আমাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রী উচ্চশিক্ষিত৷ অবশ্যই ভালো ছাত্র৷ আগেরবার প্রতিমন্ত্রী ছিলেন, প্রমোশন পেয়ে ফুল৷ কিন্তু এই ফুলমন্ত্রী যে আমাদের fool বানিয়ে ছাড়বেন তা ভাবতে পেরেছিল কে?
বিজ্ঞাপন
এমনিতেই ডেঙ্গু নিয়ে আমরা জেরবার৷ একদিকে ডাক্তাররা বলছেন, অবহেলা না করে তাদের কাছে যেতে৷ এবারের ডেঙ্গু মারাত্মক! কিন্তু হাসপাতালে আমাদের থাকার জায়গা নেই৷ তাই চরম আতঙ্কে সময় কাটছে আমাদের৷ গতবার পর্যন্ত আমরা জেনেছিলাম, ডেঙ্গুতে ভয়ের কিছু নেই৷ ডেঙ্গুর কোনো ওষুধও যেহেতু নেই তাই ঘরে থেকে প্রচুর তরল খেয়ে ভালো হয়ে উঠার একটা চেষ্টা দিয়েছি আমরা৷ এবার মনে হচ্ছে, আমরা তো বটেই ডাক্তাররাও ঘাবড়ে গেছেন৷
নইলে ভাবতে পারেন, একজন স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলছেন, ‘‘আমাদের দেশে হঠাৎ করে কেন এত ডেঙ্গু রোগী? একটি সিম্পল উত্তর আমার পক্ষ থেকে, সেটা হলো মশা বেশি, এডিস মশা বেশি৷ সে মশাগুলি অনেক হেলদি মশা এবং সে মশাগুলি অনেক সফিস্টিকেটেড মশা৷ তারা শহরে, বাড়িতে থাকে- এটিই উত্তর৷ যেহেতু প্রডাকশন বেশি... মশা বাড়তেছে৷
ঢাকায় মশার প্রজননস্থল
প্রায় দু’কোটি মানুষের বসবাসের শহর ঢাকায় এখন সবচেয়ে বড় আতঙ্ক চিকুনগুনিয়া৷ যন্ত্রণাদায়ক এই রোগটির জন্য দায়ী এক ধরনের মশা৷ গোটা ঢাকা শহরই যেন মশার প্রজনন স্থান৷ শহরে মশার জন্ম, অবাধে বেড়ে ওঠার জায়গাগুলো নিয়ে এই ছবিঘর৷
ছবি: DW/M.M.Rahman
বাসার ফুলের টব
বর্ষাকালে বাড়িতে বা বারান্দায় রাখা ফুলের টবগুলো মশা জন্ম নেওয়ার মোক্ষম জায়গা৷ ফুলের টবে জমে থাকা পানি কয়েকদিন পরিষ্কার না করলে সেখানে সহজেই জন্ম নেয় মশারা৷
ছবি: DW/M.M.Rahman
রেফ্রিজারেটর
নিজেদের অজান্তে বাড়ির মধ্যেই গড়ে উঠতে পারে মশার প্রজননস্থল৷ বাসায় নিত্য ব্যবহার্য রেফ্রিজারেটরের পেছনে জমে থাকা পানিও দীর্ঘদিন পরিষ্কার না করলে সেখানে মশারা বংশবৃদ্ধি করতে পারে৷
ছবি: DW/M.M.Rahman
শীততাপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র
বাসা কিংবা অফিসে ব্যবহৃত শীততাপ নিয়ন্ত্রণের যন্ত্রটিও মশা জন্ম দেওয়ার অন্যতম কারণ৷ বেশিরভাগ অফিস কিংবা বাসার শীততাপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রটির পানি সরাসরি বাইরে ফেলা হয়৷ সেসব পানি জমে থাকলে কোথাও কোথাও জন্ম নেয় মশারা৷
ছবি: DW/M.M.Rahman
নোংরা জলাশয়
ঢাকা শহরের ভেতরে আছে অসংখ্য নোংরা জলাশয়, যেগুলো মশা প্রজননের উপযুক্ত জায়গা৷
ছবি: DW/M.M.Rahman
আবর্জনা ফেলার জায়গা
ঢাকা শহরের জলাশয়গুলোতে অবাধে ফেলা হচ্ছে ময়লা বা আবর্জনা৷ ফলে সেখানে সহজেই জন্ম নেয় মশারা৷
ছবি: DW/M.M.Rahman
পরিত্যক্ত ডোবা
ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় বাসা-বাড়ির আশেপাশে রয়েছে প্রচুর পরিত্যক্ত ডোবা৷ বর্ষার মৌসুমে সেসব ডোবায় পানি জমে থাকায় সেখানেও মশার জন্ম হয়৷
ছবি: DW/M.M.Rahman
ময়লার খাল
ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে এখনো রয়েছে খোলা ময়লার খাল৷ সেসব খালে মশারা জন্ম নিয়ে সেহজেই ছড়িয়ে পড়ে শহরের আনাচে-কানাচে৷
ছবি: DW/M.M.Rahman
হাতিরঝিলের অপরিচ্ছন্ন অংশ
রাজধানীর হাতিরঝিলের বিভিন্ন জায়গা এখন মশা প্রজনের অন্যতম জায়গা৷ হাতিরঝিল এলাকায় প্রচুর আবর্জনা থাকায় সেসব জায়গায় মশাদের অবাধ বিচরণ দেখা যায়৷
ছবি: DW/M.M.Rahman
হাতিরঝিলের ডাস্টবিন
হাতিরঝিলে বসানো আধুনিক ডাস্টবিনগুলো পথচারীরা কমই ব্যবহার করেন৷ ফলে বৃষ্টি হলেই ডাস্টবিনের কন্টেইনারগুলোতে পানি জমতে শুরু করে৷, যেখানে জন্ম নিতে পারে মশা৷
ছবি: DW/M.M.Rahman
ছাদে জমে থাকা পানি
বর্ষার মৌসুমে ঢাকা শহরের অনেক বাড়ির ছাদেই পানি জমে৷ সেগুলো দীর্ঘদিন পরিষ্কার না করলে সেখানেও মশারা জন্ম নেয়৷
ছবি: DW/M.M.Rahman
পরিত্যক্ত ফোয়ারা
সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য ঢাকা শহরের বিভিন্ন সড়ক কিংবা বিপণি বিতানের সামনে বসনো ফোয়ারাগুলো দীর্ঘদিন না চালানোয় সেখানে জমে থাকা পানিও মশা জন্ম নেওয়ার ভালো জায়গা৷
ছবি: DW/M.M.Rahman
ঢাকার বাস স্টেশন
ঢাকা শহরের প্রধান তিনটি বাস স্টেশনের পার্কিং এলাকাতেই বাসগুলো ধোওয়া হয় নিয়মিত৷ ফলে সেখানে জমে থাকে পানি৷ আর সেই পানিতে সহজেই জন্ম নেয় মশারা৷
ছবি: DW/M.M.Rahman
পরিত্যক্ত ডাবের খোশা
ঢাকা শহরের বিভিন্ন জায়গায় ফেলে রাখা ডাবের খোশায় বৃষ্টির পানি জমে থাকে, যেখানে জন্ম নেয় মশারা৷
ছবি: DW/M.M.Rahman
ফেলে রাখা প্লাস্টিক
ঢাকার দু’টি সিটি কর্পোরেশনের ময়লা ব্যবস্থাপনা মারাত্মক দুর্বল৷ তাই শহরজুড়ে যত্রতত্র দেখা যায় নানারকম প্লাস্টিকের জিনিস৷ এ সবেও বৃষ্টির পানি জমে সহজেই জন্ম নেয় মশারা৷
ছবি: DW/M.M.Rahman
গাড়ির পরিত্যক্ত টায়ার
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গাড়ি মেরামত করার কারখানাগুলোর আশেপাশে ফেলে রাখা পরিত্যক্ত টায়ারগুলোয় বৃষ্টির পানি জমে মশারা জন্ম নেয়৷
ছবি: DW/M.M.Rahman
15 ছবি1 | 15
সামহাউ উই কুড নট ম্যানেজ কন্ট্রোল দা মসকুইটো পপুলেশন৷ যেভাবে রোহিঙ্গা পপুলেশন বাড়ে.. আমাদের দেশে এসে সেভাবে মসকিটু পপুলেশন বেড়ে যাচ্ছে৷ .. প্রডাকশন যদি কম হতো, এডিস মশা কম হতো৷ মানুষ আক্রান্ত মশার কামড় কম খেত, ডেঙ্গু কম হতো৷’’
বিডিনিউজ টুয়েন্টিফোর ডটকম থেকে পুরো অনুচ্ছেদটিই তুলে দিলাম৷ পাঠক আসুন আবার পড়ি৷
মশা বেশি, এডিস মশা বেশি, তাই ডেঙ্গু বেশি৷ মন্ত্রীর পক্ষ থেকে এই সিম্পল উত্তর আমরা পেলাম৷ মাননীয় মন্ত্রী আপনার এই সিম্পল উত্তর আমাদের জ্ঞানচক্ষু খুলে দিয়েছে৷ আমরা এতোদিন এই ভ্রান্তির বেড়াজালে ছিলাম যে, মশা বেশি আমরা জানতাম না, এটাও জানতাম না যে, বেশি মশা থাকলে এডিস মশা থাকে৷ আর এটা জানার কোনো উপায় আমাদের ছিল না যে, হেলদি এডিস মশার প্রডাকশন বেশি৷
মাননীয় মন্ত্রী তাঁর এই সিম্পল উত্তরে আরও জানালেন, মশা বাড়ছে আমাদের দেশে আসা রোহিঙ্গা পপুলেশনের মতো৷ সিরিয়াসলি মাননীয় মন্ত্রী! প্রাণভয়ে পালিয়ে আসা আশ্রিত এইসব মানুষের জন্ম আপনার কাছে ‘সামহাউ উই কুড নট ম্যানেজ’?
আমার মনে হয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী ভেবেছেন, রোহিঙ্গাদের মর্যাদা বাংলাদেশের মানুষের কাছে ডেঙ্গু মশার থেকেও কম৷ আমার কিন্তু মনে হয় মানুষ অন্য মানুষের কাছে সব সময় মানবিক অন্তত তাঁর কাছে যতদূর মানবিক মনে হয় ততদূর মর্যাদা পাওয়ার দাবি রাখে৷ তা সে অন্য দলের, ভিন্ন মতের বা আরেক দেশের মানুষ হোন না কেন?
অবশ্য এটিও অসম্ভব নয় যে, স্বাস্থ্যমন্ত্রী কথাটি মুখ ফসকে বলে ফেলেছেন৷ তিনি এভাবে তা বলতে চাননি৷ এটিও যদি সত্যি হয় তবে বলতেই হয়, জনাব স্বাস্থ্যমন্ত্রী আপনার বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চান আর ভবিষ্যতে মুখ সামলে কথা বলবেন৷