1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি চান গীতা ও ইরা কর

১১ জানুয়ারি ২০১২

পাকিস্তানি দোসরদের হাতে বাবা ও কাকার খুনের প্রতিশোধ নিতে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রত্যয় নিয়েছিলেন গীতা ও ইরা কর৷ প্রশিক্ষণ নিয়ে সীমান্ত এলাকায় যান মুক্তিযোদ্ধা দুই বোন৷ কিন্তু অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করার সুযোগ হয়নি তাঁদের৷

মুক্তিযোদ্ধা গীতা করছবি: Motilal Adhikary

কলকাতার গোবরা শিবিরে প্রথম দফায় প্রশিক্ষণ নিয়ে সিলেট সীমান্তে যান দুই গীতা আর ইরা৷ মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেবেন৷ কিন্তু সেখানে কোন পথ খুঁজে না পেয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনার জন্য নারী নেত্রী সাজেদা চৌধুরীর কাছে টেলিগ্রাম করা হয়৷ টেলিগ্রামের উত্তর মেনে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে আগ্রহী ১৫ জন মেয়ের দলটিকে গাড়িতে করে আগরতলা পৌঁছনোর ব্যবস্থা করা হয়৷ সেখান থেকে তাদেরকে বিশ্রামগঞ্জ হাসপাতালে কাজে যোগ দিতে বলা হয়৷ বিশ্রামগঞ্জে কাজ শুরু করলেও অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করার দৃঢ় ইচ্ছা ছিল তাদের৷

মুক্তিযুদ্ধের সময় ইরা করছবি: Motilal Adhikary

ডয়চে ভেলের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে গীতা কর জানান, ‘‘আমরা যুদ্ধ করে মরতে চাই৷ কিন্তু পথের মধ্যেই না খেয়ে মারা গেলে তো কোন লাভ হবে না৷ তাই সাজেদা চৌধুরীর ফেরত টেলিগ্রামের নির্দেশনা অনুসারে আগরতলা পৌঁছাই৷ এরপর বিশ্রামগঞ্জে গিয়ে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ক্যাপ্টেন ডা. সেতারা বেগম, ডা. এম এ মবিন, ডা. নাজিম, ডা. মোর্শেদ সহ সবাই আমাদের অভিনন্দন জানালেন৷ তাঁরা বললেন যে, তোমরা এসো৷ আমাদের সাথে কাজ করো৷ তোমাদের আর কোন চিন্তা নেই৷ কিন্তু তখনও আমরা বলছি যে, আমরা বন্দুক হাতে চাই৷ যেহেতু আমরা তাত্ত্বিক প্রশিক্ষণ নিয়েছি৷ এসব কথা বলে আমরা প্রশিক্ষণের সনদও দেখালাম৷ তবুও আমাদেরকে চিকিৎসা সেবার কাজেই যোগ দিতে বলা হলো৷ সেখানে সুলতানা কামাল, তাঁর বোন সাঈদা কামাল, নিলীমা বৈদ্য, বাসনা চক্রবর্তী, পদ্মা রহমানসহ অনেকের সাথেই কাজ করার সুযোগ হয়েছে আমাদের৷ এসময় আমাদের মনে একটু আশার সঞ্চার হলো যে, আমরা শেষ পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের জন্য কাজ করার সুযোগ পাচ্ছি৷''

দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও জানুয়ারি পর্যন্ত বিশ্রামগঞ্জ হাসপাতালেই ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা গীতা ও ইরা কর৷ এতোদিন পর্যন্ত কোন আত্মীয় স্বজনের সাথে যোগাযোগ ছিল না তাদের৷ তাই সেখান থেকে বর্তমান গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর সাথে সোনামুড়া সীমান্ত দিয়ে কুমিল্লায় পৌঁছান৷ এরপর ঢাকায় এসে ইস্কাটন রোডে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে কাজ শুরু করেন তাঁরা৷ সদ্য স্বাধীন দেশে গরিব দুঃস্থ মানুষের কাছে চিকিৎসা সেবাসহ মৌলিক সুযোগ-সুবিধা পৌঁছে দিতে ‘গ্রামে চলো, গ্রাম গড়ো' স্লোগানে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র৷ সেখানে স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক হিসেবে অবসর নিয়েছেন গীতা কর৷ আর ইরা কর এখনও সেখানে কাজ করে যাচ্ছেন৷ ইতিমধ্যে ফ্রান্স থেকে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে দেড় বছরের কোর্স করেন গীতা কর এবং ইরা কর একই জায়গা থেকে অণু-জীববিজ্ঞান বিষয়ে কোর্স সম্পন্ন করেন৷

এখন পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পাননি গীতা করছবি: Motilal Adhikary

দেশ স্বাধীন করা এবং দেশ গড়ার কাজে এমন একনিষ্ঠভাবে কাজ করেও এখন পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পাননি সাহসী ও ত্যাগী দুই বোন গীতা ও ইরা কর৷ স্বাধীনতার চল্লিশ বছর পার হলেও এখনও কেন নিজেদের কাজের স্বীকৃতি পাননি - এমন প্রশ্নের উত্তরে গীতা কর জানালেন, ‘‘ওসমানির কাছ থেকে সনদ পাওয়ার পর আমরা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সনদ পাওয়ার জন্য চেষ্টা করি৷ বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ এবং কাগজ-পত্র জমা দিতে বেশ কিছু টাকা খরচও করেছি৷ কিন্তু কোন কাজই হয়নি৷ স্থানীয় পর্যায় থেকে বলে ঢাকায় মন্ত্রণালয়ে যেতে, আর মন্ত্রণালয় বলে স্থানীয় পর্যায়ে যোগাযোগ করতে৷ এভাবে ঘুরে ঘুরে তিক্ত অভিজ্ঞতার কারণে এখন আশা ছেড়ে দিয়েছি৷ এখন আমি গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে অবসর গ্রহণের পর আর আয় উপার্জনও নেই৷ তাছাড়া শারীরিকভাবেও অসুস্থ হয়ে পড়েছি বলে আর ওদের পেছনে ঘুরতেও পারছি না৷ এখন একটিই প্রত্যাশা যদি মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমার নামটা সরকারের খাতায় উঠতো, তাহলে হয়তো মরার সময় জাতীয় পতাকা দিয়ে আমার দেহটা ঢেকে দিতো৷ তাই এখন আমার একমাত্র ইচ্ছা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ৷''

প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ