মূল্যবৃদ্ধি বন্ধ হোক, বাজেটে চাহিদা সাধারণ মানুষের
২৯ জানুয়ারি ২০২০পেঁয়াজের জন্য আর কাঁদতে রাজি নন সাধারণ মানুষ৷ এখনও দিল্লিতে সত্তর টাকা কিলোয় বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। আলু, টমেটোর মতো সবজির দামও আকাশ ছোঁয়া। ফলে আসন্ন বাজেটের কথা মাথায় রেখে অর্থমন্ত্রীর কাছে সাধারণ মানুষের একটিই প্রত্যাশা, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম নাগালের মধ্যে রাখার ব্যবস্থা করুক সরকার।
শনিবার লোকসভায় তাঁর দ্বিতীয় বাজেট পেশ করবেন নির্মলা সীতারামন৷ নরেন্দ্র মোদী দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর এটাই প্রথম বাজেট৷ তবে অর্থনীতির হাল হকিকত বলছে, কঠিন সময়ে বাজেট পেশ করতে যাচ্ছেন নির্মলা৷ আর্থিক প্রবৃদ্ধির হার কমে হয়েছে সাড়ে চার শতাংশ৷ কর আদায় কমেছে। বিলগ্নিকরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা যায়নি৷ বিরোধীরা অভিযোগ করছে, সরকার যুবকদের চাকরি দিতে পারছে না৷ এই অবস্থায় বাজেট নিয়ে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশার তালিকায় খুবই গুরুত্ব পেয়েছে চারটি বিষয়৷ অত্যাবশ্যকীয় জিনিস, বিশেষ করে পেঁয়াজ, আলু, টমেটোর মতো সবজির দাম ভর্তুকি দিয়ে কম করা, চাকরির সুযোগ তৈরি করা, আয়করে ছাড়ের পরিমাণ বাড়ানো এবং মেয়েদের নিরাপত্তা ও নির্যাতন বন্ধ করতে বরাদ্দ বাড়ানো৷
চিত্তরঞ্জন পার্কের দুই নম্বর মার্কেটে মাংস বিক্রি করেন বিশু৷ ডয়চে ভেলের কাছে তাঁর প্রত্যাশার কথা জানিয়ে বিশু বলেছেন, ''লোকের পকেটে তো পয়সা থাকতে হবে৷ তাহলেই বিক্রিবাটা বাড়বে৷ জিনিসের এত দাম হলে কী করে আর লোকের হাতে পয়সা থাকবে৷ লোকে ৭০ টাকা কিলো দামে পেঁয়াজ কিনলে তো মুরগির মাংস খাওয়াতেই কাটছাঁট করবে৷ তাঁর বাড়ির বাজেট তো বাড়ছে না৷'' জিনিসের দাম বাড়ার আঁচ সাধারণ মানুষের কথায় বারবার উঠে আসছে৷ দীর্ঘদিন ধরে বাজেট দেখে আসা সাংবাদিক জোসেফ ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, তিনিও সাধারণ মানুষের চাহিদা নিয়ে সমীক্ষা করেছেন৷ সেখানে প্রথমেই উঠে এসেছে জিনিসের দাম৷ তাঁর বক্তব্য, সরকার চাইলে পেঁয়াজ, আলু, টমেটোর দাম ভর্তুকি দিয়ে কম করতেই পারে৷ পশ্চিমবঙ্গে মমতা সরকার ২৭ টাকা কিলো দরে চাল কিনে গরিবদের তা দুই টাকা কিলো দরে দেন৷ কিলোপ্রতি ২৫ টাকার ভর্তুকি দেয় সরকার৷ দলমতনির্বিশেষে সকলে স্বীকার করেন, রাজ্যের গরিব মানুষ এতে বিপুলভাবে উপকৃত হয়েছেন৷
দিল্লির মধ্যবিত্ত চাকরিজীবী পূর্ণেন্দু রায়ের দাবি, ''যুবকদের চাকির দিতে হবে৷ আর মধ্যবিত্তের হাতে কিছুটা পয়সা থাকতে হবে, তাঁদের ক্রয়ক্ষমতা থাকতে হবে৷ তাতে অর্থনীতির চাকা গড়াবে৷ কিন্তু সরকার ভর্তুকি দিয়ে, আয়কর ছাড় দিয়ে সেই ব্যবস্থা করবে কি বা করার অবস্থায় আছে কি?'' বেসরকারি সংস্থায় কর্মরত শরদ ত্রিপাঠির মতে, ''সরকার বড় কোম্পানিগুলিকে সুবিধা দিচ্ছে৷ তা হলে সাধারণ চাকরিজীবীদের আয়করে ছাড় দেবে না কেন? এখন কেবল দেশের মেয়েরা ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়করে ছাড় পান। সেটা সকলের জন্য করা হোক। সাত লক্ষ টাকা পর্যন্ত পাঁচ শতাংশ হারে কর বসানো হোক৷ তার পরের ধাপেও করের পরিমাণ কমানো হোক৷''
নিউ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের বিজনেস এডিটর জয়ন্ত রায়চৌধুরী বাজেট থেকে খুব বেশি কিছু প্রত্যাশা করছেন না৷ ডয়চে ভেলেকে তিনি জানিয়েছেন, ''করসংগ্রহের পরিমাণ কমেছে। এই অবস্থায় সরকার আয়করে ছাড় দিলে আরও চাপে পড়বে। সরকারে আসার পর প্রথম বছরের বাজেটে সেইচাপ কেন নিতে যাবেন নির্মলা? কিন্তু সরকার যেটা করতে পারে, তা হল, পরিকাঠামোর টাকা খরচ করা। রাস্তাঘাট সহ পরিকাঠামোর উন্নতিতে পয়সা খরচ করলে কর্মসংস্থান হবে, বিভিন্ন শিল্প ক্ষেত্র উপকৃত হবে৷ অটল বিহারী বাজপেয়ী আর্থিক উন্নতির জন্য এই পথ বেছে নিয়েছিলেন৷''
কলকাতায় চাকুরিরতা সৌমি দত্তর চাহিদা হল, ''মেয়েদের নিরাপত্তা বাড়ানোর জন্য বাজেট বরাদ্দ বাড়ানো হোক৷ প্রতিটি শহরেই মেয়েরা এখন এমন চাকরি করেন, যেখানে বাড়ি ফিরতে রাত হয়৷ তখন মেয়েরা নিরাপত্তার অভাব বোধ করেন৷ তাই সরকারের নির্দিষ্ট কিছু ব্যবস্থা নেওয়া দরকার৷ দিল্লিতে যেমন বাসে মার্শাল রাখা হচ্ছে, গোটা দেশেই তা কার্যকর করা হোক। সেই টাকাটা কেন্দ্র দিক৷''
বাজেট পেশের আগে সরকার অবশ্য এ বিষয়ে এখনই কোনও মন্তব্য করতে চাইছে না। তবে বলা হচ্ছে, বিরোধীরা দেশের অর্থনীতিকে যতটা খারাপ ভাবে দেখাতে চাইছে, নির্মলা তার বাজেটে তার জবাব দেবেন। তবে সাধারণ মানুষের দাবিদাওয়া তাতে কতটা পূরণ হবে, তা দেখতে অপেক্ষা করতে হবে শনিবার পর্যন্ত।