উত্তর কোরিয়াকে শান্ত করতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী শান্তির বার্তা পাঠালেন৷ বললেন, ‘‘আমরা আপনাদের শত্রু নই৷'' কিন্তু পিয়ং ইয়ং-এর ক্ষেপণাস্ত্র মোকাবিলা করতে অ্যামেরিকার পশ্চিম উপকূলে সামরিক প্রস্তুতি শুরু হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে তর্জনগর্জন করে চললেও পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেক্স টিলারসন কূটনৈতিক পথেই বিভিন্ন সংকট সমাধানের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন৷ এমনকি ইরান প্রসঙ্গে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে মতভেদের কথাও প্রকাশ্যে স্বীকার করেন তিনি৷শিকাগোর মতো শহর উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্রের আওতায় এসে পড়ায় সে দেশের সঙ্গে সমঝোতার পথে এগোতে চান টিলারসন৷
টিলারসন মঙ্গলবার বলেছেন, ওয়াশিংটন উত্তর কোরিয়ার প্রশাসনকে ক্ষমতাচ্যুত করার কোনো প্রচেষ্টা চালাচ্ছে না৷ দুই কোরিয়ার পুনরেকত্রীকরণের ক্ষেত্রেও কোনো তাড়া নেই৷ তবে সে দেশকে পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র কর্মসূচি বন্ধ করতে হবে৷ উত্তর কোরিয়া নিরস্ত্রীকরণের পথ বেছে নিলে ওয়াশিংটন সরাসরি সে দেশের সঙ্গে সংলাপ শুরু করতে আগ্রহী, বলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী৷ তাঁর মতে, সম্ভাব্য মার্কিন হামলা প্রতিরোধ করতে উত্তর কোরিয়ার পরমাণু অস্ত্রভাণ্ডারের প্রয়োজন নেই৷ মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অবশ্য একই সঙ্গে উত্তর কোরিয়াকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, সে দেশ হুমকি হয়ে উঠলে অ্যামেরিকাকে বাধ্য হয়ে তার জবাব দিতে হবে৷
উত্তর কোরিয়া প্রসঙ্গেও হোয়াইট হাউস ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতবিরোধ স্পষ্ট হয়ে গেল৷ এক টুইট বার্তায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ক্ষুব্ধ হয়ে উত্তর কোরিয়ার রাশ টেনে ধরতে চীনের উপর চাপ সৃষ্টি করতে চেয়েছিলেন৷
টিলারসন অবশ্য বলেন, চীন নয় – উত্তর কোরিয়াই বর্তমান এই পরিস্থিতির জন্য দায়ী৷ চীনকে দায়ী না করলেও উত্তর কোরিয়ার উপর সে দেশের বিশাল প্রভাবের কথা মনে করিয়ে দেন তিনি৷
রিপাবলিকান দলের সংসদ লিন্ডসে গ্র্যাহ্যাম বলেছেন, কূটনীতির মাধ্যমে উত্তর কোরিয়ার পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্র হুমকি বন্ধ করা না গেলে ট্রাম্প সে দেশের উপর ভয়াবহ সামরিক হামলা চালাতে প্রস্তুত৷
অ্যামেরিকা এর মধ্যেই দূর পাল্লার আইসিবিএম ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা করতে চলেছে৷ ক্যালিফোর্নিয়ার ভ্যান্ডেনবার্গ বিমান ঘাঁটিতে বুধবারই এই পরীক্ষা শুরু হচ্ছে৷ সাধারণত অনেক আগেই এমন পরীক্ষার কথা ঘোষণা করা হয়৷ এক্ষেত্রে অতি দ্রুত এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে৷
উত্তর কোরিয়ার সামরিক শক্তি কতটা?
উত্তর কোরিয়া যে কোনো ধরনের সামরিক প্ররোচনার আঁচ পেলেই পাল্টা প্রতিক্রিয়ার হুমকি দিয়েছে৷ ওদিকে একটি মার্কিন নৌ-বহর কোরীয় উপদ্বীপের কাছে৷ কিন্তু কী ধরনের আঘাত হানতে পারে উত্তর কোরিয়া?
ছবি: picture-alliance/dpa/KCNA
বিশ্বের বৃহত্তম সেনাবাহিনীগুলির মধ্যে একটি
সাত লাখ সক্রিয় সেনা ও আরো ৪৫ লাখ রিজার্ভ সৈন্য থাকার অর্থ, উত্তর কোরিয়া যে কোনো সময়ে তার মোট জনসংখ্যার এক চতুর্থাংশকে সামরিক সেবার ডাক দিতে পারে৷ দেশের প্রত্যেকটি পুরুষকে কোনো না কোনো ধরনের সামরিক প্রশিক্ষণ নিতে হয় এবং তাদের যে কোনো সময় সামরিক সেবায় নিযুক্ত করা চলে৷ সৈন্যসংখ্যায় উত্তর কোরিয়ার সেনাবাহিনী দক্ষিণ কোরিয়ার দ্বিগুণ বলে মনে করা হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/E. Jones
বিপুল অস্ত্রসম্ভার
২০১৬ সালের গ্লোবাল ফায়ারপাওয়ার ইন্ডেক্স অনুযায়ী উত্তর কোরিয়ার সমরসজ্জা চমকে দেওয়ার মতো: ৭০টি ডুবোজাহাজ, ৪,২০০ ট্যাংক, ৪৫৮টি জঙ্গিজেট, ৫৭২টি ফিক্স্ড উইং অ্যাটাক এয়ারক্রাফ্ট ও আরো অনেক কিছু৷ ২০১৩ সালের ছবিটিতে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উনকে দেখা যাচ্ছে, তিনি কিভাবে রণকৌশলগত ক্ষেপণাস্ত্র বাহিনীকে বিভিন্ন মার্কিন ও দক্ষিণ কোরীয় লক্ষ্যের উপর আঘাত হানার জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দিচ্ছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সামরিক কুচকাওয়াজ
প্রতিবছর হাজার হাজার সৈন্য ও সাধারণ নাগরিকদের রাজধানী পিয়ংইয়াং-এর বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজে অংশ নিতে দেখা যায়৷ এ ধরনের কুচকাওয়াজের প্রস্তুতি চলে বেশ কয়েক মাস ধরে এবং সাধারণত তার উপলক্ষ্য হয় কমিউনিস্ট পার্টি অথবা কিম পরিবারের কোনো সদস্যের কোনো গুরুত্বপূর্ণ বার্ষিকী৷
ছবি: picture-alliance/dpa/KCNA
পরীক্ষামূলক পারমাণবিক বিস্ফোরণ
আন্তর্জাতিক চাপ সত্ত্বেও পিয়ংইয়াং তার আণবিক বোমা ও রকেট তৈরির প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷ রকেট পরীক্ষা তো নিয়মিত ব্যাপার, এছাড়া পাঁচবার পরীক্ষামূলক পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে উত্তর কোরিয়া, তার মধ্যে এক ২০১৬ সালেই দু’বার৷ দৃশ্যত শেষবারের বিস্ফোরণে যে বোমাটি ব্যবহার করা হয়, তা একটি রকেটে লাগানোর উপযোগী – অন্তত পিয়ংইয়াং-এর তাই দাবি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/KCNA
শত্রু চতুর্দিকে
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছাড়াও, পিয়ংইয়াং প্রতিবেশী দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানকে তার মুখ্য বৈরি বলে মনে করে৷ এই অঞ্চলে মার্কিন সামরিক মহড়াকে উত্তর কোরিয়ার উপর অভিযান চালানোর প্রস্তুতি বলে গণ্য করে পিয়ংইয়াং৷
ছবি: Reuters/K. Hong-Ji
মার্কিন ‘রণকৌশলগত ধৈর্য্যের’ অন্ত?
২০১৭ সালের এপ্রিল মাসের গোড়ার দিকে ‘কার্ল ভিনসন’ বিমানবাহী পোতটিকে কোরীয় উপদ্বীপের দিকে পাঠায় ওয়াশিংটন৷ সঙ্গে সঙ্গে পিংয়ংইয়াং ‘যে কোনো ধরনের যুদ্ধের জন্য’ প্রস্তুতি ঘোষণা করে৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অবধি পৌঁছাতে সক্ষম, এমন রকেট বানানোর জন্য উত্তর কোরিয়ার আরো বছর দু’য়েক সময় লাগবে, বলে গুপ্তচরবিভাগগুলির ধারণা৷ তবে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ততদিন অপেক্ষা করবেন কিনা, সেটা আরেক প্রশ্ন৷