জামাত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ মামলায় ফাঁসির রায় হয়েছে৷ ফেসবুক ও ব্লগে অনেকে রায়কে স্বাগত জানানোর পাশাপাশি রায় কার্যকর করার দাবি জানিয়েছেন৷ অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেও মন্তব্য করেছেন কেউ কেউ৷
বিজ্ঞাপন
ওয়াসেক বিল্লাহ সৌধ ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘এই রায় মানি৷'' তাজুল তাজ লিখেছেন, ‘‘গরু মেরে জুতা দান!'' আর শরিফুল হাসান লিখেছেন, ‘‘যে যাই বলুন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে আমি শতভাগ তৃপ্ত না হলেও এ পর্যন্ত যা পেয়েছি তাতেও আমি অনেক খুশি৷ আজকে প্রমাণিত হচ্ছে জামায়াত যুদ্ধাপরাধীদের দল৷ গোলাম আযম-মুজাহিদ-কাদের মোল্লাদের আজকে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন দেয়া হচ্ছে৷ আমরা বলতে পারছি তারা প্রমাণিত রাজাকার৷ অসম্ভবের এই বাংলাদেশে এটাই বিরাট পাওয়া৷''
মুজাহিদের ফাঁসি
একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে বুধবার (১৭.০৭.১৩) ফাঁসির রায় দিয়েছেন আদালত৷ এই বিষয়ে আমাদের ছবিঘর৷
ছবি: STR/AFP/Getty Images
‘আমৃত্যু ফাঁসিতে ঝুলিয়ে’ মৃত্যুদণ্ড
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ মামলায় ফাঁসির রায় দিয়েছেন ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২৷ বুধবার (১৭.০৭.১৩) দেওয়া রায়ে তাকে ‘আমৃত্যু ফাঁসিতে ঝুলিয়ে’ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে বলা হয়েছে৷
ছবি: DW/S. Kumar Dey
আমৃত্যু কারাদণ্ড
মাত্র দু’দিন আগে জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমকে একাত্তরে মানবতা বিরোধী অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকায় নব্বই বছরের কারাদণ্ড প্রদান করেন ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১৷ বয়স বিবেচনায় এনে আযমকে মৃত্যুদণ্ড দেননি আদালত৷
ছবি: Nashirul Islam/AFP/Getty Images
মুক্তিযুদ্ধ
১৯৭১ সালে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের পর স্বাধীনতা অর্জন করে বাংলাদেশ৷ বাংলাদেশ সরকারের দাবি, মুক্তিযুদ্ধে নিহতের সংখ্যা ৩০ লাখ এবং সেসময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী দুই লাখের মতো নারীকে ধর্ষণ করেছে৷ তবে আন্তর্জাতিক মহল মনে করে, মুক্তিযুদ্ধে তিন থেকে পাঁচ লাখ প্রাণহানি হয়েছিল৷ মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তানের পক্ষ নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে৷
ছবি: AP
আলবদর কমান্ডার
আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে আলবদর বাহিনী গঠন করে হত্যা, গণহত্যা, বুদ্ধিজীবী হত্যা, ধর্ষণ ও লুটতরাজসহ পাঁচটি অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ হয়েছে৷ ২০১০ সালের ২৯শে জুন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের একটি মামলায় গ্রেপ্তার করা হয় তাকে৷ বর্তমানে তিনি কারাবন্দি আছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Stringer
‘‘মানুষ হত্যা করেছেন মুজাহিদ’’
যুদ্ধাপরাধ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘মুজাহিদ শুধু বুদ্ধিজীবী হত্যা এবং গণহত্যার পরিকল্পনাকারীই ছিলেন না, তিনি নিজেও সরাসরি গুলি করে মানুষ হত্যা করেছেন৷ ফরিদপুর এলাকায় তার নৃশংসতার সাক্ষী এখনো আছে৷’’ এই রায়ে সন্তুষ্ট বাদল৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: AP
ফেসবুক প্রতিক্রিয়া
ওয়াসেক বিল্লাহ সৌধ ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘এই রায় মানি৷’’ আর শরিফুল হাসান লিখেছেন, ‘‘যে যাই বলুন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে আমি শতভাগ তৃপ্ত না হলেও এ পর্যন্ত যা পেয়েছি তাতেও আমি অনেক খুশি৷’’ তবে তপু হোসেন ডয়চে ভেলের ফেসবুক পাতায় লিখেছেন, ‘‘এটা ভুয়া রায়... মানিনা মানবো না৷’’
ছবি: Reuters
‘‘এটি প্রহসনের রায়’’
জামায়াতে ইসলামী এই রায় ঘোষণার প্রতিবাদে বুধবার সারা দেশে সকাল-সন্ধ্যা হরতাল পালন করেছে৷ মুজাহিদের আইনজীবী তাজুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, ‘‘এটি প্রহসনের রায়৷ রাষ্ট্রপক্ষ কোনো অভিযোগই প্রমাণ করতে পারেনি৷’’ এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে বলেও জানান ইসলাম৷
ছবি: Reuters
দুই দিনে নিহত ৯
যুদ্ধাপরাধ বিষয়ক রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে ১৫ ও ১৬ জুলাই সহিংসতায় কমপক্ষে নয় ব্যক্তি প্রাণ হারিয়েছে৷ জামায়াতে ইসলামী এই সময় হরতাল পালন করেছে৷ মঙ্গলবার পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছে চার ব্যক্তি৷ আর সোমবার পাঁচ ব্যক্তি৷ দৈনিক প্রথম আলো প্রকাশ করেছে এই তথ্য৷
ছবি: Reuters
ট্রাইব্যুনালের ষষ্ঠ রায়
আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের বিরুদ্ধে এই রায় যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের ষষ্ঠ রায়৷ এর আগে ট্রাইব্যুনাল জামায়াতের সাবেক নেতা আবুল কালাম আযাদকে ফাঁসি, জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, মাওলানা দেলোয়ার হোসেন সাঈদীকে ফাঁসি, মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকে ফাঁসি এবং সর্বশেষ সোমবার গোলাম আযমকে ৯০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: Stringer/AFP/Getty Images
ট্রাইব্যুনাল নিয়ে বিতর্ক
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ২০১০ সালে ঢাকায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করে৷ তবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিরোধী দল বিএনপি মনে করে, সরকার বিরোধী দলকে দুর্বল করতে এই ট্রাইব্যুনাল প্রতিষ্ঠা করেছে৷ আন্তর্জাতিক পর্যায়েও এই ট্রাইব্যুনাল নিয়ে বিতর্ক রয়েছে৷
ছবি: AP
10 ছবি1 | 10
পাশাপাশি তিনি সরকারের কাছে দুটো দাবি জানিয়েছেন৷ এক, রায়গুলো কার্যকর করা৷ দুই, একটা আইন করা যেন যুদ্ধাপরাধীদের কেউ পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতির ক্ষমার মাধ্যমে মুক্তি পেতে না পারেন৷
একই দাবি জানানো হয়েছে ফেসবুকের ‘শাহবাগে সাইবার যুদ্ধ' পেজ থেকে৷ তারা বলছে ১৯৮৬ সনে বাংলাদেশ যে জেনেভা কনভেনশনে স্বাক্ষর করেছে তাতে একটা বিষয় নিশ্চিত করা হয়েছে যে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক সাজাপ্রাপ্ত মানবতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধীকে রাষ্ট্র, রাষ্ট্রপতি বা অন্য কেউ ক্ষমা করতে পারবে না৷ ‘‘এখন শুধু সংবিধান সংশোধন করে তা নিশ্চিত করতে হবে৷''
আশরাফুল আলম খোকন তাঁর প্রতিক্রিয়া গোলাম আযমের রায়ের বিষয়টিও নিয়ে এসেছেন৷ তিনি বলছেন, ‘‘...তবে যত টারেই ফাঁসি দেন না কেন মাননীয় আদালত গোলামের ফাঁসির দাবি কিন্তু ছাড়ছি না৷''
মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ্ সামহয়্যার ইন ব্লগে লিখেছেন, ‘‘মুজাহিদের ফাঁসির রায়ে ১৯৭১ সালের গণহত্যায় জামাতের সম্পৃক্তির কথা পঞ্চমবারের মতো এসেছে৷ কিন্তু সব থেকে বড় কথা হচ্ছে, যেটা জামায়াতে ইসলামী এবং তাদের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র শিবির সব সময় অস্বীকার করে এসেছে, সেই বুদ্ধিজীবী হত্যায় জামাতের সরাসরি সম্পৃক্ত থাকার কথা আদালতে প্রমাণিত হয়েছে৷''
তবে মুজাহিদের বিরুদ্ধে দেয়া রায়ে সবাই খুশি হতে পারেনি৷ ফেসবুকে ‘বাঁশেরকেল্লা' নামক একটি পেজে লেখা হয়েছে, ‘‘ট্রাইব্যুনাল আবারো প্রমাণ করল যে তাদের একমাত্র কাজই হচ্ছে দোষী সাব্যস্ত করা৷ এই ট্রাইব্যুনাল মানবাধিকার বা আইনের শাসনের কোনো নীতিই অনুসরণ করেনি৷ তাদের একমাত্র লক্ষ্য হলো ধর্মীয় নেতাদের ফাঁসি দেয়া আর বাংলাদেশ থেকে ইসলামি আন্দোলন বিলুপ্ত করা৷''
পেজের এই স্ট্যাটাসের নীচে শাওন শাহরিয়ার মন্ত্রী থাকাকালীন মুজাহিদের কিছু ভাল ভাল কীর্তির কথা তুলে ধরেছেন৷