সারা বিশ্ব মন্দার দিকে গেলে ভারতও পরিত্রাণ পাবে না৷ এরইমধ্যে জিনিসের দাম বেড়েছে৷ বেকারত্ব বেড়েছে৷ তা সত্ত্বেও আশার কথা, এই চাপ নেয়ার ক্ষমতা ভারতীয় অর্থনীতির আছে৷
বিজ্ঞাপন
মাসখানেকও হয়নি ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন খুবই উজ্জ্বল মুখে ঘোষণা করেছিলেন যে, ভারত বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি হয়েছে৷ ভারতের আগে এখন শুধু অ্যামেরিকা, চীন, জাপান ও জার্মানি৷ আগে বিশ্বের পঞ্চম অর্থনীতি ছিল যুক্তরাজ্য৷ ভারত তাদের টপকে গিয়ে পঞ্চম অর্থনীতির মর্যাদা পেয়েছে৷ নির্মলা সীতারামনের মতে, এটা কোনো ছোটখাট ব্যাপার নয়৷ সব ভারতীয় এর কৃতিত্ব দাবি করতে পারেন৷ যে কোনো বিষয়কে বড় ইভেন্টে পরিণত করার অসাধারণ ক্ষমতা আছে মোদী সরকারের৷ কিন্তু এক্ষেত্রেও তারা 'ইন্ডিয়া শাইনিং'য়ের স্লোগান তোলেনি৷ ২০০৪ সালে লোকসভা ভোটে এই স্লোগান তুলেই তো ভরাডুবি হয়েছিল বাজপেয়ীর নেতৃত্বাধীন এনডিএ-র৷ সম্ভবত সেই স্মৃতি এখনো ফিকে হয়নি৷
ভারত বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি হয়েছে এর জন্য নিঃসন্দেহে ভারতীয়রা শ্লাঘাবোধ করতে পারেন৷ কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি সত্যিই কি তাই? নাকি বহু ব্যবহারে ক্লিশে হয়ে যাওয়া কথাটাই আবার বলতে হয়, প্রদীপের নীচেই জমা থাকে অন্ধকার৷ ভারত বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি হয়েছে ঠিকই, কিন্তু এই তথ্যটাই যথেষ্ট নয়৷ অন্তত ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ এবং মনমোহন সিংয়ের সময় প্রধান আর্থিক পরামর্শদাতা কৌশিক বসু তাই মনে করেন৷
দিন কয়েক আগে একের পর এক টুইট করে কৌশিক বসু তার মতামত খুব স্পষ্ট করে জানিয়েছেন৷ তার মতে, দুই বছর আগেই যুক্তরাজ্যকে টপকে ভারতের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি হওয়ার কথা ছিল৷ কিন্তু ২০১৬ থেকে অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার কম হয়ে যায়৷ তার ফলে এই দুই বছর দেরি হলো৷ তাই কৌশিক বসু মনে করেন, এটা হলো সেই রিলে রেস জেতা, যেখানে শেষ দৌড়বাজ লাস্ট হওয়া সত্ত্বেও রিলে রেসে জয় এলো৷ কিন্তু এখানেই থামেননি তিনি৷ কোনো রাখঢাক না করেই বলেছেন, ভারতে এখন বেকারত্বের হার আট দশমিক তিন শতাংশ৷ বেকারত্বের হার গত এক বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি৷ মুদ্রাস্ফীতির হার অনেকটা বেড়েছে৷
একশ বছরে পাঁচবার আর্থিক মন্দায় পড়েছিল বিশ্ব
গত ১০০ বছরে পাঁচবার বিশ্ব মন্দা দেখা গেছে৷ আগামী বছরও এমন পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে সম্প্রতি আশঙ্কা প্রকাশ করেছে বিশ্বব্যাংক৷
ছবি: Rupert Oberhäuser/picture alliance
১৯২৯-৩৯ এর গ্রেট ডিপ্রেশন
১৯২৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রে শেয়ারমূল্যের ব্যাপক পতনের মধ্য দিয়ে শুরু৷ এরপর তার প্রভাব সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিল৷ ১৯৩৯ পর্যন্ত মন্দার অস্তিত্ব ছিল৷ বিশ শতকের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী ও সবচেয়ে বেশি দেশে অনেক বেশি প্রভাব ফেলা মন্দা বলে এটিকে আখ্যায়িত করা হয়৷ এই মন্দায় বিশ্বের জিডিপি প্রায় ১৫ শতাংশ কমে গিয়েছিল৷ যুক্তরাষ্ট্রে বেকারত্বের হার ২৩ শতাংশ হয়ে গিয়েছিল৷ কোনো কোনো দেশে তা ৩৩ শতাংশেও পৌঁছে গিয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/newscom/Picture History/Dorothea Lange
১৯৭৫ সালের মন্দা
১৯৭৩ সালের আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে (ছবি) ইসরায়েলকে সমর্থন করায় যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি দেশে তেল সরবরাহে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল ওপেক৷ সে কারণে তেলের দাম প্রায় ৩০০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে গিয়েছিল৷ এর প্রভাবে ধাক্কায় জার্মানি ও জাপান ছাড়া শিল্পোন্নত সাত দেশের বাকি দেশগুলোতে মূল্যস্ফীতি অনেক বেড়ে যাওয়ায় ১৯৭৫ সালে বিশ্বব্যাপী মন্দা দেখা দিয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
১৯৮২ সালের মন্দা
এর পেছনে কয়েকটি কারণ ছিল৷ ১৯৭৯ সালে ইরান বিপ্লবের (ছবি) সময় তেলের দাম বাড়া, যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য উন্নত দেশের আর্থিক নীতি কঠোর করা ও ল্যাটিন অ্যামেরিকার কয়েকটি দেশে আয়ের চেয়ে বিদেশি ঋণের পরিমাণ বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি৷ উন্নত দেশগুলো তাড়াতাড়ি এই পরিস্থিতি থেকে উতরে যেতে সক্ষম হলেও ল্যাটিন অ্যামেরিকা, ক্যারিবীয় ও সাব-সাহারা আফ্রিকার দেশগুলোর প্রবৃদ্ধির গতি ধীর হয়ে গিয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/EPU
১৯৯১ এর মন্দা
১৯৯০-৯১ এর উপসাগরীয় যুদ্ধের কারণে তেলের দাম বেড়ে যাওয়া, যুক্তরাষ্ট্রের ঋণ প্রদানকারী আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দুর্বল অবস্থা, স্ক্যান্ডিনেভিয়ার দেশগুলোর ব্যাংকিং সংকট ইত্যাদি কারণে মন্দা দেখা দিয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/Photoshot/J. Jordan
২০০৯ এর মন্দা
১৯২৯ থেকে ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত চলা ‘গ্রেট ডিপ্রেশনের’ পর এটিই ছিল বিশ্বের সবচেয়ে বড় আর্থিক সংকটের ঘটনা৷ যুক্তরাষ্ট্রের মর্টগেজ বা বন্ধকী ঋণ বাজারে সংকট দিয়ে শুরু৷ এরপর যুক্তরাষ্ট্র ও উন্নত দেশের একের পর এক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে সংকট শুরু হলে বিশ্বের অনেক দেশেই মন্দা দেখা দিয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/M. Euler
২০২৩-এ মন্দা?
করোনার পর চাহিদা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সরবরাহ ব্যবস্থার তাল মেলাতে না পারা, ইউক্রেন যুদ্ধ ও চীনের করোনা লকডাউনের কারণে বিশ্বব্যাপী মূল্যস্ফীতি অনেক বেড়ে গেছে৷ পরিস্থিতি সামলাতে উন্নত দেশগুলো সুদের হার কয়েক দফা বাড়িয়েছে৷ বিশ্বব্যাংক মনে করছে, ভবিষ্যতেও এই ধারা চলতে থাকবে৷ সে কারণে ২০২৩ সালে বিশ্ব মন্দা দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্বব্যাংকের অর্থনীতিবিদেরা৷
ছবি: Michael Gstettenbauer/IMAGO
6 ছবি1 | 6
কৌশিক বলছেন, ২০১৬ থেকে পাঁচ বছর ধরে ভারতীয় অর্থনীতির অবস্থা খুবই খারাপ ছিল৷ তার জন্য বড় ক্ষতি হয়ে গেছে৷ বিশ্বের দেশগুলির মধ্যে ভারতের সবচেয়ে বেশি যুবক বেকার, আর্থিক অসাম্য সবচেয়ে বেশি এবং বাংলাদেশের মানুষের আয়ুসীমাও ভারতীয়দের থেকে তিন বছর বেশি৷ কৌশিক বসু এখানে কর্মহীন মানুষের যে সংখ্যাতত্ত্ব দিয়েছেন তা সেন্টার ফর মনিটরিং ইন্ডিয়ান ইকনমির (সিএমআইই)৷ কিন্তু তাদের সর্বশেষ তথ্য হলো, দেশে বেকার মানুষের সংখ্যা এখন ছয় দশমিক পাঁচ শতাংশ৷
শিল্পপতি এবং কোটাক মাহিন্দ্র ব্যাংকের এমডি উদয় কোটাক বলেছেন, যুক্তরাজ্য ও ভারতের অবস্থার মধ্যে রিয়ালিটি চেক হওয়া দরকার৷ ভারতের জনসংখ্যা ১৪০ কোটি এবং মাথাপিছু জিডিপি দুই হাজার ৫০০ ডলার৷ আর যুক্তরাজ্যের জনসংখ্যা ছয় কোটি ৮০ লাখ এবং তাদের মাথাপিছু জিডিপি ৪৭ হাজার ডলার৷
ফলে ভারত বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতি হতে পারে, কিন্তু আর্থিক শক্তি, মানুষের জীবনধারণের মান, কর্মসংস্থানসহ অন্য আর্থিক পরিমাপে যুক্তরাজ্যের তুলনায় ভারত অনেক পিছিয়ে৷ প্রদীপের নীচের অন্ধকার দিকটা এভাবেই বাইরে এসে যাচ্ছে৷
কোনো সন্দেহ নেই, অর্থনীতি চাপে আছে৷ আবার এটা নিয়েও কোনো সন্দেহ নেই, ভারতের অর্থনীতি বেহাল হয়নি৷ সিএমআইই-র সমীক্ষা বলছে, সেপ্টেম্বরে শ্রমবাজার রিবাউন্ড করেছে৷ উৎসেবর মরসুমে এমনিতেই অর্থনীতি বেগবান হয়৷ এবারও হচ্ছে৷ গ্লোবাল রেটিং সংস্থা এসঅ্যান্ড পি জানিয়েছে, অ্যামেরিকা এবং ইউরোপ সহ বিশ্বের অর্থনীতি মন্দার দিকে যাচ্ছে৷ ভারত মন্দার হাত থেকে বেঁচে যেতেও পারে৷ সংবাদসংস্থা পিটিআই জানাচ্ছে, এসঅ্যান্ডপি-র প্রধান অর্থনীতিবিদ এফ গ্রুয়েনওয়াল্ড বলেছেন, ভারতের অভ্যন্তরীণ একটা বাজার আছে৷ যদিও ভারতকে বাইরে থেকে তেল আমদানি করতে হয়, তা সত্ত্বেও ভারতের বিদেশি মুদ্রার ভান্ডার যথেষ্ট ভালোঅবস্থায় আছে৷ তার উপর ভারতের কোম্পানিগুলির ব্যালান্স শিট এখন যথেষ্ট ভালো৷
কোনো সন্দেহ নেই ভারতের দেশের ভিতরের বাজার যথেষ্ট বড়৷ অধিকাংশ খাদ্যশস্য উৎপাদনে ভারত স্বয়ংসম্পূর্ণ৷ তেল বাদ দিলে অন্য কোনো নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের উপর ভারতের বিদেশ-নির্ভরতা অতটা বেশি নেই৷ রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করার পর গোটা ইউরোপ-জুড়ে তেল ও গ্যাসের আকাল চলছে৷ তেল ও গ্যাসের দামও বেড়েছে৷ সেই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বিদ্যুতের খরচ৷ সেখানে রাশিয়ার বদান্যতায় ভারত বেঁচে গেছে৷ রাশিয়া ভারতকে অনেক সস্তায় তেল দিয়েছে৷ ভারতও অ্যামেরিকার ভ্রুকুটি ও পশ্চিমা দেশগুলির বিরোধকে আমল না দিয়ে তেল কিনেছে এবং কিনছে৷ তার ফলে তেল কেনার ক্ষেত্রে ভারতের চাপ কমেছে। ফলে ইউরোপকে যতটা চাপ সহ্য করতে হয়েছে, ভারতকে ততটা নয়৷
কিন্তু তা সত্ত্বেও চিন্তা তো একটা থাকেই৷ গ্লোবাল রিসার্চ ফার্ম নমুরার প্রধান অর্থনীতিবিদ সোনাল ভার্মা ইকনমিক টাইমসকে বলেছেন, বর্তমান ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি ও অর্থনৈতিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ভারতে মাঝারি সময়ের জন্য আর্থিক মন্দা হতে পারে৷ এই সময়টা কখনোই ১২ থেকে ১৮ মাসের বেশি হবে না৷ তার মতে, করোনার ধাক্কা এখনো পুরোপুরি সামলে ওঠা যায়নি৷ অনেকগুলি ক্ষেত্র পুরোপুরি আগের মতো হয়নি৷ এর ফলে মুদ্রাস্ফীতি হচ্ছে এবং হবে। ২০২৩-এও মুদ্রাস্ফীতি থাকবে৷ তবে মাঝারি হারে৷
আমরা তো কবে থেকে মুদ্রাস্ফীতি নিয়েই বাস করছি৷ আর এটাও ঘটনা, ভারতে এখন এতরকম কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারি প্রকল্প আছে যে, গরিব মানুষের রুটি-রুজির ক্ষেত্রে সমস্যা হওয়ার কথা নয়৷ তারা বিনা পয়সায় রেশন পান, একশ দিনের কাজ পান৷ বার্ধক্যভাতা পান৷ বিনা পয়সায় চিকিৎসা বিমা পান৷ বড়লোকদের জিনিসের দাম বাড়লেও কিছু এসে যায় না৷ মার খায় শুধু মধ্য ও নিম্নবিত্তরা৷ অর্থনীতির হাল খারাপ হলে চাকরি যায়, জিনিসের দাম বাড়ে, ফলে জীবনধারণের মান কমাতে হয়৷ চাপ বাড়তেই থাকে৷ ভালো বা মন্দ সবসময়ই চাপে থাকা মধ্যবিত্তের অবস্থা কমবেশি খারাপ হতে থাকে৷ চিন্তাটা এখানেই৷
ডলারের জেরে ইউরো, পাউন্ড ও সোনার বাজারে দুর্দিন
ডলারের বিপরীতে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মুদ্রা রেকর্ড দরপতনের এক সপ্তাহ পার করেছে৷ তবে সুখবর রয়েছে স্বর্ণপ্রেমীদের জন্য৷ ছবিঘরে জানুন বিস্তারিত৷
ছবি: picture-alliance/Stephan Persch
কুড়ি বছরের সর্বনিম্নে ইউরো
কয়েক সপ্তাহ আগেও এক ইউরোতে এক ডলারের বেশি পাওয়া যেতো৷ ইউক্রেন যুদ্ধের পর ইউরোপের ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতির অনিশ্চয়তায় গত ছয়মাস ধরে ক্রমাগত কমছে ইইউর ১৯ দেশের এই মুদ্রার মান৷ শুক্রবার এক ইউরোর বিনিময় মূল্য ৯৭ সেন্টে নেমে এসেছে৷ ২০০২ সালের অক্টোবরের পর মুদ্রাটির মূল্য এত কমেনি কখনো৷
ছবি: Andrei Barmashov/PantherMedia/image images
হুমকির মুখে পাউন্ড
হুমকির মুখে রয়েছে বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী মুদ্রা ব্রিটিশ পাউন্ডও৷ শুক্রবার একদিনেই ডলারের বিপরীতে তার দুই শতাংশ দরপতন হয়েছে৷ এক পাউন্ডের বিনিময় মূল্য নেমে এসেছে এক দশমিক এক ডলারে৷ সব মিলিয়ে ডলারের বিপরীতে পাউন্ডের বিনিময় হার এখন ৩৭ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন৷ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ত্বরান্বিত করতে শক্রবার লন্ডনের করছাড় ও বিপুল বিনিয়োগ সংক্রান্ত এক ঘোষণার পর মুদ্রাটির এই পতন ঘটে৷
ছবি: Reuters/S. Sukplang
অস্থির ইয়েন
এশিয়ার সবচেয়ে বড় অর্থনীতি জাপানও নিজেদের মুদ্রার মান ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে৷ ২৪ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পতনের পর মূল্য বাড়াতে বৃহস্পতিবার বাজার থেকে ইয়েন কিনতে শুরু করে দেশটির সরকার৷ ১৯৯৮ সালের পর এটি কর্তৃপক্ষের প্রথম এমন পদক্ষেপ৷ এতে শুক্রবার নাগাদ অবশ্য কিছুটা দর ফিরে পেয়েছে জাপানিজ মুদ্রা৷ প্রতি ডলারের বিপরীতে মূল্য বেড়ে ১৪২.৯৭ ইয়েন হয়েছে৷
ছবি: Imago/blickwinkel
রূপির খারাপ সপ্তাহ
এক ডলারের বিপরীতে চলতি সপ্তাহে ভারতীয় মুদ্রার বিনিময় হার ৮১ ডলারে নেমে আসে, যা সর্বনিম্ন দরপতনের রেকর্ড৷ উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বিশ্ব বাণিজ্যের অস্থিরতার প্রভাবে হিমশিম খাচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে বড় অর্থনীতির মুদ্রাটিও৷ সব মিলিয়ে শুধু চলতি সপ্তাহেই রুপি দেড় শতাংশের বেশি দর হারিয়েছে৷
ছবি: Soumyabrata Roy/NurPhoto/IMAGO
সামলাতে পারছে না চীনা মুদ্রাও
গত ২৮ মাসের মধ্যে শুক্রবার সবচেয়ে দুর্বল পরিস্থিতিতে পড়েছে চীনা মুদ্রা৷ সপ্তাহের হিসাবেও গত চার মাসের মধ্যে ইউয়ানের সবচেয়ে বেশি দর হারানোর সপ্তাহ ছিল এটি৷ শুক্রবার প্রতি ডলারের বিপরীতে পিপলস ব্যাংক অব চায়নার বেঁধে দেয়া দর ছিল প্রায় সাত ইউয়ান, যা ২০২০ সালের ৩ আগস্টের পর সর্বনিম্ন৷
ছবি: Nicolas Asfouri/AFP
ঊর্দ্ধমুখী রুবল
এদিকে বিভিন্ন দেশের মুদ্রা খাবি খেলেও রাশিয়ার রুবল ঠিকই উর্দ্ধমুখী ধারা বজায় রেখেছে৷ জুলাইয়ের পর ডলার ও ইউরোর বিপরীতে এই সপ্তাহে রুবল সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী হয়েছে৷ শুক্রবার ডলারের বিপরীতে (৫৬.৭৯) সাড়ে তিন শতাংশ আর ইউরোর বিপরীতে (৫৫.০৫) চার দশমিক চার শতাংশ দাম বেড়েছে রুবলের৷
ছবি: picture-alliance/dpa/TASS/A. Korotayev
শক্তিশালী ডলার
আন্তর্জাতিক অন্যান্য মুদ্রার দরপতনের অর্থ মার্কিন ডলার এখন আগের চেয়েও শক্তিশালী৷ ডলারের সূচক ডিএক্সআই সপ্তাহ শেষে প্রায় এক শতাংশ বেড়ে ২০০২ সালের পর সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে৷ মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুদহার বৃদ্ধি এর পেছনে বড় ভূমিকা রেখেছে৷
ছবি: Khaled Elfiqi/epa/dpa/picture alliance
আকর্ষণ হারাচ্ছে স্বর্ণ
যুদ্ধ ও অর্থনৈতিক মন্দায় ‘বিনিয়োগের নিরাপদ স্বর্গ’ হয়ে উঠেছে স্বর্ণ৷ দামের ক্ষেত্রে ডলারের সঙ্গে বরাবরই এর বিপরীত সম্পর্ক৷ ডলারের রেকর্ড মূল্য বৃদ্ধিতে তাই বিনিয়োগকারীদের কাছে স্বর্ণ আকর্ষণ হারাচ্ছে৷ শুক্রবার দেড় শতাংশের বেশি কমে আউন্স প্রতি সোনার দর এক হাজার ৬৪২ ডলারে ঠেকেছে৷ ২০২০ সালের এপ্রিলের পর আন্তর্জাতিক বাজারে এটি স্বর্ণের সবচেয়ে কম দাম৷