ভারতের মুম্বইয়ে শতবর্ষী এক ভবন ধসে পড়ার ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে৷ এ পর্যন্ত ৩৪ জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে৷ উদ্ধারকর্মীরা বলছেন, ভবনের ধংসস্তূপের নীচে এখনো মানুষ আটকা পড়ে আছে৷
বিজ্ঞাপন
এ সপ্তাহে গত ১২ বছরের মধ্যে সবচেয়ে প্রবল বৃষ্টি হয়েছে ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানীমুম্বইয়ে৷ মঙ্গলবার বৃষ্টি থামলেও জনজীবন পুরোপুরি স্বাভাবিক হওয়ার আগেই ঘটে মর্মান্তিক এই ঘটনা৷ বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় সকাল ৮টার দিকে শহরের ভেন্ডি বাজার এলাকায় ধসে পড়ে ১১৭ বছরের পুরনো একটি ছয়তলা ভবন৷ ছ'বছর আগে ভবনটিকে ‘বিপজ্জনক' এবং ‘বসবাসের অনুপযোগী' হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল৷ প্রবল বর্ষণে দুর্বল হয়ে পড়ার কারণে জীর্ন ভবনটি ধসে পড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷
ভবনটি ধসে পড়ার পর থেকেই শুরু হয় উদ্ধারকাজ৷ শুক্রবার মুম্বই পুলিশের এক মুখপাত্র বলেন, ‘‘উদ্ধারকর্মীরা বৃহস্পতিবার রাতেও বেশ কয়েকটি মৃতদেহ উদ্ধার করেছে৷ সব মিলিয়ে মৃতের সংখ্যা ৩৪-এ দাঁড়িয়েছে৷''
জানা গেছে, ভেন্ডি বাজারের সরু গলিময় এলাকার ওই ভবনটিতে নয়টি পরিবার বাস করতো৷ বাসিন্দাদের মধ্যে এ পর্যন্ত ১৭ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে৷
রাজ্য সরকার ইতিমধ্যে ভবন ধসে পড়ার কারণ এবং ছয় বছর আগে খালি করার নোটিস দেয়া সত্ত্বেও ঝুঁকি নিয়ে কীভাবে মানুষ এতদিন সেখানে বাস করল, তা জানার জন্য তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে৷
গত দু' মাসে মুম্বইয়ে এটি তৃতীয় ভবন ধসের ঘটনা৷ গত জুলাই মাসেও ব্যস্ত নগরটিতে একটি পাঁচ তলা ভবন ধসে পড়েছিল৷ সেবার প্রাণ হারিয়েছিল ১৭ জন৷ তবে ভারতের এই বাণিজ্যিক নগরীতে সবচেয়ে ভয়াবহ ভবন ধসের ঘটনাটি ঘটেছিল ২০১৩ সালে৷ একটি আবাসিক এলাকার এক ভবন ধসে তখন মারা গিয়েছিল ৬০ জন৷
ভারী বর্ষণের ফলে ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানী মুম্বইয়ে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে৷ মারা গেছেন ছ’জন৷ আসাম, বিহার, উড়িষ্যা, উত্তর প্রদেশসহ দেশের ছয়টি রাজ্য প্লাবিত৷ আগামী দিনগুলোতে আরও বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস আবহাওয়া অফিসের৷
ছবি: Reuters/S.Andrade
অচল বাণিজ্যিক রাজধানী
মঙ্গলবার সারাদিনই টানা বৃষ্টি হওয়ায় মুম্বইয়ের বেশিরভাগ রাস্তা ডুবে গেছে পানিতে৷ শহরের বিভিন্ন এলাকায় কোমর পর্যন্ত পানি জমে যায়৷ শহরের অনেক লোক অফিসে ও বন্ধুবান্ধবের বাড়িতে রাত কাটাতে বাধ্য হন৷ বৃষ্টি আর জলাবদ্ধতার কারণে শহরজুড়ে সৃষ্টি হয় অসহনীয় যানজটের৷ বৃষ্টির ধাক্কায় কার্যত অচল হয়ে পড়ে ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানী৷
ছবি: Reuters/S.Andrade
স্বাভাবিকের চেয়ে ন’গুণ বৃষ্টি
মঙ্গলবার মুম্বইয়ের কোনো কোনো এলাকায় বৃষ্টি হয়েছে প্রায় ৩০০ মিলিমিটার৷ আবহাওয়া অফিস বলছে, বর্ষা মৌসুমে মুম্বইয়ে একদিনে স্বাভাবিক যে পরিমাণ বৃষ্টি হয়, মঙ্গলবার তার চেয়ে ন’গুণ বেশি বৃষ্টি হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/AA/I.Shaikh
ব্যাহত যান চলাচল
শহরের বেশিরভাগ রাস্তা জলমগ্ন হয়ে পড়ায় অনেক স্থানে গাড়ি নষ্ট হয়ে অসহনীয় যানজটের সৃষ্টি হয়৷ বাধাগ্রস্ত হয়েছে ট্রেন চলাচলও৷ গতকাল বিমানবন্দরের সব কার্যক্রমও বন্ধ থাকলেও আজ তা স্বাভাবিক হয়েছে৷ এ জলাবদ্ধতাকে ২০০৫ সালে মুম্বইয়ের বন্যার সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Kakade
স্কুল ছুটি
এই অবস্থার মধ্যে শহরের স্কুল-কলেজে ছুটি ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার৷ পানি অপসারণ করে সড়কগুলো চলাচলের উপযোগী করতে কাজ করছে কর্তৃপক্ষ৷
ছবি: Reuters/S.Andrade
১২টি রাজ্যে সতর্কতা
প্রবল বর্ষণের ফলে নতুন করে ১২টি রাজ্যে বন্যা সতর্কতা জারি করেছে দিল্লির আবহাওয়া অফিস৷ মধ্যপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, গুজরাট, গোয়া, ছত্তিশগড়, তেলঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু, কেরালা, দমন ও দিউ, রাজস্থান, কর্নাটক-সহ দেশের মোট ১২টি রাজ্যে আগামী তিন দিনে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস৷
ছবি: picture-alliance/AA/I.Shaikh
নদীর পানি বইছে বিপদসীমার উপর দিয়ে
আবহাওয়া অফিস বলছে, ঐ ১২টি রাজ্যের ১৪টি নদীর পানি বিপদন সীমার উপর দিয়ে বইছে৷ মাহি, সবরমতী, গোদাবরী, কৃষ্ণা, তাপি, বানাস নদী ৯০-৯৪ শতাংশ জলপূর্ণ৷ ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হলে অল্প সময়েই উপচে পড়বে এ সব নদীর পানি৷ ফলে ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে এই রাজ্যগুলিতে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R.Kakade
ছ’জনের মৃত্যু
মঙ্গলবার ঘরের বাইরে কাউকে না বেরনোর পরামর্শ দেন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী৷ প্রবল বৃষ্টিতে বাড়ি ধসসহ কয়েকটি দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে ছয় জনের৷