যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে শীর্ষ দুই প্রার্থী হিলারি ক্লিন্টন ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে সোমবার প্রথম বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ সিএনএন-এর জরিপ বলছে ক্লিন্টন জিতেছেন, তবে ট্রাম্পকেও বিজয়ী বলছে কোনো কোনো জরিপ৷
এদিকে ‘টাইম' ম্যাগাজিন তাদের ওয়েবসাইটে বিজয়ী নির্ধারণে একটি জরিপের আয়োজন করেছে৷ এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত সেখানে ভোট পড়েছে ১১ লক্ষ ৮৬ হাজারের বেশি৷ ক্লিন্টন ও ট্রাম্প দু'জনই ৫০ শতাংশ করে ভোট পেয়েছেন৷
ডয়চে ভেলের টুইটার অ্যাকাউন্টেও জরিপের ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ভোট পড়েছে ২,৩৮৬টি৷ ক্লিন্টন পেয়েছেন ২৮ শতাংশ আর ট্রাম্প ৬৩ শতাংশ৷
সিএনবিসি ইন্টারন্যাশনালের টুইটার জরিপেও এখন পর্যন্ত ট্রাম্পকে বিজয়ী দেখা যাচ্ছে৷
টুইটার জানিয়েছে, বিতর্ক নিয়ে ব্যবহারকারীদের মধ্যে আলোচনার ৬২ শতাংশ সময় ট্রাম্পকে নিয়ে আলোচনা হয়েছে৷ ফেসবুকের ক্ষেত্রে সেটি ছিল ৭৯ শতাংশ৷ তবে সোশ্যাল মিডিয়া বিশ্লেষণকারী সংস্থা ‘জুম্পফ' বলছে, টুইটারে ক্লিন্টনকে নিয়ে একটি নেতিবাচক মন্তব্যের বিপরীতে তাঁকে নিয়ে ইতিবাচক কথা এসেছে ১.৫টি৷ আর ট্রাম্পের ক্ষেত্রে বিষয়টি ১:১, অর্থাৎ একটি নেতিবাচক মন্তব্যের বিপরীতে সমান সংখ্যক ইতিবাচক কথা এসেছে৷
এদিকে, বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, দেড় ঘণ্টার বিতর্কে ক্লিন্টন ভালো করেছেন বলে মনে করছেন এশিয়ার বিনিয়োগকারীরা৷ তার প্রতিফলন দেখা গেছে, এশিয়ার বিভিন্ন শেয়ারমার্কেটের লেনদেনে৷
Clinton and Trump spar over trade, taxes
02:02
বিতর্কে যেসব বিষয় আলোচিত হয়েছে
অর্থনীতি, বর্ণবাদ থেকে শুরু করে সাইবার নিরাপত্তা, সন্ত্রাস, অভিবাসন ইত্যাদি নানা বিষয় নিয়ে মন্তব্য করেছেন হিলারি ক্লিন্টন ও ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ তবে ব্যক্তিগত পর্যায়েও একে অপরকে আক্রমণ করেছেন দু'জন৷ ট্রাম্প আঙুল তোলেন হিলারির ই-মেল কেলেঙ্কারির দিকে৷ অভিযোগ করেন, হিলারি পররাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালে জঙ্গি গোষ্ঠী ইসলামিক স্টেট বা আইএস ‘বিস্তৃত' হয়েছে৷ ক্ষমতায় গেলে আইএসকে পরাজিত করতে ইরাকের সব তেল তুলে নেয়ার ঘোষণা দেন তিনি৷ কয়েক সপ্তাহ আগে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ক্লিন্টন প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালনের মতো ‘শারীরিক সক্ষমতা' রাখেন কিনা, সে প্রশ্নও তোলেন ট্রাম্প৷
অন্যদিকে, নির্বাচনি প্রচার শুরুর পর ট্রাম্প কেন তাঁর আয়করের খতিয়ান প্রকাশ করেননি, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ক্লিন্টন৷ রাষ্ট্রীয় অবকাঠামোর মধ্যে থাকা ‘বর্ণবাদ' দমনে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ তিনি৷ বারাক ওবামার জন্ম ‘যুক্তরাষ্ট্রে কিনা' নির্বাচনি প্রচারে এমন প্রশ্ন তোলায় ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ‘বর্ণবাদী আচরণের' অভিযোগ আনেন ক্লিন্টন৷
দুই প্রার্থীর মধ্যে পরবর্তী বিতর্ক হবে ৯ অক্টোবর৷
ডোনাল্ড ট্রাম্পের মজার ৯টি উক্তি
ট্রাম্পকে পছন্দ বা অপছন্দ যা-ই করুন, তিনি যে পুরোদস্তুর একজন এন্টারটেইনার বা বিনোদনকারী তা আপনিও হয়ত মানবেন৷ এবার ছবিঘরে থাকছে তার অদ্ভুত ও মজার কিছু উক্তি৷
ছবি: Getty Images/B. Pugliano
৭/১১?
‘‘আমি ওখানেই ছিলাম, আমি দেখছিলাম পুলিশ আর দমকলবাহিনী ছোটাছুটি করছে৷ ৭/১১ এ ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার বিধ্বস্ত হওয়ার ঠিক পর মুহূর্তের ঘটনা৷’’ ট্রাম্প আসলে ৯/১১-র কথা বলতে গিয়ে ভুল তারিখ বলেছিলেন৷
ছবি: Reuters/C. Allegri
গোপনাঙ্গের ইঙ্গিত
‘‘এই হাতগুলোর দিকে তাকান, এগুলো ছোট? (রিপাবলিকান প্রতিদ্বন্দ্বী মার্কোর উদ্দেশে) সে বলেছে, যেহেতু আমার হাতগুলো ছোট, তাই অন্য অঙ্গগুলোও ছোট৷ কিন্তু আমি বলছি, না, সেখানে কোনো সমস্যা নেই৷’’ (আসলে ট্রাম্প এখানে পুরুষাঙ্গ বোঝাতে চেয়েছেন৷)
ছবি: Reuters/M. Segar
অন্যের স্ত্রীর ঢাক পেটানো
প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী টেড ক্রুজের উদ্দেশ্যে টুইটারে: ‘‘টেড আমার স্ত্রী মেলানিয়ার একটি ছবি তার প্রচারণায় ব্যবহার করেছেন৷ সাবধান টেড, আমিও তোমার স্ত্রীর ঢাক পেটাতে পারি৷’’
ছবি: Reuters/M. Segar
মেয়ে
‘‘ইভাঙ্কা যদি আমার মেয়ে না হতো তাহলে আমি তার সঙ্গে হয়ত প্রেম করতাম৷’’ ইভাঙ্কা ট্রাম্পের বয়স ৩৪ বছর৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J. Scott Applewhite
হিলারির স্বামী সন্তুষ্টি
‘‘হিলারি যেখানে নিজের স্বামীকে সন্তুষ্ট করতে পারে না, সেখানে পুরো অ্যামেরিকার জনগণকে কীভাবে সন্তুষ্ট করবেন?’’ ট্রাম্পের ইশারা বিল ক্লিনটন আর মনিকার সেই স্ক্যান্ডালের প্রতি৷
ছবি: DW/R. Spina
হিলারি প্রসঙ্গ
‘‘হিলারি ক্লিনটনের জনপ্রিয়তা আসলে ‘নারী’ স্ট্যাম্প এর জন্য৷ সত্যি কথা হলো, তিনি যা অঙ্গীকার করছেন, তার কিছুই দিতে পারবেন না৷ যদি হিলারি পুরুষ হতেন, তাহলে ৫ ভাগও ভোট পেতেন না৷ তিনি নারী বলেই এত ভোট পাচ্ছেন৷ আর মজার ব্যাপার হলো, নারীরা তাকে একদম পছন্দ করেন না৷’’
ছবি: Getty Images/S. Platt
বারাক ওবামার জন্মনিবন্ধন জাল
‘‘একটা গুরুত্বপূর্ণ সূত্র জানিয়েছে, বারাক ওবামার জন্ম নিবন্ধন আসলে জাল-’’ ট্রাম্পের উদ্দেশ্য ওবামার জন্ম যে যুক্তরাষ্ট্রে নয় তা খুঁজে বের করা এবং মানুষকে জানানো৷
ছবি: Getty Images/J.-J. Mitchell
ট্রাম্পের আইকিউ
‘‘আমার আইকিউ সাধারণের চেয়ে অনেক বেশি৷ দুঃখিত, এ নিয়ে আপনাদের দুঃখ পাওয়ার কিছু নেই, কারণ, এতে আপনাদের কোনো হাত নেই৷’’
ছবি: picture alliance/AP Photo/E. Vucci
মেক্সিকোর মানুষ
‘‘যখন মেক্সিকো যুক্তরাষ্ট্রে মানুষ পাঠায়, তারা তাদের সেরা মানুষদের পাঠায় না৷ এমন মানুষদের পাঠায় যাদের সমস্যা রয়েছে আর সেই সমস্যাগুলো তারা আমাদের উপর চাপিয়ে দেয়৷ সেইসব মানুষ মাদক আনে, অপরাধ আনে, পাশাপাশি তারা ধর্ষক৷ কেবল অল্প কয়েকজন ভালো মানুষ৷’’