মার্কিন টেলিভিশন চ্যানেল সিএনবিসি বিশ্বের ২০০ জন প্রভাবশালী ব্যক্তির একটি তালিকা তৈরি করেছে৷ অনলাইন ভোটাভুটির মাধ্যমে এই তালিকা থেকে শীর্ষ ২৫ জনকে বাছাই করা হবে৷ বাংলাদেশের নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসও রয়েছেন তালিকায়৷
বিজ্ঞাপন
সিএনবিসির তালিকায় বাংলাদেশের একমাত্র নোবেল জয়ীর নাম থাকার বিষয়টি ফেসবুকে জানায় ‘মুহাম্মদ ইউনূস' শিরোনামের একটি ফেসবুক পাতা৷ এক লাখ সত্তর হাজারের বেশি ভক্ত সমৃদ্ধ এই পাতাটি অধ্যাপক ইউনূসের আনুষ্ঠানিক বা ফেসবুক স্বীকৃত কোন পাতা নয়৷ পাতাটি তাঁর ভক্তদের৷ এই পাতায় সিএনবিসির লোগো যুক্ত একটি ছবি প্রকাশ করা হয় এবং একইসঙ্গে অধ্যাপক ইউনূসের পক্ষে ভোট চাওয়া হয়েছে৷
ইউনূসের ক্ষুদ্রঋণ চলছে জার্মানিতেও
শুধুমাত্র উন্নয়নশীল দেশেই দারিদ্র্যমোচনে সহায়তা করছে না ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প৷ নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের এই উদ্ভাবন এখন উন্নত বিশ্বেও গুরুত্ব পাচ্ছে৷ জার্মানি এক্ষেত্রে সৃষ্টি করেছে উদাহরণ৷ এই বিষয়ে আমাদের ছবিঘর৷
ছবি: Getty Images
সিলভিয়ার গল্প
বাড়িতে বাড়িতে চিঠিপত্র বিলি করতে করতেই জার্মানির সিলভিয়া হ্যোয়েনটিংগার একটি বিষয় লক্ষ্য করেন৷ অনেক বাড়ির ছাদে বসানো হয়েছে সোলার প্যানেল৷ তাঁর মনে প্রশ্ন জাগে, এসব প্যানেল পরিষ্কার করা হয় কিভাবে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে ক্ষুদ্রঋণের সন্ধান পান তিনি৷
ছবি: privat
দু’হাজার ইউরো দিয়ে শুরু
সিলভিয়া আবিষ্কার করেন, সোলার প্যানেল পরিষ্কারের কাজ তেমন কেউ করছে না৷ অথচ মাত্র দু’হাজার ইউরো দিয়ে মেশিন কিনে এই কাজ করা সম্ভব৷ কিন্তু সাধারণ ব্যাংক এত কম টাকা ঋণ দিতে রাজি নয়৷ সিলভিয়া তখন ক্ষুদ্রঋণের সহায়তা নেন৷
ছবি: DW/G.Rueter
জার্মানিতে ক্ষুদ্রঋণ
২০১০ সালের আগ পর্যন্ত উন্নত অর্থনীতির কারণে জার্মানিকে ক্ষুদ্রঋণের অনুপযুক্ত মনে করা হতো৷ কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি ভিন্ন৷ ২০১০ সালে জার্মান সরকার এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় এদেশে চালু হয় ক্ষুদ্রঋণ তহবিল৷ এই তহবিল থেকে ঋণ নেয়ার হার দ্রুতই বাড়ছে৷
ছবি: Fotolia/apops
ক্ষুদ্রঋণ দিচ্ছে ৬০টি প্রতিষ্ঠান
জার্মান মাইক্রোফিন্যান্স ইন্সটিটিউটের ইয়র্গ শ্যুলমান জানান, জার্মানিতে বর্তমানে ৬০টির বেশি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ক্ষুদ্রঋণ সহায়তা দিচ্ছে৷ তাদের ঋণ দেওয়ার পরিমাণ তিন হাজার থেকে ২০ হাজার ইউরোর মধ্যে৷ (প্রতীকী ছবি)
ছবি: Fotolia/Guido Grochowski
চাহিদা বাড়ছে
শুধু জার্মানি নয়, গোটা ইউরোপেই ক্ষুদ্রঋণের চাহিদা দ্রুত বাড়ছে৷ মার্কিন পত্রিকা ‘দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের’ এক জরিপ বলছে, ইউরোপে ২০০৮ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে ক্ষুদ্রঋণের চাহিদা এক তৃতীয়াংশ বেড়েছে৷ শুধু স্পেনেই এই সময়ের মধ্যে ক্ষুদ্রঋণের সহায়তা নিয়েছেন ৭৫ হাজার ব্যবসায়ী৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: picture-alliance/dpa
সুদের হার লাভজনক নয়
ইয়র্গ শ্যুলমান জানান, জার্মানিতে ক্ষুদ্রঋণ দানের ক্ষেত্রে সুদের হার এখন মাত্র দশ শতাংশ৷ এই হার ঋণদাতাদের জন্য লাভজনক নয়৷ তবে সরকার এক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে সহায়তা দিচ্ছে৷ (ফাইল ফটো)
ছবি: picture-alliance/dpa
সন্তুষ্ট সিলভিয়া
ক্ষুদ্রঋণ নিয়ে সোলার প্যানেল পরিষ্কারের কাজ শুরু করা সিলভিয়া হ্যোয়েনটিংগার কিন্তু সন্তুষ্ট৷ শুরুর দিকে বছরে আশিটির মতো কাজের অর্ডার পেতেন তিনি৷ এখন সেই অর্ডারের পরিমাণ প্রায় তিনগুণ বেড়েছে৷ একেকটি অর্ডার থেকে তাঁর আয় তিন থেকে চারশো ইউরো৷ ফলে ঋণের টাকা শোধ করা কোনো বিষয়ই নয়৷
ছবি: Fotolia/Marco2811
ক্ষুদ্রঋণের জনক মুহাম্মদ ইউনূস
২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার জয় করেন মুহাম্মদ ইউনূস এবং গ্রামীণ ব্যাংক৷ বিশ্বের একমাত্র ব্যাংক হিসেবে এই সম্মাননা অর্জন করে গ্রামীণ ব্যাংক৷ অধ্যাপক ইউনূস তাঁর ক্ষুদ্রঋণের ধারণা কাজে লাগিয়ে আশির দশকে ব্যাংকটি গড়ে তোলেন৷ বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বের আরো অনেক দেশে সাফল্য দেখিয়েছে ক্ষুদ্রঋণ প্রকল্প৷
ছবি: Getty Images
8 ছবি1 | 8
মূলত ক্ষুদ্রঋণের পথিকৃৎ হিসেবে তালিকায় মুহাম্মদ ইউনূসের নাম রয়েছে৷ আর তাঁর সঙ্গে রয়েছেন স্টিভ জবস, বিল গেটস, মার্ক সাকারবার্গসহ আরো বেশ কয়েকজন বিখ্যাত ব্যক্তি৷ বাংলাদেশ সময় শুক্রবার সন্ধ্যা অবধি ভোটাভুটির ফলাফলে দেখা গেছে, গ্রামীণ ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা ভোটের হিসেবে এখনো বেশ পিছিয়ে আছেন৷ তবে শুক্রবার সারাদিনে তাঁর পক্ষে ভোট বেড়েছে প্রায় শূন্য দশমিক ২০ শতাংশ৷ ভোটের হিসেবে তালিকার শীর্ষে রয়েছেন ‘আইগড' খ্যাত অ্যাপলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত স্টিভ জবস৷
এদিকে, ডয়চে ভেলের ফেসবুক পাতায় এ সংক্রান্ত একটি পোস্টে মন্তব্য করেছেন অনেকে৷ ফেরদৌস সরকার লিখেছেন, ‘‘বাংলাদেশের জন্য গৌরবজনক নোবেল পুরস্কার নিয়ে আসা মানুষটিকে দেশের মানুষ ঠিকভাবে চিনতে পারলেন না৷ তিনি বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং মর্যাদাপূর্ণ নাগরিকদের মধ্যে অন্যতম৷ পৃথিবীর অনেক মানুষ তাঁকে চেনেন কিন্তু পরিতাপের বিষয়, বাঙালিই তাঁকে চিনতে পারলো না৷'' রহমান খান লিখেছেন, ‘‘ ড. মুহাম্মদ ইউনূস, আমরা আপনার জন্য গর্ববোধ করি৷''
প্রসঙ্গত, অধ্যাপক ইউনূসের কর্মকাণ্ড নিয়ে বাংলা ব্লগেও নিয়মিত বিভিন্ন নিবন্ধ প্রকাশ হচ্ছে৷ পহেলা ফেব্রুয়ারি সামহয়্যার ইন ব্লগে মোঃ নাহিদ শামস্ লিখেছেন, ‘‘পৃথিবীর ইতিহাসে নোবেল বিজয়ীদের সম্মান ও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়৷ ড. ইউনূসকে পুরো পৃথিবী সম্মানিত করলেও বাঙালী জাতির কিয়দংশের কাছে তিনি যে পরিমাণ বঞ্চনা সইছেন, তার উদাহরণ বিশ্বে বিরল৷''
এই ব্লগার লিখেছেন, ‘‘একজন বাংলাদেশি নোবেল পুরস্কার পেলেন, বিশ্বের সর্বাপেক্ষা প্রভাবশালী বাঙালীদের একজন হলেন- কট্টরপন্থি আওয়ামী সমর্থকগণ তা কোনভাবেই মেনে নেবে না! তারা লজিক দেখাবেন ‘ইউনূস সুদখোর৷''