মুসলিমদের ওপর হামলার কারণে শ্রীলঙ্কায় ৮০ জন গ্রেপ্তার
১৫ মে ২০১৯
সোমবার মুসলমানদের মসজিদ ও দোকানপাটে সহিংস হামলা হয়েছিল৷ তবে শ্রীলঙ্কার সামরিক বাহিনীর এক মুখপাত্র জানান, পরিস্থিতি এখন ‘পুরো নিয়ন্ত্রণে'৷ মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ৮০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
২১ এপ্রিল তিনটি গির্জা ও তিনটি অভিজাত হোটেলে হামলার পর শ্রীলঙ্কায় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়৷ এর মধ্যে সোমবার উত্তর-পশ্চিমের বিঙ্গিরিয়া এলাকায় প্রায় দুই হাজার দাঙ্গাকারী মুসলমানদের মসজিদ ও দোকানপাটে হামলা চালায়৷ এই ঘটনায় একজন প্রাণ হারান৷
ঘটনার পর মুসলমানদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে৷ ঐ এলাকার মুসলিম নেতা এমআইএম সিদ্দিক এএফপিকে জানিয়েছেন, ‘‘আমাদের মানুষরা এখনো বাইরে যেতে ভয় পাচ্ছেন৷''
তবে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে জানিয়ে বুধবার সামরিক মুখপাত্র সুমিথ আতাপাত্তু বলেন, ‘‘গতরাতে কোথাও কোনো সহিংস ঘটনা ঘটেনি৷ এছাড়া আমরা সোমবারের হামলার সঙ্গে জড়িতদের আটক করছি৷''
এদিকে, পুলিশের মুখপাত্র রুয়ান গুনাসেকেরা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ৮০ জনের বেশি জনকে আটক করা হয়েছে৷ তাদের জরুরি আইনের আওতায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ ফলে অভিযুক্ত হলে তাদের সর্বোচ্চ দশ বছরের জেল হতে পারে৷
শ্রীলঙ্কায় এই হামলা কি এড়ানো যেতো ?
রবিবার শ্রীলঙ্কায় মোট ৮টি সন্ত্রাসী হামলায় নিহতের সংখ্যা আপাতত ২৯০৷আহত হয়েছেন ৫০০-রও বেশি মানুষ৷ হতাহতদের মধ্যে অনেক বিদেশি নাগরিকও রয়েছেন৷ বিস্তারিত ছবিঘরে৷
ছবি: Reuters/Stringer
ভয়াবহ ইস্টার সানডে
খ্রিষ্টানদের অন্যতম পবিত্র দিন ইস্টার সানডে৷ এমন দিনেই কলম্বো, নেগোম্বো ও বাট্টিকালোয়া শহরের বেশ কয়েকটি গির্জা ও হোটেলে ঘটে সিরিজ বোমা হামলা৷ শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী এই হামলায় নিহতের সংখ্যা ২৯০, আহত হয়েছেন ৫০০ জনেরও বেশি৷
ছবি: Reuters/Stringer
কোথায় হামলা
বোমা হামলার শিকার গির্জাগুলির মধ্যে রয়েছে উত্তর কলম্বোর সেইন্ট অ্যান্থনি'স শ্রাইন, নেগোম্বো শহরের পাশে সেইন্ট সেবাস্টিয়ান চার্চ ও পূর্বে বাট্টিকালোয়া শহরের জিয়ন চার্চ৷ এছাড়া তিনটি ফাইভ স্টার হোটেল সিনামন গ্রান্ড, কিংসবুরি ও দ্য সাংরিলাতেরও হামলা হয়৷ তিনটিই রাজধানী কলম্বোর কেন্দ্রে অবস্থিত৷
ছবি: Reuters/Stringer
শ্রীলঙ্কায় খ্রিষ্টান যারা...
পঞ্চদশ শতাব্দীতে পর্তুগিজ পাদ্রীদের আগমনের পর থেকে শ্রীলঙ্কায় বাড়তে থাকে খ্রিষ্টান জনসংখ্যা৷ বর্তমানে, দেশটির জনসংখ্যার ৭ শতাংশ মানুষ খ্রিষ্টধর্মের অনুসারী৷ এর মধ্যে রয়েছেন রোমান ক্যাথলিক, মেথডিস্ট ও প্রটেস্টান্ট ধারার মানুষ৷
ছবি: Reuters/Stringer
বিদেশিরাও হামলার শিকার
সংবাদসংস্থা এএফপি জানিয়েছে, শ্রীলঙ্কায় বোমা হামলায় ইতিমধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ৩৫ জন বিদেশি নাগরিক৷ হামলার শিকার হোটেলগুলিতে ছিলেন তাঁরা৷ নিহতদের মধ্যে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নেতা শেখ ফজলুল করিম সেলিমের আট বছর বয়সি নাতি জায়ান চৌধুরীও রয়েছে৷
ছবি: AFP/I. S. Kodikara
সহিংসতার ধারা
শ্রীলঙ্কায় মাত্র এক দশক আগেই থেমেছে গৃহযুদ্ধ৷তার আগে সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী সিনহালিজ ও সংখ্যালঘু হিন্দু তামিলদের মধ্যে দীর্ঘদিন চলে সশস্ত্র লড়াই৷বিগত দশকে গৃহযুদ্ধ থামার পর রবিবারের এ হামলাই সাম্প্রতিক কালে শ্রীলঙ্কায় সবচেয়ে ভয়াবহ সহিংসতার ঘটনা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/epa/str
হামলার পেছনে কারা?
শ্রীলঙ্কার সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে, এই হামলার পেছনে রয়েছে স্থানীয় ইসলামী সংগঠন ন্যাশনাল তৌফিক জামাত৷ দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী রাজিথা সেনারত্নে একটি সাংবাদিক সম্মেলনে জানান, ৭ আত্মঘাতী বোমা হামলাকারীই শ্রীলঙ্কার নাগরিক এবং তারা তৌফিক জামাতের সাথে জড়িত৷ হামলার পেছনে বিদেশি শক্তির হাত থাকার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেননি তিনি৷হামলায় জড়িত সন্দেহে এ পর্যন্ত ২৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷
ছবি: Reuters
বর্তমান পরিস্থিতি
রবিবার হামলার পর দেশজুড়ে কার্ফু জারি করেছিল শ্রীলঙ্কা সরকার৷ তবে সোমবার সকালে কার্ফু তুলে নেওয়া হয়৷ সোমবার রাত থেকে জরুরি অবস্থা জারি হতে পারে৷ ওপরের ছবিতে বিস্ফোরণের পর বিধ্বস্ত এক গির্জার পাশে স্থানীয় যাজকদের দেখা যাচ্ছে৷
ছবি: AFP/I. S. Kodikara
এ হামলা কি এড়ানো যেতো?
শ্রীলঙ্কার স্বাস্থ্যমন্ত্রী সেনারত্নে জানিয়েছেন, পুলিশের কাছে এমন হামলার আশঙ্কার আগাম তথ্য থাকা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরকে তা জানানো হয়নি৷ প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে এখনো এ বিষয়ে কোনো বক্তব্য না এলেও প্রশ্ন উঠেছে – সত্যিই কি পুলিশ এমন তথ্য আগে পেয়েছিল? তাহলে আগাম সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিলে এই ভয়াবহ হামলা তো কিছুটা হলেও এড়ানো যেতো!
ছবি: picture-alliance/AP Photo
8 ছবি1 | 8
সংসদের স্পিকার কারু জয়সুরিয়া মুসলমানদের উপর হামলার ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন এবং সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন৷
এদিকে, সহিংসতা উসকে দিতে পারে এমন বার্তার প্রসার ঠেকাতে ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ, ইউটিউব ও ইন্সটাগ্রাম আগেই ব্লক করেছিল সরকার৷ মঙ্গলবার এ তালিকায় টুইটারও যুক্ত করা হয়েছে৷
তবে সরকারের এসব উদ্যোগ সত্ত্বেও মুসলমানরা আতঙ্কে ভুগছেন৷ বুধবারও তাঁরা ঘরে থাকাকেই শ্রেয় মনে করছেন৷