1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মুক্ত সাংবাদিকতায় যত বাধা

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৩ মে ২০২১

বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম এবং সাংবাদিকতা এক সংকটকাল পার করছে। প্রেস ফ্রিডম বা মুক্ত গণমাধ্যম বিষয়টি কার জন্য? গণমাধ্যম মুক্ত হলেই কি সাংবাদিকরা মুক্ত সাংবাদিকতা করতে পারেন?

ফাইল ফটোছবি: Mortuza Rashed/DW

ওয়ার্ল্ড প্রেস ফ্রিডম ডে-কে সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বাক স্বাধীনতা ও মানবাধিকার বিষয়ক আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান আর্টিকেল নাইনটিন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাতে বাংলাদেশে ‘মুক্ত সাংবাদিকতার'  চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর করোনার মধ্যে বাংলাদেশে ৩ জন সাংবাদিক অপহৃত ও এক জন নির্যাতনের শিকার হয়ে নিহত হয়েছেন। এছাড়া মোট ২৫৬ জন সাংবাদিক প্রভাবশালী পক্ষের আক্রমণের শিকার হয়েছেন। তিনটি  অনলাইন যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ করা হয়েছে বা তাদের তথ্য বা সংবাদ কোনো না কোনোভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। সাংবাদিক ও সামাজিক মাধ্যম কর্মীদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের (২০১৮) আওতায় মামলার ঊর্ধ্বগতি আশঙ্কাজনক বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে৷

‘‘বাংলাদেশের সাংবাদিকরা সবচেয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকেন’’

This browser does not support the audio element.

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ২০২০ সালে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের ১৭২টি মামলার মধ্যে ৭০টি মামলা দায়ের করা হয়েছে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত দেশে মোট ৬৩টি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে। এসব মামলায় আসামি করা হয় ৮৬ জনকে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, এর মধ্যে আট জন সাংবাদিক। এছাড়া অজ্ঞাত আরো ৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। ৫০ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে দুই জন সাংবাদিক রয়েছেন।

১১ জনের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা হয়েছে। অনলাইনে মত প্রকাশের কারণে ৪১০টি মামলা দায়েরের ঘটনা ঘটেছে, সেগুলোর মধ্যে ৪টি আদালত অবমাননার মামলা৷

করোনার কারণে মিডিয়া হাউজগুলোর আয় সঙ্কুচিত হওয়ায় ২০২০ সালে  এক হাজার ৬০০ সাংবাদিক চাকরি হারিয়েছেন বলেও প্রতিবেদনে দাবি করা হয়৷

বাংলাদেশে গণমাধ্যমের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, "সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সাংবাদিকের স্বাধীনতা নিশ্চিত করে কিনা সেটা একটি বড় প্রশ্ন। কারণ, এখানে স্টেট এবং নন স্টেট ফ্যাক্টর কাজ করে।” 

‘‘আমাদের ওপর সরকার বা মালিক পক্ষ নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে’’

This browser does not support the audio element.

তার মতে, বাংলাদেশের সংবিধান মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছে। কিন্তু সেটা শর্তসাপেক্ষ এবং আইন দিয়ে নিয়ন্ত্রিত। আর নন স্টেট ফ্যাক্টরের মধ্যে মালিক পক্ষও আছে। তারা যদি সাংবাদিকতাকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে ফেলে দেন, তাহলে কিন্তু সাংবাদিক স্বাধীন নয়। সেখানে সম্পাদকও অসহায় হয়ে পড়তে পারেন। বাংলাদেশের সাম্প্রতিক কিছু ঘটনায় সেটা স্পষ্ট হয়েছে।

তিনি বলেন, "একজন ব্যক্তির মালিকানায় কতগুলো সংবাদমাধ্যম থাকবে, সেই প্রশ্নের সমাধানও জরুরি হয়ে উঠেছে। কারণ, এটার নিয়ন্ত্রণ না থাকলে  তা ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে। তা রাষ্ট্র শক্তিকেও চ্যালেঞ্জ করে বসতে পারে।”

আর্টিকেল নাইনটিনের বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ফারুখ ফয়সল মনে করেন, বাংলাদেশে বিবিসির মতো পাবলিক ব্রডকাস্টারের পরিবেশ তৈরি হয়নি। ফলে যা হয়েছে, তা হলো, হয় সরকারের নিয়ন্ত্রণে অথবা ব্যক্তি মালিকানার নিয়ন্ত্রণে। ফলে সাংবাদিক নিয়ন্ত্রণের মধ্যেই থাকছে।

তিনি বলেন, ব্যক্তি মালিকানার প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপনসহ নানা স্বার্থ থাকে। সেই স্বার্থের বাইরে গিয়ে কোনো সাংবাদিকের পক্ষে ওই প্রতিষ্ঠানে স্বাধীনভাবে কাজ করা সম্ভব নয়। আবার এখানে নিয়োগ বা চাকরিচ্যুত করা হয় মালিকপক্ষের ব্যক্তিগত পছন্দ অপছন্দের ভিত্তিতে। এসব কারণে বাংলাদেশের সাংবাদিকরা সবচেয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকেন।

‘‘রাষ্ট্র শক্তিকেও চ্যালেঞ্জ করে বসতে পারে’’

This browser does not support the audio element.

সাংবাদিকদের ওপর হামলা, মামলার যে দৃশ্য বাংলাদেশে দেখা যায় তাতে স্পষ্ট যে, যারা ক্ষমতাধর তারা সাংবাদিকদের নিয়ন্ত্রণ করতে চান। এর মধ্যে প্রশাসনের লোকজন যেমন আছেন, আছেন রাজনৈতিক নেতা-কর্মী, স্থানীয় মাসলসম্যানও।

তবে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)-এর হিসেব মতে, গত বছর খবর প্রকাশের জেরে সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ৯টি মামলা হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৪৯ জন সাংবাদিক।

একাত্তর টেলিভিশনে সাংবাদিক নাদিয়া শারমিন বলেন, "আমরা যারা মাঠ পর্যায়ে সাংবাদিকতা করি, তারা স্বাধীনভাবে কাজ করতে চাই বা চেষ্টা করি। তবে আমাদের ওপর সরকার বা মালিক পক্ষ তাদের প্রয়োজনে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে। আমাদের ওপর সরাসরি যার শক্তি প্রয়োগের ক্ষমতা বেশি, তার নিয়ন্ত্রণও বেশি।” 

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ