অ্যাটর্নি জেনারেল স্যালি ইয়েটস আইন মন্ত্রণালয়ের কর্মচারীদের ট্রাম্পের বিতর্কিত ‘মুসলিম ব্যান' জনসমক্ষে সমর্থন না করার নির্দেশ দেবার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তাঁকে বিদায় নিতে হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
সোমবার সন্ধ্যায় হোয়াইট হাউস থেকে ঘোষণা করা হয় যে, ‘‘আইন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা'' করার দায়ে ট্রাম্প ইয়েটসকে বরখাস্ত করেছেন৷ ওবামা প্রশাসনের নিয়োজিত ইয়েটস ‘‘সীমান্ত প্রশ্নে দুর্বল ও বেআইনি অভিবাসনের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে দুর্বল'', বলে হোয়াইট হাউসের বিবৃতিতে মন্তব্য করা হয়৷
ইয়েটসের জায়গা কে নিচ্ছেন, হোয়াইট হাউসের প্রেস সেক্রেটারি সন স্পইসার তা টুইটারে ঘোষণা করেন৷ নতুন ভারপ্রাপ্ত অ্যাটর্নি জেনারেল ডানা বোয়েন্টে অ্যাটর্নি জেনারেল পদে ট্রাম্পের মনোনীত প্রার্থী জেফ সেসনস সেনেটের অনুমোদন পাওয়া অবধি কাজ চালিয়ে যাবেন৷ বোয়েন্টে ট্রাম্পের অভিবাসন সংক্রান্ত নির্বাহী আদেশ কার্যকরি করবেন বলেই ধরে নেওয়া হচ্ছে৷
ট্রাম্পের প্রথম সাতদিনের নির্বাহী আদেশ ও নির্দেশ
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর ক্ষমতা গ্রহণের সাতদিনের মধ্যেই ডজন খানেক নির্বাহী পদক্ষেপ নিয়েছেন, যার মধ্যে ‘এক্সিকিউটিভ অর্ডার’ ও ‘মেমোরান্ডাম’, দুই’ই আছে৷
ছবি: Reuters/K. Lamarque
অভিবাসন
শুক্রবারের একটি নির্বাহী আদেশে ট্রাম্প সাতটি মুসলিম অধ্যুষিত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করেন ও সিরীয় উদ্বাস্তু গ্রহণ অনির্দ্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত রাখেন৷
ছবি: Picture-Alliance/AP Photo/K. Willens
ওবামাকেয়ার
শপথগ্রহণের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ট্রাম্প তাঁর প্রথম এক্সিকিউটিভ অর্ডারে স্বাক্ষর করেন৷ আদেশটির ঘোষিত উদ্দেশ্য ছিল ওবামার ‘অ্যাফোর্ডেবল কেয়ার অ্যাক্ট’-এর ‘‘অনাবশ্যক অর্থনৈতিক ও নিয়ন্ত্রণমূলক বোঝা’’ হ্রাস করা৷
ছবি: Getty Images/A. Wong
মেক্সিকো সীমান্তে প্রাকার
বুধবার ডিপার্টমেন্ট অফ হোমল্যান্ড সিকিউরিটি পরিদর্শন করার অবকাশে ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন, যাতে ডিপার্টমেন্টের সেক্রেটারি (মন্ত্রীকে) ‘‘অবিলম্বে দক্ষিণ সীমান্ত বরাবর একটি প্রাচীর নির্মাণের পরিকল্পনা, নকশা ও নির্মাণকার্য শুরু করার’’ যাবতীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Torres
‘স্যাঙ্কচুয়ারি সিটিজ’
বুধবার ট্রাম্প আরো একটি এক্সিকিউটিভ অর্ডার স্বাক্ষর করেন, যা অনুযায়ী যে সব ‘অভয়াশ্রমের’ শহর বেআইনি অভিবাসীদের নথিবদ্ধ বা বহিষ্কার করে না, তাদের ফেডারাল অনুদান বাতিল করা হবে৷
ছবি: AP
দু’টি তেলের পাইপলাইনের অনুমতি
তাঁর কর্মকালের দ্বিতীয় দিনেই ডোনাল্ড ট্রাম্প দু’টি আদেশের মাধ্যমে দু’টি বিতর্কিত পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চালিয়ে নিয়ে যেতে বলেছেন৷ কি-স্টোন এক্সএল পাইপলাইনটি যাবে ক্যানাডা থেকে গাল্ফ কোস্টে মার্কিন রিফাইনারিগুলি অবধি: প্রেসিডেন্ট ওবামা ২০১৫ সালে এই পাইপলাইন নির্মাণের কাজ বন্ধ রাখেন৷ ডাকোটা অ্যাক্সেস পাইপলাইনটি ইন্ডিয়ান উপজাতিদের এলাকার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বলে ব্যাপক বিক্ষোভের অবতারণা ঘটে৷
ছবি: REUTERS/L. Jackson
গর্ভপাত সংক্রান্ত ‘গ্লোবাল গ্যাগ রুল’
‘বিশ্বের মুখ চেপে ধরার নীতি’ হিসেবে পরিচিত এই নীতি প্রথম বাস্তবায়িত হয় ১৯৮৪ সালে, প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগানের আমলে৷ মেক্সিকো সিটি পলিসি নামেও পরিচিত এই নীতি অনুযায়ী যে সব বিদেশি এনজিও গর্ভপাত সংক্রান্ত পরামর্শ বা সাহায্য দেয়, তাদের ফেডারাল সাহায্য না পাবার কথা৷ ট্রাম্প এই নিষেধাজ্ঞা পুনরায় সক্রিয় করেছেন৷
ছবি: AP
টিটিপ থেকে পশ্চাদপসারণ
তাঁর কর্মকালের তৃতীয় দিনে (সোমবার) ট্রাম্প একটি মেমোরান্ডামের মাধ্যমে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধিকে ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ বাণিজ্য চুক্তি থেকে স্থায়ীভাবে পশ্চাদপসারণ করার নির্দেশ দেন৷
ছবি: Reuters/K. Lamarque
7 ছবি1 | 7
ইয়েটসের প্রতিরোধ
স্যালি ইয়েটস সোমবার বলেন যে, সাতটি মুসলিম দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ নিষেধ করে ট্রাম্প যে নির্বাহী আদেশ জারি করেছেন, তা আইনসম্মত কিনা, সে বিষয়ে তিনি পুরোপুরি প্রতীত নন৷ ‘‘ডিপার্টমেন্ট অফ জাস্টিস এই এক্সিকিউটিভ অর্ডারের সপক্ষে কোনো যুক্তি পেশ করবে না'', বলে ইয়েটস জানান৷
বিচার বিভাগের অ্যাটর্নিদের প্রতি লিখিত একটি পত্রে ইয়েটস উল্লেখ করেন যে, একাধিক আদালতে ট্রাম্পের আদেশের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে৷ ‘‘আমার দায়িত্ব হলো নিশ্চিত করা যে, আইন মন্ত্রণালয়ের অবস্থান শুধু আইনগতভাবে যুক্তিযুক্তই নয়, বরং আমাদের দৃষ্টিতে আইনের যে অর্থ, তার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ৷''
শুধু সেনেটর চাক শুমারই নন, আরো অনেকের চোখে স্যালি ইয়েটস ট্রাম্পের রাজনীতির বিরুদ্ধে প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে উঠেছেন – বিশেষ করে যখন সেই প্রতিরোধের একটি বড় অংশ মার্কিন আইন-আদালত ও বিচার ব্যবস্থার মাধ্যমে প্রবাহিত হচ্ছে৷ যেমন ওয়াশিংটন রাজ্যের অ্যাটর্নি জেনারেল বব ফার্গুসন ‘মুসলিম ব্যান' সংক্রান্ত নির্বাহী আদেশকে বেআইনি ও অসাংবিধানিক বলে মামলা করেছেন৷
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরাক, সিরিয়া, ইরান, সুদান, লিবিয়া, সোমালিয়া ও ইয়েমেনের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে আসার উপর একটি ৯০ দিনের নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন৷ এছাড়া তিনি ১২০ দিনের জন্য যাবতীয় উদ্বাস্তুদের যুক্তরাষ্ট্রে আসা নিষিদ্ধ করেছেন – সিরীয় উদ্বাস্তুদের ক্ষেত্রে এই নিষেধাজ্ঞা অনির্দ্দিষ্টকালের জন্য বলবৎ থাকবে৷ যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে এই ‘মুসলিম নিষেধাজ্ঞা'-র বিরুদ্ধে প্রতিবাদ চলেছে৷
এসি/ডিজি (এপি, রয়টার্স)
প্রেসিডেন্ট হয়েই যা যা বললেন ট্রাম্প
যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের প্রথম ভাষণে জনতার প্রশংসা করেন ট্রাম্প৷ বলেন, ‘‘আজ ওয়াশিংটন থেকে ক্ষমতা তুলে দেয়া হচ্ছে আপনাদের হাতে৷’’
ছবি: Reuters/C. Barria
জনগণের হাতেই ক্ষমতা
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এই দিনটিকে স্মরণ করা হবে জনগণের জয় হিসেবে৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Loeb
বিক্ষোভ সত্ত্বেও ভিড়
ট্রাম্পের শপথগ্রহণের দিনেও যুক্তরাষ্ট্র শান্ত ছিল না৷ এমনকি ওয়াশিংটন ডিসিতেও প্রতিবাদ-বিক্ষোভ হয়েছে৷ তারপরও তাঁর শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন লাখো মানুষ৷ ট্রাম্প তাঁদের সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন৷
ছবি: Reuters/K. Lamarque
সবার জন্য শিক্ষা, সুরক্ষা, চাকরি
প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিজের প্রথম ভাষণে সবার জন্য উন্নত শিক্ষা, নিরাপত্তা এবং কর্মসংস্থানের আশ্বাস দেন ডোনাল্ড ট্রাম্প৷
ছবি: Getty Images/A. Wong
প্রেসিডেন্টের কাছে জনতাই সব
‘‘আপনার-আমার সবারই এক দেশ, আপনাদের সাফল্যই আমার সাফল্য, আপনাদের হৃদয়ই আমার হৃদয়৷’’
ছবি: Getty Images/AFP/M. Ralston
শুধু দেশের জন্য কাজ
ধনকুবের থেকে রাজনীতির ময়দানে এসেই রাষ্ট্রপ্রধান হয়ে যাওয়া ট্রাম্প বলেছেন, ‘‘এখন থেকে আমার লক্ষ্য শুধু দেশের ভবিষ্যৎ গড়া৷’’
ছবি: Reuters/L. Nicholson
‘ওবামা পরিবার ছিল চমৎকার’
ট্রাম্প ভাষণ শুরু করেছিলেন বিদায়ী প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে ধন্যবাদ জানিয়ে৷ এ সময় ওবামা দম্পতির প্রশংসা করেছেন৷ ওবামা ও মিশেলের প্রশংসা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘‘ওবামা পরিবার ছিল চমৎকার৷’’
ছবি: Reuters/B. Snyder
অ্যামেরিকায় উগ্রবাদীদের জায়গা নেই
‘‘অ্যামেরিকার মানুষের আর ভয়ের কারণ নেই৷’’ এ কথা বলে নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানান, উগ্রবাদী ইসলামপন্থিদের সমূলে উৎপাটন করা হবে৷
ছবি: Reuters/B. Snyder
দেখুন বড় স্বপ্ন
ট্রাম্প বলেন, ‘‘আমাদের এখন আগামীর পথে এগিয়ে যেতে হবে৷ বড় কাজের জন্য দেখতে হবে বড় স্বপ্ন৷’’
ছবি: Reuters/L. Nicholson
যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এক স্মরণীয় দিন
২০ জানুয়ারি, ২০১৭ – এই তারিখটিকে অ্যামেরিকা চিরকাল স্মরণ করবে বলেও মনে করেন ট্রাম্প৷
ছবি: Reuters/C. Barria
‘অ্যামেরিকা উইল বি গ্রেট এগেইন’
ট্রাম্প বলেন, ‘‘আজ থেকে এ দেশ চলবে নতুন দৃষ্টভঙ্গি নিয়ে আর তা হবে ‘অ্যামেরিকা প্রথম’৷’’ পাশাপাশি নির্বাচনি প্রচারাভিযানের সময় থেকে বলে আসা ‘আমরা আবার একসঙ্গে অ্যামেরিকাকে মহান জাতির উচ্চতায় নিয়ে যাবো’ অঙ্গিকারেরও পুনর্ব্যক্ত করেন তিনি৷