1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মুক্তিযোদ্ধাদের অপমানকারীদের শাস্তি চাই

১৯ ডিসেম্বর ২০১৯

অবশেষে রাজাকারের তালিকা স্থগিত করা হয়েছে৷ কিন্তু তাতেই সব চুকেবুকে যেতে পারে না৷ মুক্তিযোদ্ধাদের যে অপমান করা হলো, জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ এমন একটি কাজকে যে বিতর্কিত করা হলো, এই দুই অপরাধের জন্য দোষীদের শাস্তি চাই৷

Bangladesch Ali Ahsan Mohammad Mojaheed Urteil Kriegsverbrechen 17.07.2013
ছবি: Reuters

কিছু ঘটলেই ‘উদোর পিন্ডি বুধোর ঘাড়ে' চাপানো বহুকাল ধরেই আমাদের দেশের দায়িত্বশীলদের প্রথম দায়িত্ব৷ ৪৮ বছর অপেক্ষার পর

গত ১৫ ডিসেম্বর ‘একাত্তরের রাজাকার, আলবদর, আলশামস ও স্বাধীনতাবিরোধী তালিকা প্রকাশ—প্রথম পর্ব' শিরোনামে ১০ হাজার ৭৮৯ জনের নামের তালিকা প্রকাশ করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়৷  তালিকা প্রকাশের পর যেই না রাজাকারদের ভীড়ে মুক্তিযোদ্ধাদের নাম দেখা শুরু হলো, শুরু হলো বিতর্ক, ক্ষোভ প্রকাশ, প্রতিবাদ; অমনি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী সেই ‘দায়িত্বই' পালনে নেমে গেলেন৷ তিনি বোঝাতে চাইলেন ভুল যদি হয়েও থাকে তার দায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের৷ উল্টো দিক থেকেও একই ধরনের জবাব আসতে দেরি হয়নি৷ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীও দাবি করলেন, তার মন্ত্রণালয় একটি তালিকা পাঠিয়েছে বটে, তবে তাতে ‘বিশেষ মন্তব্য' ছিল, সেই মন্তব্য দেখে কাজ করলে এমন ভুল হতো না৷

যা হয়েছে তা কি স্রেফ ভুল?

যে দল, যে দলের সরকার মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা নিয়ে অহঙ্কার করে, তারা মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান নিয়ে এমন ছেলেখেলাকে ‘ভুল' বলে তালিকা স্থগিত করার ঘোষণা দিলেই হবে?

মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে কোনো দল বা ব্যক্তি বড় হতে পারে না৷ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রকৃত অর্থে ধারণ করলে সেই চেতনাকেই সবচেয়ে গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন৷

মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষভাবে অংশ নেয়া খুব বড় বড় ব্যক্তিদেরও অতীতে আমরা বিতর্কিত ভূমিকায় দেখেছি৷ তাদের কেউ কেউ স্বরাষ্ট্র বা মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর চেয়েও বড় রাষ্ট্রীয় পদে ছিলেন৷ সেই পদাধিকার বা পদের বলের কারণে তাদের বিতর্কিত ভূমিকা দেশের মানু্ষ ভুলে যায়নি৷

আশীষ চক্রবর্ত্তী, ডয়চে ভেলেছবি: DW/T. Mehedi

‘একাত্তরের রাজাকার, আলবদর, আলশামস ও স্বাধীনতাবিরোধী তালিকা প্রকাশ—প্রথম পর্ব' প্রকাশ করে যারা এমন একটি উদ্যোগকে প্রশ্নবিদ্ধ করলেন, যারা মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান করলেন, তাদের কথাও কেউ ভুলবে না৷

বাংলাদেশে কোনো সংকটই প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ ছাড়া নিরসন হয় না৷ তালিকা স্থগিত করে ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায়' প্রাথমিক দক্ষতা দেখানোর কৃতিত্ব এক্ষেত্রেও নাকি তারই৷ সব ক্ষেত্রে তার হস্তক্ষেপই যদি চির-অত্যাবশ্যক থেকে যায়, তাহলে অন্য গুরুত্বপূর্ণদের উপযোগিতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক৷

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী বলেছেন, ‘‘ওরা (বিএনপি-জামায়াত সরকার) ৩০ বছর ক্ষমতায় ছিল৷ ক্ষমতায় থাকার সময় হয়তোবা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে রাখা কাগজপত্র কারসাজি করে রাজাকারদের তালিকায় মুক্তিযোদ্ধাদের নাম লিখে রেখেছে৷ এটা আমাদের কল্পনার বাইরে ছিল৷ সে কারণে ভুলটা হয়ে গেছে৷ আমি দুঃখ প্রকাশ করছি৷'' মন্ত্রী মহোদয়ের সব কথা মেনে নিলেও ‘এটা আমাদের কল্পনার বাইরে ছিল' অংশটুকু মানতে পারছি না৷ মাননীয় মন্ত্রী, ওটা বুঝতে কল্পনাশক্তি লাগে না, এসব বুঝতে রাজনৈতিকভাবে দুরদর্শী হতে হয় এবং সেই দুরদর্শিতা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব গুরুত্ব দিয়ে পালন করতে হয়৷

বন্দুক থেকে গুলি বেরিয়ে গেলে, সেই গুলি কারো গায়ে লাগলে ‘দুঃখিত' শব্দটি যথেষ্ট মনে হয় না৷

তালিকা প্রকাশের আগে যাবতীয় কাজ গুরুত্ব দিয়ে না করায় মুক্তিযোদ্ধাদের গায়ে অপমানের গুলিটা কিন্তু লেগে গেছে

সুতরাং এমন তালিকা প্রকাশের জন্য যে স্তরে যারা যারা দায়ী, তাদের প্রত্যেকের শাস্তি দাবি করছি৷ শাস্তিটা্ দায়িত্ব এবং ভূমিকা অনুপাতে হওয়া একান্তভাবে কাম্য৷

বালিশকাণ্ডে যেভাবে দোষীদের শাস্তির ব্যবস্থা নিতে দেখেছি, এক্ষেত্রেও ঠিক সেরকম হওয়া দরকার৷

বিশেষ দ্রষ্টব্য: এ লেখায় কোনো ব্যক্তির নাম উল্লেখ করা হয়নি, কারণ, রাজাকারের তালিকা প্রণয়নের কাজে এত বড় ভুলের ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তি বড় কথা নয়৷ ব্যক্তি আসবেন, ব্যক্তি যাবেন, কিন্তু যথোপযুক্ত ব্যবস্থা না নিলে এই ভুলের মাশুল আমাদের বহুকাল গুণতে হবে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ