1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

নারী মুক্তিযোদ্ধাদের কাহিনি

হোসাইন আব্দুল হাই২৮ নভেম্বর ২০১২

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে ১৯৫৬ সালের ১৪ই সেপ্টেম্বর জন্ম নাজনীন বানুর৷ পিতা গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া, মা সাকিবুন্নেসা৷ দাউদপুর-পুটিনা উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিলেন নাজনীন৷

ছবি: National Monument of Savar

বিদ্যালয় জীবনেই ছাত্রলীগের সাথে জড়িত হন নাজনীন বানু৷ ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে তিনি বিদ্যালয় থেকে নিজ হাতে পতাকা নিয়ে মিছিলে নেতৃত্ব দেন৷ ১৯৭০ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষা পাস করে কলেজে ভর্তির কথা ভাবছিলেন নাজনীন৷ তবে মুক্তিযুদ্ধ শুরুর আগের উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে ঢাকায় গিয়ে কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ হয়নি৷ তাই যুদ্ধের সময় গ্রামেই ছিলেন তিনি৷

রূপগঞ্জ গ্রামটি এমন একটি অবস্থানে যে, ভারতের আসাম, ত্রিপুরা রাজ্য থেকে ঢাকায় যেতে হলে এই গ্রাম দিয়েই সোজা যাওয়া যেতো৷ তাই ২৬শে মার্চ একজন পুলিশ সদস্য রাজারবাগ পুলিশ লাইন থেকে কুমিল্লা হয়ে ভারত যাওয়ার পথে রূপগঞ্জে যাত্রাবিরতি করেন৷ এসময় তাঁর কাছ থেকেই ঢাকার প্রকৃত অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারে রূপগঞ্জবাসী৷ এরপর থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের ভারত যাওয়া কিংবা ভারত থেকে দেশের ভেতরে আসার পথের মাঝে বিশ্রাম নেওয়ার স্থানে পরিণত হয়েছিল রূপগঞ্জ৷

ডয়চে ভেলের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে নাজনীন বানু জানান, ‘‘আমাদের গ্রামের মানুষগুলোও খুব রাজনৈতিক সচেতন ছিলেন৷ ফলে আমরাও বেশ ছোট থেকেই সংগ্রামী চেতনায় বড় হয়েছি৷ স্কুলে থাকতেই আমি মাও সেতুং ও লেনিনসহ সংগ্রামী বইগুলো পড়ে শেষ করি৷ ফলে আমি একটু বেশিই সাহসী ছিলাম৷ আমাদের গ্রামে মুক্তিযোদ্ধারা আসলে গ্রামের মানুষরা তাদের ভাগ করে নিয়ে নিজেদের বাড়িতে আশ্রয় দিতেন৷ আর তাদের অস্ত্র জমা নিয়ে সেগুলো সংরক্ষণ এবং খাবার ও সেবা-যত্নের দায়িত্ব ছিল আমাদের উপর৷ আমি যেসব অস্ত্র নিয়ে লুকিয়ে রাখতাম এবং যত্ন করে সংরক্ষণ করতাম সেগুলোর ছোঁয়া যেন এখনও আমার অনুভূতিতে এবং দৃষ্টিতে জ্বলজ্বল করে ভাসে৷''

Week 48/12 Women 1: Najneen Banu - MP3-Mono

This browser does not support the audio element.

নাজনীনদের গ্রামের তিনদিকেই নদী থাকার কারণে বেশ সুবিধা হয়েছিল মুক্তিযোদ্ধাদের৷ নাজনীন এবং তাঁর সঙ্গীরা সবসময় সেই নদীর দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতেন এবং পাক সেনাদের আসতে দেখলেই তারা মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে খবর পৌঁছে দিতেন৷ তাদের খবরের উপর ভিত্তি করে মুক্তিযোদ্ধারা প্রস্তুতি গ্রহণ করে পাক সেনাদের গতিরোধ করতেন কিংবা দ্রুত সরে গিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতেন৷ ফলে দেখা গেছে, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রায় সব অঞ্চলেই পাক সেনারা হানা দিলেও রূপগঞ্জে হানা দিয়ে কখনও সফল হয়নি পাক বাহিনী৷ এছাড়া ভরাবন্যার সময় নৌকায় করে এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে ছুটে বেড়িয়েছেন এবং মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তায় কাজ করেছেন নাজনীন এবং তাঁর সঙ্গীরা৷

দেশমাতৃকার মুক্তির জন্য বীর সাহসী ছেলেরা কীভাবে উদ্দীপনার সাথে যুদ্ধে রওয়ানা দিতেন সেই দৃশ্য এখনও নাজনীনকে আবেগ আপ্লুত করে৷ তিনি জানান, ‘‘নরসিংদীর কাছে পাঁচদনার যুদ্ধ হয়েছিল৷ সেই যুদ্ধের জন্য যখন বীর ছেলেরা রওয়ানা দিচ্ছিলেন, তখন আমি খুব আশ্চর্য হয়েছিলাম, যে তারা যুদ্ধের সাজে সেজে যেন উৎসবে যাওয়ার মতো যুদ্ধ করতে যাচ্ছে৷ যুদ্ধে গিয়ে যে নিজের প্রাণ বিসর্জন দিতে হতে পারে সেই কথা যেন কারো মনে হয়নি৷ সবাই হাসিমুখে যুদ্ধে যাচ্ছে এবং তাদের আত্মীয়-স্বজনরাও তাদের সেভাবে তৈরি করে যুদ্ধে পাঠাচ্ছেন৷ এমনকি সেই যুদ্ধে গিয়ে আমাদের গ্রামের মুক্তার হোসেন মারা যান৷ সেই স্মৃতি আমি কখনই ভুলতে পারি না৷''

দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ঢাকায় গিয়ে জগন্নাথ কলেজে ভর্তি হন নাজনীন৷ সেখান থেকে উচ্চ মাধ্যমিক এবং পরে বাংলায় স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন তিনি৷ তবে ১৯৭৩ সালেই তিনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন৷ পরবর্তীতে আরো ভালো ভালো চাকুরির সুযোগ পেলেও তিনি মনে করেন যে, পরবর্তী প্রজন্মকে দেশপ্রেম ও মূল্যবোধ দিয়ে গড়ে তুলতে হলে তাদেরকে বিদ্যালয়ের প্রথম ধাপেই সঠিক শিক্ষা দিতে হবে৷ তাই অন্য কোন পেশায় না গিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়েই শিক্ষকতা করে যাচ্ছেন নাজনীন বানু৷ বর্তমানে ঢাকায় দিলকুশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি৷

এছাড়া তরুণ সংঘ ট্রাস্ট এবং অপরাজেয় বাংলাসহ বিভিন্ন সমাজসেবামূলক সংগঠনের সাথে কাজ করেছেন এই সাহসী ও বিদূষী নারী৷ বিগত চার দশকে বাংলাদেশের অগ্রগতি এবং বর্তমানে দেশের অবস্থা নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করেন নাজনীন বানু৷ তিনি মনে করেন, দেশ স্বাধীন করার জন্য যারা হাসতে হাসতে জীবন দিতে যুদ্ধের ময়দানে গিয়েছিলেন তারা এমন একটি বাংলাদেশ চাননি৷ বরং তাঁরা একটি উন্নত, সুখী-সমৃদ্ধ ও ন্যায্য অধিকারের শান্তিময় সমাজ চেয়েছিলেন৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ