আবারও আদালতে মুখোমুখি হতে যাচ্ছে জার্মানির উগ্র-ডানপন্থি দল এএফডি ও দেশটির অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা৷ জনগণের মৌলিক অধিকার ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ টিকিয়ে রাখতে কাজ করে থাকে সংস্থাটি৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানির অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা ‘ফেডারেল অফিস ফর দ্য প্রটেকশন অফ দ্য কন্সটিউশন’ (বেএফফাউ) এর মতে উগ্র-ডানপন্থি দল‘অল্টারনেটিভ ফর ডয়েচলান্ড’ (এএফডি) দেশটির সংবিধান বিরোধী৷ ২০২১ সালে দলটির কার্যক্রম ‘সন্দেহজনক’ হিসেবে উল্লেখ করে আদলতে একটি মামলা করা হয়৷ এএফডির পক্ষ থেকে কোলনের প্রশাসনিক আদালতে আপিল করা হলেও আদালত তা বাতিল করে দেয়৷ পরবর্তীতে মুনষ্টার এর উচ্চ আদালতে আপিল করা হলে ২০২৪ সালের ১২ ও ১৩ মার্চ তার শুনানির দিন ঠিক করা হয়৷
অবশ্য গোয়েন্দা সংস্থা (বেএফফাউ) কোন নির্বাহী ক্ষমতা না থাকলেও সংস্থাটি জার্মানির ১৬ টি প্রদেশের বিভিন্ন স্তরে কাজ করা স্থানীয় সংস্থাদের কাছ থেকে এএফডির গণতন্ত্র বিরোধী কার্যক্রমের তথ্য সংগ্রহ করে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কাছে হস্তান্তর করে৷ যার ভিত্তিতে সরকার, দল অথবা ব্যাক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে নির্দেশ দিতে পারে৷ তবে কোন রাজনৈতিক সংগঠনকে নিষিদ্ধ করতে হলে তার আগে অবশ্যই সংসদে ওই বিষয়ে ভোট হতে হবে৷
জার্মানিতে চরম ডানপন্থা ও তিনটি প্রশ্ন
08:20
বিপজ্জনকহিসেবেচিহ্নিতউগ্র-ডানপন্থা
সমাজে ধর্মীয় ও রাজনৈতিক উগ্রবাদিতা থামাতে বেএফফাউ এর কোলন সদর দপ্তর ও বার্লিনে প্রায় চার হাজার ৩০০ কর্মী কর্মরত রয়েছেন৷ সংস্থাটির গত কয়েক বছরের বার্ষিক প্রতিবেদনে উগ্র-ডানপন্থার উদ্ভবকে জার্মানির গণতন্ত্রের জন্য সবেচেয়ে বড় হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে৷ যদিও সে প্রতিবেদনে দেশটির বামপন্থি ও ইসলামিক সংগঠনগুলিকেও রাখা হয়েছে৷
২০১১ সালে ‘ন্যশনাল সোশ্যালিস্ট আন্ডারগ্রাউন্ড’ (এনএসইউ) প্রতিষ্ঠার পর গোয়েন্দা সংস্থা (বেএফফাউ) ও অন্যান্য সংস্থাগুলি দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে এএফডির সদস্যদের উপর নজরদারি করেছে৷ কিন্তু কোন কার্যকর পদক্ষেপ নিতে তারা ব্যর্থ হয়৷
আদালতেরযাচাই-বাছাই
উগ্রপন্থি সংগঠন হিসেবে প্রমাণিত বা সন্দেহজনক কোন সংগঠনের সদস্যদের উপর নজরদারি করার ক্ষমতা জার্মান গোয়েন্দা সংস্থার (বেএফফাউ) রয়েছে৷ তবে এর বিরুদ্ধে আদালতে আপিল করা যেতে পারে৷ এএফডি প্রতিবারই মামলার শুনানিতে তাদের বিরুদ্ধে করা বেএফফাউ এর মামলাকে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ হিসেবে উল্লেখ করেছে৷
এর আগেও বিভিন্ন সময় জার্মানির অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যরা দেশটির গোয়েন্দা সংস্থার নজরদারির বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নিয়েছেন৷ ২০১৩ সালে থুরিঙ্গিয়া প্রদেশের সরকার প্রধান বোডো রামেলো সাংবিধানিক আদালতে আপিল করলে আদালত তার উপর করা নজরদারিকে ‘অসামঞ্জস্যপূর্ণ হস্তক্ষেপ’ বলে রায় দিয়েছিল৷
এসএইচ/কেএম
জার্মানির এএফডি নেতাদের কয়েকটি আলোচিত মন্তব্য
জার্মানির অভিবাসনবিরোধী অতি-ডানপন্থি এএফডি দলের নেতারা আক্রমণাত্মক ও উদ্ভট মন্তব্যের জন্য পরিচিত৷ ছবিঘরে এমন কয়েকজনের মন্তব্য থাকছে৷
ছবি: Britta Pedersen/dpa/picture alliance
বিয়র্ন হ্যোকে
টুরিঙ্গিয়া রাজ্যের এএফডি প্রধান হ্যোকে ২০১৭ সালে বার্লিনের হলোকস্ট মেমোরিয়ালকে ‘মনুমেন্ট অফ শেম’, অর্থাৎ ‘লজ্জার স্মৃতিসৌধ’ বলে আখ্যায়িত করে প্রথমবারের মতো শিরোনামে এসেছিলেন৷ নাৎসি অতীত নিয়ে প্রায়শ্চিত্ত করা বন্ধ করতেও বলেন তিনি৷ এরপর ২০২৩ সালে তিনি বলেন, ‘‘এই ইইউকে অবশ্যই মরতে হবে যেন সত্যিকারের ইউরোপ বাঁচতে পারে৷’’ ২০১৯ সালে আদালত বলেছিল, হ্যোকেকে ফ্যাসিস্ট বলা হলে সেটা অপবাদ দেওয়া হবে না৷
ছবি: picture-alliance/Arifoto Ug/Candy Welz
আলিস ভাইডেল
এএফডির অন্যতম পরিচিত মুখ দলের কো-চেয়ার ভাইডেল ২০১৮ সালে জার্মান সংসদে বলেছিলেন, ‘‘বোরকা, হেডস্কার্ফ পরা মেয়ে, ছুরি নিয়ে চলা মানুষ ও অলসেরা আমাদের সমৃদ্ধি, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও সামাজিক রাষ্ট্রের সুফল পাবে না৷’’
ছবি: Sebastian Kahnert/dpa/picture-alliance
আলেক্সান্ডার গাউলান্ড
এএফডির সাবেক সংসদীয় নেতা গাউলান্ড ২০১৮ সালে দলের তরুণ সদস্যদের সামনে দেওয়া এক বক্তব্যে বলেছিলেন, জার্মানির একটি দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে যেটা (হিটলারের) ১২ বছরের শাসনামলের চেয়ে বেশিদিন টিকে ছিল৷ ‘‘জার্মানির এক হাজারেরও বেশি বছরের সফল ইতিহাসে হিটলার আর নাৎসিরা পাখির বিষ্ঠার দাগ মাত্র,’’ বলেন তিনি৷
ক্রিস্টিয়ান ল্যুথ
বিতর্কিত মন্তব্য করে কয়েকবার পদ অবনমন হয়েছে সাবেক প্রেস অফিসার ল্যুথের৷ এরপরও তিনি ডানপন্থি এক ইউটিউব ব্লগারকে বলেছিলেন, ‘‘আমরা পরেও তাদের (অভিবাসীদের) গুলি করতে পারব, সেটা কোনো বিষয় নয়৷ বা গ্যাস দিতে পারব৷ আমার কাছে এটা কোনো বিষয় নয়৷
ছবি: Soeren Stache/dpa/picture-alliance
বেয়াট্রিক্স ফন স্টর্শ
ইউরোপীয় এই সাংসদ ২০১৬ সালে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের সম্পর্কে বলেছিলেন, ‘‘যারা আমাদের সীমান্তে দেয়া বাধা মানবে না, তারা আসলে হামলাকারী৷ তাদের বিরুদ্ধে নিজেদের রক্ষা করতে হবে- সেটি নারী ও শিশুদের গুলি করে হলেও৷’’
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Murat
ফ্রাউকে পেট্রি
২০১৬ সালে জার্মানির একটি আঞ্চলিক পত্রিকাকে এএফডির সেই সময়কার প্রধান পেট্রি বলেছিলেন, ‘‘অবৈধভাবে জার্মানিতে প্রবেশকারী শরণার্থীদের দিকে জার্মানির বর্ডার পুলিশের গুলি ছোড়া উচিত৷’’
ছবি: Getty Images/T. Lohnes
হারাল্ড ভায়এল
বুন্ডেসটাগ সদস্য ভায়এল ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে বলেছিলেন, তিনি আশা করছেন জার্মানিতে যেন ‘অনেক শীত’ পড়ে৷ তাহলে জ্বালানির জন্য অনেক খরচ হবে৷ ‘‘তা নাহলে সবকিছু এখন যেভাবে চলছে সেভাবেই চলতে থাকবে,’’ বলেন তিনি৷ অবশ্য এই কথা বলার সময় যে তার মাইক্রোফোন অন ছিল সেটি তিনি বুঝতে পারেননি৷