বাংলাদেশ থেকে ভারতের মুম্বইয়ের যৌনপল্লিতে নারী পাচার বাড়ছে বলে ভারতের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের পর্যবেক্ষণে জানা গেছে৷ তাদের তথ্য অনুয়ায়ী, নগরীর কামাথিপুরার প্রধান যৌনপল্লিতে বাংলাভাষী যৌনকর্মীর সংখ্যা এখন রেকর্ড পরিমাণ৷
ছবি: AFP/Getty Images
বিজ্ঞাপন
যৌনকর্মী পাচার নিয়ে কাজ করা মুম্বই ভিত্তিক এই স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটির নাম ‘প্রিরানা'৷ সংস্থাটির কো-ফাউন্ডার প্রিতি পাটকার জানান, ‘‘বাংলাদেশ থেকে নারী পাচার বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে যৌনপল্লিতে বাংলাদেশি যৌনকর্মী বেড়ে যাওয়ার সম্পর্ক আছে৷'' তাই এবার তাদের উদ্ধারে রাজনৈতিক এবং সামাজিক উদ্যোগের কথা বলা হচ্ছে৷
তিনি আরো বলেন, ‘‘নারী পাচারকারীরা বেশ বেপরোয়া এবং তারা ভালো চাকরি এবং জীবনের লোভ দেখিয়ে বাংলাদেশ থেকে নারীদের পাচার করে আনে৷''
জানা যায়, ২০০০ সাল থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে যৌনকর্মীদের ২১৩ জন সন্তানকে প্রিরানা-র নাইট কেয়ার সেন্টারে ভর্তি করা হয়৷ এর মধ্যে ১২৮ জন বাংলাভাষী মায়ের সন্তান৷ শহরের অন্যান্য এলাকার যৌনপল্লিতেও নাকি ঐ একইরকম চিত্র৷ তবে এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের যৌনকর্মী ওআছেন৷
এলিনা খান
This browser does not support the audio element.
ভারতের সরকারি হিসেবে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রায় ৩০ লাখ মানুষ আছে সেখানে৷ ভারতীয় কর্তৃপক্ষের দাবি, প্রতিদিন শত শত বাংলাদেশি ৪০০০ কিমি. সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে দালালের মাধ্যমে ভারতে প্রবেশ করে৷ এরা গরিব এবং এদের বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে দালালরা সংগ্রহ করে৷
এশিয়ার ভেতরে অবৈধ অভিবাসন বেড়েই চলেছে৷ এর পেছনে আছে মানব পাচারকারী এবং মাদক পাচারকারীরা৷ জাতিসংঘের মাদক এবং অপরাধ বিষয়ক অফিস (ইউএনওডিসি)-এর তথ্য মতে, বছরে এই অবৈধ ব্যবসার আয় অন্ততপক্ষে ২ বিলিয়ন ডলার৷
তাদের মতে, দক্ষিণ এশিয়ায় মানবপাচার বিশ্বের মধ্যে দ্রুত গতিতে বাড়ছে৷ আর বিশ্বে এই মানবপাচারে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পরই দক্ষিণ এশিয়ার অবস্থান৷
ধারণা করা হচ্ছে, প্রতিবছর দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে ১,৫০,০০ মানুষ পাচারের শিকার হচ্ছে৷ তবে প্রকৃত সংখ্যা এরচেয়েও বেশি হতে পারে৷ তাছাড়া এশিয়ায় মানবপাচার বেড়ে যাওয়া তার প্রভাবও পড়ছে এই এলাকায়৷
প্রিতি পাটকার জানান, ‘‘বাংলাদেশ থেকে মুম্বইয়ে পাচার হয়ে আসা নারীরা তাদের অধিকারের জন্য সহায়তার বিষয়টি জানেন না এবং সহায়তা নিতে ভয় পান৷ তাই যৌনপল্লি থেকে উদ্ধারের পর তারা পাচারকারীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থাও নিতে চান না৷''
বাংলাদেশের যৌনকর্মীদের কথা
পৃথিবীর আদিম এক পেশা পতিতাবৃত্তি৷ বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই চালু রয়েছে এই পেশা৷ বাংলাদেশও ব্যতিক্রম নয়৷ কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, কেমন আছেন বাংলাদেশের যৌনকর্মীরা? এই ছবিঘরে তাঁদের অবস্থা কিছুটা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে৷
ছবি: Getty Images
যেভাবে যৌনপল্লীতে আগমন
বাংলাদেশে অনেক ক্ষেত্রে প্রতারণার শিকার হয়ে যৌনপল্লীতে হাজির হন মেয়েরা৷ প্রত্যন্ত অঞ্চলের অতিদরিদ্র্য পরিবারের সদস্যরা কখনো কখনো অর্থের লোভে মেয়েদের বিক্রি করে দেন বলে জানিয়েছে একাধিক আন্তর্জাতিক বার্তাসংস্থা৷ এছাড়া ভালোবাসার ফাঁদে ফেলে কিংবা বিদেশ যাওয়ার লোভ দেখিয়েও মেয়েদের যৌনপল্লীতে আনা হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/Munir uz ZAMAN
যৌনকর্মীদের জন্য ‘গরুর ট্যাবলেট’
ফরিদপুরের সরকার অনুমোদিত যৌনপল্লীর ছবি এটি৷ অভিযোগ রয়েছে, পল্লীর মালিক নতুন আসা যৌনকর্মীদের স্টেরয়েড ট্যাবলেট সেবনে বাধ্য করেন, যা সাধারণত গরুকে খাওয়ানো হয়৷ গরুর স্বাস্থ্য বাড়াতে ব্যবহার করা এই ট্যাবলেট মানুষের দেহের জন্য ক্ষতিকর৷
ছবি: M.-U.Zaman/AFP/GettyImages
অপ্রাপ্তবয়স্কদের জন্য ‘ইনজেকশন’
বাংলাদেশের এক যৌনপল্লীর মালিক রোকেয়া জানান, স্টেরয়েড ওষুধ প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে ভালো কাজে দেয়৷ কিন্তু অপ্রাপ্তবয়স্ক, বিশেষ করে ১২ থেকে ১৪ বছর বয়সি মেয়েদের ক্ষেত্রে এটি কার্যকর নয়৷ অপ্রাপ্তবয়সিদের স্বাস্থ্য ভালো করতে বিশেষ ধরনের ইনজেকশন ব্যবহার করা হয় বলে জানান ৫০ বছর বয়সি রোকেয়া৷
ছবি: picture-alliance/ZUMA Press/M. Candela
অধিকাংশ যৌনকর্মী ‘স্টেরয়েড আসক্ত’
আন্তর্জাতিক উন্নয়নসংস্থা একশনএইড ইউকে এক সমীক্ষার ভিত্তিতে ২০১০ সালে জানায় যে, বাংলাদেশের প্রায় ৯০ শতাংশ যৌনকর্মী ওরাডেক্সন বা অন্যান্য স্টেরয়েড ট্যাবলেট নিয়মিত গ্রহণ করে৷ তাঁদের গড় বয়স ১৫-৩৫ বছর৷ বাংলাদেশে দু’লাখের মতো যৌনকর্মী রয়েছে বলে ধারণা করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/ZUMA Press/M. Candela
সচেতনতা সৃষ্টির উদ্যোগ
স্টেরয়েড ব্যবহারের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে প্রচারণা চালাচ্ছে একশনএইড৷ সংস্থাটির বাংলাদেশ অংশের কর্মকর্তা লুৎফুন নাহার জানিয়েছেন, ‘‘ওরাডেক্সন গ্রহণ করার পর শুরুতে মেয়েদের শরীরে চর্বির পরিমাণ বাড়তে থাকে৷ কিন্তু এটি নিয়মিত সেবন করলে ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, চামড়ায় ক্ষতসহ বিভিন্ন রোগ দেখা দেয়৷’’
ছবি: GMB Akash
এইচআইভি সংক্রমণ
বাংলাদেশে যৌনকর্মীদের মধ্যে এইচআইভি সংক্রমণ বা এইডস রোগ হওয়ার খবর মাঝে মাঝে পত্রিকায় প্রকাশ হয়৷ তবে ঠিক কতজন যৌনকর্মী এইচআইভি আক্রান্ত তার হালনাগাদ কোনো হিসাব পাওয়া যায়নি৷ অনেকক্ষেত্রে কনডম ব্যবহারে খদ্দেরের অনীহা যৌনকর্মীদের মাঝে যৌনরোগ ছড়াতে সহায়ক হচ্ছে৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: AP
‘অপ্রাপ্তবয়স্ক’ যৌনকর্মী
বাংলাদেশের যৌনপল্লীগুলোতে অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের জোর করে যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করানোর অভিযোগ রয়েছে৷ আর এই পেশায় যাঁরা একবার প্রবেশ করছেন, তাঁদের জীবনেও নানা ঝুঁকি থাকে৷ পতিতাপল্লীতে হামলার খবর কিন্তু মাঝেমাঝেই শোনা যায়৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: M.-U.Zaman/AFP/GettyImages
শত বছরের পুরনো পল্লী উচ্ছেদ
মাদারিপুরের পতিতাপল্লীটি ছিল শত বছরের পুরনো৷ গত বছর এই পল্লী উচ্ছেদ করেছেন স্থানীয়রা৷ এমনকি পল্লীটি জোরপূর্বক উচ্ছেদ না করার হাইকোর্টের আদেশও এক্ষেত্রে উপেক্ষা করা হয়েছে৷ সেখানে পাঁচশ’র মতো যৌনকর্মী বাস করতেন৷ কিছুদিন আগে টাঙ্গাইলের একটি পতিতাপল্লীও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে৷ এ রকম উচ্ছেদের আতঙ্কে রয়েছেন আরো অনেক যৌনকর্মী৷
ছবি: M.-U.Zaman/AFP/GettyImages
মধ্যপ্রাচ্যে ‘যৌনদাসী’ বাংলাদেশের মেয়েরা!
বাংলাদেশের বেশ কয়েক নারীকে মধ্যপ্রাচ্যে যৌনদাসী হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে৷ তাঁদের পাচার করে সিরিয়ায় নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে একাধিক বার্তাসংস্থা৷ এ সব নারীকে ফিরিয়ে আনতে সরকারি উদ্যোগের কথা বলা হচ্ছে৷ তবে শুধু মধ্যপ্রাচ্য নয়, প্রতিবেশী দেশ ভারতের বিভিন্ন পতিতালয়েও বাংলাদেশি নারীদের জোরপূর্বক পতিতাবৃত্তিতে নিয়োগ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ আছে৷
ছবি: Getty Images/A. Joyce
9 ছবি1 | 9
বাংলাদেশ-ভারত গত বছর মানবপাচার বন্ধে একটি সহযোগিতা চুক্তি সই করে৷ এই চুক্তির উদ্দেশ্য হলো মানবপাচারের তথ্য বিনিময়, তদন্ত এবং পাচারকারীদের আইনের আওতায় আনা৷ এই চুক্তর ফলে মানবপচারের শিকার যারা, তাদের উদ্ধার এবং পুনর্বাসনের কাজ সহজ হয়েছে৷ কারণ আগে তাদের অবৈধ অভিবাসী হিসেবেই বিবেচনা করার হতো৷
মুম্বই পুলিশের মুখপাত্র জানান, ‘‘এখন আমরা তাদের উদ্ধার করে সরাসরি যেসব এনজিও তাদের দায়িত্ব নিতে এবং পুনর্বাসন করতে চায়, তাদের কাছে হস্তান্তর করি৷ এর ফলে পাচার হওয়া নরীদের জন্য ভালো ফল পাওয়া যাচ্ছে৷''
এই যেমন গতমাসেই একজন বাংলাদেশি মানবপাচারকারী দণ্ডিত হয়েছে ভারতে৷ পাচারের শিকার বাংলাদেশে পুনর্বাসিত এক নারীর ভিডিও বক্তব্যের ভিত্তিতে তাকে শাস্তি দেয়া হয়েছে বলে খবর৷
যেসব দেশে পতিতাবৃত্তি বৈধ
পতিতাবৃত্তি নাকি পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাচীন পেশা৷ কিন্তু কোনো যুগে, কোনো দেশেই মানুষ বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেনি, আজও করে না৷ তবে বিশ্বের বহু দেশেই পতিতাবৃত্তি বৈধ এবং সেখানে যৌনকর্মীরা নিয়মিত আয়করও দেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Vennenbernd
হল্যান্ডের ‘পতিতাপল্লী’ পর্যটকদের মূল আকর্ষণ
নেদারল্যান্ডসে পতিতাবৃত্তি শুধু বৈধ নয়, ইউরোপের এই দ্বীপদেশটির পতিতাপল্লী সত্যিকার অর্থেই বিশ্ববিখ্যাত৷ ঐ ‘রেডলাইট জোন’ দেখতে প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার পর্যটক আসে আমস্টারডামে৷ নেদারল্যান্ডসের মতো ইউরোপের আরেক দেশ বেলজিয়ামেও দেহব্যবসা সম্পূর্ণ বৈধ৷
ছবি: picture-alliance/AP
জার্মানি এবং ফ্রান্সে কঠোর আইন
জার্মানি এবং ফ্রান্সেও দেহব্যবসা বৈধ৷ তবে এ দু’দেশেই যৌনকর্মীদের এই ব্যবসা করতে হয় কঠোর আইন মেনে৷ জার্মানির কিছু শহরে এখনো যৌনকর্মীরা রাস্তায় নেমে খদ্দের ডাকতে পারেন না, এভাবে খদ্দের সংগ্রহ করা সেসব জায়গায় আইনত দণ্ডনীয়৷ ফ্রান্সেও ২০১৪ সালে এমন একটা আইন হয়েছে, যা মেনে যথেচ্ছ দেহব্যবসা করা খুব কঠিন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সুইডেন আর নরওয়েতেও নিয়ন্ত্রিত পতিতাবৃত্তি
ফ্রান্স ২০১৪ সালে যে আইন প্রবর্তন করে, সেটা প্রথম চালু হয়েছিল সুইডেনে, ১৯৯৯ সালে৷ এ কারণে আইনটি ‘সুইডিশ মডেল’ হিসেবে পরিচিত৷ এ আইনে যৌনকর্মীদের অধিকার রক্ষা করে দালালদের নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সুইজারল্যান্ড ও অস্ট্রিয়ায় স্বাস্থ্যপরীক্ষা বাধ্যতামূলক
সুইজারল্যান্ড ও অস্ট্রিয়াতেও দেহব্যবসা বৈধ৷ তবে এ দু’টি দেশে ১৯ বচর বয়স না হলে কেউ দেহব্যবসায় আসতে পারেন না৷ যৌনকর্মীদের যাতে কোনো যৌনরোগ না হয়, কিংবা তাঁদের মাধ্যমে খদ্দেরদের মাধ্যে যাতে এইডস, সিফিলিস বা অন্য কোনো রোগ ছড়াতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে যৌনকর্মীদের নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষা করাতে হয়৷ অবশ্য শুধু সুইজারল্যান্ড ও অস্ট্রিয়াতে নয়, জার্মানিতেও ঐ একই নিয়ম৷
ছবি: AFP/Getty Images
গ্রিস এবং তুরস্কে পতিতাবৃত্তি নিয়ন্ত্রিত
গ্রিস এবং তুরস্কেও পতিতাবৃত্তি পুরোপুরি বৈধ, তবে দেহ ব্যবসার আইন খুব কঠিন৷ জার্মানির মতো এই দু’টি দেশেও যৌনকর্মীদের স্বাস্থ্যবীমা করা বাধ্যতামূলক৷ এছাড়া যৌনকর্মীরা নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান কিনা, তা সবসময় তদারক করা হয়৷ স্বাস্থ্যকার্ডেই লেখা থাকে স্বাস্থপরীক্ষার সব তথ্য৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Vennenbernd
যে দুই দেশের পতিতাপল্লীতে ধীরে চলা মানা
ব্রিটেন আর আয়ারল্যান্ডের পতিতাপল্লী বা ‘রেড লাইট জোন’-এর প্রায় সব আইনই জার্মানির মতো ছিল৷ তবে সম্প্রতি ব্রিটেনে কিছু বেসরকারি সংস্থার দাবিতে এতে নতুন কিছু বিষয় যোগ করা হয়েছে৷ ব্রিটেনের রেড লাইট জোন-এ এখন যেমন ধীরে গাড়ি চালানো নিষেধ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
কাউকে জোর করে পতিতা বানানো যায় না
ইউরোপের সব দেশেই পতিতাবৃত্তি আইনত বৈধ৷ তবে আইন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেশভেদে একটু হলেও অন্যরকম৷ যেমন স্পেন এবং পর্তুগালেও দেহব্যবসা বৈধ৷ কিন্তু স্পেনে কাউকে জোর করে বা ইচ্ছার বিরুদ্ধে যৌনকর্মী বানানো শাস্তিযোগ্য অপরাধ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Dedert
দক্ষিণ অ্যামেরিকায় অন্যরূপ
দক্ষিণ অ্যামেরিকার অধিকাংশ দেশেই যৌনব্যবসা বৈধ৷ তবে কিছু দেশে মাফিয়া এবং মানবপাচার বড় সমস্যা হয়ে ওঠায়, এই ব্যবসার ওপর কড়াকড়ি এবং তদারকি বেড়েছে৷ দেহব্যবসাকে মাফিয়া চক্রের নিয়ন্ত্রণের বাইরে রাখতে ব্রাজিল এবং মেক্সিকোতে রয়েছে কঠোর আইন৷ তারপরও দেশ দু’টিতে মাফিয়া চক্রের আধিপত্য রয়ে গেছে৷
ছবি: Yasuyoshi Chiba/AFP/Getty Images
প্রতিবেশী হয়েও নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া আলাদা
নিউজিল্যান্ডে যৌনব্যবসা একেবারেই বৈধ৷ তবে প্রতিবেশী দেশ অস্ট্রেলিয়ার অনেক রাজ্যে এই ব্যবসা এখনো অবৈধ৷ ২০০৩ সালে আইন করে সব প্রাপ্তবয়স্কের জন্য যৌনব্যবসাকে বৈধ করে দেয় নিউজিল্যান্ড৷
ছবি: picture-alliance / rolf kremming
এশিয়ায় লুকোনো পতিতাবৃত্তি
ভারতের পতিতাবৃত্তি বৈধ৷ তারপরও পতিতাবৃত্তি চলে আড়ালে-আবডালে৷ রাস্তায় নেমে পতিতারা খদ্দের সংগ্রহ করতে পারেন না৷ খদ্দেররা অর্থের বিনিময়ে যৌনক্ষুধা মেটাতে যায় রাতের আঁধারে৷ বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে পতিতালয় কমলেও মাসাজ পার্লার এবং আবাসিক হোটেলে প্রায়ই চলে পুলিশি অভিযান৷ খদ্দেরসহ পতিতা আটকের খবর আসে তখন৷ থাইল্যান্ড ও ফিলিপিন্সে পতিতাবৃত্তি চলে অবাধে৷ তবে দেশ দুটিতে এই ব্যবসা আইনের চোখে অবৈধ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
10 ছবি1 | 10
এ নিয়ে মানবাধিকার নেতা এবং বাংলাদেশ মানবাধিকার ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট এলিনা খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘পাচারকারী নানা কৌশলে নারী পাচারের কাজ করে৷ তারা চাকরি এবং ভালো জীবনের প্রলোভন ছাড়াও বিয়ে, প্রেম, বিয়ের প্রলোভন বা পরিবারের সবাইকে একযোগে চাকরির প্রলোভন দেয়৷ যারা এই ফাঁদে পড়েন তারা নিজেরাও জানেন না যে, আসলে তারা কোথায় যাচ্ছেন৷ পাচারকারীরা এমন কৌশলে কাজ করেন যে তাদের ধরাও সহজ হয় না৷''
তিনি জানান, ‘‘পরচারকারী এখন সরাসরি কাজ না করে পরিবার, আত্মীয়-স্বজন বা পরিচিত জনকে কাজে লাগায়৷ অর্থাৎ বিষয়টি তারা এভাবেই বিশ্বাসযোগ্য করে তোলেন৷''
এলিনা খানের কথায়, ‘‘মধ্যপ্রাচ্যে নারী পাচারের বিষয়ে বাংলাদেশে ব্যাপক ক্যাম্পেইন হয়েছে৷ তাই মধ্যপ্রাচ্যে নারী পাচার এখন কমে এসেছে৷ আজ সকলেই জানে যে, ওখানে চাকরির নামে পাচার করা হয়৷ কিন্তু ভারতের বিভিন্ন পতিতালয়ে পাচারের বিষয়টি নিয়ে তেমন কোনো সচেতনতামূলক কর্মসূচি এখনও নেই৷ সরকার সেটা করলে পাচার কমে আসবে বলেই আমার আশা৷''
জবরদস্তির পতিতাবৃত্তি থেকে জীবনের আনন্দে
প্রতি বছর নেপালের কয়েক হাজার মেয়েকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে বেছে নিতে হয় যৌনকর্মীর জীবন৷ শারীরিক নির্যাতন, ধর্ষণ – সবই সইতে হয় তাঁদের৷ চাকরির আশায় ঘর ছেড়ে অন্ধকার গলিতে ঢুকে পড়া এমন মেয়েদেরই জীবনের আনন্দে ফেরায় ‘মাইতি নেপাল’৷
ছবি: Gábor Halász
ঘর ছেড়ে আঁধারের পথে
মানবপাচারকারীদের খপ্পরে পড়ে প্রতি বছর নেপালের অন্তত দশ হাজার মেয়ে ঘর ছাড়ে৷
ছবি: DW/E. Felden
যেখানে নরক
পরিবারে অভাব৷ তাই ভালো চাকরির আশ্বাসে মানবপাচারকারীদের বিশ্বাস করে ঘর ছাড়ে মেয়েরা৷ কিন্তু আশা অনুযায়ী চাকরি জোটে না৷ বেশির ভাগ মেয়েকেই ভারতে নিয়ে জোর করে নামানো হয় পতিতাবৃত্তিতে৷ অত্যাচার, নির্যাতন তো আছেই, ধীরে ধীরে এইডসসহ অনেক জটিল রোগ বাসা সচ্ছল জীবনের ঠিকানা খুঁজতে গিয়ে অন্ধকার গলিতে ঢুকে পড়া মেয়েদের শরীরে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
তাঁদের পাশে ‘মাইতি নেপাল’
অনেক বছর ধরেই দারিদ্র্যের সুযোগ নিয়ে নেপালেের মেয়েদের যৌনকর্মী হতে বাধ্য করছে মানবপাচারকারীরা৷ একবার যৌনকর্মী হলে আর নিস্তার নেই – এমন যাঁরা ভাবতেন, অত্যাচার-নির্যাতন সইতে সইতে যাঁরা স্বপ্ন দেখতে ভুলে গিয়েছিলেন, তাঁদের অনেককেই ২২ বছর ধরে স্বপ্ন দেখাচ্ছে মাইতি নেপাল৷ ১৯৯৩ সালে এই সংগঠনটি গড়েছিলেন অনুরাধা কৈরালা৷ সেই থেকে বাধ্য হয়ে যৌনকর্মীর জীবন মেনে নেয়া মেয়েদের জীবনের পথে ফেরাচ্ছে মাইতি নেপাল৷
ছবি: Gábor Halász
মঞ্চে জীবনের অভিনয়
যৌনপল্লি থেকে নিয়ে এসে মেয়েদের জীবনে আনন্দও এনে দেয় মাইতি নেপাল৷ সে আনন্দ ধরে রাখার উপায়ও শেখায়৷ মঞ্চনাটক করে মেয়েরা৷ সেই নাটকেও থাকে মানবপাচারকারী এবং তাদের দুরভিসন্ধির কথা৷ সেই নাটকে অভিনয় করেন যৌনপল্লিফেরত মেয়েরা৷ এভাবে অন্য মেয়েদের যৌনপল্লি থেকে দূরে থাকার উপায়ও জানায় যৌনকর্মীর জীবনকে পেছনে ফেলে আসা মেয়েরা৷
ছবি: Gábor Halász
নজরদারি
আর কোনো মেয়ে যাতে মানবপাচারকারীদের পাল্লায় পড়ে দেশ না ছাড়ে সেদিকে সবসময় নজর রাখে মাইতি নেপাল৷ বিশেষ করে ভারত সংলগ্ন সীমান্তে গিয়ে বাসগুলোর ওপর কড়া নজর রাখেন সংস্থার কর্মীরা৷ কোনো মেয়ে এবং তার সঙ্গের কোনো পুরুষকে দেখে সন্দেহ হলেই তাঁরা পুলিশ ডাকেন৷
ছবি: Gábor Halász
নয় বছরের সেই মেয়েটি
গীতা নামের এই নারীকে মানবপাচারকারী যখন যৌনপল্লিতে নিয়ে যায়, তখন তাঁর বয়স মাত্র নয়৷ সেখান থেকে যখন ফিরলেন তখন এইচআইভি-র সংক্রমণে তাঁর শরীর কাহিল, বেঁচে থাকার আশাও প্রায় শেষ৷ একে তো যৌনকর্মী তার ওপর এইচআইভি-র রোগী –তাই অনেক সমাজসেবকও তখন গীতার কাছেই ঘেঁষতেন না৷ তখনই তাঁর পাশে দাঁড়ায় মাইতি নেপাল৷
ছবি: AP
নতুন ঠিকানা
নেপালের সীমান্ত এলাকায় ১১টি গৃহ নির্মাণ করেছে মাইতি নেপাল৷ যৌনপল্লি থেকে ফেরা মেয়েদের জন্য ঘর৷ মেয়েদের ভোকেশনাল ট্রেনিং বা বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণও দেয়া হয় সেখানে৷
ছবি: Gereon Wagener
দুঃসহ স্মৃতি ভুলতে...
কাঠমান্ডুর মাইতি নেপাল সেন্টারের উঠোনে প্রতিদিন বসে নাচের আসর৷ মেয়েরা যাতে অতীত ভুলে আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান হয়ে সুন্দর আগামীর পথ রচনা করতে পারে সেজন্যই নাচ শেখানো হয় তাদের৷ এ পর্যন্ত ১২ হাজার শিশু ও নারী মাইতি নেপালের সহায়তায় যৌনপল্লি ছেড়েছে৷ সীমান্ত থেকে বাঁধা পেয়ে অল্পের জন্য যৌনকর্মী হওয়া থেকে বেঁচেছে প্রায় ৩০ হাজার জন৷
ছবি: Gábor Halász
জার্মানিতে মাইতি নেপালের মেয়েরা
মাইতি নেপাল-এর কয়েকজন এখন জার্মানিতে৷ কোলন শহরের এলি হয়েস রেয়ালশুলে-তে সেদিন নেপালি নাচই নাচলেন৷
ছবি: DW/E. Felden
যেন প্রজাপতি...
কোলনে মাইতি নেপালের মেয়েরা যেন প্রজাপতির মতো উড়ছিলেন৷ তাঁদের জীবনও তো প্রজাপতির মতোই৷ শৈশব থেকে জীবনের একটা সময় পর্যন্ত শুঁয়োপোকার মতো তাঁদেরও অনেক কষ্ট সইতে হয়েছে৷ কষ্টের সময় কেটে যাওয়ার পর এখন প্রজাপতির মতোই যেন ডানা মেলে উড়ছে৷
ছবি: DW/E. Felden
ইউরোপ সফর
নভেম্বর পর্যন্ত ইউরোপের বিভিন্ন শহরে অনুষ্ঠান করবে মাইতি নেপালের মেয়েরা৷ এ সময়ে জার্মানি, অস্ট্রিয়া এবং সুইজারল্যান্ডের বিভিন্ন শহরে হবে তাঁদের অনুষ্ঠান৷