1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

'মুক্তিযোদ্ধাদের যথাযথ মর্যাদা নেই’

১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১২

মাতৃভূমির মুক্তির জন্য সামরিক চাকরি উপেক্ষা করে রণাঙ্গনে হাজির ছিলেন ক্যাপ্টেন ডা. সিতারা রহমান৷ আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসায় নেতৃত্ব দেন স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়৷ তবে স্বাধীন বাংলাদেশের অর্জন সম্পর্কে তাঁর মূল্যায়ন ভিন্ন৷

১৯৭১ সালে ক্যাপ্টেন ডা. সিতারা রহমান বীর প্রতীকছবি: privat

রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ, আত্মত্যাগ, স্বাধীনতা, মুক্তি এবং একটি সার্বভৌম জাতির জন্মের বছর ১৯৭১৷ তাই একাত্তরের প্রতিটি দিনই ছিল ঘটনাবহুল৷ ডয়চে ভেলের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে তারই কয়েকটি ঘটনা তুলে ধরলেন বীর সাহসী নারী ক্যাপ্টেন ডা. সিতারা রহমান৷ এক আহত মুক্তিযোদ্ধার করুণ বিদায় এখনও নাড়া দেয় সিতারাকে৷

তিনি জানান, ‘‘ছেলেটার নাম আহসান উল্লাহ৷ বাড়ি নরসিংদী৷ তার কথা মনে পড়লে আমি এখনও খুব অপরাধী বোধ করি এবং সম্ভবত যতোদিন বেঁচে থাকবো আমার এ বোধ একইভাবে আমাকে নাড়া দেবে৷ সে যুদ্ধ করতে গিয়ে আহত হয়ে আসল৷ হাতে-পায়ে ক্ষত এবং কিছু কাটা কাটা৷ তাকে আমাদের হাসপাতালে রাখা হলো৷ কিন্তু রাত বারোটার দিকে আমাকে একজন এসে বলল, ছেলেটির খিঁচুনি হচ্ছে৷ শুনে আশ্চর্য হলাম৷ ডা. জাফর ভাইও ছিলেন৷ আমরা গিয়ে দেখলাম৷ কিন্তু দেখা গেল, ছেলেটার ধনুষ্টংকার হয়েছে৷ ফলে তাকে তো সেখানে রাখা মুশকিল৷ আমাদের ওখানে রেড ক্রসের একটা অ্যাম্বুলেন্সের মতো গাড়ি ছিল৷ পরের দিন সকালে তাকে ঐ গাড়িতে করে আগরতলা হাসপাতালে পাঠিয়ে দিলাম৷ সেখানে ছেলেটা মারা যায়৷ কতোদিন বেঁচে ছিল কিংবা কবে মারা যায় সেটাও জানতে পারিনি৷ আমাদের তো যোগাযোগের তেমন সুযোগ ছিল না৷ বেশ কিছুদিন পর ডা. রায় চৌধুরী আসলেন৷ তখন উনাকে জিজ্ঞেস করলাম ছেলেটার কথা৷ তিনি জানালেন যে, দুঃখিত, ছেলেটা মারা গেছে৷ তাঁর এই উত্তর শুনে আমি একদম থ হয়ে গেলাম৷ আর কোন কথাই আমি জিজ্ঞেস করতে পারিনি৷''

একাত্তরে বাংলাদেশের সেনাপ্রধানের সঙ্গে সিতারাছবি: Dr. Sitara Rahman

আরেকদিন ভারতীয় সেনা সদস্যদের বহনকারী দু'টি গাড়ি পাশের খাদে পড়ে গেলে, রাতভর জেগে তাদের উদ্ধার ও চিকিৎসা কাজে কীভাবে তৎপর ছিলেন সেই ঘটনা জানালেন ক্যাপ্টেন সিতারা, তাঁর ভাষায়, ‘‘অক্টোবরের শেষের দিকে৷ হাসপাতালের সাথে তৈরি একটি বাঁশের ঘর ছিল৷ সেখানে আমাদের খাওয়া-দাওয়া, বৈঠক করা সবই হতো৷ সেখানে বসে রাতে আমি এবং ডা. নাজিম কথা বলছিলাম৷ হঠাৎ করে হুড়মুড় করে বিকট আওয়াজ হতে লাগল৷ এরপরেই শুনতে পেলাম বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার আসছে৷ আমরা তখন রেড ক্রসের অ্যাম্বুলেন্সটা নিয়ে ঘটনাস্থলে গেলাম৷ গিয়ে দেখি একটি সেনা বহর যাচ্ছিল৷ কিন্তু সেনা ভর্তি টাটা কোম্পানির দু'টি ট্রাক পাশের খাদে পড়ে গেছে৷ খাদটি প্রায় ৫০-৬০ ফুট গভীর৷ আমরা তো বুঝতে পারছি না কী করা যায়৷ এদিকে আমাদেরকে দেখে তারাও খুব আশ্চর্য হয়ে গেছে যে, এতো রাতে এখানে মেয়ে কোথা থেকে আসল৷ তখন নাজিম ভাই ব্যাপারটা বুঝতে পেরে ভাঙা ভাঙা হিন্দিতে বললেন যে, ‘ইয়ে মেরে কমান্ডিং অফিসার হ্যায়৷ ক্যাপ্টেন সিতারা৷' তখন তারা আমাকে স্যালুট করা শুরু করল৷ এরপর আমি গাড়িতে করে আহত কয়েকজনকে নিয়ে হাসপাতালে আসি৷ সারা রাতই চলতে থাকল উদ্ধার কাজ এবং ঘটনাস্থল থেকে আহতদের হাসপাতালে নিয়ে আসা৷ আমরা রাত জেগে সবার চিকিৎসা করতে থাকলাম৷ আমার মনে আছে, ট্রাকের চালকের উপরে গাড়ির সম্পূর্ণ ভার পড়েছিল৷ তাকে আমরা বাঁচাতে পারিনি৷ পরদিন সকালে সেনা বাহিনীর গাড়ি এসে আহতদের আমাদের হাসপাতাল থেকে নিয়ে যায়৷ আমি এখনও ভাবলে খুব শিহরিত হই যে, সেদিন কীভাবে আমি সাহস করে এসবকিছু করতে পেরেছিলাম৷''

১৯৭১ সালে সাময়িকভাবে স্থাপিত বাংলাদেশ হাসপাতালছবি: Dr. Sitara Rahman

বহু ত্যাগ তিতিক্ষা ও প্রাণের বিনিময়ে পাওয়া স্বাধীন বাংলাদেশের অগ্রগতি ও অর্জন সম্পর্কে বীর প্রতীক সিতারা রহমান বলেন, ‘‘আমি খুব অপমানিত বোধ করি৷ কারণ বাংলাদেশে কিছু হয়নি৷ কিছু রাস্তা-ঘাট, ঘর-বাড়ি হয়েছে৷ কিন্তু নৈতিকতা বলতে কিছু নেই৷ এখনও দলাদলি চলছে৷ কে কার ক্ষতি করবে, কে কাকে টেনে নিচে নামাবে - এ রকম প্রতিযোগিতা চলতেই আছে৷ সর্বত্র যেন হিংসা আর বিদ্বেষ৷ তবে কিছুটা স্বস্তি খুঁজে পাই যখন দেখি বাংলাদেশের মানুষ এখন বিশ্বের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ছে এবং দেশের উন্নয়নের জন্য কাজ করছে৷ নিউইয়র্কে কিশোরগঞ্জ বিভাগের মুক্তিযোদ্ধাদের একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে গিয়ে দেখি, প্রায় চার-পাঁচ শ' মতো বাংলাদেশি৷ এমনকি আমার গ্রামের বাড়ির পাশ থেকেও অ্যামেরিকায় এসেছে এমন অনেককে পেলাম৷ এসব দেখে মনে হলো আমার দেশ স্বাধীন না হলে তো এটা হতো না৷'' তবে যারা দেশের জন্য জান দিয়েছে, রক্ত দিয়েছে তাদের কোন সম্মান নেই বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বীরপ্রতীক সিতারা রহমান৷

প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ