লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর প্রতিবাদে শাহবাগে আন্দোলনে অংশ নেয়া আটক সাতজনের বিরুদ্ধে পুলিশ সদস্যদের ‘হত্যাচেষ্টার’ অভিযোগে আনা হয়েছে৷ শুক্রবার মধ্যরাতে শাহবাগ থানায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ৷
বিজ্ঞাপন
এরমধ্যে গতকাল শাহবাগ থেকে আটক সাতজনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে৷ ডয়চে ভেলের বাংলাদেশ কনটেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম শাহবাগ থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মাহবুব আলমকে উদ্ধৃত করে এই তথ্য জানিয়েছে৷ সংবাদমাধ্যমটিকে তিনি বলেন, ‘‘গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে পুলিশকে হত্যার চেষ্টা, রক্তাক্ত জখম করা এবং সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে৷ এই ঘটনায় আর কারা জড়িত, সে বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে৷’’ এজাহারে বলা হয়েছে, ঘটনার সময় সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়৷
বুধবার কাশিমপুর কারাগারে বন্দি অবস্থায় মারা যান লেখক মুশতাক আহমেদ৷ ছয় মাসের বেশি সময় আগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় গ্রেপ্তার হন তিনি৷ এরপর কয়েক দফা তার জামিন আবেদন নাকচ হয়েছে আদালতে৷ মুশতাকের মৃত্যুর প্রতিবাদে শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বিক্ষোভ করেছে বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা৷
সন্ধ্যায় বামপন্থি ছাত্রসংগঠনগুলোর মিছিলে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ বাধে৷ এ সময় পুলিশের লাঠিপেটায় ৩০ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা৷ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতেও পুলিশ সদস্যদের আন্দোলনকারীদেরকে বেধড়ক পেটাতে দেখা যায়৷ বার্তা সংস্থা এএফপি বলছে তাদের প্রতিবেদক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মশাল মিছিলে অংশ নেয়াদের উপর পুলিশকে লাঠপেটা ও টিয়ার গ্যাস ছুঁড়তে দেখেছেন৷
তবে পুলিশ উল্টো দাবি করেছে, আন্দোলনকারীদের ‘হামলায়’ তাদের ১৫ সদস্য আহত হয়েছেন৷
মামলার বরাত দিয়ে শাহবাগ থানার পরিদর্শক মাহবুব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ‘‘অনুমতি ছাড়া এক থেকে দেড়শ জন মশাল নিয়ে বিক্ষোভ করার সময় তাদের আশপাশের হাসপাতালগুলোর কথা মনে করিয়ে দেওয়া হয়৷ কিন্তু তারা না শুনে পুলিশের উপর উল্টো হামলা চালায়৷’’ তিনি দাবি করেন মশালের আগুনে একজন কনস্টেবলের শরীরে আগুন ধরে যায় এবং পুলিশের অন্তত ১৫ জন সদস্য আহত হয়েছেন৷
এদিকে মুশতাকের মৃত্যুর প্রতিবাদের শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় প্রেসক্লাবে প্রতিবাদ সমাবেশ হয়েছে৷ আন্দোলনকারীরা মুশতাকের মৃত্যুকে ‘জেল হত্যা’ হিসেবে অভিহিত করেন৷ বার্তা সংস্থা এএফপিকে প্রতিবাদে অংশ নেয়া মনীষা চক্রবর্তী বলেন, ‘‘মুশতাকের মৃত্যু স্বাভাবিক নয়৷ এটাকে আমরা হত্যাকাণ্ডই বলব৷’’
এদিকে, মুশতাকের মৃত্যুর ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্র, ক্যানাডা, জার্মানি, ফ্রান্সসহ উন্নত দেশগুলোর জোট-ওইসিডি এর ১৩ জন রাষ্ট্রদূত৷ তারা এই ঘটনার দ্রুত, স্বচ্ছ ও স্বাধীন তদন্তের আহবান জানিয়েছেন৷ নিউইয়র্ক ভিত্তিক কমিটি টু প্রটেস্ট জার্নালিস্ট-সিপিজে এবং পেন আমেরিকাও একই আহবান জানিয়েছে৷
এফএস/এআই (এএফপি, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)
যেসব অভিযোগে ডিজিটাল আইনে মামলা
করোনা মহামারি শুরুর পর বাংলাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার সংখ্যা বেড়ে গেছে৷ কী অভিযোগে এসব মামলা হচ্ছে, জানুন ছবিঘরে৷
ছবি: facebook.com/michelkumirthakur
মুশতাক আহমেদ
বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ, করোনা ভাইরাস নিয়ে গুজব, রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতে অপপ্রচার চালানোর অভিযোগে ২০২০ এর ৫ মে ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা করে র্যাব-৩৷ তাদের একজন মুশতাক আহমেদ৷ এজাহারে বলা হয়েছে, ‘‘তিনি ‘আই এম বাংলাদেশি’ পেজের এডিটর৷ তিনিও গুজব ছড়িয়েছেন৷ এছাড়া হোয়াটসঅ্যাপ ও ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক চ্যাটিংয়ের প্রমাণ পাওয়া গেছে৷’’ ২৫ ফেব্রুয়ারি কারাগারে তার মৃত্যু হয়৷
ছবি: facebook.com/IamBangladeshi.71
কার্টুনিস্ট আহমেদ কবীর কিশোর
ব়্যাবের মামলার গ্রেপ্তার হওয়া চারজনের একজন কিশোর৷ তার ফেসবুক পাতায় রাষ্ট্রবিরোধী পোস্ট, করোনা, সরকারদলীয় বিভিন্ন নেতার কার্টুন দিয়ে গুজব ছড়িয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টির প্রমাণ পাওয়া গেছে বলে এজাহারে বলা হয়৷ এছাড়া তার ব্যবহৃত ফোনে তাসনিম খলিল, শায়ের জুলকারনাইন, শাহেদ আলম ও আসিফ মহিউদ্দিনের সঙ্গে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক চ্যাটিংয়ের প্রমাণ পাওয়া গেছে বলেও জানানো হয়৷ ৪ মার্চ তিনি জামিনে মুক্তি পান৷
ছবি: facebook.com/AKK30M
দিদারুল ভূঁইয়া
ব়্যাবের মামলায় গ্রেপ্তার আরেকজন দিদার ‘রাষ্ট্রচিন্তা’ নামে একটি সংগঠনের সদস্য৷ ব্রিটিশ মানবাধিকার সংস্থা ‘আর্টিকেল ১৯’ বলছে, দিদার করোনা মহামারির বিরুদ্ধে লড়তে বাংলাদেশ সরকার যে ত্রাণ কার্যক্রম শুরু করেছে, তা মনিটর করার জন্য গঠিত একটি কমিটির সদস্য৷ নিজের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনেস দিদার অভিযোগ করেন, সবচেয়ে গরিব মানুষেরাই সরকারি ত্রাণের সবচেয়ে কম অংশ পেয়েছেন৷ সম্প্রতি তিনি হাইকোর্ট থেকে জামিন পান৷
ছবি: Facebook/didarul.bhuiyan
তাসনিম খলিল
ব়্যাবের মামলার ১১ আসামির একজন সুইডেন প্রবাসী সাংবাদিক তাসনিম খলিল৷ তার সম্পর্কে এজাহারে বলা হয়েছে, তার ফেসবুক আইডিতে জাতির জনক, মুক্তিযুদ্ধ, করোনা ভাইরাস, সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধান ও বাহিনী সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্য ও রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার বা বিভ্রান্তি ছড়াতে অপপ্রচার বা গুজবসহ বিভিন্ন ধরনের পোস্ট পাওয়া গেছে৷
ছবি: Facebook/tasneem.khalil
শফিকুল ইসলাম কাজল
২০২০ সালের ৯ মার্চ ঢাকার শেরেবাংলা নগর থানায় ফটো সাংবাদিক কাজলসহ ৩২ জনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল আইনে মামলা করেন মাগুরা-১ আসনের সাংসদ সাইফুজ্জামান শেখর৷ যুব মহিলা লীগের নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়ার ওয়েস্টিন হোটেলকেন্দ্রিক কারবারে ‘জড়িত’দের নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনের কারণে এই মামলা করেছিলেন তিনি৷ এছাড়া কাজলের বিরুদ্ধে হাজারীবাগ ও তেজগাঁও থানায়ও ডিজিটাল আইনে আরও দুটি মামলা হয়৷
ছবি: Facebook/Shafiqul Islam Kajol
বেরোবি শিক্ষক
ফেসবুকে সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী নাসিমের মৃত্যু নিয়ে ‘অবমাননাকর’ পোস্ট দেয়ায় ডিজিটাল আইনের মামলায় রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) বাংলা বিভাগের শিক্ষক সিরাজুম মনিরাকে ২০২০ সালের ১৩ জুন গ্রেফতার করা হয়৷ পোস্টটি দেয়ার কিছুক্ষণ পর তিনি তা মুছে দিয়েছিলেন৷
ছবি: bdnews24.com
রাবি শিক্ষক
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক কাজী জাহিদুর রহমানকে গতবছর ১৮ জুন গ্রেপ্তার করা হয়৷ পুলিশ কর্মকর্তা মো. গোলাম রুহুল কুদ্দুস জানান, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী নাসিমকে নিয়ে ফেসবুকে ‘আজেবাজে কথা লিখে কটূক্তির অভিযোগে’ তাকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ বার্তা সংস্থা ডিপিএ বলছে, ২ জুন প্রকাশিত এক পোস্টে তিনি স্বাস্থ্যখাতে দুর্নীতি নিয়ে কথা বলেছিলেন৷ যদিও নাসিমের নাম উল্লেখ করেননি৷ পোস্টটি তিনি পরে মুছেও দেন৷
ছবি: DW/A. Khanom
নবম শ্রেণির ছাত্র ইমন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে ফেসবুকে কটূক্তির অভিযোগে ময়মনসিংহের ভালুকায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা এক মামলায় নবম শ্রেণির ছাত্র মো. ইমনকে ২০২০ সালের ২০ জুন গ্রেপ্তার করা হয়৷ এরপর তাকে কিশোর শোধনাগারে পাঠানো হয়৷ ভালুকার ওসি জানিয়েছেন, ইমন পরে পোস্টটি মুছে ক্ষমা চেয়েছিল৷
ছবি: Reuters/M. Ponir Hossain
সুশান্ত দাশ গুপ্ত
‘আমার হবিগঞ্জ’ পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক৷ এই পত্রিকায় স্থানীয় সাংসদ আবু জাহিরের অনিয়ম ও দুর্নীতির খবর প্রকাশের জেরে ২০২০ সালের ২০ মে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করেন হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সায়েদুজ্জামান জাহির৷ এর পরদিন সুশান্তকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ ১৪ জুন তিনি জামিন পান৷