1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মুসলিম ব্রাদারহুড বনাম সৌদি আরব

১৯ নভেম্বর ২০২০

মুসলিম ব্রাদারহুডের বিরুদ্ধে নতুন করে প্রচারণা শুরু করছে সৌদি আরব৷ কয়েক সপ্তাহ ধরে দেশটির কর্মকর্তা, ধর্মীয় নেতা এবং রাষ্ট্রীয় প্রচার মাধ্যমেও সংগঠনটির বিরুদ্ধে চালানো হচ্ছে প্রচারণা৷

সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান
ছবি: picture-alliance/AP Photo/C. Owen

এসব প্রচারণায় মুসলিম ব্রাদারহুডের বিরুদ্ধে সৌদি শাসকদের বিরুদ্ধে মানুষকে উসকানি দেয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে৷ সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত কারো সম্পর্কে তথ্য পেলে তা কর্তৃপক্ষকে জানাতেও জনগণকে আহ্বান জানানো হচ্ছে এসব প্রচারণায়৷

তবে এখন পর্যন্ত দেশটিতে মুসলিম ব্রাদারহুডের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকার অভিযোগে নতুন করে কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কিনা, তা জানা যায়নি৷

রিপাবলিকান ডনাল্ড ট্রাম্পের পর ডেমোক্র্যাট জো বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর সৌদি আরব-মার্কিন সম্পর্কে কিছুটা হলেও ভাটা পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সৌদি শাসকেরা৷ 

তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ক্ষমতার পালাবদলের সঙ্গে মুসলিম ব্রাদারহুড বিরোধী এসব প্রচারণার কোনো সম্পর্ক আছে কিনা তা জানতে বার্তাসংস্থা রয়টার্স দেশটির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও মেলেনি কোনো উত্তর৷

বাইডেনের জয়ে অভিনন্দন জানানো মুসলিম ব্রাদারহুড অবশ্য সৌদি আরবের সব অভিযোগ অস্বীকার করেছে৷ রয়টার্সকে সংগঠনটির মিশর শাখা জানিয়েছে, ‘‘আমাদের গ্রুপ সহিংসতা ও সন্ত্রাস থেকে দূরে অবস্থান করে, বরং স্বৈরশাসকদের সন্ত্রাসের শিকার এই সংগঠন৷’’ নতুন মার্কিন প্রশাসনকে তাদের ‘স্বৈরশাসক তোষণ’ নীতি পরিবর্তনের আহ্বানও জানিয়েছে সংগঠনটি৷

নতুন মার্কিন প্রশাসন বাড়াতে পারে চাপ

নব্য নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমতা নেয়ার আগেই সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্মূল্যায়নের কথা বলেছেন৷ ২০১৮ সালে তুরস্কে সৌদি কনস্যুলেটে সাংবাদিক জামাল খাশগজিকে হত্যার ঘটনায় আরো জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং ইয়েমেন যুদ্ধে সৌদি উপস্থিতি থেকে মার্কিন সমর্থন প্রত্যাহারের কথাও বলেছেন জো বাইডেন৷ খাশগজিকেও মুসলিম ব্রাদারহুডের সমর্থক বলে প্রচার করা হয়েছিল সৌদি গণমাধ্যমে৷

খাশগজিকে হত্যার ঘটনার পর থেকে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লংঘনের নানা অভিযোগ উঠেছে৷ একের পর এক নারী অধিকারকর্মী, বুদ্ধিজীবী, যাজক ও সাংবাদিকদের গ্রেপ্তারের ঘটনায় এ অভিযোগ আরো তীব্র হয়েছে৷

কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ভালো সম্পর্কের কারণে সব চাপ উৎরে যেতে আপাতত সক্ষম হয়েছেন সৌদি যুবরাজ৷ তবে জো বাইডেনের প্রশাসনের সঙ্গে সৌদি রাজপরিবারের একই ধরনের সম্পর্ক থাকবে কিনা, তা নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা৷

সোমবার সৌদি গ্র্যান্ড মুফতি শেখ আব্দুলাজিজ আল-শেখ ব্রাদারহুডকে একটি ‘বিচ্যুত গ্রুপ’ বলে আখ্যা দেন এবং সংগঠনটির সঙ্গে ‘ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই’ বলেও উল্লেখ করেন৷

আল-আরাবিয়া টেলিভিশন চ্যানেলে এক সাক্ষাৎকারে সৌদি আরবের ইসলাম বিষয়ক মন্ত্রী আব্দুল্লতিফ আল-শেখ এই গ্রুপের সদস্যদের বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে জানাতে সৌদি নাগরিকদের আহ্বান জানান৷ তিনি বলেন, ‘‘এটা একটা ধর্মীয় দায়িত্ব৷ যারা এদের বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে জানাবে না, তারাও এদের মতোই৷’’

এর পরপরই সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ধর্মীয় সংস্থা মজলিস হায়াত কিবার আল-উলামা এ বিষয়ে এক বিবৃতি দেয়৷ বিবৃতিতে ব্রাদারহুডে সৌদি জনগণে যোগ দেয়া এবং তাদের প্রতি ‘সহমর্মিতা’ দেখানো বিষয়েও সতর্ক করে দেয়া হয়৷

হামলার প্রতিক্রিয়া

সৌদি আরবের জেদ্দায় পরপর দুটি সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটার পর নড়েচড়ে বসেছে সৌদি প্রশাসন৷ বেশ কয়েক বছরে বিদেশিদের লক্ষ্য করে বিস্ফোরক ব্যবহার করে এমন হামলার ঘটনা দেশটিতে ঘটেনি৷

জেদ্দায় প্রথম বিশ্বযুদ্ধে নিহত অমুসলিমদের কবরস্থানে হামলার দায় অবশ্য স্বীকার করেছে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠন ইসলামিক স্টেট এবং এর সঙ্গে মুসলিম ব্রাদাহুডের সম্পৃক্ততার কোনো প্রমাণ এখনও মেলেনি৷ অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজের গবেষক এলিজাবেথ কেনডাল বলছেন, নতুন মার্কিন প্রশাসন যাতে দেশটির মানবাধিকার নিয়ে প্রশ্ন তুলতে না পারে সেজন্য ‘জঙ্গিবাদ মোকাবিলায়’ এমন ‘পদক্ষেপ’ নিয়ে দৃষ্টি অন্যদিকে সরানোর চেষ্টা হতে পারে এটি৷ বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে তিনি বলেন, ‘‘নতুন এই প্রচারণার মাধ্যমে সৌদি আরবকে সন্ত্রাসের উৎপত্তিস্থল নয় বরং সন্ত্রাসের শিকার বলে একটি চিত্র দাঁড় করানোর চেষ্টা করা হচ্ছে৷’’

কারা এই ব্রাদারহুড!

৯০ বছরেরও বেশ সময় আগে মিশরেপ্রতিষ্ঠা পায় এই সংগঠনটি৷ এরপর থেকে নানা সময়ে সংগঠনটির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে৷ মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে অন্য নানা রাজনৈতিক মতাদর্শকেও প্রভাবিত করেছে ব্রাদারহুড৷

সবশেষ ২০১৩ সালে তৎকালীন ইসলামপন্থি প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিকে উৎখাত করে বর্তমান প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাতাহ আল সিসি ক্ষমতায় আসার পর মুসলিম ব্রাদারহুড আত্মগোপনে যেতে বাধ্য হয়৷

সৌদি আরব মুসলিম ব্রাদারহুডকে প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মনে করে৷ সংগঠনটির রাজনৈতিক কার্যক্রম, নির্বাচনকে সমর্থন, ইত্যাদিকে সৌদি রাজপরিবারের জন্য হুমকি হিসেবেও দেখা হয়৷

অতীতে বেশকিছু অ্যাক্টিভিস্ট এবং ধর্ম প্রচারক ব্রাদারহুডের সঙ্গে সম্পৃক্ত কিছু সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন৷ কিন্তু এসব সংগঠনকে দ্রুতই নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, সদস্যদের অনেককেও গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে৷

এখন সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন ও মিশর মুসলিম ব্রাদারহুডকে সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসী সংগঠনের তালিকাতেও সংগঠনটিকে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে লবিং করছে মধ্যপ্রাচ্যের এই কয়েকটি দেশ৷

এডিকে/কেএম (রয়টার্স)

২০১৮ সালের অক্টোবরের ছবিঘরটি দেখুন...

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ