1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মুখোমুখি ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারক

২৩ ডিসেম্বর ২০২০

তাঁদের তৈরি ভ্যাকসিন ইউরোপে ছাড়পত্র পেয়েছে। টিকা নিয়ে কী বলছেন প্রস্তুতকারক সংস্থার সিইও উগুর জাহিন?

বায়োএনটেক
ছবি: Andreas Arnold/dpa/picture alliance

জার্মান ফার্মাসি কোম্পানি বায়োনটেকের সিইও চিকিৎসক উগুর জাহিন। মার্কিন কোম্পানি ফাইজারের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে তাঁরা করোনার টিকা প্রস্তুত করেছেন। এই টিকাই ইউরোপে প্রথম দেওয়া হবে। জাহিন পেশায় চিকিৎসক। ইমিউনোথেরাপি এবং অঙ্কোলজির ডাক্তার। ডিডাব্লিউয়ের সঙ্গে ভ্যাকসিন এবং যুক্তরাজ্যে করোনা ভাইরাসের নতুন যে স্ট্রেইন এসেছে, তা নিয়ে কথা বলেছেন তিনি।

ডিডাব্লিউ: ইউরোপে আপনাদের তৈরি ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। এর ফলে কি প্যানডেমিক শেষ হবে?

জাহিন: আমাদের ভ্যাকসিন ইউরোপে প্রথম ছাড়পত্র পেয়েছে। অর্থাৎ, ইউরোপের মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু করা যাবে। সুইজারল্যান্ডেও আমরা ছাড়পত্র পেয়েছি। আমাদের ধারণা, টিকা দেওয়া শুরু হয়ে গেলে পরিস্থিতি খানিকটা বদলাবে। বিশেষ করে বয়স্ক মানুষদের হাসপাতালে যাওয়া কিছুটা হলেও কমানো যাবে। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলেই মনে হয়।

আরও একটি বিষয় গুরুত্বপূর্ণ। আরো অনেক সংস্থাই টিকা তৈরি করছে। তাদের ভ্যাকসিনও ছাড়পত্র পেয়ে গেলে যথেষ্ট পরিমাণ টিকা তৈরি করা যাবে। যা দিয়ে ইউরোপের ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া যাবে। ঠিক মতো তা করতে পারলে ২০২১-২২ সালের মধ্যে প্যানডেমিক পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসা হওয়া সম্ভব হবে বলেই মনে হয়।

নতুন একটি করোনার ধরন নিয়ে এখন সর্বত্র আলোচনা হচ্ছে। করোনার সেই স্ট্রেইন না কি দ্রুত ছড়াচ্ছে। সে বিষয়ে কোনো আলোকপাত করতে পারেন? আপনাদের টিকা সে ক্ষেত্রেও কার্যকরী হবে?

এখনই বলতে পারব না। কারণ আমরা পরীক্ষা করে দেখিনি। কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ওই নতুন স্ট্রেইন নিয়ে আমরা পরীক্ষা করে দেখব। তখন বোঝা যাবে, আমাদের ভ্যাকসিন ওই স্ট্রেইনের ক্ষেত্রেও একইরকম কার্যকরী কি না।

তবে সম্ভবত কাজ করবে। এখনো পর্যন্ত নতুন স্ট্রেইনটির বিষয়ে যা জানা গিয়েছে, তাতে আমাদের টিকা কাজ না করার কারণ নেই। নতুন স্ট্রেইন দ্রুত ছড়াচ্ছে। কিন্তু তার চরিত্র আগের চেয়ে খুব আলাদা নয়। মাত্র এক শতাংশ প্রোটিনের পরিবর্তন আছে। অর্থাৎ, ৯৯ শতাংশ প্রোটিনের বিন্যাস আগের মতোই। আমাদের টিকা প্রোটিনকে ঘিরে ফেলে ধ্বংস করে। ফলে নতুন স্ট্রেইনের ক্ষেত্রেও এই টিকা কার্যকর হওয়া উচিত।

পরীক্ষার পর যদি দেখা যায়, নতুন স্ট্রেইনের জন্য নতুন টিকা তৈরি করতে হবে, তাহলে তার জন্য কত সময় লাগবে?

এমনিতে একটি ভ্যাকসিন ছয় সপ্তাহের মধ্যে তৈরি হয়ে যায়। কিন্তু সেই টিকা ঠিক মতো কাজ করছে কি না, শরীরে তার প্রভাব কেমন, এই সমস্ত বিষয় বুঝতে অনেক সময় লেগে যায়। তা ছাড়া নতুন টিকা তৈরির জন্য বহু বৈজ্ঞানিক আলোচনার প্রয়োজন। সে সবের জন্য অনেক সময় প্রয়োজন।

তবে একটি বিষয়ে আমি আত্মবিশ্বাসী। যে পদ্ধতিতে আমাদের ভ্যাকসিন তৈরি হয়েছে, তাতে প্রয়োজন হলে নতুন ধরনের টিকা তৈরি করতে হলেও খুব বেশি অসুবিধা হবে না। 

ভ্যাকসিন স্টোর করা একটা বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এত কম তাপমাত্রায় এত পরিমাণ টিকা রাখা সহজ নয়। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে তা সরবরাহ করা কঠিন হবে বলে মনে হচ্ছে?

একেবারেই নয়। এর জন্য সাংঘাতিক কোনো টেকনোলজির প্রয়োজন নেই। ড্রাই আইস দিয়ে বাক্স তৈরি করে সহজেই ভ্যাকসিন বিভিন্ন দেশে পাঠানো সম্ভব। বস্তুত, এই ভাবে গত ৫০ বছর ধরে টিকা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পাঠানো হচ্ছে। ইউরোপে ড্রাই আইস প্রস্তুতকারকের সংখ্যাও কম নয়।

ড্রাই আইস দেওয়া বাক্স মেডিক্যাল অফিসারদের হাতে পৌঁছলে তাঁরা তা ফ্রিজে ঢুকিয়ে অন্তত পাঁচদিন রেখে দেবেন। তাহলেই টিকা দেওয়া যাবে। অত্যন্ত সহজ পদ্ধতিতে ভ্যাকসিন সরবরাহ করা সম্ভব। এটা কোনো সমস্যার বিষয়ই নয়।

উন্নত দেশগুলি ভ্যাকসিন পেতে শুরু করেছে। কিন্তু গরিব দেশগুলি এখনো ভ্যাকসিন পায়নি। এটা অন্যায় নয়?

না, আমার মনে হয় না। উন্নয়নশীল দেশগুলিতেও ভ্যাকসিন পৌঁছনোর ব্যবস্থা হচ্ছে। প্রায় ৪০টি দেশে আমাদের ভ্যাকসিন ছাড়পত্র পেয়েছে। গোটা বিশ্বে টিকা পাঠানোর জন্য আমরা কাজ করছি। বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে আলোচনা চলছে। কাজ চলছে। ফলে সকলের কাছেই ভ্যাকসিন পৌঁছাবে। 

একটু ব্যক্তিগত প্রশ্ন করব এবার। আপনি এবং আপনার স্ত্রী চিকিৎসক ওজলেম টুরেসি একসঙ্গে এই টিকার গবেষণা করেছেন। সাফল্যও পেয়েছেন। কেমন লাগছে?

আমরা আমাদের গবেষণার বিষয়ে অত্যন্ত ফোকাসড। গত ২০ বছর ধরে চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আমরা গবেষণা করছি। জানি, আমাদের কাজের দিকে গোটা বিশ্ব তাকিয়ে ছিল। কিন্তু সেই চাপ আমাদের উপর কখনোই পড়েনি। আমরা আমাদের গবেষণার কাজ করেছি। তবে একটা বিষয় ঠিক, আমরা জানতাম, আমাদের কাজ কতটা জরুরি।

তা ছাড়া আমরা একাও কাজ করিনি। গোটা বিশ্বের বহু বিখ্যাত ব্যক্তি আমাদের সঙ্গে কাজ করেছেন। সকলের কাজের ফসল এই টিকা। তা ছাড়া অ্যামেরিকা থেকেও আমরা অনেক সাহায্য পেয়েছি। বহু সংস্থা আমাদেরকে বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করেছে। সকলের চেষ্টা এবং উৎসাহে এ কাজ সম্ভব হয়েছে।

আপনারা চিকিৎসাবিজ্ঞানের সুপারহিরো!

আমরা বিজ্ঞানী। সেটাই আমাদের পরিচয়। শুধুমাত্র একটি ঘটনা নয়, শুধুমাত্র কয়েকজন ব্যক্তি নয়, গোটা বিজ্ঞানজগৎই সে অর্থে সুপার হিরো। বহু মানুষ বিভিন্ন ভাবে এর সঙ্গে জড়িত। সকলের চেষ্টায় বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিষ্কার হয়।

আপনি এখনো টিকা নেননি কেন?

আইনত আমিটিকা নিতে পারি না। সে কারণেই নিইনি। আমি চাই, আমাদের সঙ্গে যাঁরা কাজ করেছেন তাঁরা সকলে টিকা নিন। চসতি বছরের মধ্যে এক দশমিক তিন মিলিয়ন ভ্যাকসিন তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমরা। তার জন্য দিনে ২৪ ঘণ্টা কাজ করতে হবে। সহকর্মীরা বিপুল পরিশ্রম করছেন। সকলে মিলে এই প্যানডেমিককে জয় করতে পারব বলে আশা করছি। 

কেন আপনি আইনত ভ্যাকসিন নিতে পারেন না?

ভ্যাকসিনের একটি প্রায়োরিটি লিস্ট আছে। সেই তালিকা মেনেই দিতে হবে। আমিও মাঝখানে ঢুকে পড়তে পারি না। তা ছাড়া যে সংস্থা ভ্যাকসিন তৈরি করছে, তার কোনো সদস্য ট্রায়ালেও অংশ নিতে পারে না। এটাই নিয়ম। তবে এ সব আইন নিয়ে ভাবার সময় এখন আমাদের নেই। আমাদের কাজ সকলের কাছে ভ্যাকসিন পৌঁছে দেওয়া।

স্টেফান/এসজি

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ