জার্মানিতে হিজাবের দোকানগুলো ইদানীং সংবাদের শিরোনাম হচ্ছে৷ অভিযোগ উঠেছে, এ সব দোকান নাকি উগ্রপন্থার দিকে যাওয়ার প্রাথমিক দরজা হিসেবে কাজ করছে৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানির ফ্রাংকফুর্ট শহরের ‘দ্য হিজাবি' নামের দোকানটিতে নারীদের জন্য নিকাব, বোরকা এবং অন্যান্য ইসলামিক পোশাক বিক্রি করা হয়৷ দোকানটিতে মুসলমান নারীদের জন্য নানা ধরনের, নানা ডিজাইনের পোশাক রয়েছে৷ আর শুধু পোশাকই নয়, সেগুলো শরীরের সঙ্গে ঠিকভাবে সেট করার জন্য বিভিন্ন রকম প্রয়োজনীয় পিনও বিক্রি করা হয় সেখানে৷
‘দ্য হিজাবির' সঙ্গে সালাফিস্টদের সম্পর্ক নিয়ে জার্মানির কয়েকটি পত্রিকায় সম্প্রতি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়৷ গত সপ্তাহে জার্মানির পাবলিক ব্রডকাস্টার এআরডি একটি রিপোর্টে দেখায়, কীভাবে ‘দ্য হিজাবি' এবং ভুর্পাটালের আরেকটি দোকান নারীদের গোঁড়া ধর্মীয় জীবনযাপনের দিকে নিয়ে যেতে সাহায্য করছে৷ এভাবে তাদের সালাফিজম এবং এক পর্যায়ে উগ্রবাদী ইসলামের প্রতি উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে বলে জানানো হয় রিপোর্টে৷ ডয়চে ভেলের পক্ষ থেকে অবশ্য এ সব দোকানের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও কোনো সাড়া মেলেনি৷
German Salafists in Syria
05:20
সালাফিস্টদের জীবনযাপন
বুর্কিংস ইন্সটিটিউটের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, সালাফিজমকে ইসলামের সবচেয়ে সঠিক এবং সত্য রূপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যা ইসলামের একেবারের শুরুর দিকে চর্চা করা হতো৷
জার্মানিতে গত ১০ থেকে ১৫ বছরে নিকাব এবং বোরকা বিক্রির দোকানগুলো প্রসার লাভ করেছে, জানান সুজানে শ্র্যোটার৷ সুজানে ফ্রাংকফুর্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামিস্ট ফেমিনিজম এবং উগ্রপন্থা বিষয়ে বিশেষজ্ঞ৷ তাঁর কথায়, বর্তমানে জার্মানিতে বসবাসরত মুসলমান নারীদের মধ্যে নিকাব পরার প্রবণতা বাড়ছে৷
শ্র্যোটার বলেন, ‘‘ফ্রাংকফুর্টের দোকানটি সালাফিস্ট কনজিউমার কালচারের সঙ্গে সম্পৃক্ত৷ আর সালাফিজম শুধুমাত্র একটি ধার্মিক বা রাজনৈতিক মুভমেন্ট নয়, এটি একটি লাইফস্টাইলও৷ যারা এই ভাবাদর্শে বিশ্বাসী, তারা তাদের জীবনের সবকিছু সালাফিস্ট কল্পলোকের মতো করে সাজাতে চায়৷''
মুসলিম নারীরা যেসব উপায়ে ‘পর্দা’ করে
হিজাব, বোরকা বা নিকাবের মতো নারীদের জন্য বিভিন্ন ইসলামি পোশাক নিয়ে ইউরোপে এখন তুমুল বিতর্ক চলছে৷ কোনো কোনো দেশ এ সব পোশাক নিষিদ্ধের পক্ষে৷ মুসলমান নারীদের শরীর ঢাকার পোশাকগুলি কী কী – চলুন জেনে নেই৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
হিজাব
দেশ এবং সংস্কৃতিভেদে অনেক মুসলমান নারী হিজাব পরিধান করেন৷ মূলত মাথা, চুল এবং গলা এবং ঘাড়ের খোলা অংশ ঢাকা হয় এই পোশাক দিয়ে৷ বিভিন্ন ডিজাইনের এবং রঙের হিজাব পাওয়া যায় যেগুলো পরলে চেহারা পুরোটাই দেখা যায়৷
ছবি: Getty Images/AFP/Seyllou
নিকাব
নিকাব পরলে নারীর পুরো শরীর ঢেকে যায়, শুধু চোখ দু’টো খোলা থাকে৷ সাধারণত পুরোপুরি রক্ষণশীল মুসলমান নারীরা নিকাব পরেন৷ নিকাব মূলত কালো রঙের হলেও অন্যান্য রঙের নিকাবও ইদানীং দেখা যায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Roessler
দোপাট্টা
দক্ষিণ এশিয়ার মুসলিম নারীদের মধ্যে জনপ্রিয় দোপাট্টা বা ওড়না৷ নিকাব বা বোরকার মতো না হলেও এই পোশাকেও নারীর শরীর অনেকটা ঢাকা থাকে৷ তবে চুলের কিছুটা, চেহারা এবং গলা দেখা যায়৷ দক্ষিণ এশিয়ায় অন্যান্য ধর্মের মেয়েরাও দোপাট্টা পরেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/S.Jaiswal
আল-আমিরা
মূলত দুই টুকরো কাপড় দিয়ে আল-আমিরা তৈরি করা হয়৷ একটি টুকরো দিয়ে চুল পুরোপুরি ঢেকে দেয়া হয় আর অন্য টুকরোটা হিজাবের মতো জড়িয়ে দেয়া হয়৷ কম বয়সি মুসলিম নারীদের মধ্যে এই আল-আমিরা বেশ জনপ্রিয়৷
শায়লা
শায়লা হচ্ছে লম্বা, চারকোনা এক ধরনের স্কার্ফ, যা গল্ফ অঞ্চলের মুসলিম নারীদের মধ্যে জনপ্রিয়৷ এটি সাধারণত কালো রঙের হয় এবং কাঁধের কাছে পিন দিয়ে আটকাতে হয় এটিকে৷ তবে হিজাবের মতো সবকিছু ঢেকে রাখে না শায়লা৷
ছবি: Getty Images/AFP/A.Rochman
এশার্প
অনেকটা হিজাবের মতো হলেই এসার্প তৈরি হয় সিল্ক দিয়ে এবং বেশ উজ্জ্বল রঙের হয়৷ মূলত তুরস্কের মুসলিম নারীরা এটা পরিধান করেন৷ এটি বিভিন্ন রং এবং ডিজাইনে পাওয়া যায়৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Altan
কেরুডুং আর টুডুং
ইন্দোনেশিয়ার আধুনিক মেয়েরা আজকাল যে হিজাব ব্যবহার করছে, তার নাম কেরুডুং৷ আর প্রতিবেশী দেশ মালয়েশিয়ায় নারীদের মধ্যে জনপ্রিয় টুডুং৷ এই দু’টি অনেকটা চাদরের মতো হলেও, একটি অংশে সুন্দর প্যার্টার্ন থাকে এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে থাকে বিভিন্ন রঙের শেডও৷ হিজাবের মতো টুডুং বা কেরুডুং-ও চুল, গলা এবং কাঁধ পুরোপুরি ঢেকে ফেলে৷
ছবি: Getty Images/AFP/S.Khan
চাদর
ইরানের মেয়েদের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় চাদর৷ বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় সাধারণত সে দেশের নারীরা চাদর পরে নেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/B. Mehri
বোরকা
মুসলিম নারীরা সারা চেহারা এবং সারা শরীর পুরোপুরি ঢেকে ফেলে বোরকা পরিধান করেন৷ ক্ষেত্রবিশেষে বোরকার চোখের অংশে জাল দেয়া থাকে, যাতে তারা দেখতে পারেন৷ কালো ছাড়াও বিভিন্ন রংঙের বোরকা হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Arshad Arbab
জিলবুবস
সারা শরীর ঢেকে রেখেও নারীর স্তন এবং পশ্চাতদেশের আকার ফুটিয়ে তোলা যায় এই পোশাকে৷ এ জন্যই একে জিলবুবস বলা হয়৷ ইন্দোনেশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এই পোশাকের ব্যবহার দেখা যায়৷ তবে এই পোশাক নিয়ে বিতর্ক রয়েছে৷ দ্রষ্টব্য: মুসলিম নারীদের পোশাক সংক্রান্ত বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে ছবিঘরটি তৈরি করা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Indahono
10 ছবি1 | 10
অনেক সালাফিস্ট নারী অরগ্যানিক বা জৈব পণ্য ব্যবহার করতে পছন্দ করেন, কেননা মোহাম্মদের জীবনকালে অন্য কিছু ছিল না৷ শ্র্যোটার বলেন, ‘‘সাবান থেকে শুরু করে ফ্রেশ – সবকিছুই জৈব উপায়ে তৈরি হতে হবে৷ এমনকি পুরুষের জন্যও নির্ধারিত পোশাক রয়েছে, যার মধ্যে স্লোগানযুক্ত টি-শার্টও পাওয়া যায়৷''
ফ্যাশন যখন বিপজ্জনক হয়ে ওঠে
বোরকা পরাটা জার্মানির মতো দেশের সংস্কৃতিতে সাধারণ নিয়মের বিরুদ্ধাচারণ হিসেবে দেখা হতে পারে৷ কারণ এ দেশে মুসলিম পোশাকের প্রতি মানুষের বিরূপ মনোভাব রয়েছে৷ অন্যদিকে যারা এই পোশাক পরে, তাদের কাছে ঈশ্বরের প্রতি আনুগত্য দেখানোটা কে কী ভাবলো, তা নিয়ে মাথা ঘমানোর থেকে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ, বলেন শ্র্যোটার৷
যেসব দেশে বোরকা নিষিদ্ধ, যেখানে চলেছে আলোচনা
ইউরোপের বেশ কিছু দেশে বোরকা ও নেকাব নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ কিছু কিছু দেশে আবার পুরো মুখ ঢাকা বোরকা নিষিদ্ধ করা নিয়ে চলছে আলাপ-আলোচনা৷ প্রশ্ন উঠেছে, ধর্মীয় স্বাধীনতা না থাকায় এসব অঞ্চলে কি জঙ্গি তৎপরতা বাড়ছে?
ছবি: CLAUDE PARIS/AP/dapd
ফ্রান্স
ফ্রান্স ইউরোপের প্রথম দেশ, যেখানে বোরকা আইন করে নিষিদ্ধ করা হয়৷ ফ্রান্সে ৫০ লাখ মুসলমানের বাস৷ ২০১১ সালের ১১ এপ্রিল এই আইন কার্যকর হয়৷ বোরকা বা নেকাব পড়লে জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে আইনে৷
ছবি: Getty Images
বেলজিয়াম
২০১১ সালের জুলাইয়ে বেলজিয়ামেও নেকাব নিষিদ্ধ হয়৷ অর্থাৎ কোনো নারী তার পুরো মুখ কাপড়ে ঢেকে রাখতে পারবে না৷
ছবি: AP
নেদারল্যান্ডস
নেদারল্যান্ডসে ২০১৫ সালে আইন করে বোরকা নিষিদ্ধ করা হয়৷ বিশেষ করে জনসমক্ষে, অর্থাৎ স্কুল, হাসপাতাল ইত্যাদির মতো জায়গায বোরকা ব্যবহারের ওপর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে৷
ছবি: AP
স্পেন
পুরো স্পেনে নয়, বার্সেলোনা শহর কর্তৃপক্ষ সেখানে বোরকা নিষিদ্ধ করেছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ব্রিটেন
ব্রিটেনে প্রচুর মুসলিমের বাস, তাই সেখানে কোনো ইসলামি পোশাকের ওপর নিষেধাজ্ঞা নেই৷ তবে স্কুলগুলোতে নির্দিষ্ট পোশাক পরতে হয়৷ ২০০৭ সালে বেশ কয়েকটি মামলার পর স্কুল কর্তৃপক্ষ ঠিক করে, স্কুলে কেউ বোরকা বা নেকাব পরতে পারবে না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Jensen
সুইজারল্যান্ড
২০১৩ সালে সুইজারল্যান্ডের ইটালীয় ভাষাভাষীদের এলাকা টিসিনোতে বোরকা নিষিদ্ধের ওপর ভোট হয়৷ নিষিদ্ধ করার পক্ষে পড়ে ৬৫ শতাংশ ভোট৷ এরপর ২৬টি শহরে বোরকা নিষিদ্ধ হয়৷ চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে লুগানো, লোকারনো, মাগাদিনোসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় বোরকা নিষিদ্ধ হয়৷ কেউ জনসমক্ষে বোরকা পড়লে ৯ হাজার ২০০ ইউরো পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে তাঁর৷
ছবি: imago/Geisser
ইটালি
ইটালির বেশ কয়েকটি শহরে নেকাব নিষিদ্ধ৷ উত্তর পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর নোভারা কর্তৃপক্ষ সেখানে আইন করে বোরকা নিষিদ্ধ করেছে৷ ৭০-এর দশকেই মুখ ঢেকে রাখা সব ধরনের ইসলামিক পোশাকের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে ইটালি৷
ছবি: picture alliance/dpa/Rolf Haid
অস্ট্রিয়া
দেশটির ক্ষমতাসীন জোট সরকার প্রকাশ্য স্থানে পুরো মুখ ঢাকা নিকাব নিষিদ্ধ করার ব্যাপারে একমত হয়েছে৷ স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালতে নিকাব পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করতে একমত হয়েছে সরকারের শরিক দলগুলোও৷ এছাড়া যাঁরা সরকারি চাকরি করেন, তাঁদের মাথায় স্কার্ফ, হিজাব কিংবা অন্যান্য ধর্মীয় প্রতীক পরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের কথাও বিবেচনা করছে সরকার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Roessler
জার্মানি
জার্মানির রক্ষণশীল রাজনীতিকদের মধ্যে বোরকা নিষিদ্ধ করার দাবি উঠেছে৷ সিডিইউ দলের একাধিক রাজনীতিক স্কুল, সরকারি অফিস, আদালতকক্ষ ও গাড়ি চালানোর সময় বোরকা ও গোটা মুখ ঢাকা নিকাব পরা নিষিদ্ধ করতে চান৷ সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, প্রায় তিন-চতুর্থাংশ জার্মানও প্রকাশ্যে বোরকাধারী মহিলাদের দেখতে নারাজ৷ এমনকি সম্প্রতি চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলও পুরো মুখ ঢাকা নিকাব নিষিদ্ধ করার পক্ষ তাঁর সায় দিয়েছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Schuh
9 ছবি1 | 9
সালাফিস্টরা সাধারণত সারা শরীর এমনকি হাত দু'টোও গ্লাভসে ঢেকে রাখেন৷ তাছাড়া এ ধরনের পোশাক, শুধু প্রাপ্তবয়স্কদের জন্যই নয়, দু'বছর বয়সি শিশুদের জন্যও রয়েছে৷ শ্র্যোটার বলেন, ‘‘এ কারণেই দোকানগুলো বিপজ্জনক৷ তারা এমন এক সংস্কৃতির অংশ, যার সদস্যরা দেখাতে চায় যে তারা ইসলামি ভাবাদর্শে বিশ্বাসী৷ পিতৃতন্ত্র, অগণতান্ত্রিক চিন্তাভাবনা, সহিংসতার প্রতি সর্মথন – এ সবেই তাদের সায় আছে৷ তাদের বিশ্বাস, তারা মুসলিমবিরোধী এক বিশ্বে বসবাস করছে৷ আর সেই চিন্তা থেকেই চরমপন্থার দিকে আকৃষ্ট হয় তারা৷''
উগ্রপন্থিদের সঙ্গে সম্পর্ক
‘দ্য হিজাবি'-র মালিক লতিফা রাউলির বাবা আব্দেললাতিফ একজন সুপরিচিত সালাফিস্ট৷ রাউলি নিষিদ্ধ ঘোষিত ‘দোয়া এফএফএম' নামক একটি সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন, যারা কিনা ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসীদের কোরআন অনুসরণের আহ্বান জানিয়েছিল৷ শুধু তাই নয়, তিনি পিয়ের ফোগেল নামের এক ব্যক্তির ঘনিষ্ঠ হিসিবেও পরিচিত ছিলেন, যিনি প্রকাশ্যে শরীয়া আইনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন৷
বোরকার আগেই নিষিদ্ধ পাঁচটি পোশাক
বোরকা এবং বুর্কিনির ওপর নিষেধাজ্ঞা নিয়ে বিতর্ক চলছে৷ পোশাক নিয়ে এমন বিতর্ক নতুন কিছু নয়৷ বিশ্বের নানা দেশে নানা সময় অন্য পোশাকও নিষিদ্ধ হয়েছে৷ এখনো হচ্ছে৷ ছবিঘরে আজ সেরকম পাঁচটি পোশাকের কথা৷
ছবি: AP
জার্মানির একাংশে নিষিদ্ধ ছিল জিন্স
জার্মানির পুনরেকত্রীকরণের আগে পূর্ব জার্মানির অনেক নাইট ক্লাবের সামনে পরিষ্কার লেখা থাকতো, ‘‘জিন্স পরে প্রবেশ নিষেধ৷’’ জিন্স পরে গেলে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের বের করে দেয়া হতো৷ শেষে অবশ্য তরুণ প্রজন্মের চাহিদার কাছে তখনকার কমিউনিস্ট সরকার নতি স্বীকার করে৷ এরিক হ্যোনেকারের নির্দেশে নাকি এক সঙ্গে ১০ লক্ষ লেভি’স জিন্স আমদানি তরুণ প্রজন্মের চাহিদা মেটানো হয়েছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
তুরস্কে নিষিদ্ধ ‘ফেজ’ টুপি
১৯২০-এর দশক পর্যন্ত তুরস্কে লাল রঙের টুপি ‘ফেজ’ খুব জনপ্রিয় ছিল৷ কিন্তু অটোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর, বিশেষ করে কামাল আতার্তুকের সময় সেই টুপি নিষিদ্ধ করা হয়৷ পুরোনো দিনের স্মৃতি মনে করিয়ে দেয় বলেই নাকি এ ধরনের টুপি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল৷ নিষেধাজ্ঞা এখনো আছে, তবে তার কোনো কার্যকারিতা নেই৷
ছবি: Fotolia/Ivonne Wierink
স্কটল্যান্ডে বহুকাল নিষিদ্ধ ছিল কিল্ট
স্কটল্যান্ডে ১৮ শতকের অনেকটা সময় এই ধরনের ঝালরওয়ালা ঘাগড়া নিষিদ্ধ ছিল৷ ঐতিহ্যবাহী এই পোশাক স্কটরা প্রতিরোধ এবং দেশপ্রেমের প্রতীক হিসেবে পরিধান করে – এমন এক ধারণা থেকেই ইংরেজরা এটি নিষিদ্ধ করেছিল৷ ১৭৪৭ সালের পর থেকে প্রায় ৩৭ বছর নিষিদ্ধ ছিল এই ঘাগড়া৷ এখন অবশ্য স্কটল্যান্ডের ঘরে ঘরে আছে এই পোশাক৷
ছবি: picture-alliance/dpa
রাশিয়ায় আন্ডারওয়্যার নিষিদ্ধ
দু’বছর ধরে রাশিয়ায় বিদেশ থেকে আন্ডারওয়্যার আমদানি প্রায় বন্ধ৷ সরকার আইন করে শতকরা ৬ ভাগেরও কম সূতি আছে, এমন সব আন্ডারওয়্যার নিষিদ্ধ করার ফলে বিদেশি আন্ডারওয়্যার বাজার থেকে প্রায় উধাও৷ সূতি ছাড়া অন্য সব আন্ডারওয়্যার ত্বকের জন্য ক্ষতিকর – এই যুক্তি দেখিয়েই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়৷ নিষেধাজ্ঞার আগ পর্যন্ত রাশিয়ার বাজার বিদেশি আন্ডারওয়্যারে সয়লাব ছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Oliver Berg
যুক্তরাষ্ট্রে ‘হুডি’...
এখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সব শহরেই এই ধরণের পোশাক, অর্থাৎ ‘হুডি’ কেনা যায়, পরাও যায়৷ তবে ১০ বছর আগে কিন্তু সে দেশের সব জায়গায় হুডি পরা যেতো না৷ যুক্তরাষ্ট্রের অনেক স্কুলে হুডি এখনো নিষিদ্ধ৷
ছবি: BortN66 - Fotolia.com
5 ছবি1 | 5
২০১৪ সালে রাউলি ফ্রাংকফুর্টের একেবারে প্রাণকেন্দ্রে ‘মক্কা' নামের একটি দোকান দিয়েছিলেন, যেখানে মক্কার পানি বিক্রি হয় বলে জানানো হতো৷ কিন্তু প্রতিবেশীদের অভিযোগের মুখে দোকানটি বন্ধ করে দিতে হয়৷ শ্র্যোটারের কথায়, ‘‘তারা সেই ব্যবসা বন্ধ করে দিয়েছিল, কেননা এটা নিশ্চিত হয়েছিল যে মক্কার পানি বলে যা বিক্রি করা হতো, তা আসলে ফ্রাংকফুর্ট শহরের ট্যাপ বা কলের পানি৷''
কিন্তু রাউলির সঙ্গে উগ্রপন্থিদের যোগাযোগ আছে – জার্মান সরকারের হাতে এমন প্রমাণ থাকলেও, তা তাকে অন্যান্য কর্মকাণ্ড থেকে বিরত রাখা বা জীবনধারণের জন্য রোজগার করা থেকে বিরত রাখার জন্য যথেষ্ট নয়৷ নিষিদ্ধ হয়ে যাওয়া সংগঠনের সঙ্গে পূর্ব যোগাযোগের অর্থ এই নয় যে, আইনে এখন রাউলকে ব্যবসা করা থেকে বিরত রাখতে পারবে৷
‘‘বেআইনি না হলে জার্মানিতে প্রত্যেকেই নতুন ব্যবসা শুরু করতে পারেন'', জানান শ্র্যোটার৷
বুর্কিনি পার্টি করে মুসলিম নারীদের প্রতিবাদ
বুর্কিনির ওপর নিষেধাজ্ঞার প্রতিবাদের বেলজিয়ামের মুসলিম নারীরা অভিনব এক ‘পার্টি’ করেছেন৷ সেই পার্টিতে কেউ পরে এসেছিলেন নিকাব, কেউ বিকিনি, কেউ বা বুর্কিনি৷ সবাই সমস্বরে বলেছেন, ‘‘আমরা নারী, আমরা স্বাধীন৷’’ দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: picture-alliance/dpa/F.Sadones
নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ
সম্প্রতি মুসলিম নারীদের জন্য তৈরি সাঁতারের পোশাক ‘বুর্কিনি’ ফ্রান্সে নিষিদ্ধ করা হয়৷ সে দেশের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক আদালত অবশ্য এই নিষেধাজ্ঞাকে ‘মানবাধিকারের লঙ্ঘন’ হিসেবে আখ্যায়িত করে তা স্থগিত রাখার নির্দেশ দিয়েছে৷ তারপরও চলছে বিতর্ক, প্রতিবাদ৷ সেই প্রতিবাদের অংশ হিসেবেই অ্যান্টভ্যার্পে ‘বুর্কিনি বিচ পার্টি’-র আয়োজন করেছিলেন মুসলিম নারীরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F.Sadones
পোশাক পরা ‘ব্যক্তিগত’ বিষয়
প্রকৃত সমুদ্র সৈকতে না হলেও, আয়োজকরা অভিনব এ পার্টির নাম দিয়েছিলেন ‘বুর্কিনি বিচ পার্টি’৷ প্রতীকী প্রতিবাদের এই আয়োজনে সবাই যে শুধু বুর্কিনি পরে এসেছেন, তা কিন্তু নয়৷ পোশাক নির্বাচনে কোনো বিধিনিষেধ ছিল না৷ তাই কেউ পরেছিলেন বিকিনি, কেউ শুধু চোখ খোলা নিকাব, আবার কেউ কেউ পরে এসেছিলেন এই মুহূর্তে বিতর্কের তুঙ্গে থাকা বুর্কিনি৷ সব মিলিয়ে খুব বৈচিত্র্যপূর্ণ হয়ে উঠেছিল আয়োজনটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F.Sadones
বৈপরিত্যেও বৈচিত্র্য
পার্টিতে আসা এই নারীদের পোশাক দেখুন৷ খুব সংক্ষিপ্ত পোশাক বিকিনি যেমন আছে, তেমনই প্রায় পুরো শরীর ঢাকা বোরকাও আছে৷ এমন বৈপরিত্যে যে কোনো অসুবিধে নেই, বরং নারী এবং পুরুষের যে সব জায়গায় নিজের পছন্দের পোশাক পরার অধিকার থাকা উচিত – সে কথা সবাইকে জানাতেই আয়োজন করা হয়েছিল ‘বুর্কিনি বিচ পার্টি’৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F.Sadones
এক মুসলিম নারীর কথা
বিচ পার্টিতে নীল বুর্কিনি পরে আসা এই নারী ফ্রান্সে আরোপ করা নিষেধাজ্ঞা সম্পর্কে বললেন, ‘‘নিষেধাজ্ঞাটা খুবই অদ্ভুত৷ আমি তো আমার যা ইচ্ছে তা-ই পরতে চাই৷ নারী এবং পুরুষের সব জায়গায় নিজের ইচ্ছে মতো পোশাক পরার স্বাধীনতা থাকা দরকার৷’’
ছবি: picture-alliance/dpa/F.Sadones
‘আমরা তাঁবু পরি না’
অ্যান্টভ্যার্পে এই পার্টি আয়োজনের একটা কারণ আছে৷ অ্যান্টভ্যার্পের মেয়র কয়েকদিন আগেই এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘‘মুসলিম নারীরা তাঁবু পরে৷’’ বোরকা বা নিকাবকে তাঁবুর সঙ্গে তুলনা করার বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দেয়৷ বুর্কিনি পার্টিতে এসে অনেকেই মেয়রের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘‘আমরা তাঁবু পরি না৷’’
ছবি: picture-alliance/dpa/F.Sadones
অভাবনীয় সাড়া
আয়োজকরা পার্টিতে শ’ তিনেক মানুষ আসতে পারে বলে ধারণা করেছিলেন৷ তবে শেষ পর্যন্ত এক হাজারেরও বেশি মানুষ যোগ দিয়েছিল বুর্কিনির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিরুদ্ধে অভিনব প্রতিবাদের এই আয়োজনে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F.Sadones
ডানপন্থিদের প্রতিবাদ
‘বুর্কিনি বিচ পার্টি’-র বিরুদ্ধে প্রতিবাদে নেমেছিল মুসলিমবিরোধী উগ্র ডানপন্থিরা৷ তবে সেই প্রতিবাদে বেশি মানুষ যোগ দেয়নি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F.Sadones
আরো প্রতিবাদ
বিশ্বের নানা শহরে চলছে বুর্কিনির ওপর নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ৷ লন্ডন এবং বার্লিনে ফরাসি দূতাবাসের সামনেও নারীরা প্রতিবাদ সমাবেশ করেছেন৷