ইনস্টিটিউট ফর ইকনমিক রিসার্চের মতে, জার্মানির মূল্যস্ফীতি বছরের বাকি অংশে আবার কমতে শুরু করবে৷ তবে গবেষকরা সতর্ক করেছেন যে খাবারের দাম এখনো বাড়তে পারে৷
বিজ্ঞাপন
শীর্ষস্থানীয় এই অর্থনৈতিক গবেষণা ইনস্টিটিউট বৃহস্পতিবার জানিয়েছে,কয়েক মাসের মুদ্রাস্ফীতির পর ২০২২ সালের দ্বিতীয়ার্ধে জার্মানিতে ভোগ্যপণ্যের দাম আবার কমতে পারে৷
আইএফও ইনস্টিটিউট তার সর্বশেষ সমীক্ষার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে, পরের ত্রৈমাসিকে দাম বাড়াতে ইচ্ছুক কোম্পানির সংখ্যা চলমান তৃতীয় মাসে কমেছে৷
আইএফও-র বিজনেস সাইকেল অ্যানালাইসিস অ্যান্ড ফোরকাস্টের প্রধান, টিমো ভোলমারশেওয়েসার বলেন, ‘‘দাম বাড়তে পারে, কিন্তু কমবেও৷ এর মানে মুদ্রাস্ফীতি সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে এবং বছরের দ্বিতীয়ার্ধে কমে যাবে৷''
২০ বছরে সর্বনিম্ন ইউরোর দর, পৌঁছালো ডলারের সমমানে
02:06
আইএফও আর কী বলেছে?
ভোলমারশেওয়েসার বলেন, ব্যবসার দামে যে প্রত্যাশা থাকে, তা ভোক্তার মূল্যে প্রতিফলিত হতে কয়েক মাস সময় নেয়৷ তার কথায়, নির্মাণ খাত এবং শিল্পের ক্ষেত্রে প্রত্যাশিত এই দাম কমেছে৷
তবে আইএফও বলছে, ভোক্তাদের সরাসরি প্রভাবিত করে, অর্থাৎ আতিথেয়তা (হসপিটালিটি), পর্যটন, সংস্কৃতি এবং বিনোদনের মতো খাতে নেতিবাচক প্রভাব আরো বেশি পড়তে পারে৷
আইএফও বলছে, একটি বড় ব্যতিক্রম হলো ‘ফুড রিটেল', যেখানে মূল্যস্ফীতি বন্ধের বিষয়টি চোখে পড়েনি৷ তবে একটি জরিপে সমস্ত কোম্পানি বলেছে, তারা দাম বাড়াতে চায়৷
জুলাই মাসে জার্মানির মুদ্রাস্ফীতি পৌঁছেছে সাত দশমিক ছয় শতাংশে৷
আরকেসি/এসিবি (এএফপি, রয়টার্স)
২০২২ সালে বিশ্ব অর্থনীতির পাঁচ হুমকি
ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করা বিশ্ব অর্থনীতিতে আবারো চোখ রাঙাচ্ছে করোনা৷ সেই সঙ্গে মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি, শিল্পে কাঁচামালের ঘাটতি কিংবা ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতাও তৈরি করছে অনিশ্চয়তা৷
ছবি: Gareth Fuller/empics/picture alliance
করোনার টিকা প্রতিরোধী ভ্যারিয়েন্ট
২০২১ সালের প্রথমার্ধে বিশ্ব অর্থনীতিতে গতি ফেরায় আস্থা পেয়েছিলেন বিনিয়োগকারীরা৷ তাই চাঙা হতে শুরু করে শেয়ার বাজার৷ কিন্তু নভেম্বর থেকে ওমিক্রনের ধাক্কা নতুন চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ মার্কিন বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান জেপি মরগ্যান অবশ্য মনে করছে ওমিক্রনের প্রভাব ততটা প্রবল হবে না অর্থনীতিতে৷ তবে টিকা প্রতিরোধী নতুন কোনো ভ্যারিয়েন্ট দেখা দিলে পরিস্থিতি আবার ওলট-পালট হতে পারে৷
ছবি: Waldemar Thaut/Zoonar/picture alliance
আইএমএফ-এর পরামর্শ
আইএমএফ বলছে, মহামারি প্রলম্বিত হলে মধ্য মেয়াদে তা বিশ্ব অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে৷ তাদের বর্তমান পূর্বাভাসের চেয়ে আগামী পাঁচ বছরে জিডিপি পাঁচ দশমিক তিন ট্রিলিয়ন ডলার কমতে পারে৷ ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে প্রতিটি দেশে অন্তত ৭০ শতাংশ মানুষকে টিকা দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সংস্থাটির প্রধান অর্থনীতিবিদ গীতা গোপীনাথ৷ তবে স্বল্প আয়ের দেশগুলোতে এখন পর্যন্ত পাঁচ শতাংশ মানুষের টিকা সম্পন্ন হয়েছে৷
ছবি: Gil Cohen Magen/Xinhua News Agency/picture alliance
সরবরাহ ব্যবস্থায় ঘাটতি
মহামারির ধাক্কা কাটলেও বিশ্ব বাণিজ্যের উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থার ঘাটতি অর্থনীতির গতি টেনে ধরতে পারে৷ এরই মধ্যে জার্মানিসহ ইউরোজোনের গাড়ি নির্মাতা দেশগুলো যন্ত্রাংশ সরবরাহের ঘাটতিতে তাদের উৎপাদন কমাতে বাধ্য হচ্ছে৷ পরিবহণ ও লজিস্টিক প্রতিষ্ঠান ডিএসভি এয়ার অ্যান্ড সি বলছে, ২০২২ সালেও এই পরিস্থিতির তেমন একটা উন্নতি হবে না৷
ছবি: Getty Images/J. Schlueter
ঊর্ধ্বমুখী মূল্যস্ফীতি
কাঁচামাল ও জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধিতে বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতি উল্লম্ফন ঘটেছে৷ ইউরোজোন ও যুক্তরাষ্ট্রে জীবনযাত্রার ব্যয় সাম্প্রতিক বছরগুলোর রেকর্ড ছাড়িয়েছে৷ কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো এর লাগাম টেনে ধরতে সুদের হার বাড়াতে পারে বলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আশঙ্কা রয়েছে৷ সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক না হলে ২০২২ সালের বেশিরভাগ সময় জুড়েই মূল্যস্ফীতি মানুষকে ভোগাবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা৷
ছবি: Ebrahim Noroozi/AP/picture alliance
চীনের ধীরগতি
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতি চীনের পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ার ধীরগতি বিনিয়োগকারীদের চিন্তায় ফেলছে৷ ২০২০ সালে দেশটির ইলেকট্রনিক ও মেডিক্যাল পণ্যের চাহিদা গোটা বিশ্বকে মহামারির ধাক্কা সামলাতে সাহায্য করেছিল৷ সাম্প্রতিক সময়ে আলিবাবার মতো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা নেয়ায় তাদের অর্থনীতি কোণঠাসা হচ্ছে বলে মনে করেন অনেকে৷ তবে চীন বলছে, ২০২২ সালে তাদের মূল লক্ষ্য অর্থনীতি স্থিতিশীল করা৷
ছবি: Getty Images
ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা
ইউক্রেনসহ বিভিন্ন ইস্যুতে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সম্পর্কের ক্রম অবনতি হচ্ছে৷ এমনকি রাশিয়ার বিরুদ্ধে ন্যাটো দেশগুলোর অবরোধ ও যুদ্ধের আশঙ্কাও দেখছেন অনেকে৷ এমন পরিস্থিতিতে ইউরোপ নর্ড স্ট্রিম টু গ্যাস পাইপলাইন বন্ধ করে দিলে তা সারা বিশ্বেই জ্বালানি সংকট তৈরি করবে৷ এতে তেলের মূল্য ব্যারেল প্রতি ১০০ ডলার ছাড়াতে পারে৷ সামনের দিনের বিশ্ব বাণিজ্য নির্ভর করছে যুক্তরাষ্ট্র-চীন সম্পর্কের উপরও৷