মুসলিম ব্রাদারহুডের বিরুদ্ধে নতুন করে প্রচারণা শুরু করছে সৌদি আরব৷ কয়েক সপ্তাহ ধরে দেশটির কর্মকর্তা, ধর্মীয় নেতা এবং রাষ্ট্রীয় প্রচার মাধ্যমেও সংগঠনটির বিরুদ্ধে চালানো হচ্ছে প্রচারণা৷
বিজ্ঞাপন
এসব প্রচারণায় মুসলিম ব্রাদারহুডের বিরুদ্ধে সৌদি শাসকদের বিরুদ্ধে মানুষকে উসকানি দেয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে৷ সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত কারো সম্পর্কে তথ্য পেলে তা কর্তৃপক্ষকে জানাতেও জনগণকে আহ্বান জানানো হচ্ছে এসব প্রচারণায়৷
তবে এখন পর্যন্ত দেশটিতে মুসলিম ব্রাদারহুডের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকার অভিযোগে নতুন করে কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কিনা, তা জানা যায়নি৷
রিপাবলিকান ডনাল্ড ট্রাম্পের পর ডেমোক্র্যাট জো বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর সৌদি আরব-মার্কিন সম্পর্কে কিছুটা হলেও ভাটা পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সৌদি শাসকেরা৷
তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতার পালাবদলের সঙ্গে মুসলিম ব্রাদারহুড বিরোধী এসব প্রচারণার কোনো সম্পর্ক আছে কিনা তা জানতে বার্তাসংস্থা রয়টার্স দেশটির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও মেলেনি কোনো উত্তর৷
বাইডেনের জয়ে অভিনন্দন জানানো মুসলিম ব্রাদারহুড অবশ্য সৌদি আরবের সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে৷ রয়টার্সকে সংগঠনটির মিশর শাখা জানিয়েছে, ‘‘আমাদের গ্রুপ সহিংসতা ও সন্ত্রাস থেকে দূরে অবস্থান করে, বরং স্বৈরশাসকদের সন্ত্রাসের শিকার এই সংগঠন৷’’ নতুন মার্কিন প্রশাসনকে তাদের ‘স্বৈরশাসক তোষণ’ নীতি পরিবর্তনের আহ্বানও জানিয়েছে সংগঠনটি৷
ইসরায়েলসহ মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে শক্তিশালী ১০ দেশ
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে সামরিক শক্তির দিক থেকে কোন দশটি দেশ সবচেয়ে এগিয়ে? বিশ্বের ১৩৮টি দেশকে নিয়ে করা বিশ্ব র্যাংকিং অনুযায়ী তার একটা তালিকা থাকছে ছবিঘরে৷ দেখুন...
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Hassan
মরক্কো, বিশ্ব র্যাংকিং ৫৭
উত্তর আফ্রিকার মাগরেব অঞ্চলের দেশ মরক্কোর সক্রিয় সেনাসদস্য সংখ্যা তিন লাখ ১০ হাজার৷ সামরিক খাতে বাজেট এক হাজার কোটি ডলার৷ জিএফপি স্কোর ০. ৮৪০৮৷ ছবিতে মরক্কোর জাতীয় পতাকা৷
ছবি: picture alliance/dpa/Sputnik/N. Seliverstova
সিরিয়া, বিশ্ব র্যাংকিং ৫৫
দীর্ঘ দিন ধরে যুদ্ধ চলছে সিরিয়ান আরব রিপাবলিকে৷ ফলে বাশার আল আসাদের অনুগত বাহিনীর শক্তিও কমেছে অনেক৷ তারপরও নয় নাম্বারে রাখতে হবে তাদের৷ দেশটির সক্রিয় সেনা সদস্য এক লাখ ৪২ হাজার জন৷ জিএফপি স্কোর ০. ৮২৪১৷ সামরিক খাতে বাজেট ১৮০ কোটি ডলার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Str
ইরাক, বিশ্ব র্যাংকিং ৫০
যুদ্ধে বিধ্বস্ত হলেও, অর্থনীতি দুর্বল হয়ে গেলেও আট নাম্বারে রয়েছে ইরাক৷ সামরিক খাতে বার্ষিক ব্যয় ১৭৩ কোটি ডলার৷ সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী ইরাকের সক্রিয় সামরিক সদস্য সংখ্যা এক লাখ ৬৫ হাজার৷ জিএফপি স্কোর ০.৭৯১১৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J.al-Helo
সংযুক্ত আরব আমিরাত, বিশ্ব র্যাংকিং ৪৫
সামরিক শক্তির দিক থেকে আরব বিশ্বের সব দেশের মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাত থাকছে সাত নাম্বারে৷ তাদের জিএফপি স্কোর০.৭০৩৪, সক্রিয় সেনা সদস্য ৬৪ হাজার জন৷ সামরিক খাতে বার্ষিক ব্যয় ২২৭৫ কোটি ডলার৷
ছবি: Imago/imagebroker
আলজেরিয়া, বিশ্ব র্যাংকিং ২৮
উত্তর আফ্রিকার মাগরেব অঞ্চলের আরেক মুসলিম অধ্যুষিত (৯৯%) দেশ আলজেরিয়ার এক লাখ ৩০ হাজার সদস্য নিয়ে গড়া সামরিক বাহিনীর জন্য বাজেট ১৩০০ কোটি ডলার৷ জিএফপি স্কোর ০.৪৬৫৯৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A. Belghoul
ইসরায়েল, বিশ্ব র্যাংকিং ১৮
এক লাখ ৭০ হাজার সক্রিয় সেনাসদস্য নিয়ে ইসরায়েল আছে পঞ্চম স্থানে৷ সামরিক খাতে বাজেট ২০০০ কোটি ডলার৷ জিএফপি স্কোর ০.৩১১১৷
ছবি: picture-alliance/dpa/J. Hollander
সৌদি আরব, র্যাংকিং ১৭
কিংডম অব সৌদি অ্যারাবিয়ার সক্রিয় সেনাসদস্য চার লাখ ৭৮ হাজারেরও বেশি৷ সামরিক খাতে বাজেট ৬৭৬০ কোটি ডলার৷ তবে বিশাল বাজেট হলেও ০.৩০৩৪ জিএফপি স্কোর নিয়ে সৌদি আরব রয়েছে চতুর্থ স্থানে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Hassan
ইরান, বিশ্ব র্যাংকিং ১৪
ইরানের সক্রিয় সেনাসদস্য সংখ্যা পাঁচ লাখ ২৩ হাজার৷সামরিক খাতে বার্ষিক ব্যয় ১৯৬০ কোটি ডলার৷ইরানের জিএফপি স্কোর ০.২১৯১৷
ছবি: picture-alliance/R. Fouladi
তুরস্ক, বিশ্ব র্যাংকিং ১১
এর্দোয়ানের দেশ তুরস্কের সক্রিয় সেনাসদস্য সংখ্যা তিন লাখ ৫৫ হাজারেরও বেশি৷ সামরিক খাতে বছরে ব্যয় ১৯০০ কোটি ডলার৷ জিএফপি স্কোর ০. ২০৯৮৷
ছবি: picture-alliance/Photoshot
মিশর, বিশ্ব র্যাংকিং ৯
আরব বিশ্বের দেশগুলোর মধ্যে সামরিক শক্তির দিক থেকে সবার ওপরে রয়েছে আরব রিপাবলিক অব ইজিপ্ট৷ তাদের সামরিক খাতে বাজেট ১১২০ কোটি ডলার এবং সক্রিয় সেনাসদস্য সংখ্যা চার লাখ ৪০ হাজার৷ জিএফপি স্কোর ০.১৮৭২৷
ছবি: Getty Images/AFP/K. Desouki
10 ছবি1 | 10
নতুন মার্কিন প্রশাসন বাড়াতে পারে চাপ
নব্য নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমতা নেয়ার আগেই সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্মূল্যায়নের কথা বলেছেন৷ ২০১৮ সালে তুরস্কে সৌদি কনস্যুলেটে সাংবাদিক জামাল খাশগজিকে হত্যার ঘটনায় আরো জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং ইয়েমেন যুদ্ধে সৌদি উপস্থিতি থেকে মার্কিন সমর্থন প্রত্যাহারের কথাও বলেছেন জো বাইডেন৷ খাশগজিকেও মুসলিম ব্রাদারহুডের সমর্থক বলে প্রচার করা হয়েছিল সৌদি গণমাধ্যমে৷
খাশগজিকে হত্যার ঘটনার পর থেকে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লংঘনের নানা অভিযোগ উঠেছে৷ একের পর এক নারী অধিকারকর্মী, বুদ্ধিজীবী, যাজক ও সাংবাদিকদের গ্রেপ্তারের ঘটনায় এ অভিযোগ আরো তীব্র হয়েছে৷
কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ভালো সম্পর্কের কারণে সব চাপ উৎরে যেতে আপাতত সক্ষম হয়েছেন সৌদি যুবরাজ৷ তবে জো বাইডেনের প্রশাসনের সঙ্গে সৌদি রাজপরিবারের একই ধরনের সম্পর্ক থাকবে কিনা, তা নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা৷
সোমবার সৌদি গ্র্যান্ড মুফতি শেখ আব্দুলাজিজ আল-শেখ ব্রাদারহুডকে একটি ‘বিচ্যুত গ্রুপ’ বলে আখ্যা দেন এবং সংগঠনটির সঙ্গে ‘ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই’ বলেও উল্লেখ করেন৷
আল-আরাবিয়া টেলিভিশন চ্যানেলে এক সাক্ষাৎকারে সৌদি আরবের ইসলাম বিষয়ক মন্ত্রী আব্দুল্লতিফ আল-শেখ এই গ্রুপের সদস্যদের বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে জানাতে সৌদি নাগরিকদের আহ্বান জানান৷ তিনি বলেন, ‘‘এটা একটা ধর্মীয় দায়িত্ব৷ যারা এদের বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে জানাবে না, তারাও এদের মতোই৷’’
এর পরপরই সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ধর্মীয় সংস্থা মজলিস হায়াত কিবার আল-উলামা এ বিষয়ে এক বিবৃতি দেয়৷ বিবৃতিতে ব্রাদারহুডে সৌদি জনগণে যোগ দেয়া এবং তাদের প্রতি ‘সহমর্মিতা’ দেখানো বিষয়েও সতর্ক করে দেয়া হয়৷
হামলার প্রতিক্রিয়া
সৌদি আরবের জেদ্দায় পরপর দুটি সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটার পর নড়েচড়ে বসেছে সৌদি প্রশাসন৷ বেশ কয়েক বছরে বিদেশিদের লক্ষ্য করে বিস্ফোরক ব্যবহার করে এমন হামলার ঘটনা দেশটিতে ঘটেনি৷
মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ঘাঁটিগুলো
ইরাক থেকে তুরস্ক, মধ্যপ্রাচ্যের বেশিরভাগ দেশেই রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটি৷ আছে হাজারো সৈন্য৷ এই ঘাঁটিগুলো দিয়ে ইরানকে চারপাশ থেকে ঘিরে রেখেছে যুক্তরাষ্ট্র৷
ছবি: imago/StockTrek Images
ইরাক
ইরাকে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের ৫,২০০ সৈন্য রয়েছে৷ তবে তা ক্রমান্বয়ে কমিয়ে আনার পরিকল্পনা করেছে পেন্টাগন৷ এর অংশ হিসেবে বেশ কয়েকটি ক্যাম্প থেকে এরিমধ্যে সৈন্য প্রত্যাহারও করা হয়েছে৷ বর্তমানে গ্রিন জোন, বাগদাদের কূটনৈতিক এলাকা, আল আসাদ বিমান ঘাঁটিতে দেশটির সেনাসদস্য রয়েছে৷ গত নভেম্বরে আল আসাদ বিমান ঘাঁটিতে সৈন্যদের সঙ্গে দেখা করেছেন ভাইস প্রেসিডেন্ট পেন্স৷
ছবি: imago/StockTrek Images
কুয়েত
মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম মিত্র কুয়েত৷ দুই দেশের মধ্যে রয়েছে প্রতিরক্ষা সহায়তা চুক্তি৷ দেশটিতে রয়েছে বেশ কয়েকটি মার্কিন ঘাঁটি৷ যেখানে প্রায় ১৩ হাজার সৈন্য রয়েছে৷
ছবি: Getty Images/S. Nelson
সিরিয়া
সিরিয়ার কোথায় যুক্তরাষ্ট্রের কত সংখ্যক সৈন্য রয়েছে সে বিষয়টি প্রকাশিত নয়৷ অক্টোবরে সেখান থেকে সৈন্য প্রত্যাহার শুরু করেছে ট্রাম্প প্রশাসন৷ তার আগ পর্যন্ত দেশটিতে প্রায় ২০০০ সৈন্য ছিল, বর্তমানে যা ৮০০ জনে নেমে এসেছে৷ যেসব ঘাঁটি চালু আছে তার একটি সিরিয়ান-জর্ডান সীমান্তে৷ এর কাছেই রয়েছে ইরানীয় আর তাদের সমর্থিত বাহিনী৷
ছবি: -picture alliance/AP Photo/Z. Garbarino
জডার্ন
ইরাক, সিরিয়া, ইসরায়েল, আর সৌদি আরবের সঙ্গে সীমান্ত রয়েছে জডার্নের৷ কৌশলগত দিক থেকে তাই মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভৌগলিক অবস্থান এটি৷ দেশটির মুভাফফাক ছালটি বিমান ঘাঁটি থেকে সিরিয়ায় আইএস বিরোধী হামলা চালানো হয়েছে৷ অবশ্য কিং ফয়সাল বিমান ঘাঁটিতে ২০১৬ সালে তিন মার্কিন সেনা নিহত হয়েছিল জডার্নের বিমান বাহিনীর গুলিতে৷
ছবি: AP
সৌদি আরব
সৌদি আরবে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের তিন হাজার সেনাসদস্য রয়েছে৷ অক্টোবরে সৌদি তেলক্ষেত্রে হামলার পর ইরানের সঙ্গে সৌদি আরবের সংঘাতের শঙ্কায় সেখানে আরো সৈন্য পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছে তারা৷
ছবি: Getty Images/AFP/F. Nureldine
বাহরাইন
বাহরাইনে যুক্তরাষ্ট্রের একটি নৌ ঘাঁটি রয়েছে৷ দ্বীপ রাষ্ট্রটি বরাবরই সৌদি আরবের মিত্র৷ ইরানের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের পদক্ষেপের সমর্থকও তারা৷ বর্তমানে সেখানে সাত হাজার মার্কিন সৈন্য রয়েছে৷
ছবি: AP
ওমান
ওমানের অবস্থান হরমুজ প্রণালীর কাছে আরব উপকূলে, যা জ্বালানি পরিবহনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পথ৷ ২০১৯ সালের মার্চে যুক্তরাষ্ট্রেকে বিমান ও সমুদ্র বন্দর ব্যবহারের অনুমতি দেয় ওমান৷ বর্তমানে সেখানে ৬০০ মার্কিন সৈন্য রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/E. Noroozi
সংযুক্ত আরব আমিরাত
হরমুজ প্রণালীর পাশে থাকা আরেক দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত৷ তাদেরও যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরবের সাথে ভাল সম্পর্ক বিদ্যমান৷ সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সেখানে পাঁচ হাজার সৈন্য পাঠিয়েছে পেন্টাগন৷
ছবি: picture-alliance/AP/K. Jebreili
কাতার
মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় সামরিক ঘাঁটিটি কাতারের আল উদিদে৷ এর আধুনিকায়নে ২০১৮ সালে ১৮০ কোটি ডলারে একটি প্রকল্প ঘোষণা করেছে কাতার৷ বর্তমানে সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের ১৩ হাজার সৈন্য নিযুক্ত রয়েছে৷
ছবি: Reuters/N. Zeitoon
তুরস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্য রয়েছে তুরস্কেও৷ দেশটির ইনজিরলিক বিমান ঘাঁটিসহ বেশ কিছু জায়গায় মার্কিন সেনা অবস্থান করছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
10 ছবি1 | 10
জেদ্দায় প্রথম বিশ্বযুদ্ধে নিহত অমুসলিমদের কবরস্থানে হামলার দায় অবশ্য স্বীকার করেছে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন ইসলামিক স্টেট এবং এর সঙ্গে মুসলিম ব্রাদাহুডের সম্পৃক্ততার কোনো প্রমাণ এখনও মেলেনি৷ অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজের গবেষক এলিজাবেথ কেনডাল বলছেন, নতুন মার্কিন প্রশাসন যাতে দেশটির মানবাধিকার নিয়ে প্রশ্ন তুলতে না পারে সেজন্য ‘জঙ্গিবাদ মোকাবিলায়’ এমন ‘পদক্ষেপ’ নিয়ে দৃষ্টি অন্যদিকে সরানোর চেষ্টা হতে পারে এটি৷ বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘‘নতুন এই প্রচারণার মাধ্যমে সৌদি আরবকে সন্ত্রাসের উৎপত্তিস্থল নয় বরং সন্ত্রাসের শিকার বলে একটি চিত্র দাঁড় করানোর চেষ্টা করা হচ্ছে৷’’
কারা এই ব্রাদারহুড!
৯০ বছরেরও বেশ সময় আগে মিশরেপ্রতিষ্ঠা পায় এই সংগঠনটি৷ এরপর থেকে নানা সময়ে সংগঠনটির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে৷ মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে অন্য নানা রাজনৈতিক মতাদর্শকেও প্রভাবিত করেছে ব্রাদারহুড৷
সবশেষ ২০১৩ সালে তৎকালীন ইসলামপন্থি প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিকে উৎখাত করে বর্তমান প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাতাহ আল সিসি ক্ষমতায় আসার পর মুসলিম ব্রাদারহুড আত্মগোপনে যেতে বাধ্য হয়৷
সৌদি আরব মুসলিম ব্রাদারহুডকে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মনে করে৷ সংগঠনটির রাজনৈতিক কার্যক্রম, নির্বাচনকে সমর্থন, ইত্যাদিকে সৌদি রাজপরিবারের জন্য হুমকি হিসেবেও দেখা হয়৷
অতীতে বেশকিছু অ্যাক্টিভিস্ট এবং ধর্ম প্রচারক ব্রাদারহুডের সঙ্গে সম্পৃক্ত কিছু সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন৷ কিন্তু এসব সংগঠনকে দ্রুতই নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, সদস্যদের অনেককেও গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে৷
এখন সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও মিশর মুসলিম ব্রাদারহুডকে সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকাতেও সংগঠনটিকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে লবিং করছে মধ্যপ্রাচ্যের এই কয়েকটি দেশ৷
এডিকে/কেএম (রয়টার্স)
২০১৮ সালের অক্টোবরের ছবিঘরটি দেখুন...
ইতিহাসে সৌদি-মার্কিন বন্ধুত্ব
যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি নিরাপত্তা পেয়ে থাকে কে? উত্তরে আসতে পারে ভূরাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ইসরায়েল, জর্ডান বা মিসরের নাম৷ কিন্তু বিশ্বরাজনীতিতে তেলসমৃদ্ধ সৌদি আরবের সাথে মার্কিন বন্ধুত্ব একটু অন্যরকমই৷
ছবি: Bandar Algaloud/Courtesy of Saudi Royal Court/Handout/REUTERS
বিশেষ বন্ধুত্ব
১৯৪৫ সালে সৌদি আরবের প্রথম বাদশাহ আবদুল আজিজের সঙ্গে ঐতিহাসিক বৈঠক করেন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ফ্র্যাঙ্কলিন ডি রুজভেল্ট৷ তখন থেকেই বিশেষ এক বন্ধুত্ব শুরু দুই দেশের৷ এরপর যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতার পালাবদল হলেও এই বন্ধুত্বে চিড় ধরেনি৷ ১৯৭৯ সালে ইরানে মার্কিন সমর্থিত শাহের পতন ঘটলে সৌদি আরব পরিণত হয় মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় বন্ধুতে৷
ছবি: picture alliance/akg-images
ইরানে ইসলামী বিপ্লব
১৯৭৯ সালে শাহকে সরিয়ে আয়াতুল্লাহ খোমেনি ইরানের ক্ষমতায় আসেন৷ অ্যামেরিকাকে ‘গ্রেট শয়তান’ আখ্যা দেন খোমেনি৷ তেহরানে মার্কিন দূতাবাসে জিম্মি সংকট ও উদ্ধার অভিযানে ব্যর্থতার ফলে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার আর পুনর্নির্বাচিত হতে পারেননি৷ আঞ্চলিক শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠায় বরাবরই ইরানের বিপক্ষে সৌদি আরবের পাশে দাঁড়িয়েছে যুক্তরাষ্ট্র৷
ছবি: imago/Christian Ohde
কুয়েত আক্রমণ
১৯৯০ সালের আগস্টে কুয়েত দখল করে সাদ্দাম হোসেনের ইরাক৷ সে সময় কুয়েতের রাজপরিবারকে আশ্রয় দেয় সৌদি আরব৷ যুক্তরাষ্ট্র কুয়েতকে ইরাকি বাহিনীর দখলমুক্ত করতে অভিযান চালায়৷ সে সময় সরাসরি যুদ্ধে অংশ না নিলেও মার্কিন বাহিনীকে নিজেদের ঘাঁটি ব্যবহারের অনুমতি দেয় সৌদি আরব৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. Guyot
টুইন টাওয়ার হামলা
সৌদি বাদশাহ ফাহাদ এবং পরবর্তীতে বাদশাহ আবদুল্লাহর সঙ্গে বিশেষ বন্ধুত্ব ছিল মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের৷ ওসামা বিন লাদেনের আল কায়েদা ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর টুইন টাওয়ারে হামলা চালানোর পরও এ বন্ধুত্বে ফাটল ধরেনি৷ ২০০৩ সালে মার্কিন বাহিনীর ইরাক আক্রমণেও সহায়তা করে সৌদি আরব৷
ছবি: Imago/ZUMA Press
ইয়েমেন সংকট
হুথি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে এবং প্রেসিডেন্ট মনসুর হাদির সমর্থনে সৌদি আরব নেতৃত্বাধীন জোট ২০১৫ সালে ইয়েমেনে বোমা হামলা শুরু করে৷ তিন বছর ধরে চলা এ হামলায় হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন৷ মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগও উঠেছে৷
ছবি: Reuters/K. Abdullah
কাতার
আরব বসন্তের পর থেকে এক সময়ের বন্ধু সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক শিথিল হয় কাতারের৷ অনেকটা বিপ্লবীদের পক্ষে কাতারের অবস্থান থাকলেও সৌদি আরব অবস্থান নেয় বিপক্ষে৷ তবে দুই দেশই বন্ধুপ্রতীম হওয়ায় বিরোধে পক্ষ নেয়নি যুক্তরাষ্ট্র৷ তবে ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর ২০১৭ সালে ইরান ও মুসলিম ব্রাদারহুডের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে সহায়তার অভিযোগে কাতারকে একঘরে করে দেয়া হলে যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ণ সমর্থন পায় সৌদি আরব৷
ছবি: picture-alliance
খাশগজি
তুরস্কের সৌদি কনস্যুলেটে সাংবাদিক জামাল খাশগজি হত্যার অভিযোগে বেশ বিপাকে পড়েছে সৌদি আরব৷ আন্তর্জাতিক নিন্দার মুখে এবং খাশগজি যুক্তরাষ্ট্রেই স্বেচ্ছা নির্বাসনে থাকায় বন্ধুর বিরুদ্ধে মুখ খুলতে বাধ্য হয় যুক্তরাষ্ট্রও৷ তবে শেষ পর্যন্ত সৌদি আরবকে এ বিপদ থেকেও উদ্ধারচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে৷ কোন প্রমাণ ছাড়াই খাশগজি ‘দুর্বৃত্তের’ হাতে নিহত হয়েছেন বলে মন্তব্য করেছেন তিনি৷