অদ্ভুত এক নিয়ম চলছিল বলিউডে৷ হলিউডের পর বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই চলচ্চিত্র শিল্প মেয়েদের সব কাজে সুযোগ দিলেও এতদিন মেকআপ আর্টিস্ট হতে দেয়নি৷ অবশেষে এ অচলায়তন ভাঙার নির্দেশ দিয়েছে উচ্চ আদালত৷
বিজ্ঞাপন
মুম্বই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে নায়ক-নায়িকার ফাইফরমাশ খাটা থেকে শুরু করে চলচ্চিত্রের জন্য দরকারি প্রায় সব কাজই করতে পারেন নারী৷ তবে কোনোদিনই কোনো মেয়েকে মেকআপ আর্টিস্ট, অর্থাৎ প্রসাধন শিল্পী হতে দেখেনি মুম্বই৷ মেয়েদের প্রসাধন শিল্পী হওয়ার সুযোগই ছিল না এতদিন৷ এ কাজে একচ্ছত্র আধিপত্য চলে আসছে পুরুষদের৷ ২০১৩ সালে কয়েকজন নারী চলচ্চিত্র কর্মী এ নিয়ম ভেঙে মেয়েদেরও প্রসাধন শিল্পী হতে দেয়ার সুযোগ দাবি করে৷ কিন্তু বলিউড ট্রেড ইউনিয়ন বেঁকে বসে৷ মেয়েদের সুযোগ দিলে অনেক পুরুষ বেকার হবে – এই যুক্তিতে ৫৯ বছর ধরে চলে আসা বৈষম্যমূলক নিয়মটাকেই আঁকড়ে রাখার সিদ্ধান্ত নেয় তারা৷
মেয়েদের রূপ না গুণ, কোনটা আগে ?
গবেষণায় দেখা গেছে, শুধু মডেলদের মতো সুন্দর ফিগার বা মেকআপ নয়, বরং ব্যক্তিত্বই মানুষকে আকর্ষণীয় করে তোলে৷
ছবি: picture-alliance/ ZB
রূপ, না গুণ?
ছেলেরা মুখে বলে যে, তারা কোনো মেয়ের ভেতরের সৌন্দর্য্যটাই চায়৷ তবে আসলে নাকি তারা মেয়েদের শারীরিক সৌন্দর্য্যের দিকেই তাকিয়ে থাকে এবং গুরুত্ব দেয়৷ সঙ্গী খোঁজার ক্ষেত্রেও কি এই কথা প্রযোজ্য?
ছবি: imago/CHROMORANGE
প্রযুক্তির ব্যবহার
আজকের দিনে প্রযুক্তির উন্নয়নের কারণে প্লাস্টিক সার্জারির মাধ্যমে শরীর বা চেহারাকে ইচ্ছেমতো বদলে ফেলা যায়৷ আর ছবিতে স্থূল আকৃতির নারীকে স্লিম করা বা বেশি স্লিম মেয়েকে খানিকটা মোটা করা কোনো ব্যাপারই নয়! তাই ছবি দেখিয়ে কাউকে মুগ্ধ করতে চাইলে ফটোশপের মাধ্যমে চেহারার অনেক ক্রুটি ঢেকে নিজেকে রূপসীভাবে উপস্থাপন করা সম্ভব৷
ছবি: Beautycheck
অন্তরের সৌন্দর্য্যই আসল সৌন্দর্য্য
কথায় বলে ‘অন্তরের সৌন্দর্য্যই আসল সৌন্দর্য্য’৷ কথাটা কতখানি সত্যি? এটা কি একটু পুরনো আমলের কথা বলে মনে হয়? আসলে মোটেও তা নয়৷ অন্তত লন্ডনের ওয়েষ্টমিনস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানী ড. ভিরেন স্বামীর করা গবেষণা তাই বলে৷ অন্তরের সৌন্দর্য্যই আসল, বলেন তিনি৷
ছবি: Fotolia/Paul Schwarzl
ব্যক্তিত্ব নাকি ফিগার, কোনটা আগে?
ড. স্বামীর গবেষণায় প্রায় দুই হাজার পুরুষকে প্রথমে স্থূল, রোগা, স্লিম সব ধরণের নারীর দৈহিক সৌন্দর্য্যের ছবি দেখানো হয়েছিলো৷ এরপর ছবির সঙ্গে তাদের পরিচয়, ব্যক্তিত্ব, চরিত্র ইত্যাদিও জানানো হয়৷ গবেষণায় দেখা গেছে, দ্বিতীয়বার সব পুরুষের মনেই নারী চরিত্রের প্রভাব বেশি পড়েছে অর্থাৎ চেহারার চেয়ে স্বভাব-চরিত্রকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন গবেষণায় অংশ নেয়া পুরুষরা৷
ছবি: FRED DUFOUR/AFP/Getty Images
মতের পরিবর্তন হতে পারে দ্রুত
গবেষণাটি ২০১০ সালে প্রকাশিত হয়েছিল৷ তারপর থেকে এর বিপক্ষে তেমন কোনো তথ্য প্রকাশিত হয়নি৷ তবে অ্যামেরিকার নিউ জার্সির একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানী ড. গ্যারি লেভান্ডভস্কি বলেন, ‘‘একজন নারীকে প্রথমবার খুব সুন্দর লাগলেও পরেরবার তাকে তেমন সুন্দর লাগে না, এমনটাও হতে দেখা যায়৷’’
ছবি: Fotolia/pressmaster
নারীর চেহারা
Gary Lewandowski বলেন ‘‘আমি গবেষণায় দেখেছি, কোন পুরুষের কাছে একজন নারীকে চেহারা পছন্দ হলেও পরের বার সে, নারীর আন্তরিকতা, মন এবং বুদ্ধির দিকে খেয়াল করেছেন৷ প্রথম ওপর এবং পরমুহুর্তেই অন্তরের বা ভেতরের খবর জানতে চান৷ যা দেখে আমি নিজেই বেশ অবাক হয়েছি৷’’
ছবি: Fotolia/Peter Atkins
সুন্দর ব্যবহার
ভাল ব্যবহার, আন্তরিকতা ও ব্যক্তিত্বসম্পন্ন কোনো নারীকে যখন ভালো লেগে যায় তখন তাঁর নাকটা একটু বাঁকা নাকি সে দেখতে একটু মোটা, তা নগণ্য হয়ে যায়৷ প্রথম পরিচয়ে তো আর কেউ শুধু গায়ের রং বা চেহারা দেখে না, ব্যবহারটাও তখন বড় ব্যাপার হয়, যা কিছুটা মেশা বা কথাবার্তা বলে তবেই বোঝা সম্ভব৷
ছবি: Fotolia/GordonGrand
সুন্দর হাসির জয় সর্বত্র
সুইজারল্যান্ডের বার্ন বিশ্ববিদ্যালের মনোবিজ্ঞানী ইয়ানেক লোম্বায়ের বলেন, ‘‘সমীক্ষায় দেখা গেছে, নারীর হাসি মুখের কদর পুরুষদের কাছে অনেক বেশি৷ শতকরা প্রায় ৯০ জন পুরুষই হাসি মুখের পক্ষে৷ এমনও দেখা গেছে, হাসি মুখের নারীটি হয়তো হাসি ছাড়া নারীর চেয়ে কম সুন্দরী তবুও৷ আসলে মানুষ হাসলে অন্যের কাছে সে সহজে গ্রহণযোগ্যতা পায় এবং তাকে কিছুটা নরম ও বন্ধুত্বসুলভ বলে মনে হয়৷’’
ছবি: Fotolia/Syda Productions
মেকআপ-বাড়ির পেন্টিং-এর মতো
নারীদের প্রতি, মনোবিজ্ঞানী ড. গ্যারি লেভান্ডভস্কি-র পরামর্শ – যদি নিজেকে সুন্দর ও আকর্ষণীয় দেখাতে চান তাহলে আপনার ব্যক্তিত্ব, চরিত্র ও সুন্দর ব্যবহারের দিকে মনোযোগ দিন৷ মূল কথা, নিজেকে গ্রহণযোগ্য করতে প্রয়োজন সুন্দর অন্তরের, ওপরের মেকআপ নয়! মেকআপ হচ্ছে অনেকটা বাড়ির পেন্টিং-এর মতো৷
ছবি: picture-alliance/ ZB
9 ছবি1 | 9
দিল্লি সুপ্রিম কোর্ট বলিউডের পুরুষের প্রতি এমন পক্ষপাত মেনে নেয়নি৷ প্রসাধন শিল্পীর কাজে অবিলম্বে মেয়েদের সুযোগ দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে উচ্চ আদালত৷ দিল্লি সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি দীপক মিশ্র বলেছেন, ‘‘এমন বৈষম্য কীভাবে চলতে পারে? আমরা এটা হতে দেবো না৷ ভারতের সংবিধান অনুযায়ী এমন নিয়ম কোথাও চলতে পারে না৷মনে রাখতে হবে, আমরা ২০১৪ সালে দাঁড়িয়ে আছি, ১৯৩৫ সালে নয়৷ এ নিয়ম আর একদিনের জন্যও চলতে পারে না৷''
মুম্বইয়ের মতো কলকাতা, হায়দ্রাবাদ, ব্যাঙ্গালোর, চেন্নাই এবং ভারতের অন্যান্য শহর বা রাজ্যের চলচ্চিত্রেও মেয়েরা হেয়ার স্টাইলিস্ট হতে পারলেও, মেকআপ আর্টিস্ট হতে পারেন না৷ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি দীপক মিশ্র তাই বিষয়টির দিকে আরো আগে নজর না দেয়ায় রাজ্য সরকারগুলোরও সমালোচনা করেছেন৷