মিশরে শুরু হয়েছে জেল থেকে পালানোর অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মুরসির বিচার৷ অন্যদিকে সেনাপ্রধান আব্দেল ফাতাহ আল-সিসিকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হতে বলেছে সে দেশের সামরিক বাহিনী৷
বিজ্ঞাপন
২০১১ সালে গণআন্দোলনের মুখে ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হন স্বৈরশাসক হোসনি মুবারক৷ মুবারক বিরোধী সেই আন্দোলনে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর মতো মুরসির মুসলিম ব্রাদারহুড দলও ছিল সক্রিয়৷ আন্দোলন যখন তুঙ্গে তখনই শুরু হয় গ্রেপ্তার অভিযান৷ মুরসিকেও তখন জেলে ঢোকানো হয়েছিল৷
মিশরের ইতিহাসে প্রথম গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সাবেক প্রেসিডেন্ট মুরসির বিরুদ্ধে অভিযোগ, জেল থেকে তিনি এবং তাঁর দলের নেতা-কর্মীরা তখন পালিয়েছিলেন৷ সেই অভিযোগেই এবার তাঁর বিচার৷ বার্তা সংস্থা এপি জানিয়েছে, গত জুলাইয়ে ক্ষমতাচ্যুত হবার পর থেকে কারাবন্দি মুরসিকে আলেক্সান্দ্রিয়ার বোর্গ আল-আরব কারাগার থেকে হেলিকপ্টারে কায়রোয় নিয়ে আসা হয়েছে৷ মঙ্গলবারই রাজধানী কায়রোর আদালতে তাঁর হাজির হওয়ার কথা৷ আদালতের বিচারকার্য মিশরের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচার করা হবে বলেও সরকারের পক্ষ থেকে বার্তাসংস্থাগুলোকে জানানো হয়েছে৷
মিশরে জটিল পরিস্থিতি
সেনাবাহিনী ক্ষমতাচ্যূত প্রেসিডেন্ট মোহামেদ মুরসি সমর্থকদের হঠিয়ে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে৷ প্রতিবাদ-বিক্ষোভে ইতি টানাই এ ঘোষণার উদ্দেশ্য৷ কিন্তু বিক্ষোভ থামার লক্ষণ নেই৷ মিশরের রাস্তায় বরং মুরসি সমর্থকদের ভীড় বাড়ছে৷
ছবি: Getty Images
উত্তপ্ত কায়রো
রাজধানী কায়রোতে সমবেত হয়েছেন ক্ষমতাচ্যূত প্রেসিডেন্ট মোহামেদ মুরসির হাজার হাজার সমর্থক৷ সেনাবাহিনী তাঁদের হঠানোর অভিযান শুরুর ঘোষণা দেয়ার পরও বিক্ষোভরত মুরসি সমর্থকরা নড়ছেন না৷
ছবি: imago/Xinhua
সমর্থনে নারী এবং শিশু
বিক্ষোভকারীরা তাঁদের স্ত্রী এবং সন্তানদেরও নিয়ে আসছেন সমাবেশে৷ তাঁদেরও রাখা হচ্ছে তাঁবুতে৷ এই প্রবণতা বাড়ছে৷ তাঁবু ভেঙে সবাইকে তাড়ানোর কাজ সেনাবাহিনীর জন্য যতটা সম্ভব কঠিন করে তুলতেই নারী এবং শিশুদেরও নিয়ে আসা হচ্ছে৷ কৌশলটা এখনো কার্যকর৷ ঘোষণা দিলেও এখনো তো অভিযানে নামেনি সেনাবাহিনী৷
ছবি: Getty Images
সুরক্ষিত তাঁবু
রাবা আল-আদুইজা মসজিদের সামনের এই তাঁবুর মতো এখন সবগুলো তাঁবুকেই এভাবে সুরক্ষিত করা হচ্ছে৷ সেনাবাহিনির আক্রমণ থেকে নিজেদের বাঁচাতে বালুর বস্তা, স্টিলের গ্রিলসহ অনেককিছু এনে চারপাশে জড়ো করছেন বিক্ষোভকারীরা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
সেনাবাহিনীর কৌশলী ভাবনা
সোমবার ঘোষণা দিলেও সেনাবাহিনী সম্ভবত এক্ষুনি অভিযানে নামবে না৷ সেনাসূত্র মতে, রাবা আল-আদউইজা মসজিদ এবং নাহদা স্কয়্যারের সামনে বিক্ষোভকারীদের ভীড় একটু কমার পরই অভিযান শুরু করার কথা ভাবছে সেনাবাহিনী৷
ছবি: Getty Images
আগের অবস্থায় ফেরানোর দাবি
বিক্ষোভকারীরা চাইছেন প্রেসিডেন্ট মুরসি, সর্বশেষ সংসদ এবং সংবিধানকে ফিরিয়ে আনতে৷ মুরসিকেই শুধু বৈধ রাষ্ট্রপ্রধান মানেন বলে অন্তর্বর্তিকালীন সরকারের সঙ্গে কোনো আলোচনায় বসতে রাজি নন তাঁরা৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
‘আমার ভোট কোথায় গেল?’
তাঁবুর সামনেই মুরসির ছবি আর প্রতিবাদের ভাষায় লেখা হরেক রকমের ব্যানার৷ সেখানে নানা ধরনের স্লোগান তো আছেই, আরো আছে একটি প্রশ্ন – ‘আমার ভোট কোথায় গেল?’ মিশরের প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মুরসি৷ তবে নির্বাচিত হবার ৬ মাসের মধ্যই তাঁর বিরুদ্ধেও শুরু হয়েছিল এমন বিক্ষোভ-প্রতিবাদ৷
ছবি: Reuters
মসজিদে প্রেস সেন্টার
বিক্ষোভ সমাবেশের অস্থায়ী তাঁবুতে বসবাস করছেন কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী৷ সেখানে রয়েছে একটি বেকারি৷ মসজিদের ভেতরে আছে প্রেস সেন্টার৷ বড় বড় ইসলামী নেতারাও সেখানে কাজ করছেন৷
ছবি: Getty Images
ব্যর্থ প্রয়াস
মুরসির অপসারণের পর অন্তর্বর্তিকালীন সরকারের প্রেসিডেন্ট করা হয়েছে আদলি মনসুরকে৷ যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যস্থতায় সমঝোতার একটা চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে কয়েকদিন আগে৷ আদলি মনসুর মনে করেন, এজন্য শুধু মুসলিম ব্রাদারহুড দায়ী, কারণ, তারা আলোচনাতেই আসেনি৷
ছবি: Khaled Desouki/AFP/Getty Images
ঝড়ের পূর্বাভাষ?
কোনো পক্ষই নিজেদের অবস্থান থেকে নড়ছে না৷ তাই সংঘাত আবার অনিবার্য হয়ে পড়ছে৷ এখন শান্ত, কিন্তু সেনাবাহিনী মাঠে নামলে মিশরের পরিস্থিতি বদলাতে কতক্ষণ!
ছবি: Getty Images
9 ছবি1 | 9
মুবারকের পতনের পর ২০১২ সালের নির্বাচনে জিতে মিশরে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখার প্রত্যাশা জাগালেও প্রেসিডেন্ট হবার কিছুদিনের মধ্যেই বিরোধী দলগুলোর আস্থা হারান মুরসি৷ তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষমতা কুক্ষিগত করার পাঁয়তারা করার অভিযোগ তোলা হয়৷ শুরু হয় বিক্ষোভ আন্দোলন৷ ২০১৩ সালের জুলাই মাসে মুসলিম ব্রাদারহুড সরকারের এক বছর পূর্তির পরপরই মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করে সেনাবাহিনী৷
এদিকে মুরসির অপসারণে প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখা সেনাপ্রধান আব্দেল ফাতাহ আল-সিসিকে প্রেসিডেন্টের পদে দেখতে চেয়েছে মিশরের সেনাবাহিনী৷ এক বিবৃতিতে দ্য সুপ্রিম কাউন্সিল অফ আর্মড ফোর্সেস জানিয়েছে, সিসির প্রতি জনগণের আস্থা রয়েছে এবং সেই আস্থার প্রতি সম্মান দেখিয়ে সিসির উচিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া৷ এই বিবৃতির জন্য সেনাসদরকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন সিসি৷ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী হতে হলে সেনা প্রধানের পদ ছাড়তে হবে তাঁকে৷ আর তিনি নির্বাচিত হলে মিশর আবার ফিরে যাবে গণতন্ত্রের আবরণে ঢাকা সেনা শাসনের সুদীর্ঘ ইতিহাসে৷