1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বাড়ানোর দাবি তারামন বিবির

২০ ফেব্রুয়ারি ২০১১

পরবর্তী প্রজন্মের কাছে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও ঘটনাবলী তুলে ধরুন৷ আর মুক্তিযোদ্ধাদের আরো ভালোভাবে বাঁচার জন্য সহযোগিতা করুন৷ দাবিগুলো বীর প্রতীক তারামন বিবির৷

‘অনেক কষ্টের বিনিময়ে, ইজ্জতের বিনিময়ে, প্রাণের বিনিময়ে দেশটা স্বাধীন করেছি’ছবি: DW

প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ

যুদ্ধের শেষ দিকের একদিনের সেনা হামলার ঘটনা জানালেন তারামন৷ তিনি বলেন, ‘‘উপর দিয়ে বিমান আসলো৷ আমাদের কেতনদারী শিবিরের উপর মহড়া দিয়ে সেটি ঘুরে গেল৷ আমরা ঐ দিনই পরিস্থিতি বুঝে বাংকার তৈরি করলাম৷ পরের দিনও আবার একই সময় শত্রুবিমান আসলো৷ আমরা সবাই বাংকারে আশ্রয় নিলাম৷ কিছুক্ষণ পরই শুনতে পেলাম উত্তর পাশে গোলা হামলার শব্দ৷ সেখানেও আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা ছিল৷ আমরা খুব ভয় পেয়ে গেলাম যে, আমাদের যোদ্ধারা সবাই হয়তো শেষ৷ কিন্তু গিয়ে দেখলাম, পাশের নদী দিয়ে একটা নৌকা আসছিল৷ সেই নৌকাটিকে লক্ষ্য করেই ব্রাশফায়ার করা হয়েছে ঐ শত্রু বিমান থেকে৷ ফলে সেই নৌকাটি নদীতে তলিয়ে যায়৷ নৌকার যাত্রীদের মধ্যে কয়েক জনের লাশ পাওয়া গিয়েছিল৷ তবে সৌভাগ্যক্রমে নৌকাটিতে কোন মুক্তিযোদ্ধা ছিল না৷''

যুদ্ধজয়ের আনন্দময় মুহূর্তের কথা তুলে ধরেন এভাবে৷ ‘‘একদিন দুপুরের দিকে একটা জঙ্গি বিমান এল৷ এই বিমানটা আগের বিমানগুলোর মতো নয়৷ এটা থেকে কোন বোমা ফেলা হলো না৷ শুধু একটা চক্কর দিয়ে যখন ফিরে যাচ্ছিল তখন আমরা গুলি ছুঁড়তে চাই৷ কিন্তু বাধা দেন আজিজ মাস্টার৷ ক্যাম্প থেকে আমাদের জানানো হলো, তাদের কাছে খবর এসেছে দেশ স্বাধীন হয়েছে৷ পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পণ করেছে৷ আনন্দে আমার দুচোখ দিয়ে পানি আসতে শুরু করল৷ ক্যাম্পে মুহুর্মুহু স্লোগান উঠছে জয় বাংলা৷ কণ্ঠ মেলাই আমি৷''

স্বাধীনতার পর

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর শুরু হয় আরেক জীবন৷ রাজিবপুর ফিরে আসেন তারামন৷ মাসহ ভাইবোনদের ফিরে পান৷ কিন্তু অভাব আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রাখে তারামনের জীবন৷ অন্যের বাড়িতে কাজ করে কোন রকমে জীবন কাটাচ্ছিলেন৷ ১৯৭৫ সালে সেই গ্রামেরই আবদুল মজিদের সাথে বিয়ে হয়৷ অভাব আর নদীভাঙনের শিকার হন বার বার৷ জীবন যেন আর চলে না৷ এরই মধ্যে যক্ষ্মা তাঁর শরীরে বাসা বাঁধে৷ ওষুধ কেনার টাকা নেই৷ চিকিৎসাও ঠিকমতো না হওয়ায় একটি ফুসফুস অকেজো হয়ে গেছে৷ ফলে এখনও শ্বাসকষ্টে ভুগছেন তারামন৷
যুদ্ধ শেষে ১৯৭৩ সালে তৎকালীন সরকার তারামন বিবিকে ‘বীর প্রতীক' উপাধিতে ভূষিত করেন৷ কিন্তু ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত তাঁকে খুঁজে বের করা সম্ভব হয়নি৷ ১৯৯৫ সালে ময়মনসিংহের একজন গবেষক প্রথম তাঁকে খুঁজে বের করেন৷ ভোরের কাগজে ছাপা হয় তাঁকে খুঁজে পাওয়ার রিপোর্ট৷ নারী সংগঠনগুলো তাঁকে ঢাকায় নিয়ে যান৷ ভোরের কাগজ তহবিল গঠন করে তাঁর জন্য৷ তারা একটি বাড়ি করার জন্য জায়গা ও আবাদি জমি কিনে দেয়৷ এ জমিতে আরডিআরএস নামের একটি সংস্থা গড়ে দেয় বাড়ি৷

সরকারি ভাতা নিজ জেলার নিকটতম শহর থেকে তুললে তাঁর শারীরিক ও অর্থনৈতিক উভয়দিক থেকেই সহজতর হবে বলে জানান তারামনছবি: Fazle Elahi Shwopon

সম্মান ও স্বীকৃতি

১৯৯৫ সালের ১৯ ডিসেম্বর তৎকালীন সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে তারামন বিবিকে বীরত্বের পুরস্কার তাঁর হাতে তুলে দেন৷ সরকার কুড়িগ্রাম শহরের উপকণ্ঠে আরাজী পলাশবাড়ীতে জমি দেয়৷ ২০০৭ সালে সেখানে একটি আধাপাকা বাড়ি তৈরি করেন কুড়িগ্রাম বিডিআরের তৎকালীন কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল সুমন বড়ুয়া৷ তবে এখন যে বাড়িতে বাস করছেন তারামন সেটিও নদী ভাঙনের হুমকির মুখে৷ তাঁর আশঙ্কা, সরকার দ্রুত সেখানে নদী ভাঙন রোধে পদক্ষেপ না নিলে রাজিবপুর উপজেলা, হাসপাতালসহ তাঁর বাড়িটিও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে৷ ‘‘হয়তো আবারও আমি হারিয়ে যাবো, যেমনভাবে হারিয়ে ছিলাম বহুদিন'' এভাবেই নিজের আতঙ্কের কথা জানান তারামন৷

সরকারের কাছ থেকে কী কী সুবিধা পাচ্ছেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, এখন ৫,৭০০ টাকা করে ভাতা পান তিনি৷ অথচ তাঁর অসুখের জন্য খরচ করতে হচ্ছে ছয় থেকে সাত হাজার টাকা করে৷ ২০০৩ সাল থেকে ‘নিজেরা করি' সংস্থার পক্ষ থেকে তাঁর চিকিৎসার খরচ দেওয়া হতো৷ কিন্তু ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে সেটা বন্ধ হয়ে যায়৷ এছাড়া তাঁর জন্য বরাদ্দ সরকারি ভাতা তুলতে রাজিবপুর থেকে তাঁকে জামালপুর যেতে হয়৷ আর সেখানে যাওয়া-আসা করতে খরচ হয় প্রায় ১২০০ টাকা৷ এই অবস্থায় তাঁর সরকারি ভাতা নিজ জেলার নিকটতম শহর থেকে তুললে তাঁর শারীরিক ও অর্থনৈতিক উভয়দিক থেকেই সহজতর হবে বলে জানান তারামন৷

স্বাধীন বাংলাদেশে তারামন বিবির প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘অনেক কষ্টের বিনিময়ে, ইজ্জতের বিনিময়ে, প্রাণের বিনিময়ে দেশটা স্বাধীন করেছি৷ কিন্তু যেভাবে দেশটিকে দেখতে চেয়েছিলাম সেভাবে এখনো দেশটিকে পাইনি৷ মুক্তিযোদ্ধারা সীমাহীন আত্মত্যাগের মধ্য দিয়ে যে দেশ স্বাধীন করেছে সেই দেশে তারা আজও অবহেলিত৷ এখনও মুক্তিযোদ্ধারা অনাহারে থাকেন৷ বিনা চিকিৎসায় মারা যান৷ আমি এই বাংলাদেশ দেখতে চাইনি৷'' তিনি সরকারের কাছে মুক্তিযোদ্ধাদের যথাযথ মর্যাদা প্রদান ও জীবনমান উন্নয়নে উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জানান৷ মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা কমপক্ষে পাঁচ-ছয় হাজার টাকা করার দাবি জানান তারামন৷ তরুণ প্রজন্ম ও দেশবাসীর কাছে তাঁর আহ্বান, ‘‘সোনার বাংলাদেশ পাওয়ার জন্যই আমরা যুদ্ধ করেছি৷ এই দেশকে যেন সবাই ভালোবাসে, শ্রদ্ধা করে৷ এই দেশে যেন আর খুন, খারাবি না হয়৷ ভবিষ্যতে আর কখনও যেন যুদ্ধ না হয়৷''

প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ