জার্মান সেনাবাহিনীর প্রায় আড়াই লাখ সৈন্যের মধ্যে হাজার খানেক মুসলমান৷ সামনে রোজার মাস, যখন তাঁদের সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত উপবাস করার কথা৷ আর সেটাই অনেকের পক্ষে বেশ সমস্যাজনক৷ কিন্তু কেন?
বিজ্ঞাপন
চাউকি আকিল একটি সাপ্লাই ব্যাটেলিয়নে প্লেটুন সার্জেন্ট৷ তাঁর কাজ হলো মালপত্র পরিবহণের সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সৈন্যদের তদারকি করা৷ কাজটা পুরো মনঃসংযোগ না থাকলে করা সম্ভব নয়, বলেন ৩০ বছর বয়সি আকিল৷
৯ জুলাই থেকে রোজা শুরু হতে চলেছে৷ স্থানটা জার্মানি হলে সমস্যা এক রকম, আবার ধরা যাক আফগানিস্তান হলে আরেক রকম৷ সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত অবধি নিরম্বু উপবাস করতে হবে৷ আফগানিস্তানের প্রচণ্ড গরমে কাজটা সহজ নয়, বিশেষ করে যদি সেই সঙ্গে মালপত্র আর সৈন্যদের দায়িত্ব থাকে৷
জার্মানিতে রোজার মাস
জার্মানিতে প্রায় ৪০ লাখ মুসলমানের বসবাস৷ তাঁদের মধ্যে প্রায় ২,৫ মিলিয়নই তুর্কি বংশোদ্ভূত৷
ছবি: picture-alliance/dpa
জার্মানিতে তুর্কি মুসলমানই বেশি
জার্মানিতে প্রায় ৪০ লাখ মুসলমানের বসবাস৷ তাঁদের মধ্যে প্রায় ২,৫ মিলিয়নই তুর্কি বংশোদ্ভূত৷ বাকিরা এসেছেন দক্ষিণ-পূর্ব ইউরোপ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, উত্তর আফ্রিকা ও অন্যান্য দেশ থেকে৷ জার্মানির বিভিন্ন শহরে অনেক মসজিদ রয়েছে এবং এর সংখ্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে৷
সেনাবাহিনীতে বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা
জার্মান সেনাবাহিনীতে রয়েছে প্রায় হাজার খানেক মুসলমান সৈন্য৷ বিশেষ ব্যবস্থা হিসেবে রোজার সময় মুসলমান সৈন্যদের জন্য রাতেও ক্যান্টিন খোলা রাখা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
রোজার মাস ত্যাগের মাস
রোজার মাস ত্যাগের আর সংযমের মাস৷ রোজা শুরু হওয়ার ঠিক আগের দিন কোলনে একটি তুর্কি ‘বেকারি’ থেকে সরিয়ে ফেলা হচ্ছে মিষ্টিজাতীয় লোভনীয় খাবারগুলো৷
ছবি: picture-alliance/dpa
তারাবির নামাজ
জার্মানির মসজিদগুলোতে সারা বছরই নামাজ পড়া ও ইবাদত করা হয়৷ তবে রোজার মাসে স্বাভাবিকভাবেই বিশেষ আয়োজন থাকে৷ প্রতিদিনই পড়া হয় তারাবির নামাজ৷ কোলনের একটি মসজিতে তারাবির নামাজে অংশ নেন বিভিন্ন দেশ থেকে আসা মুসলমানরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ইফতার খাওয়া
সারাদিন রোজা রাখার পর, অন্যান্য দেশের মতো জার্মানির বিভিন্ন মসজিতে ইফতারের আয়োজন করা হয়ে থাকে এবং যে কেউ এই ইফতারে অংশ নিতে পারেন৷ ইফতারের জন্য অনেকেই বাড়ি থেকে প্রচুর খাবার পাঠিয়ে দেন, যাতে রোজাদাররা ভালোভাবে ইফতার করতে পারেন৷ তুর্কি মসজিদগুলোতে অনেকেই শুধু খেজুর আর দুধ দিয়ে রোজা ভেঙে নামাজ পড়েন এবং পরে সবাই মিলে ইফতার করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মুসলমান মহিলারা
অনেক সময় আলাদাভাবে শুধু মহিলাদের জন্য ইফতারের আয়োজন করা হয়ে থাকে৷ তাঁরা একত্রে নামাজ পড়েন এবং ধর্মীয় নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকেন৷ সেই আলোচনায় স্থান পায় অভিবাসী পরিবারের নানা সমস্যার কথাও৷
ছবি: DW/S. Fatima
রোজার সময় ভিড় কম
জার্মানিতে রয়েছে প্রচুর তু্র্কি রেঁস্তোরা৷ এই রেঁস্তোরার মালিকের ভাষায়, অন্য সময় অনেক ভিড় হলেও রোজার মাসে মানুষ কম আসে৷ রোজার সময় আলাদাভাবে রাতের খাবার তৈরি করা হচ্ছে ছবিতে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বাঙালি মসজিদ
বন শহরে বাঙালিদের উদ্যোগে একটি মসজিদ তৈরি করা হয়েছে, যেখানে শুধু বাঙালি মুসলমান নন অন্যান্য দেশের মুসলমানও আসেন নামাজ পড়তে এবং রোজার সময় ইফতার করতে৷
ছবি: DW
বার্লিনের মসজিদ
এই মসজিদটি বার্লিন শহরে, যেখানে বিভিন্ন দেশের মুসলমানরা, বিশেষকরে রোজার সময় একত্রিত হয়ে নামাজ পড়েন, কোরান পড়েন এবং দোয়া করেন সবার মঙ্গল ও শান্তির জন্য৷
ছবি: picture-alliance/dpa
9 ছবি1 | 9
কাজেই আকিলের কর্মস্থান আফগানিস্তান হলে তাঁর বিবেকই তাঁকে বলে দিত, তুমি এই ঝুঁকি নিতে পারো না৷ জার্মান সেনাবাহিনীতে অন্যান্য যে সব মুসলমান সৈন্য আছেন, তাদেরও ঐ এক দশা৷ সবাই জার্মানিতে মানুষ, সেখানকার আবহাওয়াতে অভ্যস্থ৷ আফগানিস্তানের গ্রীষ্ম তাদের পক্ষে দুঃসহ৷ খাবার না খেয়ে থাকা যায়, কিন্তু পানি?
আকিল আপাতত জার্মানির উন্না শহরের সেনা ছাউনিতে নিযুক্ত৷ খেলাধুলা এবং গুলিচালনা অভ্যাসও এখানে কাজ হিসেবেই গণ্য হয়৷ ওদিকে জার্মানিতে গ্রীষ্মে দিনে ১৮ ঘণ্টা পর্যন্ত আলো থাকে৷ কাজেই রোজা রাখাটা এখানেও একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায়৷ তবে সেনাবাহিনী যথাসাধ্য করে৷ উদাহরণস্বরূপ: সৈন্যশিবিরের ক্যান্টিন ভোররাতে কিংবা মাঝরাতে খোলা থাকার কথা না – কিন্তু আকিলের মতো সতীর্থদের কথা ভেবে ক্যান্টিনের কর্মীরা সে ব্যবস্থাও করে রেখেছেন৷
জার্মানিতে জন্তু-জানোয়ার হালাল করা নিষিদ্ধ, কাজেই হালাল গোস্তের ব্যবস্থা না থাকলেও, মুসলমান সৈন্যদের জন্য সেনাবাহিনীর ক্যান্টিনে আলাদা করে, আলাদা হাতাখুন্তি দিয়ে রান্নার ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ অপরদিকে, দৈনন্দিন সামরিক সেবার ফাঁকেফোকরে যতদূর সম্ভব, আকিল তাঁর পরিবারের মানুষজনের সঙ্গে ইফতার করার চেষ্টা করেন৷