মুম্বই শহরে আর যারই বাস হোক, ত্রিশ হাজার ফ্লেমিঙ্গো পাখিও যে বছর বছর এখানে আসে, সেটা কি জানতেন? তাহলে চলুন থানে ক্রিকে, যেখানে প্রকৃতির ভারসাম্য যেমন জটিল, ঠিক ততোটাই ভঙ্গুর৷
বিজ্ঞাপন
মেগাসিটি মুম্বই-তে দু'কোটির বেশি মানুষ থাকেন৷ তাদের অর্ধেকের বেশি থাকেন ঝুগ্গি, অর্থাৎ বস্তিতে৷ আবার মুম্বইতে এ ধরনের অসাধারণ প্রাকৃতিক দৃশ্যও দেখতে পাওয়া যায়, কেননা থানে ক্রিকে প্রতিবছর ত্রিশ হাজারের বেশি ফ্লেমিঙ্গো পাখি আসে উত্তরের গুজরাত রাজ্য থেকে; কিছু পাখি আসে এমনকি মধ্যপ্রাচ্য থেকে৷
খাঁড়ির উত্তর দিকটা গতবছর থেকে সংরক্ষিত এলাকা বলে ঘোষণা করা হয়েছে৷ এখানে ম্যানগ্রোভ অরণ্যের কোনো কমতি নেই৷ শুধুমাত্র নৌকো করে এখানে আসা যায়৷
মেরিন বায়োলজিস্ট এন বাসুদেবন বনবিভাগের হয়ে কাজ করেন৷ মুম্বই-এর ম্যানগ্রোভ অরণ্যের সুরক্ষা তাঁর দায়িত্বে৷ বাসুদেবন বলেন, ‘‘বসন্তে জোয়ার এলে গোটা এলাকাটা নোনাজলে ভরে যায়৷ এ ধরনের পরিস্থিতিতে অন্য গাছ বাড়তে পারে না৷ কিন্তু ম্যানগ্রোভদের খাপ খাইয়ে নেওয়ার বিশেষ ক্ষমতা আছে, যে কারণে তারা সব সত্ত্বেও বাড়তে পারে৷ ম্যানগ্রোভদের সে ক্ষমতা না থাকলে, গোটা জঙ্গলটাই নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতো৷''
ভারতে মুম্বইয়ের পাশেই আছে ম্যানগ্রোভ অরণ্য
03:33
থানে ক্রিকের ম্যানগ্রোভ অরণ্যে নানাধরনের উদ্ভিদ ও প্রাণী থাকে৷ খাদ্যের কোনো অভাব নেই৷ ফ্লেমিঙ্গোরা যে অ্যালজি বা সমুদ্রশৈবাল খায়, তা গজায় খাঁড়ির কাদায়; ভাটা এলে সেগুলো বেরিয়ে পড়ে৷ এছাড়া কাদার মধ্যে অনেক ঝিনুক, শামুক, কাঁকড়া লুকিয়ে থাকে - তাও খায় ফ্লেমিঙ্গোরা৷ বহু মাছ ও কাঁকড়া ম্যানগ্রোভ অরণ্যে ডিম পাড়ে৷
তবে মুম্বই শহরের মাঝখানে এই বায়োটোপ যে একেবারে প্রকৃতির স্বর্গ, এমন নয়৷ শৌচাগার আর নিষ্কাশন পদ্ধতির অভাবে ময়লা জল সরাসরি সাগরে গিয়ে পড়ে, যেমন পড়ে প্লাস্টিক ও অন্যান্য বর্জ্য৷ তার ফলে ম্যানগ্রোভ অরণ্যের শ্বাসমূল বুজে আসে৷ পরিবেশের ক্ষণভঙ্গুর ভারসাম্য ব্যাহত হয়৷ বাসুদেবন জানালেন, ‘‘আমরা সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করছি, তার মধ্যে নগর কর্তৃপক্ষও আছেন৷ কয়েক বছরের মধ্যেই তা কার্যকরী হবে বলে আমার বিশ্বাস৷ একটি বড় সিউয়েজ ট্রিটমেন্ট ফেসিলিটি বসাতে হবে, শুধু এক জায়গায় নয়, বিভিন্ন জায়গায়৷''
ডিম থেকে বাচ্চা বের হওয়ার অবিশ্বাস্য কাহিনি
বৃহৎ পাখি থেকে শুরু করে সরীসৃপ-এদের ডিম থেকে বাচ্চা বের হওয়ার প্রক্রিয়া বিস্ময়কর৷ এমনই কিছু আশ্চর্যকাহিনি তুলে ধরছে ডয়চে ভেলে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/PA Peter Byrne
উট পাখি
পাখিদের মধ্যে সবচেয়ে বড় প্রজাতি অস্ট্রিচ বা উট পাখি, মাটিতে সবচেয়ে দ্রুতগতির পাখিও এটি৷ একটি মেয়ে পাখি কেবল একটি পুরুষ পাখির সঙ্গে মিলিত হয়, তবে একটি পুরুষ পাখি বহুগামী৷ মা পাখিটি আরও অন্তত চার জন মা পাখির সঙ্গে একটি বাসা বানিয়ে সেখানে ডিম পাড়ে৷ প্রত্যেকে সাধারণত ১৫টি করে ডিম পাড়ে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Wittek
কিউই পাখি
নিউজিল্যান্ডেই বেশি দেখা যায় এই ধরণের পাখি৷তাই কিউই পাখির কথা প্রসঙ্গ এলেই চলে আসে নিউজিল্যান্ডের নাম৷ কিউইর ডিম সব পাখির মধ্যেই দেহের অনুপাতে সর্ববৃহৎ৷ তাই তার কদরও বেশি৷ এক একটি ডিমের ওজন প্রায় ৫০০ গ্রাম৷ মা পাখি ডিম পাড়ার আগে দেখে মনে হয় তার শরীরের প্রায় পুরো অংশই যেন ডিম৷ আর ডিম থেকে বাচ্চা বের হওয়ার সাথে সাথেই তারা বেশ স্বাবলম্বী হয়ে ওঠে৷
অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের পেঙ্গুইনদের মতো কষ্টসাধ্য কাজ হয়ত আমাদের বাবা-মা’ও করতে পারবেন না৷ পেঙ্গুইনদের একটি প্রজনন কলোনি আছে৷ নিজের বাসা থেকে সেখানে যেতে তাদের ৫০ থেকে ১২০ কিলোমিটার পথ হাঁটতে হয়৷ প্রতি বছর মাত্র একটি ডিমে তা দিতে পারে মা পেঙ্গুইন৷ তাই ডিম থেকে যখন বাচ্চা বের হয়, সেটা খুবই মূল্যবান মুহূর্ত৷
ছবি: picture-alliance/dpa
হাতি পাখি
পাখি প্রজাতির মধ্যে একসময় সর্ববৃহৎ ছিল এলিফেন্ট বার্ড বা হাতি পাখি, যেটি চার শতক আগে বিলুপ্ত হয়ে গেছে৷ ২০১৫ সালে এর একটি ডিমের খোঁজ পান বিজ্ঞানীরা৷ একটি মুরগীর ডিমের চেয়ে তা প্রায় ২০০ গুণ বড়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
সাপ
মুরগি আগে না ডিম আগে- এ নিয়ে প্রচুর বিবাদ আছে৷ আমরা ভুলে যাই যে সরীসৃপরাও ডিম পাড়ে, যেমন সাপ৷ বেশিরভাগ সাপ ডিম পাড়ার পর ডিম ফোটা পর্যন্ত তাদের জায়গা থেকে নড়ে না, একনাগাড়ে তা দিয়ে যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সামুদ্রিক কচ্ছপ
সম্প্রতি জলবায়ু পরিবর্তন, অবৈধ বাণিজ্য ও পর্যটনের কারণে সমুদ্রের মা কচ্ছপদের ডিম পাড়াটা খুব কঠিন হয়ে গেছে৷ তাই ডিম পাড়ার জন্য দীর্ঘপথ পাড়ি দিয়ে তারা নিরাপদ আশ্রয় বেছে নেয়৷ বালিতে ডিম পাড়ে তারা৷ কিন্তু যদি মানুষ, শব্দ বা অন্য কোনো কারণে বিরক্ত হয়, তাহলে ডিমে তা না দিয়ে তারা সাগরে ঝাঁপিয়ে পড়ে৷
ছবি: Turtle SOS Cabo Verde
ব্যাঙ
প্রথমে ছবিটি দেখলে মনে হতে পারে, ব্যাঙটি বিষন্ন৷ ব্যাপারটা তা না, একটু লক্ষ্য করলেই বোঝা যাবে ডিমের ওপরে বসে আছে ব্যাঙটি৷ প্রাণীজগতে অন্যান্য প্রাণীদের চেয়ে এরা ভিন্ন৷ বাবা ব্যাঙটি যাকে, মিড ওয়াইফ বলা হয়, সে স্থলে মা ব্যাঙটির সঙ্গে মিলিত হয়৷ তারপর এই ডিমগুলোকে বাবা ব্যাঙটি ৩০ দিন পর্যন্ত বহন করে এবং তা দেয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/ L. Webbink
কমোডো ড্রাগন
সরীসৃপদের মধ্যে সর্ববৃহৎ প্রজাতি এরা৷ এদের মিলনে অভিনবত্ব আছে, কেননা, পুরো একটি সন্ধ্যা ব্যাপী পুরুষ ও নারী কমোডো ড্রাগন মিলিত হয়৷ তাদের এই রোমান্টিক মিলনের ফলে ডিম থেকে বাচ্চাও বের হয় খুব সুন্দরভাবে, ধীরে সুস্থে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/PA Peter Byrne
8 ছবি1 | 8
পরিবেশ দূষণ একমাত্র বিপদ নয়৷ গোটা মুম্বই জুড়ে বেআইনি বসতি একটা বড় সমস্যা৷ কোথাও কোথাও নতুন বস্তি তৈরি জন্য ম্যানগ্রোভ অরণ্য কেটে ফেলা হয়েছে৷ এও এক কঠিন বাস্তব৷