বেড়াতে গিয়ে ছোট্ট তাঁবুর মধ্যে সময় কাটাতে অনেকের ভালো লাগে৷ কিন্তু ছোট্ট পোর্টেবল বাড়িতে পাকাপাকি থাকতে কেমন লাগবে? অথবা জেমস বন্ডের ছবিতে দেখা ছোট্ট উভচর গাড়ি চালাতে? এমন প্রবণতা কিন্তু বাড়ছে৷
বিজ্ঞাপন
আকার ও গুণাগুণ এক রেখে আয়তন কমিয়ে আনাই ‘টাইনি হাউস' ধারণার মূলমন্ত্র৷ ছোট আকারের এই মিনি-বাড়ি প্রায় যে কোনো জায়গায় বসানো চলে – এমনকি জলের উপরেও৷
অস্ট্রিয়ার স্টাইয়ারমার্ক অঞ্চলে শোভা পাচ্ছে এমনই এক বাড়ি৷ গ্রাৎস শহর ছেড়ে সপ্তাহান্তে মজবুত কাঠের তৈরি এই বাড়িতে চলে আসেন স্থপতি মার্টিনা ফাব্রিৎসিউস ও পরিবেশ প্রযুক্তিবিদ পেটার নিস৷ ২২ বর্গ মিটারের মধ্যেই বসার ও শোবার ঘর৷ রয়েছে ছোট্ট রান্নার জায়গা ও বাথরুম৷ এই দম্পতি জেনেশুনেই এমন ছোট বাড়িতে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন৷ পেটার নিস বলেন, ‘‘গোছগাছ করা, ঘর সাজানোর মতো বিষয়ের বদলে মূল বিষয়ের প্রতি নজর দেওয়াই আসল কথা৷'' মার্টিনা ফাব্রিৎসিউস মনে করেন, ‘‘কাজ কম, হাঁটাহাঁটিও কম করতে হয়, দ্রুত বাইরে যাওয়া যায়, পরিষ্কারও কম করতে হয়৷''
জার্মানির দশটি উদ্ভুটে হোটেল
দেখতে হয়ত জেল কিংবা রাস্তায় বসানোর জলের পাইপ অথবা অতিকায় কাঠের পিপের মতো৷ অথচ এরা সবাই এক-একটি সুপরিচিত হোটেল...
ছবি: Propeller Island
হোটেলের প্রত্যেকটি ঘর যেন শিল্পকলা
কোনো ঘরে শয্যা বলতে একটি কফিন৷ কোনো ঘরে আসবাবপত্র ঝুলছে ছাদ থেকে৷একটি ঘরের চতুর্দিকে আয়না লাগানো – একেবারে শিশমহল! বার্লিনের এই হোটেলটির নাম ‘প্রপেলার আইল্যান্ড’৷ এর ডিজাইন করেছেন শিল্পী লার্স স্ট্রশেন৷ এমনকি তিনি প্রতিটি ঘরের জন্য আলাদা মিউজিক কমপোজ করতেও ভোলেননি...৷
ছবি: Propeller Island
রেলগাড়ি ঝমাঝম
বার্লিন থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে ইয়্যুটারবোগ৷ সেখানে অতিথিরা ট্রান্স-সাইবেরিয়ান রেলওয়ের আস্বাদ পেতে পারেন৷ স্লিপার কোচ হোটেলটিতে ২৫ জন অতিথির থাকার জায়গা আছে৷ প্রত্যেক কম্পার্টমেন্টে একটি করে ডাবল বেড, সেই সঙ্গে বসার জায়গা ও একটি বাথরুম৷
ছবি: Schlafwagenhotel
বাক্সের মধ্যে ঘুমনো
জার্মানির পূর্বাঞ্চলে কেমনিৎস-এর কাছে লুনৎসেনাউ শহরের ‘কফটেল’ বা বাক্সো হোটেলটিকে বিশ্বের খুদেতম হোটেল বললেও সম্ভবত দোষ হবে না৷ ২০০৪ সালে সৃষ্ট হোটেলটির প্রতিটি ঘর একটি সুটকেসের আকারে৷ ঘর বলতে দেড় মিটার চওড়া, তিন মিটার লম্বা আর দু’মিটার উঁচু৷ বিছানা নিজেকেই নিয়ে আসতে হয়৷ রাত কাটানোর খরচ: ১৫ ইউরো৷ বছরে শ’পাঁচেক অতিথি এই বাক্সো হোটেলে রাত কাটান৷
ছবি: Zum Prellbock
হবিটরা যেখানে থাকে
টলকিয়েন-এর ‘লর্ড অফ দ্য রিংস’-এর কল্যাণে হবিটদের আর কে না চেনে? তবে হবিটদের ওয়াইল্ডারল্যান্ড দেখার জন্য নিউজিল্যান্ডের ফিল্মসেটে যেতে হবে না৷ হবিটরা যেভাবে বাস করত, জার্মানির টুরিঙ্গিয়া প্রদেশের জঙ্গলেও তা করা সম্ভব – এই হোটেলটির কল্যাণে৷
ছবি: Feriendorf Auenland
‘ড্যান্সেস উইথ উল্ভস’
সন্ধ্যা নামছে, আঁধার ঘনাচ্ছে, কোথাও কোনো মানুষের সাড়া নেই৷ এই হলো উত্তর জার্মানির ব্রেমেন শহরের কাছে ‘ট্রি ইন’ বা বৃক্ষ হোটেলের পরিবেশ৷ ড্যোরফার্ডেন-এ বাচ্চা নেকড়েদের রাখার জন্য যে ‘এনক্লোজার’ আছে, তার ঠিক মাঝখানে এই ট্রিহাউস হোটেল৷ পাঁচ মিটার উঁচুতে কাচে ঘেরা কামরা থেকে পরম আরামে নেকড়ে দেখা যায় – কেননা এখানে মিনি-বার থেকে হুইর্লপুল, কোনো আধুনিক বিলাসিতার অভাব নেই৷
ছবি: Tree Inn
জলের পাইপে বাস
জার্মানির রুর শিল্পাঞ্চলের বট্রপ শহরের পার্ক হোটেল-এ রাস্তায় বসানোর জলের পাইপগুলোকে কামরায় পরিণত করা হয়েছে৷ রাত কাটানোর কোনো বাঁধা ভাড়া নেই, যে যা পারেন, তা-ই দেন৷ জলের পাইপগুলোর ব্যাস প্রায় আড়াই মিটার; এক একটা সেকশনের ওজন সাড়ে ১১ টন৷ ভিতরে বিছানা আর একটা সাইড টেবল ঠিকই ধরে যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Weihrauch
লৌহকপাট
আগে এখানে জেলের আসামিরা বন্দি থাকতেন৷ আজ সেখানে ক্রাইম থ্রিলার-এর ফ্যানরা রাত কাটান৷ জার্মানির কাইজার্সলাউটার্ন শহরের আল্কাত্রাজ হোটেলে মোট ৫৬টি কামরা ও সুইট আছে৷ আজও এখানে সর্বত্র গারদ ও লোহার শিক – এমনকি হোটেলের পানশালাটিতেও৷ তবে অতিথিরা মর্জিমতো আসতে-যেতে পারেন৷
ছবি: alcatraz
মদের পিপেতে শয্যা
এককালে যেখানে ওয়াইন মজুদ রাখা হতো, সেখানে আজ রাত কাটানো যায়৷ রাইন নদের ধারে রুডেসহাইম শহরের লিন্ডেনভির্ট হোটেলটিতে ছ’টি অতিকায় কাঠের পিপে আছে৷ পিপেগুলোয় মোট ছ’হাজার লিটার সুরা ধরতো৷ আজ তার বদলে দু’জন অতিথির শোয়ার ব্যবস্থা রয়েছে৷ তবে বসবার ঘরটা পিপের বাইরে৷
ছবি: Lindenwirt
মধ্যযুগের নাইটদের মতো
দক্ষিণ জার্মানির লেক কন্সটান্স-এর কাছে আর্টুস হোটেলে ঢুকলে মনে হবে, যেন মধ্যযুগে প্রবেশ করেছেন৷ কামরাগুলো যেন মধ্যযুগের কোনো সরাইখানার অনুকরণে সাজানো, খাবারদাবার নাইটদের আমলের ভুরিভোজ...৷
ছবি: Hotel Arthus
শীতকাতুরেদের জন্য নয়
নাম ইগলু লজ৷ ইগলু বলতে উত্তরমেরু অঞ্চলের এস্কিমোদের বরফের ঘর৷ ওবার্স্টডর্ফ-এ নেবেলহর্ন পাহাড়ের উপর এই বরফের হোটেলটি ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল মাস অবধি খোলা থাকে৷ ৪০ জন অতিথি এখানে দু’জন কিংবা চারজনের ইগলুতে রাত কাটাতে পারেন৷ সেই সঙ্গে রয়েছে – ভোর হলে – দু’হাজার মিটার উচ্চতা থেকে আল্পস পর্বতমালার অনুপম দৃশ্য৷
ছবি: IgluLodge
10 ছবি1 | 10
‘দ্য নিউ নোম্যাডস' নামের ছবির বইয়ে তাঁদের বাড়িটিও বিষয় হিসেবে স্থান পেয়েছে৷ ‘মিনিয়েচার হাউস' সম্পর্কে তাতে প্রাথমিক ধারণা পাওয়া যায়৷ প্রকাশক স্ভেন এমান গোটা বিশ্ব থেকে এমন দৃষ্টান্ত সংগ্রহ করেছেন৷ যেমন ছোট্ট এক টাওয়ার-বাড়ি, ডিমের মতো দেখতে ক্যাপসুল-বাড়ি, গাছের উপর বাড়ি অথবা এক ডিজাইনার যাযাবর তাঁবু৷ অভাবের তাড়নায় নয়, ঠান্ডা মাথায় এমন ছোট থাকার জায়গা তৈরির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷ স্ভেন এমান বলেন, ‘‘আমরা আসলে অতিরিক্ত সমৃদ্ধির যুগে বসবাস করছি৷ সব কিছুই মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে রয়েছে৷ ফলে তখন বিপরীত প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে৷ ছোট জায়গায় নিজেকে আবদ্ধ করলে দারুণ মুক্তির স্বাদ আসে৷''
এই সব খুদে বাড়ি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ‘পোর্টেবল' হয়৷ অস্ট্রিয়ার এই বাড়িটি আসলে স্পেনে তৈরি, ট্রাকে করে সেটিকে আনা হয়েছে৷ যে কোনো সময় সেটিকে সহজেই স্থানান্তরিত করা যায়৷ ফলে বাড়ির মালিকের পিছুটানের কারণ নেই৷ মার্টিনা ফাব্রিৎসিউস বলেন, ‘‘ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তার কারণে আমাদের জন্য এটা জরুরি ছিল৷ জানি না, দুই, তিন বা পাঁচ বছর পর আমরা কোথায় থাকবো৷ যে কোনো সময়ে বাড়িটিকে সঙ্গে নিয়ে যাবার উপায় রয়েছে৷
স্ভেন এমান এই সব ‘মোবাইল' মানুষদের ‘নতুন যাযাবর' আখ্যা দিয়েছেন৷ তাঁর ধারণা, কাজের জগতে আমূল পরিবর্তন আসছে৷ চাকুরিসূত্রে মানুষ জায়গা বদল করবে এবং নিজেদের বাড়ি সঙ্গে নিয়ে যাবে৷ নামকরা স্থপতিরা এখন থেকেই এই পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন৷ ইটালির রেনজো পিয়ানো ‘ডিয়োগেনে' নামের মাইক্রো-হাউস ডিজাইন করেছেন৷ জার্মানির ভ্যারনার আইসলিঙার ‘লফট কিউব' তৈরি করেছেন৷ স্ভেন এমান বলেন, ‘‘আমার ধারণা, কিছুটা অস্থিরতা মানুষের মৌলিক চরিত্রের অংশ৷ তাই পাকাপাকি বাসা গড়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবার প্রয়োজন নেই৷ জীবনের অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রের মতো এটিও সাময়িক হতে পারে৷''
বুদ্ধির গুণে স্বল্প জায়গাতেও বসবাস সম্ভব
থাকার জন্য জায়গা খুব কম হলেও মানুষ কিন্তু বুদ্ধি খাটিয়ে তার সমাধান করতে পারে৷ আর তারই কিছু নমুনা পাওয়া যাবে এই ছবিঘরে৷
ছবি: Alexandra
নির্ঘুম রাত
বিশ্বে প্রায় সব বড় শহরগুলোতেই বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ তাই আর উপায় না দেখে ছোট ছোট ঘরকে সৃজনশীলভাবে কাজে লাগিয়ে থাকার উপযোগী করে তুলছেন কেউ কেউ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নেকড়ে বন্ধু
জাপানের দক্ষিণে তানেগাশিমা দ্বীপে মিনসইয়ুকু সাইরিয়ুকিয়োর একটি গেস্টহাউজ রয়েছে, যেখানে তিনি থাকেন এবং কাজ করে৷ নিজের যন্ত্রপাতিগুলো দেয়ালেই ঝুলিয়ে রাখেন তিনি৷ তাঁর সবচেয়ে প্রিয় জিনিস কাপড়ের তৈরি নেকড়েটি, যা তিনি স্থানীয় বিনোদন পার্কের পরিচালকের কাছ থেকে উপহার হিসেবে পেয়েছিলেন৷
ছবি: Minsyuku Seiryukyo
কাপড় ধোয়া হয়
বাড়ি ভাড়া বেড়ে যাওয়ায় জীবনযাপন এবং বাড়ি পাওয়া কঠিন হয়ে গেছে আমস্ট্রারডামবাসীদেরও৷ বাধ্য হয়ে রান্না ঘরেই তাঁদের রাখতে হচ্ছে কাপড় ধোয়ার ছোট্ট মেশিন৷
ছবি: clouds
ক্যারাভানে জীবনযাপন
বার্লিনে বাড়ি ভাড়া কম বলেই মানুষ জানতো৷ তবে গত পাঁচ বছরে সেটাও শতকরা ৪০ ভাগ বেড়েছে৷ বিনামূল্যে বাসস্থানের প্রতিযোগিতা সেখানে এতটাই বেড়ে গেছে যে, অনেকে ক্যারাভানে জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন৷
ছবি: DW/M. Jones
বরফে কাপড় শুকানো হয়
অনেকের পরিবারেই কাপড় শুকানো হয় বাইরে দড়িতে ঝুলিয়ে৷ অর্থাৎ শীত-গ্রীষ্ম সারা বছরই কাপড় শুকানো হয় ঘরের বাইরে৷ এমনকি বাইরেটা যখন তুষারে ঢাকা থাকে তখনও এর ব্যাতিক্রম হয় না৷ কেমন করেই বা হবে? বাড়িতে তিলমাত্র জায়গা নেই যে!
ছবি: Alexandra
5 ছবি1 | 5
এই আইডিয়া ক্যারাভ্যান-নির্মাতাদেরও উৎসাহ যোগাচ্ছে৷ কমপক্ষে বেড়ানোর সময় যাযাবরের মতো জীবনের আকর্ষণ যে বাড়ছে, সিল্যান্ডার-এর মতো মিনিয়েচার মডেলই তার প্রমাণ৷ এই মিনি ক্যারাভ্যান মাত্র ৪ মিটার লম্বা হওয়া সত্ত্বেও তার মধ্যে চারজনের জন্য যথেষ্ট জায়গা রয়েছে৷ সিল্যান্ডার কোম্পানির প্রধান আন্দ্রেয়ার ক্নর বলেন, ‘‘এর মাধ্যমে কিছুটা স্বাধীনতা উপভোগ করা যায়৷ ডিজাইনের প্রতি আকর্ষণ থাকলে বিশেষ এক ডিজাইনের মাধ্যমে নিজস্ব আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করা যায়৷ স্বতঃস্ফূর্ত ও নমনীয় হওয়া যায়৷''
জলে নামলে তবেই সিল্যান্ডার-এর পূর্ণ সম্ভাবনা টের পাওয়া যায়৷ ছোট্ট ক্যারভান তখন মোটরবোট হয়ে ওঠে৷ ইলেকট্রিক ইঞ্জিনের শক্তি ৬ পিএস৷ বেশিরভাগ দেশে এর জন্য নৌকা চালানোর লাইসেন্সও লাগে না৷ শিল্পক্ষেত্রে এক ডিজাইনার তাঁর মাস্টার থিসিসের জন্য এমন ভাসমান ক্যারাভ্যানের আইডিয়া তুলে ধরেন৷ আর এখন বড় আকারে এমন উভচর তৈরি হচ্ছে৷