শারদীয় দুর্গাপূজার নিরাপাত্তা নিয়ে আশঙ্কায় হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা৷ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাসগুপ্ত ডিডাব্লিউকে বলেন, ‘‘এরইমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে৷
বিজ্ঞাপন
‘সংখ্যালঘুদের ওপর যে অত্যাচার চলছে, তা একাত্তরের মতোই পরিকল্পিত’
আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজার নিরাপাত্তা নিয়ে আশঙ্কায় আছেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা৷ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রানা দাসগুপ্ত ডয়চে ভেলেকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘‘এরইমধ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে৷
রানা দাসগুপ্ত জানান, ‘‘পরিকল্পিতভাবে সংখ্যালঘুদের ওপর হামলাও অব্যাহত আছে৷'' তাংর কথায়, ‘‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যাই বলুন না কেন, নিরাপত্তার চাদরের ভিতরই দুর্গাপূজা উদযাপন করতে হবে৷ আশঙ্কামুক্ত ও স্বাধীনভাবে নয়৷''
মালোপাড়ার হিন্দুদের কান্না থামেনি
বাংলাদেশের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট দেয়াকে ঘিরে যশোরের অভয়নগর উপজেলার মালোপাড়ায় ৫ জানুয়ারি সন্ধ্যায় হিন্দুদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়ার পাশাপাশি লুটপাটও করা হয়৷
ছবি: DW
নেই নিরাপত্তাকর্মীর সাড়া
যশোরের অভয়নগরের চাপাতলী গ্রামের প্রবেশপথে পুলিশের সতর্ক অবস্থান৷ গত ৫ জানুয়ারি জাতীয় নির্বাচনের দিন এই গ্রামের নিম্নবর্ণের হিন্দু অধ্যুষিত মালোপাড়ায় বসবাসরতদের উপর সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনা ঘটে৷ আক্রান্তরা জানান, ঘটনাস্থলের মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দূরে থানার অবস্থান হলেও অনেক ফোন করেও সে সময়ে পুলিশ কিংবা কোনো নিরাপত্তাকর্মীর সাড়া মেলেনি৷
ছবি: DW
‘নদী ঠাকুর’
দুর্বৃত্তদের হামালায় লণ্ডভণ্ড মায়া রানি বিশ্বাসের একমাত্র মাথা গোঁজার ছোট্ট নিবাস৷ সেদিন হামলা শুরু হলে পাশের বুড়ি ভৈরব নদীতে ঝাঁপ দিয়ে ওপারে উঠে প্রাণে বেঁচে যান বিধবা এই নারী৷ তাঁর ভাষায় ‘নদী ঠাকুর’ সেদিন না থাকলে জানটা হয়ত থাকতো না৷
ছবি: DW
প্রাণ বাঁচাতে নদীতে
নিজের ঘরের ভাঙা আসবাব, টেলিভিশনের পাশে মালোপাড়ার গৃহবধু উজ্জ্বলা বিশ্বাস৷ হামলাকারীদের ভয়াবহ রূপ সামান্য দেখেছিলেন তিনি৷ প্রাণ বাঁচাতে তিনিও ঝাঁপ দেন বুড়ি ভৈরবে৷ হামলার সময়ে তাঁর মনে হয়েছিল যে ভগবান সেদিন পাশে ছিলেন না৷
ছবি: DW
বই-পত্র পুড়িয়ে দিয়েছে
কলেজ পড়ুয়া মঙ্গলা বিশ্বাসের বই-পত্র, এমনকি সার্টিফিকেটও পুড়িয়ে দিয়েছে হামলাকারীরা৷
ছবি: DW
সুন্দর স্বপ্নে চির
হামলাকারীদের ভেঙে দেয়া আয়নায় কলেজ পড়ুয়া মঙ্গলা বিশ্বাসের প্রতিবিম্ব৷ বাড়ির দেয়ালে টাঙানো এই ভাঙা আয়নার মতোই মঙ্গলার সুন্দর স্বপ্নেও চির ধরিয়েছে হামলাকারীরা৷ মঙ্গলার আক্ষেপ, তাঁর বই-পত্র আর সার্টিফিকেট কী দোষ করলো?
ছবি: DW
আত্মীয়দের বাড়িতে আশ্রয়
হামলার ছয় দিন পরে এঁরা ফিরছেন বাড়িতে৷ হামলার সময় পার্শ্ববর্তী গ্রামে আত্মীয়দের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন তাঁরা৷
ছবি: DW
হামলার প্রত্যক্ষদর্শী
৮৬ বছর বয়সি মৃত্যুঞ্জয় সরকার সেদিনের হামলার প্রত্যক্ষদর্শী৷ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ও দেশ ছাড়েননি তিনি৷ কিন্তু হামলার পর তাঁর মনে হচ্ছিল যে, সে সময়ে ছেড়ে যাওয়াটাই উচিত ছিল তাঁর৷
ছবি: DW
গাছও রেহাই পায়নি
বাড়ি-ঘরের পাশাপাশি মালোপাড়ার গাছও জ্বালিয়ে দিয়েছিল দুর্বৃত্তরা৷
ছবি: DW
পলাতক জামায়াত নেতা
মালোপাড়ায় হামলার পরে চাপাতলী গ্রামের পার্শ্ববর্তী গ্রাম বালিয়াডাঙ্গায় স্থানীয় জামায়াতে ইসলামীর থানা আমীর মাওলানা আব্দুল আজিজের বাড়ি ভাঙচুর করে যৌথবাহিনী৷ ঘটনার আগে থেকেই পলাতক রয়েছেন এ জামায়াত নেতা৷
ছবি: DW
আক্রান্তদের অভিযোগ
জাতীয় সংসদের সাবেক হুইপ আওয়ামী লীগ নেতা শেখ আব্দুল ওহাব৷ মালোপাড়ায় সাম্প্রদায়িক হামলার জন্য জামায়াত শিবির ছাড়াও স্থানীয় আওয়ামী লীগের দলীয় কোন্দলকেও দায়ী করেছেন অনেকে৷ সাবেক এই সাংসদ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেতে ব্যর্থ হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়েছেন৷ সেখানে নতুন প্রার্থী হিসেবে রণজিৎ রায় মনোনয়ন পাওয়ায় এই দুই জনের সমর্থকদের মাঝে বেশ উত্তেজনা ছিল পুরো নির্বাচনের সময়টায়৷
ছবি: DW
গণধর্ষণ
যশোরের আরেক ভয়াল জনপদ মনিরামপুর উপজেলার হাজরাইল গ্রামের দাসপাড়ার বাসিন্দা অনারতী দাস৷ ৭ জানুয়ারি রাতে তাঁর সামনেই অস্ত্রের মুখে একদল দুবৃত্ত গণধর্ষণ করে পুত্রবধু মনিমালা দাস আর ভাতিজি রূপালী দাসকে৷
ছবি: DW
ভয়াবহ দৃশ্যের প্রত্যক্ষদর্শী
কার্তিক দাসকেও সেদিন রাতে সেই ভয়াবহ দৃশ্যের প্রত্যক্ষদর্শী হতে হয়েছিল৷ দাসপাড়ায় গণধর্ষণের শিকার নিম্নবর্ণের হিন্দু মনিমালা দাসের শ্বশুর ও রূপালী দাসের চাচা তিনি৷
ছবি: DW
বাড়িঘর ছেড়েছেন
দাসপাড়ায় গণধর্ষণের শিকার হওয়া পরিবার দুটি আতঙ্কে বাড়িঘর ছেড়েছেন৷
ছবি: DW
শুধুই আতঙ্ক
দাসপাড়ার এক নারী৷ দাসপাড়ার নারীদের এখন নির্ঘুম রাত কাটে আতঙ্কে৷
ছবি: DW
14 ছবি1 | 14
তিনি আরো বলেন, ‘‘একটি মহল চায় সংখ্যালঘুরা এ দেশ ছেড়ে চলে যাক৷ সংখ্যালঘু নির্যাতন ও প্রতিমা ভাঙচুরের দু-একটি ঘটনা ছাড়া অপরাধীদের বিচার বা শাস্তিরও নজির নেই৷'' তাই তাঁর মতে, ‘‘আইনমন্ত্রী প্রতিমা ভাঙচুরের বিরুদ্ধে যে আলাদা আইনের কথা বলেছেন, তা দ্রুত প্রণয়ন করে কার্যকর করা উচিত৷''
এই পরিস্থিতিতে এবার বাংলাদেশে ২০ হাজার পূজামণ্ডপে পূজার প্রস্তুতি চলছে বলে জানান রানা দাসগুপ্ত৷
রানা দাসগুপ্তের সঙ্গে কি আপনি একমত? মতামত জানান নীচের মন্তব্যের ঘরে৷
ঢাকায় সার্বজনীন দুর্গাপূজা
বাংলাদেশে এ বছর ২৮ হাজার পূজা মণ্ডপে পূজা উদযাপন হয়েছে৷ ধর্মীয় সম্প্রীতির এ দেশে দুর্গাপূজা এখন শুধু হিন্দুদেরই উৎসব নয়; এটি এখন সার্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
চল্লিশ বছর ধরে প্রতিমা তৈরি
দুর্গাপূজার আগে পুরনো ঢাকার সুত্রাপুরের শ্রী শ্রী ঠাকুর জিউ মন্দিরে প্রতিমায় রং করছেন শিল্পী বিসু লাল পাল৷ গত প্রায় চল্লিশ বছর ধরে এই শিল্পী প্রতিমা তৈরি করছেন৷
ছবি: DW/M. Mamun
সুত্রাপুরে দুর্গাপূজা
পুরনো ঢাকার সুত্রাপুরের শ্রী শ্রী ঠাকুর জিউ মন্দিরে প্রতিমার সাজসজ্জায় ব্যস্ত এক প্রতিমা শিল্পী৷ বাঙালি হিন্দু সমাজের প্রধান ধর্মীয় উৎসব এ শারদীয় দুর্গাপূজা ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় পালন করা হয় ঘটা করে৷
ছবি: DW/M. Mamun
ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির
ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শারদীয় দুর্গাপূজার মূল আয়োজন শুরু হয়৷ ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে মহা সপ্তমীর দিন সকালে মণ্ডপের সামনে ভক্তদের ভিড়৷ ঢাকায় দুর্গা উৎসবের মূল আয়োজনটি বসে জাতীয় এ মন্দিরে৷
ছবি: DW/M. Mamun
ভক্তের সমাগম
মহা সপ্তমীর দিনে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে দেবী দুর্গাকে প্রণাম করছেন ভক্তরা৷
ছবি: DW/M. Mamun
অস্থায়ী মণ্ডপ
ঢাকার বনানী মাঠে দুর্গাপূজার অস্থায়ী মণ্ডপ৷ এই এলাকায় মূলত ধনিক শ্রেণির হিন্দুদের বসবাস৷ প্রতি বছর তাই এ মাঠে বর্ণিল সাজের মণ্ডপ তৈরি করে এখানকার পূজা উদযাপন কমিটি৷
ছবি: DW/M. Mamun
সার্বজনীন উৎসব
বাংলাদেশে এ বছর ২৮ হাজার পূজা মণ্ডপে পূজা উদযাপন হচ্ছে৷ গত বছর এ সংখ্যা ছিল ২৭ হাজার ৮৫৮টি৷ ধর্মীয় সম্প্রীতির এ দেশে দুর্গাপূজা এখন শুধু হিন্দুদেরই উৎসব নয়; এটি এখন সার্বজনীন উৎসবে পরিণত হয়েছে৷
ছবি: DW/M. Mamun
বনানীর পূজা
বনানী পূজা মণ্ডপে দেবী দুর্গার মূর্তি৷ সকল অপশক্তি, শত্রু এবং অসুরের বিরুদ্ধে বিজয় সুনিশ্চিত করতে দেবাদিদেবের পুঞ্জীভূত তেজ, সম্মিলিত শক্তির সামষ্টিক রূপ দেবী দুর্গা৷
ছবি: DW/M. Mamun
কুমারী পূজা
মহা অষ্টমীর দিনে ঢাকার রামকৃষ্ণ মিশনে আয়োজন করা হয় কুমারী পূজার৷ নারী সমাজের মধ্যে মাতৃরূপ উপলব্ধি জাগ্রত করতেই মূলত আয়োজন করা হয় এই পূজার৷ এক শিশু কন্যাকে দেবী দুর্গার সামনে বসিয়ে কুমারী পূজা করা হয়৷ এদিন ভক্তদের ঢল নামে রামকৃষ্ণ মিশনে৷
ছবি: DW/M. Mamun
শাঁখারি বাজার
পুরনো ঢাকা শাঁখারি বাজারের প্রবেশ পথে দুর্গাপূজার বর্ণিল তোরণ৷ এ এলাকার বেশিরভাগ বাসিন্দাই হিন্দু ধর্মাবলম্বী৷ ঢাকার অন্যসব এলাকার চেয়ে এ জায়গাটিতে তাই দুর্গা উৎসবেও আয়োজনও ভিন্ন৷
ছবি: DW/M. Mamun
সড়কের উপরেই পূজা মণ্ডপ
শাঁখারি বাজারের পূজা মণ্ডপগুলো তৈরি হয় সড়কের উপরেই৷ তবে সড়ক বন্ধ করে নয়৷ এখানকার সরু গলির উপরে মাচা তৈরি করে বসানো হয় মণ্ডপ৷ নীচে রাখা হয় চলাচলের পথ৷ তবে দুর্গাপূজার এই ক’দিন যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে শাঁখারি বাজারের এই পথে৷
ছবি: DW/M. Mamun
মেলা
দুর্গাপূজা উপলক্ষ্যে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বসে মেলা৷ এ মেলায় সব বয়সের, সব ধর্মের মানুষেরা আসেন নানান জিনিসপত্র কিনতে৷