৷ দু'টো জিনিস সম্পূর্ন ভিন্ন৷ তাদের বিরুদ্ধে যদি কলাবোরেটর আইনে ব্যবস্থা নেয় হতো, তাহলে একটা বিষয় ছিল৷ ওটা ছিল রাজনৈতিকভাবে সমর্থন করা৷ পাকিস্তানকে যে কোনো মানুষ রজনৈতিকভাবে সমর্থন করেছে কলাবোরেটরস অর্ডিন্যান্স-এ তার বিচার করা যায়৷ কিন্তু ১৯৭২ সালের যে আইনের অধীনে বিচার করা হয়েছে ২০১০ থেকে ২০১৪ সালে সেটা ছিল ওয়্যার ক্রাইম৷ আমি ছিলাম তাদের লইয়ার৷ আমি তাদের ডিফেন্ড করেছি৷ আমি তাদের ব্রিফ দেখেছি৷ আমি মনে করি যদি আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী স্বচ্ছ বিচার হতো অথবা ন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড মেনে সংবিধান অনুযায়ী যদি বিচার হতো তাহলে তাদের কেউ দণ্ডিত হতেন না৷ তারা সবাই খালাস পেতেন৷''

জামায়াতের সংস্কার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘আমরা একটা দ্রুত পরিবর্তনশীল বিশ্বে বসবাস করি৷ পশ্চিম বিশ্বে অনেক দেশেই আছে তিউনিসিয়া , তুরস্ক, মরক্কো- এইসব দেশে ইসলামি আন্দোলনের অনেক পরিবর্তন হয়েছে৷ ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থার যে চিন্তা তার মধ্যে পরিবর্তন আনতে হবে৷ পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পৃথিবীর অন্যান্য দেশে ইসলামি মুভমেন্টের যে পরিবর্তন হয়েছে সেটাকেই জামায়াতের সামনে নিয়ে আসা উচিৎ বলে আমি মনে করি৷''

‘রাষ্ট্রের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ রাজনীতি করতে হবে’: মঞ্জু

This browser does not support the audio element.

আর শুক্রবার ঢাকা মহানগর জামায়াত থেকে বহিস্কৃত মুজিবুর রহমান মঞ্জু ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘মুক্তিযুদ্ধ এবং সংস্কার প্রশ্নে জামায়াতে বিভক্তি আছে৷ আমি মনে করি, তরুণসহ ৬০ ভাগ জামায়াত সদস্য মনে করে, একাত্তরের ভূমিকার জন্য জামায়াতের ক্ষমা চাওয়া উচিৎ৷ তারা সংস্কারও চান৷ জামায়াত যদি এখন না করে তাহলে একসময়ে এটা করতে বাধ্য হবে৷''

মুজিবুর রহমান মঞ্জু ঢাকা মহানগরের মজলিসে শুরার সদস্য ছিলেন৷ তিনি ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি৷ জাময়াতের সংস্কার এবং মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারে জাময়াতের অবস্থান পরিস্কার করার ব্যাপারে তিনি অনেক দিন ধরেই কথা বলছিলেন৷

তিনি মনে করেন, ‘‘এরইমধ্যে জামায়াত দুর্বল হয়ে পড়েছে৷ আমাদের নেতাদের ফাঁসি দিল৷ জামায়াততো কার্যকর প্রতিবাদও করতে পারেনি৷ জামায়াতের সংস্কার তাই জরুরি৷ আর সেটা হলো অনেক মানবিক বিষয় আছে সেখানে ইসলামকে টেনে আনার দরকার নেই৷ সেটা সবার জন্যই মানবিক৷ আধুনিক রাষ্ট্র ব্যবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ রাজনীতি করতে হবে৷ আমি মনে করে জাময়াতের ভিতরে একাত্তরের ভূমিকা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হওয়া দরকার৷ সেখান থেকেই জামায়াতের রাজনৈতিক ভূমিকা এবং করনীয় ঠিক করা উচিতল৷''

তবে আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘জামায়াত নেতাদের যে অপরাধে ফাঁসি দেয়া হয়েছে তারা সে অপরাধ করেননি৷ তাদের যে যুদ্ধাপরাধের কথা বলা হচ্ছে সেটা আমি মনে করি ঠিক না৷ তারা রাজনৈতকভাবে পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন৷''

‘দল বাঁচাতে, সম্পদ রক্ষায় কৌশল করছে’: শাহরিয়ার

This browser does not support the audio element.

তবে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক শাহরিয়ার কবির অবশ্য মনে করেন এটা জাময়াতের একটি নতুন কৌশল৷ কারণ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হওয়ার পর যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে জামায়াতের বিচার হবে৷ তখন বিচারে এই দলটির বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণ হলে দলই থাকবেনা৷ যারা দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত এবং জামায়াতের যে সম্পদ আছে, তা বাজেয়াপ্ত হবে৷ তাই তারা নতুন এক প্রতারণামূলক কৌশলের আশ্রয় নিয়ছে৷ এই পদত্যাগ বা বহিষ্কার জামায়াতের একটি পাতানো কৌশল৷ এতে সরকারের বা ওবায়দুল কাদেরের উচ্ছ্বুসিত হওয়ার কিছু নেই৷''

তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘জাময়াতকে একাত্তরের ভূমিকার জন্য ক্ষমা চাইতে বলছেন রাজ্জাক সাহেব৷ সেটা কোন ভূমিকার জন্য? একাত্তরের গণহত্যার জন্য? যুদ্ধাপরাধের জন্য? তিনিওতো জামায়াত নেতাদের আইনজীবী ছিলেন৷ জামায়াত তার রানৈতিক ভূমিকার জন্য ক্ষমা চাইতে পারে৷ কিন্তু মানবতাবিরোধী অপরাধ, গণহত্যার জন্যতো ক্ষমা চাইবে না৷ আর ক্ষমা চাইলেইতো অপরাধ মাফ হয় না৷ দলের সংস্কারও জামায়াত আসলে করবেনা৷ তাদের মওদুদীবাদই বহাল আছে৷ রাজ্জাক সাহেবের পদত্যাগ যদি জামায়াতের পরিকল্পনার অংশ না হতো তাহলে জামায়াতের আমির কিভাবে বলেন যে তার সঙ্গে মহব্বতের সম্পর্ক থাকবে৷''

তিনি বলেন, ‘‘জামায়াত এখন তার দল বাঁচাতে, সম্পদ রক্ষায় নতুন কৌশল করছে৷ এতে বিভ্রান্ত হওয়ার কোনো সুযোগ নেই৷''

জামায়াতের বর্তমান অবস্থান নিয়ে আপনাদের মতামত লিখুন নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ