মুখচ্ছবি দিয়ে অপরাধী ধরার ক্ষেত্রে পথিকৃৎ লন্ডনের পুলিশ
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২২২০১৪ সালের ২৮শে আগস্ট লন্ডনের ঘটনা৷ ১৪ বছরের অ্যালিস গ্রস দুপুরে হাঁটতে বেরিয়েছিল৷ চারটে ছাব্বিস মিনিটে একটি ক্যামেরায় তার ছবি উঠেছিল৷ তারপর থেকেই সে নিখোঁজ৷ ২০০৫ সালের সন্ত্রাসী হামলার পর লন্ডনের পুলিশ এত বড় আকারের অভিযান চালায়নি, যেমনটা তার সন্ধানে করা হয়েছে৷
এ ক্ষেত্রে সিসিটিভিতে ধারণ করা ভিডিও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে৷ বিশ্বের অন্য কোনো শহরে এত বেশি নজরদারি নেই৷ লন্ডনে আনুমানিক দশ লাখ ক্যামেরা পদে পদে মানুষের গতিবিধির উপর নজর রাখে৷
লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশের দফতরে সেই ভিডিও বিশ্লেষণ করা হয়, যেটি স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড নামেও পরিচিত৷ সেখানে বেশ কয়েকজন ‘সুপার রেকগনাইজার' কর্মরত রয়েছেন, যাঁরা মুখচ্ছবি খুব ভালো মনে রাখতে পারেন৷ এমনকি ভিড়ের মধ্যে আংশিক লুকানো বা অস্পষ্ট ছবি দেখেও তাঁরা কোনো ব্যক্তিকে শনাক্ত করতে পারেন৷
অনেক বছর ধরে সেই ক্ষমতার কথা জানা না থাকায় সেটি কখনো কাজেও লাগানো হয় নি৷ অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কমিশনর মিক নেভিল বলেন, ‘‘১৯৯৪ সালে টের পেলাম যে পুলিশ সিসিটিভি ভিডিও ঠিকমতো কাজে লাগাচ্ছে না৷ আঙুলের ছাপ বা ডিএনএ-র মতো কোনো নির্ধারিত প্রণালী নেই৷ ফলে আমি ছবি সংগ্রহ ও ঠিকমতো ক্যাটালগ করার সিস্টেম তৈরির কাজ শুরু করলাম৷ সেটা করতে গিয়ে বুঝলাম, ছবি দেখে কয়েকজন অফিসার প্রতি ১০০ ব্যক্তির মধ্যে এক বা দুই জনকে শনাক্ত করতে পারেন, কয়েকজন দশ বা বিশ জনকেও চিহ্নিত করেন৷ তখন বোঝা গেল, যে কিছু মানুষের সত্যি এ বিষয়ে জ্ঞান আছে৷''
এভাবে বিশ্বের প্রথম সুপার রেকগনাইজার ইউনিট গঠন করা হলো৷ এলিয়ট পোরিট সেটির প্রধান৷ তিনি নিজেও তাঁর এই বিশেষ প্রতিভা সম্পর্কে সচেতন ছিলেন না৷ এলিয়ট বলেন, ‘‘সেটা ছিল ২০১২ সাল৷ আমাকে বলা হলো, তুমি সুপার রেকগনাইজার তালিকায় রয়েছো৷ প্রথমে ভাবলাম সেটা আবার কী! অপরাধীদের পোস্টার দেখে আমি সফলভাবে তাদের শনাক্ত করতে পারছিলাম বলেই আমাকে বেছে নেওয়া হয়েছিল৷''
সেই দক্ষতা অ্যালিস গ্রসের ক্ষেত্রে খুব কাজে লেগেছিল৷ ১৪ বছর বয়সি কিশোরী নিখোঁজ হবার কয়েক দিন পরেই একই এলাকার এক নারী তাঁর স্বামীর সন্ধানে পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছিলেন৷ পুলিশের খাতায় সেই ব্যক্তির নাম থাকায় সন্দেহের তির তার দিকেই চলে গেল৷
সুপার রেকগনাইজাররা অ্যালিসের যাত্রাপথে তোলা ভিডিও বিশ্লেষণ করে সেই ব্যক্তিকে শনাক্ত করার চেষ্টা শুরু করলেন৷
এলিয়ট পোরিট ও তাঁর টিম সত্যি সেই সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে চিহ্নিত করতে পারলেন৷ শুধু তাই নয়, অ্যালিস নিখোঁজ হবার পর দেখা গেল যে, সেই ব্যক্তি নদীর তিরে নির্দিষ্ট এক জায়গায় বার বার যাচ্ছে৷ এলিয়ট পোরিট বলেন, ‘‘তখন আমরা তদন্তকারী অফিসারের সঙ্গে যোগাযোগ করে বললাম, যে আমরা সেই ব্যক্তিকে অপরাধস্থলে যেতে দেখেছি৷ তখন তারা অ্যালিসকে খুঁজে পেল৷''
১৪ বছরের কিশোরীর বাবা-মা প্রায় এক মাস পর ভয়াবহ বাস্তবের মুখোমুখি হলেন৷ জানলেন, নদীর তীরে মেয়ের লাশ পাওয়া গেছে৷ মোজা ছাড়া তার পরণে কিছুই ছিল না৷
কিন্তু তখনো সন্দেহভাজন অপরাধীর কোনো খোঁজ পাওয়া গেল না৷ শুধু খুনের কিনারা নয়, অন্যান্য ক্ষেত্রেও সুপার রেকগনাইজারদের দক্ষতা কাজে লাগে৷ লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশের কর্মী হিসেবে এলিয়ট পোরিট জানালেন, ‘‘আমাদের অন্যতম সফল কেসের মধ্যে দোকানের এক পাকা চোরের ঘটনা রয়েছে৷ আমাদের একজন সুপার রেকগনাইজার কয়েক সপ্তাহের ফারাকে এক ব্যক্তিকে চিনতে পারলেন৷ নিজেদের তথ্যভাণ্ডারেই সেই ব্যক্তির ছবি ছিল৷ খোঁজ করার সময় আমরা তাকে তিন-চার বার দেখেছি৷ অপরাধী ও অপরাধস্থলের সব ছবির তথ্যভাণ্ডার থাকার এটাই সুবিধা৷ কারণ এভাবেই আমরা অমীমাংসিত অপরাধের রহস্য সমাধান করতে ফিরে তাকাতে পারি৷ ৪৩টি অপরাধের দায়ে আমরা সেই ব্যক্তিকে ধরতে পারলাম৷''
কোনো ফেশিয়াল রেকগনিশন সফ্টওয়্যার এমন অসাধ্যসাধন করতে পারতো না৷ খুব ভালো মানের ছবি ছাড়া এমন প্রযুক্তি কাজ করে না৷ কিন্তু তদন্তকারীদের হাতে সব সময়ে তেমন ছবি থাকে না৷
আনা ফ্ল্যুগার/এসবি