মুক্ত বাণিজ্যের বিরোধী হিসেবে ক্ষমতায় এসে ‘অ্যামেরিকা ফার্স্ট' অগ্রাধিকার বুলির মোড়ক অটুট রাখতে বদ্ধপরিকর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প৷ অ্যাপেক শীর্ষ সম্মেলনে অ্যামেরিকাকে ছাড়াই চীন বিকল্প কাঠামোর প্রস্তাব রাখছে৷
বিজ্ঞাপন
এশীয়-প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশগুলির গোষ্ঠী অ্যাপেক-এর শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে ভিয়েতনামে পৌঁছেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ বর্তমান এশিয়া সফরে এটা তাঁর চতুর্থ গন্তব্য৷ পূর্বসূরি বারাক ওবামার আমলে ট্রান্স-অ্যাটলান্টিক পার্টনারশিপ বা টিপিপি বাণিজ্য চুক্তি বর্জন করে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়েছিলেন তিনি৷ এবার ‘মুক্ত ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল' নামে বাণিজ্য ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সহযোগিতার এক কাঠামোর প্রস্তাব দিতে চান তিনি৷ অর্থাৎ অ্যাপেক-এর কাঠামোর বাইরের কিছু দেশকেও এই উদ্যোগে শামিল করতে চান ট্রাম্প৷ শেষ পর্যন্ত এই প্রস্তাবের স্পষ্ট রূপরেখা জানা যাবে কিনা, তা নিয়ে অবশ্য সংশয় থেকেই যাচ্ছে৷
অ্যামেরিকাকে ছাড়াই টিপিপি চুক্তি বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করে চলেছে বাকি ১১টি দেশ৷ কিন্তু নানা ক্ষেত্রে অস্পষ্টতা ও বিভ্রান্তির কারণে এই কাঠামো হুমকির মুখে পড়েছে৷ এই ১১টি দেশ এক্ষেত্রে নতুন বোঝাপড়ায় পৌঁছেছে বলে যে গুজব শোনা গিয়েছিল, ক্যানাডা তা অস্বীকার করেছে৷ তবে ঐকমত্যের লক্ষ্যে জোরালো উদ্যোগ চলছে বলে বিভিন্ন মহলে শোনা যাচ্ছে৷ বিশ্বের সবচেয়ে বড় মুক্ত বাণিজ্য এলাকার স্বপ্ন আপাতত কিছুটা স্তিমিত রয়েছে৷
ট্রাম্প প্রশাসনের আমলে অ্যামেরিকা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় এবার সেই শূন্যস্থান পূরণ করতে এগিয়ে আসছে চীন৷ এমনকি অ্যামেরিকার দাবি মেনে চীন নিজস্ব আর্থিক বাজার বিদেশি কোম্পানিগুলিদের জন্য আরও উন্মুক্ত করতে রাজি হয়েছে৷ নিজস্ব স্বার্থেই আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রবক্তা চীন৷ তবে টিপিপি-র বিকল্প হিসেবে অ্যামেরিকাকে ছাড়াই চীন ‘রিজিয়নাল ইকোনমিক কমপ্রিহেনসিভ পার্টনারশিপ' বা আরসিইপি নামের এক কাঠামো সৃষ্টি করার উদ্যোগ নিচ্ছে৷ আসিয়ান ছাড়াও তাতে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও ভারতকে অন্তর্গত করতে চায় চীন৷
অ্যাপেক শীর্ষ সম্মেলনে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও ট্রাম্প আঞ্চলিক সহযোগিতার প্রশ্নে যে যার নিজস্ব স্বপ্ন তুলে ধরতে চলেছেন৷ বর্তমান অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে শেষ পর্যন্ত কোন কাঠামো বাস্তবে কার্যকর করা সম্ভব হয়, তা জানার জন্য অপেক্ষা করতে হবে৷
এক নজরে ‘আসিয়ান’-এর ১০টি সদস্যদেশ
‘অ্যাসোসিয়েশন অফ সাউথ-ইস্ট এশিয়ান নেশনস’ বা আসিয়ানকে এশীয় সংহতি ও সহযোগিতার প্রতীক হিসেবে উদযাপন করছেন আসিয়ান নেতারা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Rahim
আসিয়ানের নেতৃবর্গ
আসিয়ান প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬৭ সালের ৮ই আগস্ট তারিখে৷ রাজনীতি ও নিরাপত্তা, অর্থনীতি ও উন্নয়ন, সমাজ ও সংস্কৃতি প্রমুখ বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রগতি ও সহযোগিতার জন্য সচেষ্ট এই রাষ্ট্রসমিতি – বাস্তবে যা খুব সহজ নয়, যেহেতু আসিয়ানের একক সদস্যদের ধারাপ্রকৃতিতে বিপুল পার্থক্য রয়েছে ও সর্বসম্মতিক্রমে ছাড়া আসিয়ান কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে না৷
ছবি: Reuters/E. de Castro
ব্রুনেই
জনসংখ্যা: ৪ লাখ ২৯ হাজার</br> আয়তন: ৫,৭৬৫ বর্গকিলোমিটার</br> মাথা পিছু গড় আয়: ৮০,০০০ মার্কিন ডলার (২০১৬) </br> ১৯৮৪ সাল যাবৎ আসিয়ানের সদস্য</br> ছবিতে: ব্রুনেই-এর রাজধানী বন্দর সেরি বেগাওয়ান-এর সুলতান ওমর আলি সাইদুদ্দিন মসজিদ৷
ছবি: Fotolia
কাম্বোডিয়া
জনসংখ্যা: ১ কোটি ৫৬ লাখ ২৬ হাজার</br> আয়তন: ১,৮১,০০০ বর্গকিলোমিটার</br> মাথা পিছু গড় আয় (বছরে): ৩,৩৪০ মার্কিন ডলার (২০১৬) </br> ১৯৯৯ সাল যাবৎ আসিয়ানের সদস্য</br> ছবিতে: ইউনেস্কো স্বীকৃত আংকোর ভাট মন্দির৷
ছবি: Erik Jan Ouwerkerk
ইন্দোনেশিয়া
জনসংখ্যা: ২৫ কোটি ৬০ লাখ</br> আয়তন: ১৯,০৪,০০০ বর্গকিলোমিটার</br> মাথা পিছু গড় আয় (বছরে): ১০,৫৩৭ মার্কিন ডলার (২০১৬) </br> ১৯৬৭ সাল যাবৎ আসিয়ানের সদস্য</br> ছবিতে: ইউনেস্কো স্বীকৃত বোরোবুদুর বৌদ্ধমন্দির৷
ছবি: A Brit and a Broad
লাওস
জনসংখ্যা: ৬৪ লাখ ৯২ হাজার</br> আয়তন: ২,৩৬,৮০০ বর্গকিলোমিটার</br> মাথা পিছু গড় আয় (বছরে): ৫,৭৪৮ মার্কিন ডলার (২০১৬) </br> ১৯৯৭ সাল যাবৎ আসিয়ানের সদস্য</br> ছবিতে: লুয়াং প্রাবাং-এর কাছে কুয়াং সি জলপ্রপাত৷
ছবি: Imago/J. Langley
মালয়েশিয়া
জনসংখ্যা: ৩ কোটি ১৪ লাখ</br> আয়তন: ৩,২৯,৯০০ বর্গকিলোমিটার</br> মাথা পিছু গড় আয় (বছরে): ২৫,৫০০ মার্কিন ডলার (২০১৬) </br> ১৯৬৭ সাল যাবৎ আসিয়ানের সদস্য</br> ছবিতে: রাজধানী কুয়ালা লামপুরের পেট্রোনাস টুইন টাওয়ার৷
ছবি: Saeed Khan/AFP/Getty Images
মিয়ানমার
জনসংখ্যা: ৫ কোটি ১৪ লাখ</br> আয়তন: ৬,৭৬,৫০০ বর্গকিলোমিটার</br> মাথা পিছু গড় আয় (বছরে): ৫,৫১৪ মার্কিন ডলার (২০১৬) </br> ১৯৯৭ সাল যাবৎ আসিয়ানের সদস্য</br> ছবিতে: রেঙ্গুনের গোল্ডেন প্যাগোডা৷
ছবি: AFP/Getty Images
ফিলিপাইন্স
জনসংখ্যা: ১০ কোটি ৩৩ লাখ ৭১ হাজার</br> আয়তন: ৩,০০,০০০ বর্গকিলোমিটার</br> মাথা পিছু গড় আয় (বছরে): ৮,৩২৫ মার্কিন ডলার (২০১৬) </br> ১৯৬৭ সাল যাবৎ আসিয়ানের সদস্য</br> ছবিতে: লুজনে পাহাড়ের ঢালে ধানচাষ; ইউনেস্কো স্বীকৃত৷
ছবি: Imago/M. Runkel
সিঙ্গাপুর
জনসংখ্যা: ৫৫ লাখ ৩৫ হাজার</br> আয়তন: ৭০৭ বর্গকিলোমিটার</br> মাথা পিছু গড় আয় (বছরে): ৮৫,২০০ মার্কিন ডলার (২০১৬) </br> ১৯৬৭ সাল যাবৎ আসিয়ানের সদস্য</br> ছবিতে: সিঙ্গাপুরের অপেরা ভবন৷
ছবি: picture-alliance/robertharding/A. Hall
থাইল্যান্ড
জনসংখ্যা: ৬ কোটি ৫৩ লাখ</br> আয়তন: ৫,১৩,০০০ বর্গকিলোমিটার</br> মাথা পিছু গড় আয় (বছরে): ১৬,৯৫৯ মার্কিন ডলার (২০১৬) </br> ১৯৬৭ সাল যাবৎ আসিয়ানের সদস্য</br> ছবিতে: ব্যাংককের রাজপ্রাসাদ৷
ছবি: DW/S. Bandopadhyay
ভিয়েতনাম
জনসংখ্যা: ৯ কোটি ২৭ লাখ</br> আয়তন: ৩,৩১,৯৬০ বর্গকিলোমিটার</br> মাথা পিছু গড় আয় (বছরে): ৫,৯৫৭ মার্কিন ডলার (২০১৬) </br> ১৯৯৫ সাল যাবৎ আসিয়ানের সদস্য</br> ছবিতে: হালং বে; ইউনেস্কো স্বীকৃত৷