1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মুসলিম হলেই ‘বাঙালি', হিন্দু হলে ‘ইন্ডিয়ান'

১ সেপ্টেম্বর ২০১৭

রাখাইন রাজ্যে এমন নীতিতেই চলছে মিয়ানমার সরকার৷ রাষ্ট্রীয়ভাবেই রোহিঙ্গা মুসলিমদের অবৈধভাবে বসবাস করা ‘বাঙালি' বলে অভিহিত করা হয়৷ এমনকি প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে সেদেশে বাস করা হিন্দুদেরও নাগরিক মানতে নারাজ মিয়ানমার৷

Bangladesch Rohingya Flüchtlinge bei Cox’s Bazar
ছবি: Reuters/M. Ponir Hossain

২৫ আগস্ট থেকে রাখাইন রাজ্যে শুরু হওয়া সহিংসতায় এরই মধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন চার শতাধিক মানুষ৷ সেনাবাহিনীর বরাতে বার্তাসংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, সেনা অভিযানে কমপক্ষে ৩৭০ রোহিঙ্গা বিদ্রোহী নিহত হয়েছে৷ এছাড়া আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ১৪ জন, দু'জন সরকারি কর্মকর্তা এবং ১৪ জন বেসামরিক নাগরিকও নিহত হয়েছেন সহিংসতায়৷ তবে বাস্তবে এ সংখ্যা আরো বেশি বলে ধারণা করা হচ্ছে৷

বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী রাখাইন রাজ্যে সেনা অভিযান এখনও চলছে৷ এই অভিযানে হত্যা, গণধর্ষণের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগও উঠেছে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে৷

সহিংসতা থেকে বাঁচতে এখনও দলে দলে নাফ নদী পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকছেন রোহিঙ্গারা৷ শুরুর দিকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠালেও রাখাইন রাজ্যে সহিংসতা বাড়তে থাকায় অনানুষ্ঠানিকভাবে সীমানা খুলে দিয়েছে বাংলাদেশ৷ গত এক সপ্তাহে প্রায় ৩৮ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে বলে জানিয়েছে রয়টার্স৷

ছবি: Reuters/M. Ponir Hossain

নাফ নদীতে ভাসছে মরদেহ

শুক্রবার ভোরে কক্সবাজারের টেকনাফে নাফ নদীতে ভেসে এসেছে ১৬ রোহিঙ্গার মরদেহ৷ মরদেহের অবস্থা দেখে বাংলাদেশের সীমান্ত কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, দুই-তিন দিন আগে তাঁদের হত্যা করে মরদেহ পানিতে ফেলে দেয়া হয়েছে৷

এর আগে, বৃহস্পতিবার টেকনাফের শাহ পরীর দ্বীপে উদ্ধার করা হয় ১০ শিশু ও নয় নারীর মরদেহ৷ বুধবার নদী পাড়ি দিতে গিয়ে নৌকাডুবিতে নিহত চার রোহিঙ্গার মরদেহ উদ্ধার করে বাংলাদেশ পুলিশ৷

গত কয়েকদিনে সীমানা অতিক্রম করে পালানোর সময় ওপার থেকে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে৷ কয়েকটি ক্ষেত্রে মর্টার ব্যবহারের কথাও জানিয়েছে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম৷

গুলিবিদ্ধ হয়ে অন্তত ৩৩ জন রোহিঙ্গা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন৷ হাসপাতালেই মারা গেছেন গুরুতর আহত দু'জন৷

হিন্দু? না ওরা মুসলিম?

মুসলিম ধর্মাবলম্বী রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে নেই কোনো রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি৷ সংবিধানে তাঁদের কোনো নাগরিকত্বও নেই৷ ফলে সরকার সবসময়ই রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া ‘অবৈধ অভিবাসী' হিসেবে বিবেচনা করে৷

রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে দু'সপ্তাহ আগেই একটি প্রতিবেদন জমা দেয় কফি আনান কমিশন৷ প্রতিবেদনে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দেয়ার পথ উন্মুক্ত করা, অবাধ চলাচল, মতপ্রকাশের সুযোগ দেয়াসহ বেশকিছু সুপারিশ করা হয়৷ তবে সে প্রতিবেদন নিয়ে খুব একটা মাথা ঘামাচ্ছে না অং সান সু চি-র সরকার৷ বরং জাতিসংঘ একটি স্বাধীন তদন্ত দল পাঠাতে চাইলে, ভিসা দেয়া হয়নি দলের সদস্যদের৷

ছবি: Getty Images/R.Asad

তবে এবারের সহিংসতায় শুধু রোহিঙ্গা মুসলিমরাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তা নয়৷ রাখাইন রাজ্যের মংডুতে বাস করা কয়েকশ' হিন্দু পরিবারকেও ছাড়তে হচ্ছে দেশ৷ গত দু'দিনে অন্তত সাড়ে চারশ হিন্দু ধর্মাবলম্বী নারী-পুরুষ-শিশু সীমানা পেরিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন বাংলাদেশে৷ আরো দুই শতাধিক হিন্দু নাগরিক আটকা পড়েছেন নো-ম্যানস' ল্যান্ডে৷

রোহিঙ্গা সংকটে এ ঘটনা অনেকটাই নতুন৷ হিন্দু শরণার্থীরা বলছেন, ২৫ আগস্ট রাতে যখন রাখাইন রাজ্যে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর ওপর আক্রমণ করে আরাকান রোহিঙ্গা সলিডারিটি আর্মি – এআরএসএ, তখন কিছু কালো কাপড় পড়া কিছু লোক আগ্নেয়াস্ত্র, বোমা ও ছুরি হাতে মংডুর ফকিরাবাজার, রিক্তাপাড়া এবং চিকনছড়ি গ্রামেও হামলা চালায়৷ এখনও কালো কাপড় পরিহিতরা সেই গ্রামগুলিতে অবস্থান নিয়ে আছে৷ তাদের হামলায় অন্তত ৮৬ হিন্দু গ্রামবাসীর মৃত্যু হয়েছে বলেও দাবি করছেন শরণার্থীরা৷

ঠিক কী কারণে, কারা এই হামলা চালাচ্ছে, তা এখনও বুঝে উঠতে পারছেন হিন্দু শরণার্থীরা৷ একদিকে সেনাবাহিনী, অন্যদিকে সশস্ত্র দখলদার, এই সহিংসতা থেকে বাঁচতে দলে দলে বাংলাদেশে আসছেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরাও৷

মিয়ানমার সরকার রাখাইনের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদেরও মিয়ানমারের অধিবাসী বলে মনে করে না৷ প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে মিয়ানমারে বসবাস করায় নিজেদের বার্মিজ বলেই দাবি করেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা৷ কিন্তু পরিচয়পত্রে নিবন্ধনের ক্ষেত্রে তাদেরও জাতীয়তা হিসেবে দেখানো হয় ‘ইন্ডিয়ান'৷

এদিকে, মিয়ানমার সরকার জানিয়েছে উত্তর রাখাইনের সহিংসতা কবলিত এলাকা থেকে ১১ হাজার সাতশ' ‘আদিবাসীকে' সরিয়ে নেয়া হয়েছে৷ উত্তর রাখাইনে ‘আদিবাসী' বলতে অমুসলিম বার্মিজদের বুঝিয়ে থাকে মিয়ানমার সরকার৷

বৃথা বৈঠকে জাতিসংঘ

যুক্তরাজ্যের আহ্বানে বুধবার রোহিঙ্গা ইস্যুতে বৈঠকে বসে জাতিসংঘের ১৫ সদস্যের নিরাপত্তা পরিষদ৷ দীর্ঘ কয়েক ঘণ্টার রুদ্ধদ্বার বৈঠক কার্যত শেষ হয়েছে কোনো সিদ্ধান্ত ছাড়াই৷ চলমান সহিংসতার নিন্দা জানালেও আনুষ্ঠানিক কোনো বিবৃতি দেয়নি নিরাপত্তা পরিষদ৷

কূটনীতিকরা বলছেন, রোহিঙ্গা সংকটে জাতিসংঘের আরো শক্ত ভূমিকা রাখার পথে বাধা চীন৷ মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সংকট হিসেবে দেখে, সেখানে এখনই জাতিসংঘের হস্তক্ষপের প্রস্তাবে এর আগেও ভেটো দিয়েছিল চীন৷

বৈঠক শেষে জাতিসংঘে ব্রিটিশ দূত ম্যাথিউ রাইক্রফট সাংবাদিকদের জানান, ‘‘অধিকাংশ সদস্য রাষ্ট্রই সংকট নিরসনে অং সান সু চি-র ওপরই ভরসা রাখতে চায়৷ এখন পর্যন্ত গণতন্ত্রের পথে তাঁর উন্নতি আশাব্যঞ্জক৷''

তবে সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বার্ষিক বৈঠকে রোহিঙ্গা সংকট বেশ জোরেসোরেই আলোচনায় উঠবে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা৷ চীনের অনানুষ্ঠানিক সমর্থন সত্ত্বেও বড় ধরনের চাপের মুখেই পড়তে হতে পারে মিয়ানমারকে৷

এডিকে/ডিজি (রয়টার্স, এপি, এএফপি, ডিপিএ)

রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আপনার মন্তব্য কী? লিখুন নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ