জিম্বাবোয়ের ফার্স্ট লেডি গ্রেস মুগাবের ক্ষমতাবৃদ্ধি রুখতেই সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করেছে বলে দাবি করছে৷ স্বাধীনতা সংগ্রামীদের গোষ্ঠীও এই পদক্ষেপের সমর্থন করছে৷ প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবে গৃহবন্দি৷
বিজ্ঞাপন
সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম থেকে বহুকাল দূরে ছিল আফ্রিকার দেশ জিম্বাবোয়ে৷ গত ৩৭ বছর ধরে প্রেসিডেন্ট রবার্ট মুগাবের নেতৃত্বে দেশটির চরম অর্থনৈতিক দুর্দশা অবশ্য বহুকাল ধরেই পরিচিত৷ এবার অস্পষ্ট এক সামরিক অভ্যুত্থানের কারণে আবার বিশ্বের নজর কাড়ছে দেশটি৷ কিন্তু সামরিক বাহিনীর দাবি, তারা শুধু প্রেসিডেন্টের আশেপাশে ‘অপরাধী'-দের দমন করতেই এই পদক্ষেপ নিয়েছে৷ দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক দুর্দশার দায়ে তাদের বিচার হবে৷ ৯৩ বছর বয়সি মুগাবে নাকি সপরিবারে নিরাপদেই রয়েছেন৷ মুগাবে টেলিফোনে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট জেকব জুমার সঙ্গে কথা বলেছেন৷ জানিয়েছেন, তিনি গৃহবন্দি হলেও ভালো আছেন৷
রাজধানী হারারের ক্ষমতাকেন্দ্র অবরোধ করে রয়েছে সৈন্যরা৷ সরকারি ভবন, সংসদ ও আদালত ভবনগুলি সেই এলাকায় অবস্থিত৷ সরকারি সম্প্রচার কেন্দ্রও সেনাবাহিনীর দখলে৷ প্রত্যক্ষদর্শীরা কমপক্ষে তিনটি বিস্ফোরণের শব্দ শুনেছেন৷ সেনাবাহিনীর মেজর জেনারেল এসবি মোয়ো জাতীয় টেলিভিশনে এক ভাষণে সাধারণ মানুষকে আশ্বস্ত করেছেন৷ তিনি বলেন, লক্ষ্য পূরণ হলেই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে উঠবে বলে তাঁরা আশা করছেন৷
মুগাবের জানু-পিএফ দল সেনাবাহিনীর প্রধানের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহের অভিযোগ এনেছে৷ তারা এই পদক্ষেপকে অভ্যুত্থান হিসেবেই গণ্য করছে৷ অর্থমন্ত্রী ইগনেশিয়াস চম্বো সামরিক বাহিনীর হাতে বন্দি রয়েছেন৷
উল্লেখ্য, অশীতিপর মুগাবে-পরবর্তী জিম্বাবোয়ের ক্ষমতাকেন্দ্রে আধিপত্য নিয়ে এর মধ্যেই সংঘাত শুরু হয়ে গেছে৷ ১৯৮০ সালে ব্রিটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতা পাবার পর মুগাবেই একটানা ক্ষমতায় রয়েছেন৷ ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে মুগাবের ৫২ বছর বয়সি স্ত্রী গ্রেস-এর নেতৃত্বে ‘জি-৪০' নামে এক গোষ্ঠী ক্ষমতা দখলের প্রস্তুতি নিচ্ছে৷ দলের মধ্যে সামরিক বাহিনীর সহযোগীদের কোণঠাসা করে দেওয়ায় সামরিক বাহিনীর প্রধান জেনারেল কনস্টানটিনো চিওয়েঙ্গা ২৪ ঘণ্টা আগেই হস্তক্ষেপের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন৷ গ্রেস শিবির দলের ভাইস প্রেসিডেন্ট এমারসন নানগাওয়াকে বরখাস্ত করার পর তিনি হস্তক্ষেপ করতে দেরি করেননি৷ মোটকথা গ্রেস মুগাবে যাতে তাঁর স্বামীর উত্তরসূরি না হতে পারেন, সামরিক বাহিনী তা নিশ্চিত করতে চায়৷ গত সপ্তাহে জেনারেল চিওয়েঙ্গা চীন সফর করেছেন৷ তাই তাঁপ পদক্ষেপের পেছনে চীনের সমর্থন আছে কিনা, তা নিয়ে জল্পনা কল্পনা চলছে৷ চীন অবশ্য এমন যোগসূত্র মেনে নিতে অস্বীকার করেছে৷
স্বাধীনতা আন্দোলনের যোদ্ধাদের সঙ্গে গ্রেস মুগাবের নেতৃত্বে অপেক্ষাকৃত তরুণ প্রজন্মের নেতাদের সংঘাতের ফলে দেশে অনিশ্চয়তা বেড়ে চলেছে৷ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে গ্রেস শ্বেতাঙ্গ চাষিদের ফিরিয়ে আনার যে উদ্যোগ নিচ্ছিলেন, ‘ওয়ার ভেটারান'-রা তা মোটেই পছন্দ করছেন না৷ মুগাবের ঘনিষ্ঠ মহলের অনেকেও গ্রেস-এর উত্থানের বিরোধিতা করছেন বলে জানা গেছে৷
ব্রিটেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জিম্বাবোয়েতে অবস্থানরত নিজেদের নাগরিকদের রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে প্রকাশ্যে না আসার পরামর্শ দিয়েছে৷ যতক্ষণ না পরিস্থিতি স্পষ্ট হয়, তাদের বাসভবনে থাকতে বলা হয়েছে৷
সবচেয়ে বেশি দিন ক্ষমতায় থাকা আফ্রিকার ১০ নেতা
আফ্রিকার কিছু দেশে এমন শাসকও আছেন যাঁরা দাবি করেন যে, দেশে গণতন্ত্র আছে৷ ভোটও হয়, কিন্তু ক্ষমতায় কোনো পরিবর্তন আসে না৷ ছবিঘরে থাকছে সবচেয়ে বেশি দিন ক্ষমতায় থাকা আফ্রিকার ১০ নেতার কথা৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Longari
৩৭ বছর পর পতন মুগাবের
সেনা অভ্যুত্থানের মুখে জিম্বাবোয়ের রাষ্ট্রপতি পদ থেকে সরে দাঁড়াতে হলো রবার্ট মুগাবেকে৷ আফ্রিকা মহাদেশের দক্ষিণাঞ্চলের দেশ জিম্বাবোয়ে স্বাধীনতা লাভ করে ১৯৮০ সালে৷ স্বাধীনতার ৩৭ বছর পর ক্ষমতা হারালেন প্রেসিডেন্ট মুগাবে৷
ছবি: Reuters/P. Bulawayo
ক্ষমতায় ৩৭ বছর!
মধ্য আফ্রিকার ছোট্ট দেশ ইকুয়েটোরিয়াল গিনির প্রেসিডেন্ট টিওডোরো ওবিয়াং নগুয়েমা৷ সেই ১৯৭৯ সালে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসেন৷ তারপর থেকে তিনিই সে দেশের সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী৷ টিওডোরো ওবিয়াং নগুয়েমার বয়স এখন ৭৪ বছর৷ জীবনের অর্ধেকটা সময় পার করেছেন রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পদে৷
ছবি: Getty Images/AFP
অ্যাঙ্গোলার প্রেসিডেন্টও কম যান না
টিওডোরো ওবিয়াং নগুয়েমার সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকা অঞ্চলের দেশ অ্যাঙ্গোলার প্রসিডেন্ট হোসে এডুয়ার্ডো ডোস সান্টোসের খুব মিল৷ সান্টোস ক্ষমতায় এসেছিলেন নগুয়েমা ইকুয়েটরিয়াল গিনির সর্বেসর্বা হওয়ার ঠিক এক মাস পর৷ সুতরাং প্রেসিডেন্ট হিসেবে হোসে এডুয়ার্ডো ডোস সান্টোসেরও ৩৭ বছর হয়ে গেছে৷ দু’জনের বয়সও কিন্তু এক, অর্থাৎ ৭৪!
ছবি: GettyImages/S. De Sakutin
দু’টি অভ্যুত্থান ব্যর্থ করে টিকে আছেন পল বিয়া
পল বিয়া গত ৩৪ বছর ধরে ক্যামেরুনের প্রেসিডেন্ট৷ প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন ১৯৮২ সালে৷ তারপর থেকে এ পর্যন্ত তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরাতে দু’টি অভ্যুত্থানের চেষ্টা হয়েছে৷ দু’টিকেই ব্যর্থ করে ক্ষমতা আগলে রেখেছেন ৮৪ বছর বয়সি পল বিয়া৷
ছবি: imago/Xinhua Afrika
ডেনিস সাসৌ নগুয়েসোর মোট ৩২ বছর
মধ্য অ্যামেরিকার দেশ কঙ্গো-ব্রাজাভিলের নাম অনেকেই হয়ত শোনেননি৷ সে দেশের প্রেসিডেন্ট ডেনিস সাসৌ নগুয়েসো ক্ষমতায় আরোহন করেছিলেন ১৯৭৯ সালে৷ সেই দফায় ছিলেন ১৯৯২ পর্যন্ত৷ তারপর পাঁচ বছরের বিরতি৷ ১৯৯৭ সালে ফেরার পর থেকে ক্ষমতায় আবার তিনি অবিচল৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Longari
সমকামীবিদ্বেষী ইয়োয়েরি মুসেভেনি
পূর্ব আফ্রিকার দেশ উগান্ডার প্রেসিডেন্টের নাম ইয়োয়েরি মুসেভেনি৷ ৩০ বছর ধরে তিনি সে দেশের প্রেসিডেন্ট৷ ৭২ বছর বয়সি এই শাসক সমকামীবিদ্বেষী হিসেবেও পরিচিত এবং সমালোচিত৷
ছবি: Reuters/E. Echwalu
গণহত্যা, ধর্ষণ ও নির্যাতনের অভিযোগে অভিযুক্ত এক প্রেসিডেন্ট
সুদানের ওমর আল-বাশির রক্তপাতহীন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছিলেন ১৯৮৯ সালে৷ দারফুরে ব্যাপক গণহত্যা, ধর্ষণ ও নির্যাতন চালানোর জন্য ১৯৮৯ সালে তাকে অভিযুক্ত করে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত৷
ছবি: Reuters
২৬ বছর ধরে চাদের প্রেসিডেন্ট
গত ২৬ বছর ধরে চাদের প্রেসিডেন্ট ইদ্রিস ডেবি৷ ৬৪ বছর বয়সি ইদ্রিস ১৯৯০ সাল থেকে সে দেশের প্রেসিডেন্ট৷
ছবি: Getty Images/F.Belaid
ইরিত্রিয়ার ইসাইয়াস আফেরকি
পূর্ব আফ্রিকার দেশ ইরিত্রিয়ার ইসাইয়াস আফেরকি সে দেশের সর্বোচ্চ পদে আসীন ১৯৯৩ সাল থেকে৷ সে বছরই স্বাধীন হয় ইরিত্রিয়া৷
ছবি: picture-alliance/dpa
এবং গাম্বিয়া
ইয়াহিয়া জাম্মেহ ১৯৯৪ সালে সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা গ্রহণ করেন৷ গত বছর গাম্বিয়াকে ‘ইসলামিক প্রজাতন্ত্র’ ঘোষণা করে তিনি ক্ষমতায় আরো পাকাপোক্ত হয়েছেন বলে বিশ্লেষকদের ধারণা৷