1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘মুক্তিযুদ্ধ’ কেন রাজনীতির হাতিয়ার?

রেশমী নন্দী
১২ ডিসেম্বর ২০১৭

৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে অপরিসীম আত্মত্যাগের বিনিময়ে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে বাংলাদেশ৷ এখনো ৪৬ বছর আগের সেই ইতিহাসকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত বাংলাদেশের রাজনীতি৷

Bangladesch feiert den Tag der Unabhängigkeit
ছবি: DW

বিজয়ের ৪৬তম বছরে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এসেছে নানা পরিবর্তন৷ একদিকে নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যেও দেশ এগিয়েছে আর্থসামাজিক উন্নয়নের পথে, অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধ রাজনীতিকে করেছে বিভাজিত৷ যখন ইতিহাসের মিমাংসিত সত্য সামনে রেখে দেশের সামনে এগিয়ে যাওয়ার কথা, তখনো রাজনৈতিক বিভাজনের মূল বিষয় এখনো মুক্তিযুদ্ধ৷

এ প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘‘মুক্তিযুদ্ধটাই তো হয়েছে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে৷ এ জনযুদ্ধই তো আমাদের চলার প্রেরণা৷ একে বাদ দিয়ে তো রাজনীতি করার কোনো সুযোগই নেই৷'' একই ভাবনা বড় আরেকটি দল বিএনপিরও৷ দলটির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, ‘‘মুক্তিযুদ্ধ আমাদের কাছ থেকে, জনগনের কাছ থেকে কখনো হারিয়ে যাবে না৷ মু্ক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল প্রতিষ্ঠিত৷ যে লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছিল, সেই গণতন্ত্র ও সুশাসনের জন্যই বিএনপি এখনও সংগ্রাম করে যাচ্ছে৷ '' 

Awami League khalid mahmud chy - MP3-Stereo

This browser does not support the audio element.

অথচ মুক্তিযুদ্ধের নানা প্রশ্নে এই দুই দলের পরস্পরবিরোধী অবস্থান বাংলাদেশের রাজনীতির অন্যতম বাস্তবতা৷ ডয়চে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে আব্দুল্লাহ আল নোমান অবশ্য মুক্তিযুদ্ধ প্রশ্নে আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাঁর দলের বিরোধের বিষয়টি তুলে ধরলেন এভাবে ‘‘মুক্তিযুদ্ধ ছিল জনগণের যুদ্ধ৷ তার সফলতাও জনগণের৷ এটি কোনো ব্যক্তি বা দলের সফলতা নয়৷ আওয়ামী লীগ এককভাবে মুক্তিযুদ্ধকে নিজেদের যুদ্ধ হিসেবে দেখাতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের যে বিশালতা সেটাকে ক্ষুন্ন করে৷''  খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে দেয়া সাক্ষাৎকারে অন্য দলের অবদান স্বীকার করে নিয়েই বলেছেন, ‘‘ মুক্তিযু্দ্ধের পক্ষের অনেক শক্তি আছে, তবে বৃহৎ শক্তি হচ্ছে আওয়ামী লীগ৷ সেজন্যে আওয়ামী লীগের কাঁধেই দায়িত্বটা চলে আসে৷'' 

BNP Noman - MP3-Stereo

This browser does not support the audio element.

জামায়াতে ইসলামীর মুক্তিযুদ্ধবিরোধী ভূমিকা নিয়ে প্রশ্নের অবকাশ এখন আর নেই৷ যু্দ্ধাপরাধীদের বিচার শুরুর পরে যুদ্ধাপরাধের দায়ে দলটিকে নিষিদ্ধ করার কথা উঠলেও সে বিষয়ে হয়নি কোনো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি৷ তবে রাজনীতিতে এ দলের ভূমিকা বড় দলগুলোর কাছে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে দেখা গেছে বিভিন্ন সময়ে৷ একাত্তরে জামায়াতের বাংলাদেশবিরোধী ভূমিকা স্বীকার করে নিয়েই বিএনপির বর্ষিয়ান নেতা আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন,‘‘ জামায়াতের সাথে বিএনপির যে নির্বাচনী ঐক্য হয়েছিল, তা খুব অল্প সময়ের জন্য৷ আওয়ামী লীগও জামায়াতের সাথে সাময়িক ঐক্য করে বিএনপির বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছে৷ এগুলো সব ইস্যুভিত্তিক সম্পর্ক৷ আওয়ামী লীগ নির্বাচনী সুবিধা আদায়ের জন্য বিএনপিকে জামায়াতের সাথে এক করে উপস্থাপন করতে চায়৷'' অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগ কখনোই স্বাধীনতা বিরোধীদের সাথে সমঝোতা করেনি৷ সম্পূর্ণ রাজনৈতিক মিথ্যাচার এ বক্তব্য৷ যদি তাই হতো তাহলে তো জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রবল চাপ উপেক্ষা করে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের কাজ শুরু হতো না৷'' 

Afsan Chy on POLITICS - MP3-Stereo

This browser does not support the audio element.

বিশ্লেষকরা মনে করেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির এ প্রবণতা নেহায়েতই রাজনৈতিকভাবে জনগনের কাছে নিজেদের অধিক গ্রহণযোগ্য করে তোলার উদ্দেশ্যে৷ মুক্তিযুদ্ধ গবেষক আফসান চৌধুরী  বলেন, ‘‘যে দুটো বড় দল দেশে, তাদের সবই মোটামুটি একই রকম- অর্থনৈতিক নিয়ম বা সামাজিক ব্যবস্থা, সেটাতে খুব বেশি ফারাক নেই৷ তাদের নিজেদের আলাদাকরণের প্রয়োজনে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কথা বলে৷'' সাধারণ মানুষ এই যুদ্ধের অন্যতম অংশীদার হলেও তাঁদের ভূমিকা গৌন করে দেখা হয় রাজনৈতিক স্বার্থেই, এমন মন্তব্য করে ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘সাধারণ মানু্ষ এসব নিয়ে মোটেও ভাবে না৷ মানুষ কিন্তু সরকারি প্রজ্ঞাপন পড়ে ইতিহাস ধারণ করে না৷ সে তার পরিবারের স্মৃতি থেকে, গ্রাম বা শহরের সামষ্টিক স্মৃতি থেকে ইতিহাসকে ধারণ করে৷ কে কী দাবি করলো, তাতে তো ইতিহাসের কোনো কিছু যায় আসে না৷'' 

তবে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি. রাজনৈতিক মতপার্থক্য এত সবকিছুর পরেও মুক্তিযুদ্ধের সার্বজনীন মূল্যবোধ বাংলাদেশের সামনে এগিয়ে যাওয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে৷ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি মফিদুল হক বলেন, ‘‘যে নতুন প্রজন্ম উঠে আসছে, নানাভাবে মুক্তিযুদ্ধের কথা জানার সুযোগ হচ্ছে তাদের৷ স্বাধীনতার ঘোষক কে, কে প্রথম মুক্তিযুদ্ধের ডাক দিলো, এসব প্রসঙ্গ অনেক গৌণ হয়ে যায় যখন ইতিহাসকে বড় দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা যায়৷ মুক্তিযুদ্ধের মূল যে বিষয়গুলো ছিল যেমন অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ নিয়ে অধিকার আদায়ের পথে অগ্রসর হওয়া, এগুলোকে সামনে রেখে এগিয়ে যেতে হবে৷''

Mofidul Haq edited - MP3-Stereo

This browser does not support the audio element.

আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ