আল-কায়দার ইন্ধনে ইউরোপে একের পর এক জঙ্গি হামলা কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছে৷ এখানকার তরুণ মুসলমানরা কেন সমাজের বিপক্ষে দাঁড়াচ্ছে? কেন ঠান্ডা মাথায় হত্যা করছে স্বদেশিদের? আর জার্মানির মুসলমানরাই বা কেমন আছেন?
বিজ্ঞাপন
ব্রাসেলস বিমানবন্দর, মোলেনবেক সাবওয়ে স্টেশন এবং প্যারিসের ভয়াবহ হামলার পর, এ রকম সব প্রশ্নের উত্তরই খুঁজে চলেছি আমরা৷ এখন অবশ্য আর আল-কায়েদা নয়, মাঠে নেমেছে তথাকথিত ‘ইসলামিক স্টেট' বা আইএস-এর সদস্যরা৷
কিন্তু এহেন প্রাণহানি থামাতে ইউরোপীয় সমাজকে যে দ্রুত কার্যকর কিছু একটা করতে হবে, সে ব্যাপারে কোনো দ্বিমত নেই কারুর৷ তারপরও সহজে এ সমস্যার কোনো সমাধানও উঠে আসছে না, কারণ, এখনও তরুণ মুসলমানদের ইউরোপীয় সমাজে একাত্ম করতে ব্যর্থ হচ্ছেন ইউরোপের নেতারা৷
'We are always treated as suspects'
03:17
বরং উদ্বাস্তু সংকট আর একের পর এক জঙ্গি হামলার কারণে মুসলমানদের প্রতি একটা আস্থাহীনতা কাজ করছে ইউরোপে৷ বলা বাহুল্য, এভাবে কোনো দেশে ধর্মনিরপেক্ষতার ভিত্তি স্থাপন সম্ভব নয়৷
ডয়চে ভেলের ভিডিও-ব্লগার জাফর আব্দুল করিম জার্মানির কিছু মসজিদে গিয়ে বেশ কয়েকজন মুসলমানের সঙ্গে কথা বলেন৷ তাদের কথাতেও নিরাপত্তাহীনতাই উঠে এসেছে, উঠে এসেছে একঘরে হয়ে যাওয়ার ভয়৷
যুদ্ধবিক্ষুব্ধ কোনো দেশ থেকে কীভাবে ইউরোপে আসছে লক্ষ লক্ষ মানুষ? সবাই কি স্থায়ীভাবে ইউরোপে থাকতে চান? থাকতে হলে কী করতে হবে? কী করছেন তাঁরা? কয়েকজন শরণার্থীর জীবন দেখে একটু ধারণা নেয়া যাক৷
চিকিৎসক থেকে শরণার্থী
সিরিয়ায় রাজধানী দামেস্কে চিকিৎসক হিসেবে ভালোই ছিলেন হামবার আল-ইসা৷ কিন্তু যুদ্ধ শুরুর পর জন্মভূমির সব সুখ ছেড়ে ইউরোপের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমাতে হয় তাঁকে৷
অনেক পথ পেরিয়ে...
মেসিডোনিয়ায় পৌঁছানোর পর সার্বিয়ার সীমান্ত পর্যন্ত যেতে অনেকটা পথ হাঁটতে হয়েছে হামবারকে৷ হেঁটে কোনো শহরে পৌঁছালেই শুরু হতো ইন্টারনেট ক্যাফে খুঁজে বের করার চেষ্টা৷ পেলে প্রথম কাজ কোথায় আছেন, কেমন আছেন সে সম্পর্কে পরিবারকে বিস্তারিত জানানো৷ একা এসেছেন, তাই স্বজনদের তাঁর জন্য খুব চিন্তা৷ তাঁদের চিন্তা দূর করা ও তাঁদের সম্পর্কে জেনে নিজেকে নিশ্চিন্ত রাখতেই পছন্দ করেন হামবার৷
অবশেষে জার্মানিতে...
অনেক দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে অবশেষে জার্মানিতে পৌঁছেছেন হামবার৷ সিরিয়াতে সার্জন হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও নতুন দেশে চাইলেই তো আর চিকিৎসক হিসেবে কাজ শুরু করা যায় না৷ জার্মান ভাষা শিখে নিজেকে তৈরি করতে হবে সবার আগে৷ সেই চেষ্টা চলছে৷ পাশাপাশি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে অনুবাদকের কাজও করছেন৷ তাঁর স্বপ্ন অবশ্য জার্মানিতে বসবাস করা নয়৷ সুসময় ফিরে এলে নিজের দেশেই ফিরতে চান হামবার৷
দেশান্তরী এক আফগান কিশোরী
তোবার বয়স এখন ১৬ বছর৷ আফগানিস্তানের হেরাত থেকে জার্মানিতে এসেছে সে৷ হেরাতে নিয়মিত স্কুলে যেত সে৷ লেখাপড়া করেই প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্নও দেখতো৷ কিন্তু তালেবান বেছে বেছে মেয়েদের স্কুলে হামলা শুরু করায় তোবার পক্ষেও আর দেশে থাকা সম্ভব হয়নি৷
সপরিবারে জার্মানিতে
আফগানিস্তান থেকে জার্মানিতে অবশ্য একা আসেনি তোবা৷ দুই বোন এবং তাঁদের স্বামীও এসেছেন সঙ্গে৷ কাছের এই মানুষগুলো সঙ্গে থাকার কারণেই ইরান, তুরস্ক, গ্রিস এবং বলকান অঞ্চল হয়ে জার্মানিতে পৌঁছাতে পেরেছে তোবা৷
দুঃস্বপ্নে পোড়া স্কুল, স্বপ্নে সুন্দর আগামী
তালেবান হামলা থেকে বাঁচতে আফগানিস্তান ছেড়ে এলেও স্বনির্ভর হওয়ার স্বপ্ন কিন্তু ছাড়েনি তোবা৷ নিজেকে নতুন করে তৈরি করছে সে৷ জার্মান ভাষা শিখছে৷ স্বাবলম্বী হতে হলে জার্মানিতে ভাষা শেখাটা তো সবার জন্যই জরুরি৷
এক সাংবাদিকের পরিবার
ওপরের ছবির তিনজন জার্মানিতে এসেছেন সিরিয়ার ইদলিব থেকে৷ আহমেদ (মাঝখানে)-এর সঙ্গে তাঁর স্ত্রী হেবা এবং বন্ধু সালেহ৷ সিরিয়ায় সাংবাদিক হিসেবে বেশ কিছুদিন কাজ করেছেন আহমেদ৷
শৈশবেই প্রবাসী
আহমেদ-হেবা দম্পতির এই মেয়েটিও এসেছে জার্মানিতে৷ মাত্র এক বছর বয়সেই শুরু হয়েছে তার প্রবাসজীবন৷ ওর বাবা অবশ্য যুদ্ধ থামলেই ফিরে যেতে চায় সিরিয়ায়৷