বিদেশি সংগঠনগুলোর সঙ্গে ষড়যন্ত্র করাসহ সন্ত্রাসী তৎপরতা চালানোর অভিযোগে মিশরের ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসির বিরুদ্ধে বিচার শুরুর ঘোষণা দেয়া হয়েছে৷ অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাঁকে মৃত্যুদণ্ডও দেয়া হতে পারে৷
বিজ্ঞাপন
মুরসি ফিলিস্তিনি জঙ্গি গোষ্ঠী হামাস এবং লেবাননের হেজবুল্লাহর সঙ্গে জোট গড়ে তুলেছিলেন বলে জানান কৌঁসুলিরা৷ মুরসির সঙ্গে তাঁর দল মুসলিম ব্রাদারহুডের সাবেক নেতা ও সহযোগী মিলিয়ে আরো ৩৬ জনের বিরুদ্ধেও এ ধরনের অভিযোগ আনা হচ্ছে৷
জুলাইয়ে সেনাবাহিনীর হাতে ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর খুন ও সহিংসতা উসকে দেয়ার অভিযোগে মুরসির বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে একটি বিচার শুরু হয়েছে৷ ২০১২ সালের ডিসেম্বরে রাজধানী কায়রোয় প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের সামনে বিক্ষোভ দমন অভিযানে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে মানুষ হতাহতের ঘটনার অভিযোগে গত মাসে মুরসির বিচার শুরু হয়৷ বিচার প্রক্রিয়া মুলতুবি রাখা হয়েছে ৮ জানুয়ারি পর্যন্ত৷
তৎপর মুসলিম সিস্টারহুড
রাজধানী কায়রোতে তীব্র শীতের মধ্যে শুরু হয়েছে বৃষ্টি৷ এরই মধ্যে চলছে বিক্ষোভ৷ এবার মুরসিকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনার দাবিতে বিক্ষোভে নেমেছে মিশরের নারীরা৷ দলের নাম ‘মুসলিম সিস্টারহুড' – যারা মুরসির দল মুসলিম ব্রাদারহুডের নারী সংগঠনের সদস্য৷ এদের বেশিরভাগই শিক্ষার্থী৷
উত্তাল মিশর
মিশরের অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নিলেন আদলি মনসুর৷ এবার দ্রুত নির্বাচনের পালা৷ একটানা বিক্ষোভের পর বুধবার সামরিক বাহিনী নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মহম্মদ মুরসি-কে অপসারণ করে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শপথ নিলেন অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট
আদলি মনসুর এতকাল সাংবিধানিক আদালতের প্রধান ছিলেন৷ আপাতত তাঁর হাতেই ক্ষমতার রাশ চলে এলো৷ শপথ গ্রহণ করে তিনি মুসলিম ব্রাদারহুড-এর প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন৷ প্রেসিডেন্ট মনসুর বলেন, তারাও দেশের অংশ এবং জাতির ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তাদের অংশ নিতে আমন্ত্রণ জানানো হলো৷
ছবি: picture-alliance/AP
নতুন নির্বাচনের ঘোষণা
আগামী নির্বাচন পর্যন্ত দেশ চালাবেন মনসুর৷ সর্বদলীয় এক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শীর্ষে থাকবেন তিনি, যদিও সেই সরকারের রূপরেখা এখনো স্পষ্ট নয়৷ প্রতিরক্ষামন্ত্রী আবদেল ফাতাহ আল সিসি (ছবিতে দেখা যাচ্ছে) এক টেলিভিশন ভাষণে অন্তর্বর্তীকালীন প্রশাসনের পরিকল্পনা তুলে ধরেন৷ নতুন নির্বাচনের দিনক্ষণ এখনো স্থির করা হয় নি৷
ছবি: picture alliance/AA
সামরিক বাহিনীর উপস্থিতি
কায়রোর পরিস্থিতি আপাতত শান্ত৷ এর অন্যতম প্রধান কারণ অবশ্যই ক্ষমতাকেন্দ্রে রদবদলের পর গোটা শহরে সৈন্যদের উপস্থিতি৷ যেমন গিজা এলাকায় এই সাঁজোয়া গাড়িটি দাঁড়িয়ে রয়েছে৷ কাছেই কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়৷
ছবি: Getty Images
দুই পক্ষের সংঘর্ষ
মুরসির অনুগামী ও বিরোধীদের মধ্যে সংঘর্ষে কায়রোর উত্তর শহরতলি, আলেক্সান্ড্রিয়া সহ দেশের কিছু প্রান্তে হতাহতের খবর পাওয়া গেছে৷
ছবি: picture alliance/AA
তাহরির চত্বরে উৎসব
মুরসি ক্ষমতাচ্যুত হবার পর কায়রোর তাহরির চত্বরে লক্ষ লক্ষ মানুষের জমায়েত দেখা যায়৷ সামরিক বাহিনী অবিলম্বে জানিয়ে দিয়েছিল যে এক বেসমারিক তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন করে আগাম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে৷
ছবি: Reuters
আনন্দে আত্মহারা
কয়েক দিন ধরে গণবিক্ষোভের পর মুরসি-বিরোধীরা সামরিক বাহিনীর পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে৷ মুরসির নেতৃত্বে সরকার গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচিত হলেও অনেকেই ক্ষুণ্ণ হয়েছিল৷ তাদের অভিযোগ, মুরসি দেশের মধ্যে চরম বিভাজনের সৃষ্টি করেছিলেন ও মানুষের জীবন দূর্বিসহ করে তুলেছিলেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বেপরোয়া সমর্থক
মুসলিম ব্রাদারহুড-এর সদস্যরা ও প্রেসিডেন্ট মুরসির অন্যান্য সমর্থকরা কায়রোর এক মসজিদে তাদের প্রিয় নেতার ছবি তুলে ধরেছে৷ রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে তখন সামরিক বাহিনীর বক্তব্য প্রচারিত হচ্ছিল৷
ছবি: Reuters
মুসলিম ব্রাদারহুড-এর রোষ
মুরসি নিজে সামরিক বাহিনীর ঘোষণাকে ‘অভ্যুত্থান’ হিসেবে বর্ণনা করেন ও এই পদক্ষেপের নিন্দা করেন৷ তাঁর দলের সদস্যদেরও একই মত৷ চরম ক্ষোভ ও রোষের সঙ্গে তারা প্রেসিডেন্টের অপসারণের প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে৷
ছবি: Reuters
সামরিক বাহিনীর ‘রোডম্যাপ’
‘আরব বসন্ত’-এর সময় সামরিক বাহিনীর ভূমিকা এখনো স্পষ্ট হয় নি৷ এখন তারা মিশরের সমাজকে শক্তিশালী করে তোলার ঘোষণা করেছে৷ তবে এই পরিকল্পনার খুঁটিনাটি এবং সেই প্রক্রিয়ায় মুসলিম ব্রাদারহুড-কে কতটা শামিল করা হবে, সে সব এখনো স্পষ্ট নয়৷
ছবি: Reuters
তরুণ বিপ্লবী
সামরিক বাহিনী যখন বিরোধীদের সঙ্গে সংঘাত মেটানোর জন্য সময়সীমা স্থির করে দিয়েছিল, তখনই তারা বলেছিল, যে ভবিষ্যতে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে তরুণ প্রজন্মকে আরও গুরুত্ব দিতে হবে৷ কারণ তরুণদের উদ্যোগেই এই ‘অসাধারণ বিপ্লব’-এর সূচনা ঘটেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
10 ছবি1 | 10
বুধবার রাতভর বিক্ষোভের সময় পুলিশ তাদের উপর কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে৷ কিন্তু নারী সমর্থকদের পিছু হঠাতে পারেনি তারা৷ এবারই প্রথম দলের নারী সদস্যরা প্রকাশ্যে বিক্ষোভে নামলেন৷
মুসলিম সিস্টারহুড সম্পর্কে অন্যান্য দলগুলোর মত হলো, মুসলিম ব্রাদারহুডকে বাঁচাতে এটি একটি আন্তর্জাতিক কৌশল৷ কেননা নিরাপত্তা কর্মকর্তারা নারীদের সাথে কঠোর আচরণ করবে না বলে মনে করা হয় এবং এর মাধ্যমে বিক্ষোভকেও জিইয়ে রাখা যাবে৷ এমনকি জনগণের সমর্থন আদায়েও সুবিধা হবে৷
এই নারী সংগঠনটি এতোদিন প্রকাশ্যে কাজ না করে পরিবার কেন্দ্রিকভাবে কাজ করেছে এবং এক্ষেত্রে তারা বেশ সংগঠিত ও একনিষ্ঠ৷ কিছু কিছু ক্ষেত্রে অবশ্য বেশ আগ্রাসী৷ মুরসির পতনের পর গত কয়েক মাস আড়ালে থেকেও তারা আন্দোলন চালিয়ে গেছে৷
সৌহিদা আব্দেল রহমান এমনই একজন সদস্য৷ যার বয়স মাত্র ১৩ বছর৷ তিনি বার্তা সংস্থা এপিকে জানিয়েছেন, তারা ধর্ম রক্ষার জন্য এই আন্দোলনে নেমেছেন৷ মুরসির পক্ষে বিক্ষোভের জন্য অক্টোবরে আলেকজান্দ্রিয়া থেকে মা-সহ আটক করা হয়েছিল তাকে৷ তবে বয়সের কারণে তাকে ছেড়ে দেয়া হলেও মা এখনও আটক৷ সৌহিদা এপিকে আরো জানায়, সেনাবাহিনী তাদের মেরুদণ্ড ভেঙে দেয়ার চেষ্টা করছে, কিন্তু তারা আর পিছু হটবে না৷
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র জানান, এই আন্দোলনে নারী এবং শিক্ষার্থীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে৷ বিশেষ করে নারীদের, কেননা প্রকাশ্যে আন্দোলন না করায় তাদের পরিচয় নিরাপত্তারক্ষীদের কাছে অজানা৷ তবে অক্টোবরে আলেকজান্দ্রিয়ায় বিক্ষোভের সময় ২১ নারী আটক হন৷ এদের অনেককেই ১১ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড দিয়েছে আদালত৷ গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই রাজধানী কায়রোর বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করছে মুসলিম সিস্টারহুড এবং দলে আরো নারীদের টানার চেষ্টা করছে তারা৷