রাজ্যজুড়ে যে বোমা তৈরির কারখানা গড়ে উঠেছে, মুখ্যমন্ত্রী তাহলে তা জানতেন! পুলিশও জানতো নিশ্চয়!
বিজ্ঞাপন
বগটুই-কাণ্ডে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট। আর তার ঠিক একদিন আগে ঘটনাস্থলে গিয়ে বেশ কিছু কড়া কথা বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন, যেখানে যত বেআইনি বোমা তৈরি হচ্ছে, সব খুঁজে বার করতে হবে। কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। চমৎকার নির্দেশ! প্রশাসনের কাছে এটাই তো প্রত্যাশা। বগটুই গ্রামে বন্ধ বাড়িতে পুড়ে মারা গেলেন যারা, সেই শিশু, নারীরাও এই আশ্বাসবাণীটুকু শুনতে চেয়েছিলেন নিশ্চয় শেষবেলায়! পোড়া লাশগুলো এ কথা শুনে একটু শান্তিতে কবরে যেতে পারবে নিশ্চয়।
চাপের মুখে পুলিশ, নেতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা মমতার
প্রবল চাপের মুখে পড়ে পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গ্রেপ্তার রামপুরহাটে তৃণমূলের দাপুটে নেতা।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
পুলিশের বিরুদ্ধে
এক মাসের মধ্যে পরপর ঘটে যাওয়া চারটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেন মমতা। আনিস খানের মৃত্যু, ঝালদায় কংগ্রেসের কাউন্সিলারকে হত্যা, পানিহাটিতে তৃণমূল কাউন্সিলার খুন এবং রামপুরহাটের তৃণমূল উপপ্রধান খুন ও বাড়িতে আগুন লাগিয়ে আটজনকে পুড়িয়ে মারার ঘটনায় স্থানীয় থানার পুলিশ কর্মীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
বগটুই নিয়ে
বীরভূমের বগটুইয়ে গিয়েছিলেন মমতা। সেখানে গ্রামবাসীরা পুলিশের একাংশের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ করেন। মমতাও তাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এরপর রামপুরহাট থানার আইসি ত্রিদীপ প্রামাণিক ও মহকুমা পুলিশ আধিকারিক (এসডিপিও) সায়ন আহমেদকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
আনারুল গ্রেপ্তার
আনারুল হোসেন ছিলেন রামপুরহাট ১ ব্লকের তৃণমূল সভাপতি। এলাকায় দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা বলে পরিচিত। বগটুইতে গিয়ে মমতা বলেন, আনারুলকে হয় আত্মসমর্পণ করতে হবে, নাহলে তাকে গ্রেপ্তার করতে হবে। এরপর পুলিশ একটি হোটেল থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে। উপরে ছবিটি আনারুলের বাড়ির।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
আনারুলের অপরাধ কী?
মমতা জানিয়েছেন, গ্রামবাসীরা আনারুলকে ঘটনার কথা জানিয়েছিল। কিন্তু তারপরেও আনারুল পুলিশকে সতর্ক করেনি। পুলিশ পাঠাবার ব্যবস্থা করেনি। আনারুল দায়িত্ব পালন করলে এতবড় ঘটনা ঘটত না। রাজ্যের সাবেক বিরোধী নেতা আব্দুল মান্নান বলেছেন, পুলিশ পাঠানো আনারুলের কাজ নয়, প্রশাসনের কাজ, পুলিশের কর্তাদের কাজ। আনারুলের উচিত ছিল পুলিশকে ঘটনার কথা জানানো।
ছবি: Prabhakar Mani Tewari/DW
অস্ত্র কারখানার খোঁজ
পরপর চারটি ঘটনার পর মমতা পুলিশকে নির্দেশ দেন, বেআইনি অস্ত্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে। তারপর পুলিশ সেই অভিযান শুরু করে এবং আসানসোলে একটি অস্ত্র কারখানার খোঁজ পায়। এখন বিভিন্ন জেলায় খোঁজ চলছে। বিরোধী নেতাদের অভিযোগ, পশ্চিমবঙ্গে বেআইনি অস্ত্রের রমরমা নিয়ে তারা দীর্ঘদিন ধরে সোচ্চার। গত লোকসভা ও বিধানসভা ভোটের আগে তারা বারবার অভিযোগ করেছেন। কিন্তু ফল হয়নি।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
'লোক দেখানো ব্যবস্থা'
পশ্চিমবঙ্গের সাবেক বিরোধী নেতা আব্দুল মান্নান ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী লোক দেখানো ব্যবস্থা নিচ্ছেন। তিনি লোকের চোখে ধুলো দিতে চাইছেন। অতীতেও বারবার তিনি এই কাজ করেছেন। নিছক সাসপেন্ড করা, ক্লোজ করা অর্থহীন। ২১ জুলাইয়ের গুলি-কাণ্ডে অভিযুক্ত পুলিশ কর্তাকে মমতা দলে নিয়ে মন্ত্রী পর্যন্ত বানিয়েছেন। মান্নানের প্রশ্ন, হাওড়ার এসপি-র বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নেয়া হলো না?
ছবি: DW/P. Samanta
বগটুইতে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ
গ্রামবাসীরা অভিযোগ করেছেন, এসডিপিও-র বাড়ি ঘটনাস্থল থেকে এক কিলোমিটারও নয়। মূল রাস্তায় সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো আছে। ভাদু শেখকে হত্যা করার আধঘণ্টা, চল্লিশ মিনিট পরে এতগুলো বাড়ি পুড়িয়ে মানুষ মারা হলো। বগটুই গ্রাম মোটেই শান্তিপূর্ণ এলাকা নয়। তারপরেও পুলিশ কিছুই টের পেলো না? তারা সময়ে এলো না?
ছবি: Satyajit Shaw/DW
ভাদু শেখের বাড়িতে নয়
মুখ্যমন্ত্রী বগটুই গ্রামে গেলেও ভাদু শেখের বাড়িতে যাননি। ভাদু শেখ ছিলেন তার দলের নেতা। এর ফলে ভাদু শেখের স্ত্রী কেবিনা বিবি ক্ষুব্ধ। তার বক্তব্য, ‘‘তৃণমূল করতে গিয়েই আমার স্বামী খুন হয়েছে। ভেবেছিলাম মুখ্যমন্ত্রী আমাদের বাড়িতে আসবেন। কেন তিনি এলেন না আমি জানি না।’’ ভাদুর বাবা মারফত শেখ বলেছেন, ‘‘১৭টি গ্রামের মাথা ছিল আমার ছেলে। বখরার ভাগ দিতে পারেনি বলেই সে খুন হয়ে গেল!’’
ছবি: Satyajit Shaw/DW
পুলিশ নিয়ে আসে
ভাদু শেখের হত্যার পর তার পরিবার গ্রাম ছেড়েছিলেন। বৃহস্পতিবার পুলিশি পাহারায় তারা বাড়ি ফেরেন। ভাদুর অনুগামীরাও সেখানে আসেন। মুখ্যমন্ত্রী না আসায় তারাও হতাশ। বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য বলেছেন, ভাদু তো আর ভোট করতে পারবেন না। তাই মুখ্যমন্ত্রী তার বাড়ি যাননি। তিনি এখন নতুন মানুষের খোঁজ করছেন।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
বিজেপি প্রতিনিধিদল
বিজেপি-র সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডা বগটুইয়ের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে রিপোর্ট দেয়ার জন্য চার সদস্যের প্রতিনিধিদল পাঠিয়েছিলেন। সেই প্রতিনিধিদলে রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ছিলেন। আর ছিলেন তিন সাবেক আইপিএস অফিসার। তারা বগটুইয়ে গিয়ে গ্রামের মানুষদের সঙ্গে কথা বলেন।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
10 ছবি1 | 10
মুখ্যমন্ত্রীরকথা শুনতে শুনতে ফ্ল্যাশব্যাকের মতো ভেসে আসছিল কোনো কোনো ঘটনা। কিছু কিছু কথা। অসংখ্য অভিযোগ। ২০১৬ সালের পঞ্চায়েত ভোটের সময় থেকে হালের পুরভোট-- বাম, কংগ্রেস, বিজেপি সকলে সমস্বরে অভিযোগ করে গেছে যে, রাজ্যের দিকে দিকে বোমা তৈরির কারখানা গড়ে উঠেছে। চোখে ঠুলি পরে না থাকলে গোটা পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে প্রায় প্রতিদিন যে রাজনৈতিক সহিসংতার ঘটনা ঘটছে, তা দেখতে-বুঝতে অসুবিধা হয় না। সিসিটিভি ফুটেজে তৃণমূলেরই এক কাউন্সিলরকে হত্যা করার যে ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, তাতে শরীরের রক্ত ঠান্ডা হয়ে যায়। প্রকাশ্য রাস্তায় বাইকে বসা কাউন্সিলরকে মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে মেরে দিচ্ছে এক দুষ্কৃতী। একসময় এমন ঘটনা বিহার-উত্তরপ্রদেশে হতো বলে শুনেছি। এখন সেখানেও এমন বেপরোয়া দৃশ্য বড় একটা দেখা যায় না। উত্তরপ্রদেশে অবশ্য আরো ভয়াবহ সব ঘটনা ঘটে। ফলে বিজেপি নেতারা উত্তরপ্রদেশের সঙ্গে বাংলার যে তুলনা টানেন, তা-ও ঠিক নয়।
রাজ্য জুড়ে বোমা তৈরির কারখানার অভিযোগ যখনই বিরোধীরা তুলেছেন, মুখ্যমন্ত্রী এবং তার মন্ত্রী-সান্ত্রিরা গলা চড়িয়ে তার বিরোধিতা করেছেন। রাজ্যের বিরুদ্ধে চক্রান্তের অভিযোগ তুলেছেন বিরোধীদের বিরুদ্ধে। একের পর এক খুন, গাছে মৃতদেহ ঝুলতে দেখেও আপনারা বলে গেছেন, কোথাও কিছু ঘটছে না। রাজনৈতিক হত্যার কোনো চিহ্নই নেই। আর আপনাদের সেই কথায় আরো আসকারা পেয়েছে 'তাজা' নেতারা। মাথায় অক্সিজেন কম নিয়ে একের পর এক সভায় ঘর জ্বালিয়ে দেওয়া, পুলিশকে বোমা মারা, খুন করে দেওয়ার বক্তৃতা করে গেছেন আপনাদেরই ভাইসম নেতা। তিনি বলেছেন, আর নীচু তলার কর্মীরা করে দেখিয়েছেন। বাড়তে বাড়তে পরিস্থিতি এখন বগটুইয়ে গিয়ে পৌঁছেছে। গণহত্যার অভিযোগ উঠতে শুরু করেছে আপনাদের বিরুদ্ধেও। একসময় বিরোধী হিসেবে শাসকের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ তুলতেন আপনারা। এতদিনে বুঝতে পারলেন, এবার লাগাম টানতে হবে? সে জন্যই কি পুলিশকে বোমা উদ্ধার অভিযানে নামতে বললেন মানীয়া মুখ্যমন্ত্রী? মেনে নিতে বাধ্য হলেন যে, রাজ্যজুড়ে এমন বোমা তৈরির অসংখ্য শিল্প গড়ে উঠেছে!
পালাচ্ছেন গ্রামবাসীরা, শুধু নেতাদের ভিড়
রামপুরহাটের বগটুই গ্রামের বাতাসে এখনো পোড়া গন্ধ। গ্রাম ছাড়ছেন মানুষ। শুধু নেতাদের ভিড়। যাবেন মুখ্যমন্ত্রীও।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
গ্রামে সিপিএম
বুধবার সকালে সাবেক মন্ত্রী রামচন্দ্র ডোমকে নিয়ে বগটুই গ্রামে পৌঁছে যান সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে স্কুটারে চড়ে তিনি গ্রামে পৌঁছান। কথা বলেন গ্রামবাসীদের সঙ্গে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
সেলিমের অভিযোগ
নিহত তৃণমূল নেতা ভাদু শেখের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে সেলিম প্রশ্ন তোলেন, কীভাবে অট্টালিকার মতো বাড়ি তৈরি করলেন ভাদু। এলাকায় তিনি মাফিয়া বলে পরিচিত ছিলেন বলে অভিযোগ করেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক। পাশাপাশি তার অভিযোগ, পোড়া বাড়ি থেকে পুলিশ তথ্য লোপাটের চেষ্টা করছে। এই ঘটনার সঙ্গে সিন্ডিকেট জড়িত বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
ঘটনাস্থলে ফরেনসিক দল
গোটা গ্রাম ঘিরে ফেলেছে ফরেনসিক দল। তারা পোড়া বাড়িতে ঢুকে নমুনা সংগ্রহ করছে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
গ্রামে পৌঁছেছে সিআইডি
আপাতত ঘটনার তদন্ত করছে রাজ্য গোয়েন্দা দপ্তর সিআইডি। গ্রামের ঘরে ঘরে ঢুকে তারা তল্লাশি করছে। পোড়া বাড়ির সামনে গোয়েন্দাদের ভিড়।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
ঘটনাস্থলে আইবি
ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর গোয়েন্দারাও ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন। তারাও পৃথক তদন্ত শুরু করেছে। প্রশ্ন উঠছে, এমন ঘটনা যে ঘটতে পারে, আইবি-র কাছে কেন আগে থেকে সেই খবর ছিল না। এক অফিসারকে শোকজও করা হয়েছে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
বিজেপির প্রতিবাদ
স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্ব গ্রামের বাইরে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করছে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
ঘটনাস্থলে শুভেন্দু
বিজেপি নেতা ও পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বুধবার বিকেলে ঘটনাস্থলে পৌঁছান। পুলিশের ব্যারিকেডের বাইরে দাঁড়িয়ে তিনি কথা বলছেন।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
বিমান বসুর বিক্ষোভ
প্রবীণ বাম নেতা বিমান বসুও বুধবার ঘটনাস্থলে যান। পুলিশ তাকে গ্রামে ঢুকতে বাধা দেন। গ্রামের বাইরেই অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করেন তিনি। পরে অবশ্য তিনি গ্রামের ভিতরে ঢোকেন।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
গ্রামে অর্জুন
বিজেপির বাহুবলী নেতা অর্জুন সিং-ও বুধবার বগটুই পৌঁছে যান। তিনিও গ্রামের বাইরে বিক্ষোভ দেখান।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
যাবেন মমতা
বৃহস্পতিবার এলাকায় যাবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এছাড়াও বিজেপির কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের ঘটনাস্থলে যাওয়ার কথা। কিন্তু এলাকা ছেড়ে পালাচ্ছেন গ্রামবাসীরা। তাদের ভয়, ফের তাদের উপর আক্রমণ চালাতে পারে দুষ্কৃতীরা।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
10 ছবি1 | 10
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজ্য পুলিশের ডিজি বাহিনী নামিয়ে দিয়েছেন বোমা উদ্ধারে। কেশপুর থেকে বালতি বালতি বোমা উদ্ধার হয়েছে ইতিমধ্যেই। কী করে এত দ্রুত পুলিশ বোমা উদ্ধার করে ফেলল? তার মানে তাদের কাছে সব খবরই থাকে। এতদিন তারা দেখেও দেখেনি। ঠিক এই অভিযোগটাই তো করছেন বগটুইয়ের গ্রামবাসীরা! বলছেন, একের পর এক বাড়িতে যখন আগুন লাগানো হচ্ছে, পুলিশ তখন ঢিল ছোঁড়া দূরত্বে বসে কিছুই দেখতে পাচ্ছিল না। গ্রামের এক কিলোমিটারের মধ্যে এসডিপিও-র বাংলো। কিন্তু তিনি কিছুই দেখতে পাননি। শুনতে পাননি। বুঝতে পারেননি।
আসলে পেরেছেন। পুলিশ প্রশাসন জানে না, এমনটা হয় না। তারা নির্দেশের অপেক্ষায় থাকে। ভাবতে অবাক লাগে, মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ দেওয়ার কয়েকমিনিটের মধ্যে বগটুইয়ের অন্যতম অপরাধী গ্রেপ্তার হয়! নির্দেশের আগে পর্যন্ত তার গায়ে হাত দিতে কি ভয় পেয়েছিল পুলিশ? কেন আগেই পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করা হয়নি?
প্রশাসনের উপর রাজনৈতিক চাপ থাকে, একথা সবাই জানে। গোটা পৃথিবীতেই একথা কমবেশি সত্য। কিন্তু সেই চাপেরও একটা পর্যায় থাকে! নারী-শিশুদের জীবন্ত জ্বালিয়ে দেওয়ার পরেও যদি মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশের অপেক্ষায় থাকতে হয় পুলিশকে, তাহলে মানুষ বিশ্বাস করবে কাকে?
সিবিআই তদন্তে নেমেছে। এমন অনেক সিবিআই তদন্ত দেখেছি আমরা। দেখেছি ভোটের আগে কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে সিবিআই কেমন বিভিন্ন মামলা নিয়ে হঠাৎ সক্রিয় হয়ে ওঠে, তারপর আবার ঝিমিয়ে যায়। দেখেছি, কীভাবে চোখের জল ধীরে ধীরে ফল্গুনদীর মতো শুকিয়ে যায়। আমরা কেবল একের পর অবিশ্বাসের নাম যোগ করতে থাকি খাতায়-- বরানগর, মরিচঝাঁপি, ছোট আঙারিয়া, কেশপুর, নন্দীগ্রাম, নেতাই, পুরুলিয়া, কামদুনি, বগটুই...