তাঁদের তৈরি ভ্যাকসিন ইউরোপে ছাড়পত্র পেয়েছে। টিকা নিয়ে কী বলছেন প্রস্তুতকারক সংস্থার সিইও উগুর জাহিন?
বিজ্ঞাপন
জার্মান ফার্মাসি কোম্পানি বায়োনটেকের সিইও চিকিৎসক উগুর জাহিন। মার্কিন কোম্পানি ফাইজারের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে তাঁরা করোনার টিকা প্রস্তুত করেছেন। এই টিকাই ইউরোপে প্রথম দেওয়া হবে। জাহিন পেশায় চিকিৎসক। ইমিউনোথেরাপি এবং অঙ্কোলজির ডাক্তার। ডিডাব্লিউয়ের সঙ্গে ভ্যাকসিন এবং যুক্তরাজ্যে করোনা ভাইরাসের নতুন যে স্ট্রেইন এসেছে, তা নিয়ে কথা বলেছেন তিনি।
ডিডাব্লিউ: ইউরোপে আপনাদের তৈরি ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। এর ফলে কি প্যানডেমিক শেষ হবে?
জাহিন: আমাদের ভ্যাকসিন ইউরোপে প্রথম ছাড়পত্র পেয়েছে। অর্থাৎ, ইউরোপের মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু করা যাবে। সুইজারল্যান্ডেও আমরা ছাড়পত্র পেয়েছি। আমাদের ধারণা, টিকা দেওয়া শুরু হয়ে গেলে পরিস্থিতি খানিকটা বদলাবে। বিশেষ করে বয়স্ক মানুষদের হাসপাতালে যাওয়া কিছুটা হলেও কমানো যাবে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলেই মনে হয়।
আরও একটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। আরো অনেক সংস্থাই টিকা তৈরি করছে। তাদের ভ্যাকসিনও ছাড়পত্র পেয়ে গেলে যথেষ্ট পরিমাণ টিকা তৈরি করা যাবে। যা দিয়ে ইউরোপের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া যাবে। ঠিক মতো তা করতে পারলে ২০২১-২২ সালের মধ্যে প্যানডেমিক পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসা হওয়া সম্ভব হবে বলেই মনে হয়।
করোনা ভ্যাকসিন: কোন দেশের কী কৌশল
এক বছরেরও কম সময়ে করোনার কার্যকরী একাধিক ভ্যাকসিন আবিস্কার করেছে বিভিন্ন কোম্পানি৷ সেগুলো অনুমোদনও পেতে শুরু করেছে৷ আগেভাগে সংগ্রহে দেশগুলোর মধ্যে তোড়জোড় যেমন চলছে; তেমনি নাগরিকদের টিকা প্রদানে নেয়া হয়েছে বিভিন্ন কৌশল৷
ছবি: Allan Carvalho/NurPhoto/picture-alliance
পথ দেখালো যুক্তরাজ্য
আট ডিসেম্বর বায়োনটেক ও ফাইজারের টিকার প্রথম ডোজ নেন ৯০ বছরের মার্গারেট৷ যুক্তরাজ্যে প্রথম আট লাখ টিকা পাবেন তার মতো প্রবীণ, সামনের সারির স্বাস্থ্যকর্মীসহ বাকি বয়স্ক নাগরিকরা৷ ফাইজারের কাছে মোট চার কোটি ডোজ টিকার অর্ডার দিয়েছে দেশটি; যার মাধ্যমে দুই ডোজ করে দুই কোটি মানুষের ভ্যাকসিনের নিশ্চয়তা মিলছে৷ পাঁচ কোটি ত্রিশ লাখ নাগরিকের সবাইকে টিকা দিতে যুক্তরাজ্যকে নির্ভর করতে হবে অন্য কোম্পানিগুলোর উপরে৷
ছবি: Jacob King/AP Photo/picture alliance
প্রস্তুত যুক্তরাষ্ট্র
বায়োনটেক-ফাইজারের টিকার প্রয়োগ শুরু করেছে যুক্তরাষ্ট্রও৷ দেশব্যাপী ছড়ানো বিতরণ কেন্দ্রগুলোতে ২৯ লাখ ডোজ টিকার প্রথম চালান পৌঁছেছে৷ ফাইজার থেকে আরো ২০ লাখ আর মডার্নার ৫৯ লাখ ডোজের চালান ছাড় হতে পারে আসছে সপ্তাহে৷ এই দুই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গেই ৩০ কোটি ডোজ ভ্যাকসিনের চুক্তি যুক্তরাষ্ট্রের৷ প্রথম ধাপে স্বাস্থ্যকর্মী, নার্সিং হোমে বসবাসরত, জরুরি সেবায় নিয়োজিত এবং দীর্ঘস্থায়ী ব্যধিতে আক্রান্তরা টিকা পাবেন৷
ছবি: Bran Woolston/REUTERS
ক্যানাডার তোড়জোড়
মডার্নার কাছ থেকে এক লাখ ৬৮ হাজার ডোজ ভ্যাকসিন পেতে সম্প্রতি চুক্তি করেছে ক্যানাডা৷ শর্ত অনুযায়ী অনুমোদন পাওয়ার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এই চালান ছাড় শুরু করবে কোম্পানিটি৷ তবে তার আগেই ফাইজারের টিকা পৌঁছে গেছে দেশটিতে৷ ১৬ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয়েছে প্রয়োগও৷
ছবি: Adrian Wyld/REUTERS
দেরি করেনি সৌদি
আরব নিউজের সংবাদ অনুযায়ী, ১৬ ডিসেম্বর সৌদি আরবে বায়োনটেক-ফাইজারের টিকার প্রথম চালান পৌঁছায়৷ পরের দিন থেকেই শুরু হয়েছে প্রয়োগ৷ টিকা পেতে একদিনে মোট দেড় লাখ মানুষ অনলাইনে নিবন্ধন করেছেন৷ সবাইকে বিনামূল্যে দেয়ার কথা থাকলেও অগ্রাধিকারভিত্তিতে পাবেন ৬৫ বছরের বেশি বয়সি, বিভিন্ন ব্যাধিতে আক্রান্ত রোগী আর স্বাস্থ্যকর্মীরা৷
ছবি: Ahmed Yosri/REUTERS
শুরু হচ্ছে ইসরায়েলে
ইসরায়েলের গণমাধ্যম হারিৎস-এর তথ্য অনুযায়ী ১৯ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু প্রথম টিকা নেবেন দেশটিতে৷ এরপর প্রেসিডেন্ট থেকে শুরু করে পাবেন বাকি জ্যেষ্ঠ নেতৃবৃন্দ ও স্বাস্থ্যকর্মীরা৷ সাধারণ নাগরিকদের টিকা প্রদান শুরু হবে আসছে সপ্তাহে৷ শুরুতে অগ্রাধিকার পাবেন বয়স্করা৷ প্রাথমিক পর্যায়ে ফাইজারের কাছ থেকে কয়েক লাখ ভ্যাকসিন নিচ্ছে দেশটি৷ দ্বিতীয় ধাপের ট্রায়ালে রয়েছে নিজেদের উদ্ভাবিত একটি ভ্যাকসিনও৷
ছবি: Abir Sultan/REUTERS
অপেক্ষায় জার্মানি
নভেম্বরের শুরুতেই টিকা কর্মসূচির কৌশল নির্ধারণ করেছে জার্মানির সরকার৷ ইইউর মাধ্যমে ৩০ কোটি টিকার অর্ডার দিয়েছে দেশটি৷ টিকা পাওয়া মাত্র দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ৬০ টি বিতরণ কেন্দ্রে সেগুলো পৌঁছে দেবে সরকার৷ তবে সাধারণ মানুষকে এর আওতায় আসতে বেশ কয়েক মাস অপেক্ষায় থাকতে হবে৷ কেননা, শুরুতে প্রাধান্য পাবেন বয়স্ক ও স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে থাকা নাগরিকরা৷ এই তালিকায় আছেন স্বাস্থ্যকর্মী ও করোনা চিকিৎসায় নিয়োজিতরাও৷
ছবি: Ralph Orlowski/REUTERS
জাপানে মহাযজ্ঞ
নিজেদের ১২ কোটি জনগোষ্ঠীর সবার জন্য আগামী জুনের মধ্যে করোনার টিকা নিশ্চিত করতে চায় জাপান সরকার৷ এজন্য ফাইজার, আস্ট্রাজেনেকা, মডার্নার কাছ থেকে ২৯ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন কেনার চুক্তি হয়েছে৷ জনগণকে বিনা খরচেই এই টিকা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির সরকার গত অক্টোবরেই৷ ভ্যাকসিন সংরক্ষণে এরই মধ্যে সাড়ে দশ হাজার ডিপ ফ্রিজার কেনাসহ মহাযজ্ঞ হাতে নেয়া হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/Kyodo/MAXPPP
শেষ ধাপে চীন
পরীক্ষার শেষ ধাপে রয়েছে চীনের বিভিন্ন কোম্পানির বেশ কয়েকটি টিকা৷ সেগুলো চূড়ান্ত অনুমোদন না পেলেও জরুরি ভিত্তিতে এরই মধ্যে ১০ লাখ স্বাস্থ্যকর্মী ও ঝুঁকিতে থাকা নাগরিককে পরীক্ষামূলক টিকা দেয়া হয়েছে৷ বিভিন্ন প্রদেশের সরকার আগেভাগেই কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে জনসংখ্যার হিসাবে টিকার অগ্রিম অর্ডার দিয়ে রেখেছে৷ কারা আগে ভ্যাকসিন পাবেন তার অগ্রাধিকার তালিকাও তৈরি করছে প্রশাসন৷
ছবি: Wang Zhao/AFP/Getty Images
একাধিক টিকার অপেক্ষায় ভারত
আগামী ছয় থেকে আট মাসের মধ্যে ৩০ কোটি নাগরিককে টিকা দেয়ার পরিকল্পনা মোদী সরকারের৷ প্রথম ধাপের এই টিকা কর্মসূচীর আওতায় আসবেন স্বাস্থ্যকর্মী ও পঞ্চাশোর্ধ্বরা৷ এতে খরচ হবে ১৪০ থেকে ১৮০ কোটি ডলার৷ পুরো প্রক্রিয়ায় জড়িত থাকবে ২৩টি মন্ত্রণালয়৷ যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড ও আস্ট্রাজেনেকা, রাশিয়ার স্পুটনিক এবং ভারতীয় জাইডাস কেডিলা ও ভারতী বায়োটেকের টিকা আছে সম্ভাব্য প্রাপ্তির তালিকায়৷
ছবি: Dado Ruvic/REUTERS
চীনে চোখ পাকিস্তানের
চীনের একটি টিকার তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল চলছে পাকিস্তানে৷ ভ্যাকসিন কেনার জন্য ইমরান খান সরকারের এখন পর্যন্ত ঘোষিত বাজেট ২৫ কোটি ডলার৷ এই অর্থ দিয়ে একাধিক টিকা কোম্পানির সঙ্গে চুক্তির পরিকল্পনা তাদের৷ প্রথম পর্যায়ে অগ্রাধিকার পাবেন কোভিড চিকিৎসায় নিয়োজিত স্বাস্থকর্মী এবং ৬৫ বছরের বেশি বয়সীরা৷ পরবর্তী ধাপে গুরুত্ব দেয়া হবে বাকি স্বাস্থ্যকর্মী এবং ষাটোর্ধ্বদের৷
ছবি: Aamir Qureshi/AFP/Getty Images
অক্সফোর্ডের ভরসায় বাংলাদেশ
অক্সফোর্ড-আস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন পেতে ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে চুক্তি করেছে বাংলাদেশের বেক্সিমকো৷ যার মাধ্যমে পাওয়া যাবে তিন কোটি টিকা৷ এতে দেড় কোটি মানুষকে টিকার আওতায় আনা যাবে৷ টিকা প্রদানে অগ্রাধিকারের জন্য ১০ ধরনের জনগোষ্ঠীর তালিকা করেছে সরকার৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J. Cairns
11 ছবি1 | 11
নতুন একটি করোনার ধরন নিয়ে এখন সর্বত্র আলোচনা হচ্ছে। করোনার সেই স্ট্রেইন না কি দ্রুত ছড়াচ্ছে। সে বিষয়ে কোনো আলোকপাত করতে পারেন? আপনাদের টিকা সে ক্ষেত্রেও কার্যকরী হবে?
এখনই বলতে পারব না। কারণ আমরা পরীক্ষা করে দেখিনি। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ওই নতুন স্ট্রেইন নিয়ে আমরা পরীক্ষা করে দেখব। তখন বোঝা যাবে, আমাদের ভ্যাকসিন ওই স্ট্রেইনের ক্ষেত্রেও একইরকম কার্যকরী কি না।
তবে সম্ভবত কাজ করবে। এখনো পর্যন্ত নতুন স্ট্রেইনটির বিষয়ে যা জানা গিয়েছে, তাতে আমাদের টিকা কাজ না করার কারণ নেই। নতুন স্ট্রেইন দ্রুত ছড়াচ্ছে। কিন্তু তার চরিত্র আগের চেয়ে খুব আলাদা নয়। মাত্র এক শতাংশ প্রোটিনের পরিবর্তন আছে। অর্থাৎ, ৯৯ শতাংশ প্রোটিনের বিন্যাস আগের মতোই। আমাদের টিকা প্রোটিনকে ঘিরে ফেলে ধ্বংস করে। ফলে নতুন স্ট্রেইনের ক্ষেত্রেও এই টিকা কার্যকর হওয়া উচিত।
পরীক্ষার পর যদি দেখা যায়, নতুন স্ট্রেইনের জন্য নতুন টিকা তৈরি করতে হবে, তাহলে তার জন্য কত সময় লাগবে?
এমনিতে একটি ভ্যাকসিন ছয় সপ্তাহের মধ্যে তৈরি হয়ে যায়। কিন্তু সেই টিকা ঠিক মতো কাজ করছে কি না, শরীরে তার প্রভাব কেমন, এই সমস্ত বিষয় বুঝতে অনেক সময় লেগে যায়। তা ছাড়া নতুন টিকা তৈরির জন্য বহু বৈজ্ঞানিক আলোচনার প্রয়োজন। সে সবের জন্য অনেক সময় প্রয়োজন।
তবে একটি বিষয়ে আমি আত্মবিশ্বাসী। যে পদ্ধতিতে আমাদের ভ্যাকসিন তৈরি হয়েছে, তাতে প্রয়োজন হলে নতুন ধরনের টিকা তৈরি করতে হলেও খুব বেশি অসুবিধা হবে না।
করোনার টিকা বিতরণে জার্মানির পরিকল্পনা
করোনা ভাইরাসের টিকা পাওয়ার পর তা কীভাবে দেয়া হবে সেই পরিকল্পনা একটা বড় চ্যালেঞ্জ৷ এখনো কোনো টিকার কার্যকারিতা পুরোপুরি প্রমাণ হয়নি৷ কিন্তু জার্মানিতে কাদের, কখন এবং কীভাবে তা দেয়া হবে এরই মধ্যে সেই প্রস্তুতি শুরু হয়েছে৷
ছবি: Getty Images/P. Vilela
‘ন্যাশনাল ভ্যাকসিনেশন স্ট্র্যাটেজি’
জার্মানির কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার নভেম্বরের শুরুতেই সারাদেশে কীভাবে ভ্যাকসিন দেয়া হবে সেই পরিকল্পনা নিয়েছে৷ ‘ন্যাশনাল ভ্যাকসিনেশন স্ট্র্যাটেজি’তে ১৫ পাতার পরিকল্পনা লেখা হয়েছে৷ যদিও টিকা পাওয়ার পর তা বিতরণের পরিকল্পনাকে একটা চ্যালেঞ্জ হিসেবেই দেখছেন তারা৷ তারপরও চেষ্টা করছেন ভ্যাকসিন হাতে পাওয়ার সাথে সাথে বিশাল জনগোষ্ঠীকে যাতে এর আওতায় আনা যায়৷
ছবি: Joel Saget/AFP/Getty Images
পরিকল্পনার লক্ষ্য
টিকা কবে নাগাদ আবিষ্কার হবে এবং কী পরিমাণ উৎপাদন হবে, সেটা এখনও জানা যায়নি৷ কিন্তু টিকা হাতে আসার পর যাতে অন্য কোনো কারণে বিতরণ কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত না হয় সেটাই এই পরিকল্পনার লক্ষ্য৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Schmidt
কর্মপরিকল্পনা
টিকা দেয়ার জন্য কর্মপদ্ধতি এবং কাজের ধরন এরইমধ্যে বাস্তবায়ন করা হয়েছে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভ্যাকসিনের জন্য ছয়টি কোম্পানির সাথে চুক্তি করেছে৷ এই কোম্পানিগুলোর কোনো ভ্যাকসিন বের করলে ইইউ-এর মাধ্যমে তা পাবে জার্মানি৷ তারপর কেন্দ্রীয় সরকার দেশের ৬০টি ভ্যাকসিন বিতরণ কেন্দ্রে তা পৌঁছে দেবে৷
ছবি: Getty Images/P. Vilela
সাধারণ চিকিৎসকদের নাগালের বাইরে
পুরো ব্যাপারটি ঠিক করবে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার৷ সাধারণ চিকিৎসকরা এটা বিতরণ করতে পারবেন না৷ ফলে ধরেই নেয়া যায়, প্রথম দফায় সবাই এই ভ্যাকসিন পাচ্ছেন না৷ এছাড়া সাধারণ চিকিৎসকদের অফিসে এই ভ্যাকসিন সংরক্ষণের সুবিধা নেই৷
ছবি: picture alliance/dpa
যারা প্রাধান্য পাবেন
বয়স্ক মানুষ এবং যাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি রয়েছে তারা এক্ষেত্রে প্রাধান্য পাবেন৷ এছাড়া স্বাস্থ্যকর্মী এবং করোনা চিকিৎসার সাথে জড়িতরাও থাকছেন এই তালিকায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Gollnow
বার্লিন
বার্লিনের স্থানীয় সরকার ছয়টি টিকাদান কেন্দ্র স্থাপন করছে৷ ফাইজার এবং বায়োনটেকের তথ্য অনুযায়ী, বার্লিনে প্রথম দফায় ৯ লাখ টিকা দেয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে৷ সে হিসেবে প্রথম দফায় বার্লিনের প্রতি ১০ জনের একজন টিকা পাবেন৷ একেকটা কেন্দ্রে দিনে তিন হাজার ৪০০ টিকা দেয়ার পরিকল্পনা করছে বার্লিন৷ এক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ হলো, ভ্যাকসিন যারা নিতে আসবেন তাদের লাইন এবং সময় নিয়ন্ত্রণ করা৷
ছবি: picture-alliance/Zoonar
চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত টিকা আসার পর
জার্মানির রবার্ট কখ ইনস্টিটিউটের ইনফেকশাস ডিজিজ সম্প্রতি জানিয়েছে, ভ্যাকসিন বিতরণের চূড়ান্ত পরিকল্পনা, টিকা হাতে পাওয়ার পরই করা সম্ভব৷ যখন এটা নিশ্চিত হওয়া যাবে এটা বিভিন্ন বয়সে কীভাবে কাজ করে, কতটা কার্যকর ও নিরাপদ৷
ছবি: picture-alliance/ANE
৩০ কোটি ভ্যাকসিন
জার্মানির স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়েনস স্পান জানিয়েছেন, তারা চেষ্টা করছেন ভ্যাকসিন বিতরণের জন্য সবচেয়ে সেরা পরিকল্পনা করতে৷ ইইউ-এর মাধ্যমে ৩০ কোটি ডোজ ভ্যাকসিনের অর্ডার দিয়ে রেখেছেন তারা৷
ছবি: Tobias Schwarz/AFP
পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
জার্মানির এথিক্স কাউন্সিলের প্রধান আলেনা বুইক্স জানিয়েছেন, কোন কোম্পানির ভ্যাকসিনে কী ধরনের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হবে, কোন বয়সের মানুষের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বেশি হবে, সেটা আগে থেকে জানা সম্ভব নয়৷ আশা করা হচ্ছে, দ্বিতীয় দফায় সাধারণ চিকিৎসকদের কাছে এই ভ্যাকসিন পৌঁছানো যাবে, তবে এরজন্য বিশেষ ফ্রিজের প্রয়োজন হবে৷
ছবি: picture-alliance/Sven Simon
প্রয়োজন কর্মী
এই কাজে কেবল চিকিৎসক না, প্রয়োজন নিরাপত্তারক্ষী, গাড়িচালকসহ অন্যান্য কর্মী৷ সেজন্য সেনাবাহিনী এবং ত্রাণ সংস্থাগুলোর কাছে কর্মী চেয়ে আবেদন করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Meissner
গ্রামগুলোতে টিকা সরবরাহের চ্যালেঞ্জ
শহরে যাতায়াত ও অন্য সুবিধা থাকলেও শহর থেকে যারা অনেক দূরে থাকেন, সেসব এলাকায় প্রবীণ মানুষ কীভাবে টিকা দান কেন্দ্রে পৌঁছাবেন সেটা একটা চিন্তার বিষয়৷
ছবি: picture-alliance/EibnerT. Hahn
11 ছবি1 | 11
ভ্যাকসিন স্টোর করা একটা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এত কম তাপমাত্রায় এত পরিমাণ টিকা রাখা সহজ নয়। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে তা সরবরাহ করা কঠিন হবে বলে মনে হচ্ছে?
একেবারেই নয়। এর জন্য সাংঘাতিক কোনো টেকনোলজির প্রয়োজন নেই। ড্রাই আইস দিয়ে বাক্স তৈরি করে সহজেই ভ্যাকসিন বিভিন্ন দেশে পাঠানো সম্ভব। বস্তুত, এই ভাবে গত ৫০ বছর ধরে টিকা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পাঠানো হচ্ছে। ইউরোপে ড্রাই আইস প্রস্তুতকারকের সংখ্যাও কম নয়।
ড্রাই আইস দেওয়া বাক্স মেডিক্যাল অফিসারদের হাতে পৌঁছলে তাঁরা তা ফ্রিজে ঢুকিয়ে অন্তত পাঁচদিন রেখে দেবেন। তাহলেই টিকা দেওয়া যাবে। অত্যন্ত সহজ পদ্ধতিতে ভ্যাকসিন সরবরাহ করা সম্ভব। এটা কোনো সমস্যার বিষয়ই নয়।
উন্নত দেশগুলি ভ্যাকসিন পেতে শুরু করেছে। কিন্তু গরিব দেশগুলি এখনো ভ্যাকসিন পায়নি। এটা অন্যায় নয়?
না, আমার মনে হয় না। উন্নয়নশীল দেশগুলিতেও ভ্যাকসিন পৌঁছনোর ব্যবস্থা হচ্ছে। প্রায় ৪০টি দেশে আমাদের ভ্যাকসিন ছাড়পত্র পেয়েছে। গোটা বিশ্বে টিকা পাঠানোর জন্য আমরা কাজ করছি। বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে আলোচনা চলছে। কাজ চলছে। ফলে সকলের কাছেই ভ্যাকসিন পৌঁছাবে।
একটু ব্যক্তিগত প্রশ্ন করব এবার। আপনি এবং আপনার স্ত্রী চিকিৎসক ওজলেম টুরেসি একসঙ্গে এই টিকার গবেষণা করেছেন। সাফল্যও পেয়েছেন। কেমন লাগছে?
আমরা আমাদের গবেষণার বিষয়ে অত্যন্ত ফোকাসড। গত ২০ বছর ধরে চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আমরা গবেষণা করছি। জানি, আমাদের কাজের দিকে গোটা বিশ্ব তাকিয়ে ছিল। কিন্তু সেই চাপ আমাদের উপর কখনোই পড়েনি। আমরা আমাদের গবেষণার কাজ করেছি। তবে একটা বিষয় ঠিক, আমরা জানতাম, আমাদের কাজ কতটা জরুরি।
তা ছাড়া আমরা একাও কাজ করিনি। গোটা বিশ্বের বহু বিখ্যাত ব্যক্তি আমাদের সঙ্গে কাজ করেছেন। সকলের কাজের ফসল এই টিকা। তা ছাড়া অ্যামেরিকা থেকেও আমরা অনেক সাহায্য পেয়েছি। বহু সংস্থা আমাদেরকে বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করেছে। সকলের চেষ্টা এবং উৎসাহে এ কাজ সম্ভব হয়েছে।
জার্মানিতে করোনা ভাইরাসের টিকা আবিষ্কারে মুসলিম দম্পতি
করোনা ভাইরাসের টিকা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বায়োনটেকের প্রতিষ্ঠাতা তুরস্ক বংশোদ্ভূত এক দম্পতি৷ ছবিঘরে জানুন বিস্তারিত৷
ছবি: Stefan F. Sämmer/imago images
২০০৮ সালে শুরু
জার্মান শহর মাইনৎসে ১২ বছর আগে বায়োনটেকের পথচলা শুরু হয়৷ এই কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ উগুর জাহিন এবং তাঁর স্ত্রী ইমিউনোলজিস্ট উজলেম টুরেচি৷
ছবি: BioNTech SE 2020, all rights reserved
তুরস্ক বংশোদ্ভূত
তারা দুইজনই তুরস্ক বংশোদ্ভূত জার্মান নাগরিক৷ এই দম্পতির তৈরি বায়োনটেকে এখন কাজ করে ১৫শ’ কর্মী৷ ৫৫ বছর বয়সি জাহিনের জন্ম তুরস্কে৷ বাবা-মা’র সঙ্গে একসময় জার্মানিতে চলে আসেন তিনি৷ মেডিসিন এবং গণিত নিয়ে পড়ালেখা করেন কোলোন বিশ্ববিদ্যালয়ে৷
ছবি: Stefan F. Sämmer/imago images
ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই
জাহিন কোলোন এবং হামবুর্গে দীর্ঘদিন চিকিৎসক হিসেবে কাজ করেছেন৷ এরপর জারল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন৷ ১৯৯২ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত একজন চিকিৎসক ও গবেষক হিসেবে সেখানে কাজ করেন৷ মলিকিউলার মেডিসিন এবং ইমিউনোলজি নিয়ে গবেষণা শুরু করেন৷ ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ব্যাপারে তিনি সবসময় আগ্রহী ছিলেন আর এ কারণেই ২০০৮ সালে বায়োনটেক প্রতিষ্ঠা করেন৷ ক্যান্সারের ওষুধ আবিষ্কারের জন্য এখানে মনোনিবেশ করেন তিনি৷
৫৩ বছর বয়সি টুরেচির জন্ম জার্মানিতে৷ কিন্তু তাঁর বাবা-মা তুর্কি৷ হামবুর্গে পড়ালেখা করে, সেখানেই চিকিৎসক হিসেবে কাজ করেছিলেন তিনি৷ ইমিউনোলজিস্ট টুরেচি ক্যান্সার রোগীদের থেরাপি দিয়ে থাকেন৷
ছবি: BioNTech SE 2020, all rights reserved
ভ্যাকসিন তৈরির সিদ্ধান্ত
২০০০ সালের জানুয়ারিতে জাহিন করোনা ভাইরাস সম্পর্কে প্রথম জানতে পারেন৷ তখনই তাঁর আশঙ্কা হয় এটি মহামারি রূপ নেবে৷ সেসময়ই ভ্যাকসিন প্রস্তুতের সিদ্ধান্ত নেন তিনি৷
ছবি: BioNTech SE 2020, all rights reserved
করোনা প্রতিরোধে ভূমিকা
বায়োনটেকের প্রধান নির্বাহী উগুর জাহিন জানিয়েছেন, এই টিকার প্রতিরোধ ক্ষমতা অন্তত এক বছর স্থায়ী হবে৷ যৌথ বিবৃতিতে ফাইজারের চেয়ারম্যান ও তিনি জানিয়েছেন, ‘‘টিকার তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষার প্রাথমিক ফলে আমরা প্রমাণ পেয়েছি যে এটি কোভিড-১৯ প্রতিরোধ করতে পারে৷’’
ছবি: Andreas Arnold/dpa/picture-alliance
6 ছবি1 | 6
আপনারা চিকিৎসাবিজ্ঞানের সুপারহিরো!
আমরা বিজ্ঞানী। সেটাই আমাদের পরিচয়। শুধুমাত্র একটি ঘটনা নয়, শুধুমাত্র কয়েকজন ব্যক্তি নয়, গোটা বিজ্ঞানজগৎই সে অর্থে সুপার হিরো। বহু মানুষ বিভিন্ন ভাবে এর সঙ্গে জড়িত। সকলের চেষ্টায় বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিষ্কার হয়।
আপনি এখনো টিকা নেননি কেন?
আইনত আমিটিকা নিতে পারি না। সে কারণেই নিইনি। আমি চাই, আমাদের সঙ্গে যাঁরা কাজ করেছেন তাঁরা সকলে টিকা নিন। চসতি বছরের মধ্যে এক দশমিক তিন মিলিয়ন ভ্যাকসিন তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা। তার জন্য দিনে ২৪ ঘণ্টা কাজ করতে হবে। সহকর্মীরা বিপুল পরিশ্রম করছেন। সকলে মিলে এই প্যানডেমিককে জয় করতে পারব বলে আশা করছি।
কেন আপনি আইনত ভ্যাকসিন নিতে পারেন না?
ভ্যাকসিনের একটি প্রায়োরিটি লিস্ট আছে। সেই তালিকা মেনেই দিতে হবে। আমিও মাঝখানে ঢুকে পড়তে পারি না। তা ছাড়া যে সংস্থা ভ্যাকসিন তৈরি করছে, তার কোনো সদস্য ট্রায়ালেও অংশ নিতে পারে না। এটাই নিয়ম। তবে এ সব আইন নিয়ে ভাবার সময় এখন আমাদের নেই। আমাদের কাজ সকলের কাছে ভ্যাকসিন পৌঁছে দেওয়া।