রোগ নির্ণয়ের জন্য প্রায়ই রক্ত, মলমূত্রসহ অনেক পরীক্ষার প্রয়োজন পড়ে৷ কিন্তু শুধু শ্বাস-প্রশ্বাস, অর্থাৎ মুখের বাতাস বিশ্লেষণ করে রোগ শনাক্ত করতে পারলে কেমন হয়? এই প্রযুক্তির বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
মুখের বাতাস থেকে রোগ নির্ণয় করতে চান সুইজারল্যান্ডের জুরিখ শহরের দুই গবেষক৷ পরীক্ষামূলকভাবে তাঁরা কয়েক'শ মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাসের বাতাসে কোন রোগের কোন অণু রয়েছে, তা জানার চেষ্টা করছেন৷ এই পরীক্ষা সফল হলে রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে সেটা হবে এক বিপ্লবের শামিল৷ ফুসফুস বিশেষজ্ঞ মালকল্ম কোলার বলেন, ‘‘ভেবে দেখুন, আপনি রোগী হিসেবে হাসপাতালে এলেন৷ যন্ত্রের মধ্যে নিঃশ্বাস ছেড়ে দেবার কয়েক মিনিটের মধ্যে আমি আপনার জানালাম, আপনার অমুক রোগ হয়েছে৷ রক্ত বা মূত্র পরীক্ষা ছাড়াই এটা করা যাবে৷ আমাদের খুব সুবিধা হয় এবং রোগীদের জন্য তা অনেক কম কষ্টকর হয়৷''
হাঁপানি বা অ্যাজমা উপশমের কিছু উপায়
হাঁপানি বা অ্যাজমা বলতে সাধারণত শ্বাস-প্রশ্বাসের কষ্টকেই বোঝানো হয়৷ ছোট-বড় অনেকেই কষ্ট পায় এ রোগে৷ তবে আঁশযুক্ত খাবার শ্বাসনালীর এই সংক্রমণকে দূরে রেখে শ্বাসকষ্ট কমাতে সহায়তা করে৷ সেই খাবারগুলি কী? ছবিঘর থেকে জেনে নিন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Pedersen
হাঁপানি বা অ্যাজমা
পশুর উৎপাদিত কোনো কিছুতেই বলতে গেলে আঁশ নেই৷ বিশেষজ্ঞদের মতে একজন সাধারণ মানুষের জন্য দিনে কম পক্ষে ৩০ গ্রাম আঁশ প্রয়োজন৷ দানা বা বীজযুক্ত খাবার এবং বিভিন্ন ফল ও সবজিতে রয়েছে প্রচুর আঁশ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
রুটি
রুটি কম-বেশি সব বাড়িতেই খাওয়া হয়৷ তবে আজকাল আটাকে মেশিনে ঘষে-মেজে দেখতে সুন্দর, সাদা করে তোলার ফলে আটার আসল গুণ বা আঁশ রয়ে যায় মেশিনেই৷ বলা বাহুল্য, দানাযুক্ত খাবারে বেশি আঁশ থাকে৷ তাই লাল আটা বা ভূষিসহ বাদামি আটার রুটি খেয়ে শ্বাসনালীর সংক্রমণকে দূরে রাখার পরমর্শ দেন হাঁপানি বিশেষজ্ঞরা৷
ছবি: Fotolia/Grecaud Paul
চাল
আতপ চালের চেয়ে সেদ্ধ চালে পুষ্টিগুণ বেশি৷ তাই লাল চাল বা সেদ্ধ চালের ভাত খাওয়াই ভালো৷ সেদ্ধ চালে ভিটামিন বি-১ এবং খনিজ পদার্থ কিছুটা বেশি থাকে৷ লাল আটা, লাল চালের ভাত অথবা রুটি গ্যাস্ট্রিক ও ডায়বেটিসকেও দূরে রাখতে সহায়তা করে৷
ছবি: MISEREOR/Achim Pohl
ফল ও সবজি
বিভিন্ন ফলে রয়েছে প্রচুর আঁশ৷ বিশেষ করে আপেল, এপ্রিকট, পাকা আম, কাঁঠাল, আমলকির মতো নানা ফলে যথেষ্ট আঁশ বা ফাইবার রয়েছে৷ এছাড়া গাজর, শিম, পটল, ঢ্যাঁড়স, বাঁধাকপি, টমেটো, মটরশুটি বা ব্রকোলি ইত্যাদিতে সবজিতেও রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণ আঁশ৷
ছবি: Fotolia/DragonImages
দেশি খাবার
মুগ, ছোলা ও অন্যান্য ডালেও আঁশ আছে৷ অনেকের ধারণা যে, ফল বা ভালো খাবার বলতে শুধু বিদেশি ফল বা খাবার বোঝায়৷ এটা মোটেই ঠিক নয়৷ আমাদের দেশেই রয়েছে আঁশ ও ভিটামিনযুক্ত প্রচুর খাবার, যা দামের দিক থেকে সস্তা তো বটেই, তুলনামূলকভাবে টাটকাও৷
ছবি: CC/rachel in wonderland
শুকনো ফল ও বাদাম
অনেকের ধারণা শুকনো ফল মানেই ভালো নয় – এটা আসলে ঠিক নয়৷ সব সময় হয়ত সব ফল ঘরে থাকে না৷ তাই কম চিনি দেওয়া বা চিনি ছাড়া শুকনো ফল, কাঠ বাদাম বা অন্যান্য বাদাম ঘরে রেখে দেওয়া যায়, যা প্রয়োজন হলেই খাওয়া যেতে পারে৷ তাছাড়া বাজারে পাওয়া যায় সূর্যমুখী ফুলের বিচি, তরমুজের বিচি, কুমড়োর বিচির মতো নানা ফল ও সবজির বিচি, যা শরীরের জন্য খুবই উপকারী৷
ছবি: Fotolia/photocrew
বিশেষ পরামর্শ
অবশ্য যাঁরা আঁশযুক্ত খাবার আগে তেমন খাননি, নতুন করে খাওয়া শুরু করছেন, তাঁদের জন্য অ্যাজমা-বিশেষজ্ঞ ডা. বেনইয়ামিন মার্সলান্ড-এর দেওয়া টিপস: ‘‘প্রথমেই বেশি বেশি না খেয়ে আস্তে আস্তে শুরু করতে হবে৷ তা না হলে পেটে বায়ু হওয়া, পেটে ভরা ভরা ভাব বা পেট ব্যথাও হতে পারে৷ সবচেয়ে জরুরি, এ সব খাওয়ার পাশাপাশি প্রচুর পানি পান করা, যাতে তা হজম হয়৷ তবেই কাঙ্খিত ফল পাওয়া যাবে৷’’
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Pedersen
7 ছবি1 | 7
অলটেন জেলার হাসপাতালে এমন যন্ত্রের প্রাথমিক প্রয়োগ শুরু হয়েছে৷ তবে এই পদ্ধতিতে চূড়ান্ত রোগ নির্ণয় করতে আরও অনেক সময় লাগবে৷ আপাতত এই পরীক্ষার মাধ্যমে রোগ সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা পাওয়া যাচ্ছে৷ ফুসফুস বিশেষজ্ঞ মার্ক মাউরার বলেন, ‘‘এই সেই যন্ত্র যার প্রয়োগ আমরা আগে দেখেছি৷ এটির সাহায্যে আমরা ব্রংকাইটিসে সংক্রমণের মাত্রা পরিমাপ করতে পারি৷ সেই ফলাফল দেখে আমরা সিদ্ধান্তে আসতে পারি, যে এবার কোন দিকে আরও অনুসন্ধান চালানো উচিত৷ সমস্যা হলো, সহজে রোগ নির্ণয় করা যায় না৷ আরও পরীক্ষা চালিয়ে সমস্যার উৎস বোঝার চেষ্টা করতে হয়৷''
জুরিখ শহরের গবেষকরা এই প্রক্রিয়াকে আরও উন্নত করতে চান৷ তবে তাঁরা সঠিক পথ খুঁজে পেয়েছেন বলে আশা করছেন৷ তাঁদের হাই-ডেফিনেশন মাস স্পেকট্রোমিটার অতি সূক্ষ্মভাবে মুখের বাতাসের মধ্যে সব পদার্থ চিহ্নিত করতে পারে৷ এভাবে চিকিৎসার কাজে হাইটেক প্রযুক্তির প্রয়োগ করা হচ্ছে৷ রসায়নবিদ রেনাটো সেনোবি বলেন, ‘‘যন্ত্র অণুর ওজন মাপে৷ বিশেষ করে নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে যে অণু বেরিয়ে আসে, সে ক্ষেত্রে এই পরিমাপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ আমরা অত্যন্ত নিখুঁতভাবে তার ওজন মাপতে পারি৷ এমনকি সেই বাতাসে কয়েক'শ থেকে কয়েক হাজার পদার্থ শনাক্ত করতে পারি৷''
এই পদার্থগুলির সম্মিলিত প্যাটার্ন বা নকশা অনেক রোগের লক্ষণ হতে পারে৷ গবেষকরা এমন একটি রোগ সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছেন৷ স্লিপ-অ্যাপনোয়েয়া সিন্ড্রোম নামের এই রোগ এতকাল শুধু ব্যয়বহুল স্লিপ ল্যাবে শনাক্ত করা সম্ভব হতো৷ মালকল্ম কোলার বলেন, ‘‘একটি পত্রিকায় আমাদের কাজের দৃষ্টান্ত প্রকাশিত হয়েছে৷ স্লিপ-অ্যাপনোয়েয়া সিন্ড্রোমের এক রোগীর চিকিৎসার আগে ও পরে আমরা পরীক্ষা চালিয়েছিলাম৷ দেখতে পাচ্ছেন, এক্ষেত্রে পেন্টেনালের অণুর ঘনত্ব কীভাবে মুখের বাতাসে বেড়ে যাচ্ছে৷ চিকিৎসা থামিয়ে দিলে কী হয়, তার প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে৷''
মুখে দুর্গন্ধ? একটু সতর্ক হলেই দূর করা সম্ভব
সুন্দর চেহারা, মিষ্টি হাসি... অথচ তারপরও অনেকে কাছে আসতে চায় না৷ তার ওপর এই না আসার কারণটাও কেউ বলে না সরাসরি৷ মুখে গন্ধ! চলুন, এর কারণ ও দূর করার কিছু উপায় জেনে নেওয়া যাক৷
ছবি: picture alliance/WILDLIFE
সবসময় শুধু সুন্দর মুখই যথেষ্ট নয়
মিষ্টি মুখ আর সুন্দর হাসি থাকলে এই ছবিটির মতোই হওয়ার কথা তাই নয় কি? তবে অনেকক্ষেত্রেই তা হয় না শুধুমাত্র মুখের দুর্গন্ধের কারণে৷ অথচ কিছুটা সতর্ক হলেই কিন্তু এর থেকে মুক্তি পেয়ে আবারো সবার প্রিয় হয়ে ওঠা সম্ভব!
ছবি: DW/Maksim Nelioubin
জিব
দুর্গন্ধ যুক্ত নিঃশ্বাসের কারণ ব্যাকটেরিয়া, বিশেষ করে জিবের ওপর বাসা বাঁধা জীবাণু৷ তবে অনেকের জিব দেখে প্রথমে বোঝা না গেলেও, ভালো করে লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে, ব্যাকটেরিয়াযুক্ত জিবে রুক্ষতা ও অসমতা রয়েছে৷
ছবি: DW
প্রধান কারণ
মুখে দুর্গন্ধের প্রধান কারণগুলো হচ্ছে নিয়মিত মুখ, দাঁত, মাড়ি ও জিবের যত্ন না নেওয়া৷ যাঁরা নিয়মিত ওষুধ খান, তাঁদের তা থেকেও মুখে দুর্গন্ধ হতে পারে৷ কারণ ওষুধ সেবন মুখের লালা উৎপাদন কমিয়ে ফেলে, বলেন মিউনিখ শহরের ফার্মাসিস্ট ক্রিটিয়ানে শল্টেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
জিবের স্তর
জিবে জমা হয় তিন রকমের ব্যাকটেরিয়ার স্তর আর সেই স্তর থেকে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়৷ তাই ডাক্তারদের কথায়, ভালো করে মুখ পরিষ্কার করা প্রয়োজন৷ তবে শুধু দাঁত পরিষ্কার করা যথেষ্ট নয়৷ প্রতিদিন ভালোভাবে, অর্থাৎ ছবিতে যেভাবে দেখানো হচ্ছে ঠিক সেভাবে জিব পরিষ্কার করতে হবে৷ তবে সেটা করতে হবে জিবে কোনোরকম আঘাত না দিয়ে৷
ছবি: Ramona Heim - Fotolia
দাঁতের ফাঁক
দাঁতের ফাঁকে যেসব খাবার জমে থাকে, সেগুলো খুব ভালো করে পরিষ্কার করা দরকার৷ জমে থাকা খাবার থেকে দুর্গন্ধ বের হয়৷ তাই প্রতিদিন সকাল এবং রাতে বিছানায় যাওয়ার আগে যত্ন করে মুখ পরিষ্কার করতে হবে৷ ভালো হয় যদি যে কোনো কিছু খাওয়ার পরপরই মুখ পরিষ্কার করা যায়৷
ছবি: imago/Peter Widmann
ডাক্তারি পরামর্শ
মুখের যাঁদের দুর্গন্ধ রয়েছে, তাঁদের প্রথমেই আলোচনা করা দরকার দাঁতের ডাক্তারের সাথে৷ কারণ তিনিই সমাধান খুঁজে দেবেন৷ মুখে দুর্গন্ধ পেট বা লিভারের কোনো সমস্যার কারণে হতে পারে৷ তাই প্রয়োজনে দাঁতের ডাক্তার অন্য ডাক্তারের কাছেও পাঠাতে পারেন৷ দুর্গন্ধের সঠিক কারণ খুঁজে পেলেই যে সঠিক চিকিৎসা সম্ভব!
ছবি: Fotolia/ Eric Fahrner
ছোট থেকেই শিক্ষা
বাচ্চাদের ছোটবেলা থেকেই শেখানো প্রয়োজন কীভাবে দাঁত এবং মাড়ি পরিষ্কার করতে হয়৷ প্রতিদিন সকালে এবং রাতে অবশ্যই দাঁত ও জিব ব্রাশ করা প্রয়োজন, ঠেক যেমন প্রতিদিন শরীর ঠিক রাখতে খাওয়া-দাওয়া দরকার৷
ছবি: BilderBox
সহযোগিতা
মুখে দুর্গন্ধের বিষয়টি নিয়ে কেউ কথা বলে না৷ অথচ এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হয় যদি যাঁর সমস্যা, তাঁকে কোনোরকম আঘাত না দিয়ে সরাসরি সুন্দরভাবে বিষয়টি সম্পর্কে আলোচনা করা যায় বা পরামর্শ দেওয়া যায়৷
ছবি: Fotolia/ArTo
চুইংগাম
সাময়িকভাবে মুখের গন্ধ দূর করতে সাহায্য করে বিভিন্ন ধরণ এবং স্বাদের চুইংগাম৷ তাছাড়া শুকনো জিবে মুখের লালা উৎপাদনেও কিছুটা ভূমিকা রাখে চুইংগাম৷
ছবি: Fotolia/cut
শক্ত দাঁত ও মাড়ি
ঝকঝকে শক্ত দাঁত ও মাড়ি হলেই শুধু এ রকম তাজা কচকচে আপেলের পুরো স্বাদ গ্রহণ করা সম্ভব৷ এর জন্য অবশ্য যথেষ্ট ফলমূল এবং সবজিও খেতে হবে, যাতে করে পেট পরিষ্কার থাকে৷ তাছাড়া দিনে অন্তত দশ গ্লাস পানি খাওয়া প্রয়োজন৷ এই পরামর্শই দিয়ে থাকেন বিশেজ্ঞরা৷
ছবি: picture alliance/WILDLIFE
10 ছবি1 | 10
মাস স্পেকট্রোমিটার দিয়ে গবেষকরা অন্যান্য রোগও চিহ্নিত করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন৷ তাঁদের দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য হলো, মুখের বাতাস থেকে ফুসফুসের ক্যানসার শনাক্ত করা৷ মালকল্ম কোলার বলেন, ‘‘সবাই নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসের মধ্যে ফুসফুস ক্যানসার শনাক্ত করতে চায়৷ সেই লক্ষ্য নিয়ে প্রচেষ্টা শুরু করলে আমরা সম্ভবত ব্যর্থ হতাম৷ আমরা আরও সহজ বিষয় নিয়ে কাজ শুরু করেছি, যা দিয়ে আমাদের ভালো অভিজ্ঞতা হয়েছে৷ গবেষণা ছোট ছোট ধাপে এগোয়৷ তবে অবশ্যই একটা স্বপ্ন থাকতে হবে৷ আমাদের লক্ষ্য হলো মুখের বাতাসে ফুসফুসের ক্যানসার শনাক্ত করা৷''
ফুসফুসের সাধারণ রোগগুলি শনাক্ত করার ক্ষেত্রে অবশ্য ভালো ফল পাওয়া গেছে৷ এর মাধ্যমে গবেষকরা মুখের বাতাস বিশ্লেষণ করে রোগ নির্ণয়ের প্রক্রিয়াকে সাফল্যের নতুন মাত্রায় পৌঁছে দিতে চান৷