মোহাম্মদ মুরসিকে ২০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে মিশরের আদালত৷ এর মাধ্যমে কি মুরসির রাজনৈতিক জীবনের অবসান হলো? এ প্রশ্নের চেয়েও এখন অবশ্য সে দেশে গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কাটাই বড় হয়ে উঠেছে৷
বিজ্ঞাপন
ইতিমধ্যে এমন শঙ্কা প্রকাশ করেছে তুরস্ক৷ এর আগে মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল মুরসির বিরুদ্ধে একতরফা বিচারের সমালোচনা করে৷ যুক্তরাষ্ট্রও এ বিষয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে৷ দেশটি জানিয়েছে, মিশরের সঙ্গে তাদের কূটনৈতিক সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে তারা চিন্তিত৷ মঙ্গলবার গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত মিশরের প্রথম প্রেসিডেন্ট মুরসিকে সে দেশের আদালত হত্যা মামলায় ২০ বছরের কারাদণ্ড দেয়ার পর থেকেই এসব প্রতিক্রিয়া আসছে৷
মিশরে রাজনৈতিক সংকট, অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতি
হোসনি মুবারক বিরোধী আন্দোলন শুরুর পর থেকে কম সময়ই শান্তির সুবাতাস বয়েছে মিশরে৷ মুরসিকে হঠানোর আন্দোলন শুরুর পর থেকে বিক্ষোভের আগুন নেভেইনি৷ রাজনৈতিক অস্থিরতায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের অর্থনীতি৷ এ নিয়েই আজকের ছবিঘর৷
ছবি: imago/Ralph Peters
ধুঁকছে পর্যটন
সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হচ্ছে পর্যটন শিল্পের৷ দেশের জিডিপিতে ছয় ভাগের এক ভাগ অবদান রাখে পর্যটনশিল্প৷ বৈদেশিক মুদ্রা আসে প্রচুর৷ কিন্তু প্রায় দু’বছর ধরে দেশটিতে রাজনৈতিক অস্থিরতা চলতে থাকায় পর্যটকরা মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন৷ বেশ কিছু ট্র্যাভেল এজেন্সি সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মিশরে তাদের কাজ বন্ধ রেখেছে৷ জার্মানির পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিডো ভেস্টারভেলে মিশরে যাওয়ার ব্যাপারে জার্মান নাগরিকদের সতর্ক করে দিয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
কৃষিখাতে বিপর্যয়
মিশর থেকে তেল, পোশাক এবং কৃষিপণ্য আমদানি করে যুক্তরাষ্ট্র৷ এসব খাতে বেশ কিছু চুক্তি স্বাক্ষর করেছে দুই দেশ৷ কিন্তু রাজনীতির মাঠে অস্থিরতা, সহিংসতা কালো থাবা ফেলেছে খাদ্য এবং কৃষিখাতে৷ রপ্তানি করা দূরের কথা, এ বছর উল্টে কৃষিপণ্য আমদানিও করতে হতে পারে মিশরকে৷
ছবি: Mohammed Hossam/Afp/Getty Images
সুয়েজ নিয়ে মাথাব্যথা
সুয়েজ খালের মাধ্যমে বিশ্বের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তেল সরবরাহের রুট নিয়ন্ত্রণ করে মিশর৷ সুয়েজ খালে সেনাপ্রহরা রয়েছে৷ তারপরও ক্ষতি রোধ করা যাচ্ছে না৷ তেলের দাম বাড়ছে হু হু করে৷ এ মুহূর্তে দাম গত পাঁচ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি৷
ছবি: imago/CHROMORANGE
বন্দরগুলোও সংকটে
কায়রো থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে পূর্ব পোর্ট সাঈদ৷ মিশরের খুব গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য বন্দর৷ দেশের প্রায় সবগুলো বন্দরেই চলছে বিশৃঙ্খলা, উত্তেজনা৷ পণ্য পরিবহন অসম্ভব হয়ে পড়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
শিল্প এবং খনন শিল্প
এই দুটি শিল্পের অবস্থাও খুব খারাপ৷ এই দুটো খাত থেকেও আয় কমছে৷ মিশরের জনসংখ্যা ৮ কোটি ৪০ লাখ, যা কিনা জার্মানির চেয়েও বেশি৷ কিন্তু ২০১২ সালে দেশটির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ছিল জার্মানির দশ ভাগের এক ভাগের মতো৷ পার্থক্যটা এখন যে আরো বাড়ছে তাতে আর সন্দেহ কী!
ছবি: Khaled Desouki/Afp/Getty Images
রেল যোগাযোগ বিপর্যস্ত
২০১১ সাল থেকেই চলছে রাজনৈতিক সংকট৷ নানা জায়গায় রেল লাইন উপড়ানো হয়েছে বহুবার৷ সংকট শুরুর পর থেকে পাঁচ শতাংশেরও কম পণ্য পরিবহন হয়েছে রেলপথে৷ কায়রো থেকে আলেক্সান্দ্রিয়া এবং সুয়েজ খালের কাছের রেল পথ বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের৷ অথচ রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না৷
ছবি: imago/Arnulf Hettrich
বেহাল সড়কপথ
৪৫ হাজার কিলোমিটারেরও বেশি দীর্ঘ সড়কপথ রয়েছে মিশরে৷ কিন্তু সংকট শুরুর আগে থেকেই দেশের অর্ধেকেরও বেশি সড়কপথের জরা-জীর্ণ অবস্থা৷ জরুরি ভিত্তিতে মেরামত করা দরকার৷ কিন্তু বিক্ষোভ আন্দোলন সে কাজ শুরুই করতে দিচ্ছে না৷ নতুন মোটরপথ তৈরির পরিকল্পনাও ফাইলবন্দি৷
ছবি: Fayez Nureldine/Afp/Getty Images
বিদেশি কোম্পানির পিছটান
কায়রোতে বেশ ভালো ব্যবসা করছিল জার্মানির চেইন শপ ‘মেট্রো’৷ সম্প্রতি মিশরে ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছে তারা৷ মিশরের তৃতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার জার্মানির আরো তিনটি বড় বাণিজ্যিক সংস্থা সরে এসেছে সে দেশ থেকে৷ বিএএসফ, থাইসেনক্রুপ আর হেঙ্কেল নিজেদের কর্মীদের ফিরিয়ে নিতে শুরু করেছে মিশর থেকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিমান চলাচলে বিলম্ব
বিমানে দেরিতে যাত্রা শুরুর ব্যাপারটি নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে মিশরে৷ সময় মতো যাত্রা শুরু করতে চার ঘণ্টা আগে গিয়ে বিমানবন্দরে হাজির হতে হচ্ছৈ যাত্রীদের৷ এত কঠোর নিরাপত্তা তল্লাসি চলছে যে তার জন্য বাড়তি সময় দিতে হচ্ছে সবাইকেই৷ জার্মানির লুফৎথানসা এয়ারওয়েজ অবশ্য এখনো কায়রোতে যাওয়া-আসা করছে৷ তবে অনেক দেশের বিমান মিশরে যাওয়াকে ঝুঁকিপূর্ণ এবং অলাভজনক হয়ে পড়ায় ফ্লাইট বাতিল করতে শুরু করেছে৷
ছবি: imago/Ralph Peters
9 ছবি1 | 9
২০১২ সালের ডিসেম্বরে তিনজনকে হত্যায় ইন্ধন জোগানোর অভিযোগে আদালত মুরসি ও আরো ১৪ জনকে ২০ বছরের কারাদণ্ড দেয়৷ ঘটনার সময় মুরসিই ছিলেন মিশরের প্রেসিডেন্ট৷ ক্ষমতায় আরোহনের কয়েক মাসের মধ্যেই তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে দানা বাঁধা বিক্ষোভ তখন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে৷ ২০১২ সালের ৫ ডিসেম্বর কায়রোর প্রেসিডেন্ট প্রাসাদের সামনে নিরাপত্তা রক্ষীদের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের ব্যাপক সংঘর্ষ হয়৷ সংঘর্ষে তিনজন মারা যায়৷ সেই তিন ব্যক্তির মৃত্যুর জন্যই কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে মুরসিকে৷
মোহাম্মদ মুরসি অবশ্য দু বছর ধরে মুক্ত জীবন যাপনের অধিকার থেকে বঞ্চিত৷ ২০১৩ সালে তাঁকে আটক করে মিশরের সামরিক বাহিনীর প্রধান ফাতাহ আল সিসি৷ তারপর মুরসির দল মুসলিম ব্রাদারহুডকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন' হিসেবে ঘোষণা করে সিসির সরকার৷