মূল্যস্ফীতি ও অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যে ফের বিদ্যুতের দাম শতকরা ১৫ ভাগেরও বেশি বাড়ানো হচ্ছে৷ বিশ্লেষকরা বলছেন, এর চাপ পড়বে সাধারণ মানুষের উপর৷ সীমিত আয়ের মানুষ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির মধ্যে বিদ্যুতের দামে আরো পিষ্ট হবে৷
বিজ্ঞাপন
তাদের কথা, এর ফলে দ্রব্যমূল্যসহ আরো অনেক কিছুর দাম বেড়ে যাবে৷ মূল্যস্ফীতি আরো বাড়বে৷ কিন্তু দুর্নীত আর অপচয় কমাতে পারলে বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রয়োজন হতো না৷ বিবিএস-এর হিসেবে এখন মূল্যস্ফীতি আট দশমিক ৮৫ শতাংশ৷
বাড়তি দাম চলতি মাসেই
রোববার সঞ্চালন সংস্থা ও বিতরণ কোম্পানিগুলোর বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের ওপর গণশুনানির আয়োজন করে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)৷ শুনানিতে গ্রাহক পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম সর্বনিম্ন ১৫.৮ থেকে সর্বোচ্চ ২৭.৪৮ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর প্রস্তাব করে বিতরণকারী সংস্থাগুলো৷ তাদের আবেদনে ভোক্তা পর্যায়ে বিদ্যুতের খুচরা দাম ইউনিট প্রতি এক টাকা ১০ পয়সা বাড়ানোর সুপারিশ করে বিইআরসি৷ শুনানির ৯০ দিনের মধ্যে এই বাড়তি দাম কর্যকর করার বাধ্যবাধকতা আছে৷ তবে চলতি মাসেই বিদ্যুতের নতুন দাম কার্যকর হবে বলে জানাগেছে৷
বিইআরসি প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুতের খুচরা মূল্য ১ টাকা ১০ পয়সা বৃদ্ধির যে সুপারিশ করেছে সেই হিসাবে খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ৭ টাকা ১৩ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৮ টাকা ২৩ পয়সা করা হচ্ছে৷ এতে গড়ে বিদ্যুতের দাম বাড়বে ১৫.৪৩ ভাগ৷
ভর্তুকি কমাতে গত বছরের ২১ নভেম্বর পাইকারি বিদ্যুতের দাম ১৯.৯২ শতাংশ বাড়ানোর নেয় বিইআরসি৷ এখন খুচরা পর্যায়ে দাম বাড়ানো হচ্ছে৷ সর্বশেষ ২০২০ সালে বাংলাদেশে বিদ্যুতের দাম বড়ানো হয়৷ তখন পাইকারিতে দাম ৮.৪ শতাংশ এবং খুচরা পর্যায়ে ৫.৩ শতাংশ বাড়ানো হয়৷
‘দুর্নীতি ও লুন্ঠনমূলক ব্যয় বৃদ্ধির ফলে জ্বালানি খাতে ঘাটতি’
ভর্তুতি কমাতে দাম বাড়ছে
পিডিবির বলছে, প্রতি টন কয়লার দাম ২৪ হাজার টাকা ( ২৩০ ডলার) এবং প্রতি লিটার ফার্নেস অয়েলের দাম ৭০ টাকা হলে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেয়ার জন্য নতুন দামের পরও বছরে ৪০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি প্রয়োজন৷ কিন্তু বিইআরসি পাইকারি দাম বৃদ্ধিতে ১৭ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি নির্ধারণ করে দিয়েছে৷ তাই এই মূল্য কাঠামো ধরে দাম বাড়ানো হলেও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেয়া সম্ভব হবে না৷
পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) বলছে দাম না বাড়লে তাদের ক্ষতি হবে এক হাজার ১২৭ কোটি টাকা৷ বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) ২৩৪ কোটি, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) এক হাজার ৫৫১ কোটি, ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির (ডেসকো) এক হাজার ৪০২ কোটি টাকা, নর্দান ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির (নেসকো) ৫৩৫ কোটি টাকা লোকসান হবে বলে দাবি করা হয়েছে৷ ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) কোনো আর্থিক পরিমাণ না বললেও দাম না বাড়লে তাদের ক্ষতি হবে বলে দাবি করেছে৷
‘দুর্নীতি বন্ধ হলে ভর্তুকিও লাগবে না, দামও বাড়াতে হবে না'
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলী শামসুল আলম মনে করেন, ‘‘দুর্নীতি ও লুন্ঠনমূলক ব্যয় বৃদ্ধি করার কারণে জ্বালানি খাতে ঘাটতি তৈরি হচ্ছে৷ ভর্তুকি দিতে হচ্ছে৷ যদি দুর্নীতি ও লুন্ঠন কমানো যায় তাহলে বিদ্যুতের দামও বাড়াতে হবেনা৷ ভর্তুকিও দিতে হবে না৷ আমরা গণশুনানিতে এটা তথ্য প্রমাণসহ উপস্থাপন করেছি৷''
‘এই সময়ে দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত ঠিক হয়নি’
তার কথা, ‘‘ইউটিলিটি খরচ কমানোর জন্য আমরা বলেছি৷ কিন্তু সেটা তারা করছেনা৷ তারা কোনো যুক্তিই মানতে চায় না৷ দাম বাড়ানোই তাদের লক্ষ্য৷ বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে তো আর ডলার আনা যাবে না৷ ডলারের ঘাটতি তো পুরণ হবে না৷ জ্বালানি আমদানি করতে তো ডলার লাগবে৷ বেসরকারি খাতে পাঁচ মাসের বিদ্যুৎ বিল বাকি আছে৷ তারা দিতে পারছে না৷''
তিনি বলেন, ‘‘বিদ্যুতের দাম বাড়লেও তো নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দিতে পারবেনা পিডিবি৷ শিল্প খাত উৎপাদন ঠিক রাখতে নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ তো পাবেনা৷ পিডিবি তো নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুতের নিশ্চয়তা দিচ্ছে না৷ এরকম হলে তো জ্বালানি নিরাপত্তা চরম অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে৷''
আর এর ফলে সব কিছুর দাম বেড়ে যাবে৷ তার ফলে যদি মানুষের ভোগ কমে যায় তখন উৎপাদন কমবে এবং জিডিপি কমে যাবে বলে মনে করেন তিনি৷
মূল্যস্ফীতি আরো বাড়বে?
সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচাল ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান মনে করেন, ‘‘বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর যৌক্তিকতা কতটুকু আছে সেই আলোচনায় না গিয়েও বলা যায় যে এই সময়ে দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত ঠিক হয়নি৷ এখন দাম বাড়ালে দেশের অর্থনীতির যা অবস্থা তাতে মূল্যস্ফীতি আরো বাড়বে৷ সেটা সহ্য করা কঠিন হয়ে পড়বে৷''
লোডশেডিংয়ে রাজধানীর জনজীবন
বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেল ও গ্যাস সংকটে দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং চাহিদার সমন্বয় করতে গত ১৯ জুলাই থেকে শিডিউল মেনে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং চালু করেছে সরকার৷ এই লোডশেডিংয়ের কেমন প্রভাব পড়ছে জনজীবনে? দেখুন ছবিঘরে...
ছবি: Mortuza Rashed/DW
এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং
সরকার দেশব্যাপী লোডশেডিংয়ের এলাকা এবং সময় নির্ধারণ করে দিয়েছে৷এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং প্রসঙ্গে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘‘এলাকাভিত্তিক আমরা ঠিক করেছি৷ আগে থেকে আমরা গ্রাহকদের জানিয়ে দেবো৷ প্রথম সপ্তাহে দেখবো৷ আমরা মনে করছি যে, এক থেকে দুই ঘণ্টার মতো মেজার নেবো লোডশেডিংয়ের জন্য৷ তা দেখে পরবর্তী ব্যবস্থা নেবো৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
‘চুরি ঠেকাতে হবে সবার আগে’
ঢাকার পীরেরবাগের ভোলা হেয়ার ড্রেসারের মালিক কার্তিক শীল বলেন, ‘‘শুনছি সারা দুনিয়াতেই সমস্যা চলতেসে৷ এখন দেশে বিদ্যুতের ঘাটতি থাকলে কী আর করা? সরকার চেষ্টা তো করছে৷ কিন্তু আসল কথা হইল, চুরি-দুর্নীতি ঠেকাইতে হবে সবার আগে৷ সরকারি লোক যে কাজেরই দায়িত্ব পায়, সেই কাজেই চুরি করে৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
‘কারেন্ট গেলে সবারই অসুবিধা, তয় গরম বাড়লে বেচা-বিক্রিও বাড়ে’
ঢাকার গাবতলি এলাকায় শরবত বিক্রেতা আবদুর রহিমা বলেন, ‘‘আমরা যে বস্তিতে থাকি, সেখানে দিনে কয়বার কারেন্ট যায় হিসাব নাই৷ কারেন্ট গেলে সবারই তো অসুবিধা৷ তয় গরম বাড়লে আমার বেচা-বিক্রিও বাড়ে৷ একদিক দিয়া যেমন অসুবিধা হইসে, অন্যদিকে সুবিধাও হইসে কারো কারো৷ সেই হিসাবে আমি খুশি৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
‘খালি সরকারের দোষ দিয়ে লাভ আছে?’
কারওয়ান বাজারের পাইকারি বিক্রেতা সবুর মিয়া বলেন, ‘‘লোডশেডিং এই এলাকায় নতুন কিছু না৷ ২৪ ঘণ্টায় কতবার কারেন্ট যায় তার কোনো হিসাব নাই৷’’ তিনি জানান, শুধু কারওয়ান বাজারেই কতশত অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ আছে তার কোনো হিসাব নেই৷ তাই তিনি একতরফাভাবে শুধু সরকারের সদিচ্ছাকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে নারাজ৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
‘ব্যবসা করা কঠিন’
ঢাকার পশ্চিম শেওড়াপাড়ার বৌবাজারের মুদি দোকানি শাহ আজম বলেন, ‘‘আমাগো এদিকে কারেন্ট একটু কমই যায়৷ তবুও এমনে নিয়ম কইরা লোডশেডিং হইলে সবার জন্য একটু সমস্যাই৷ তার উপর আবার রাত আটটা বাজতেই দোকান বন্ধ করন লাগে৷ জিনিসপত্রের দাম অনেক বাড়তি৷ সবমিলাইয়া আমরা ব্যবসায়ীরা হিমশিম খাইতেসি৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
জরুরি সেবায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ
পঙ্গু হাসপাতাল, শিশু হাসপাতাল, জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটসহ একাধিক সরকারি হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে কোনো লোডশেডিং নেই৷ সরকার ঘোষিত লোডশেডিং হাসপাতালে হয় কিনা জানতে চাইলে এক সিনিয়র স্টাফ নার্স বলেন, ‘‘শুধু এখন না, আমার গত ১০ বছরের ক্যারিয়ারে আমি হাসপাতালে লোডশেডিং দেখিনি৷ এখানে অনেক মুমূর্ষু রোগী থাকেন, ইলেকট্রিসিটি না থাকলে তো অক্সিজেনের অভাবে তাদের জীবন সংকটাপন্ন হয়ে যাবে৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
অলিগলিতে নিয়ম মানা হচ্ছে না
ঢাকার শেওড়াপাড়া-পীরেরবাগ রোডে রাত সাড়ে ৯টায় গিয়ে দেখা যায়, সেখানকার প্রায় প্রতিটি দোকানই খোলা৷ সরকারের বিধিনিষেধ না মেনে রাত ৮টার পর দোকান খোলা রাখার কারণ জানতে চাইলে এক দোকানি বলেন, ‘‘ব্যবসাপাতির অবস্থা ভয়াবহ৷ তার মধ্যে এত জলদি দোকানপাট বন্ধ করলে ব্যবসা করবো কীভাবে?’’ অনেকেই দাবি করেন, বিদ্যুৎচালিত ফ্যান-লাইট বন্ধ করে তারা রিচার্জেবল লাইট ব্যবহার করছেন যেন বিদ্যুতের কোনো সমস্যা না হয়৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
উৎপাদন খরচ বেড়েছে
ঢাকার মিরপুর ১৩-র জকি গার্মেন্টসের মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান রাসেল আহমেদ বলেন, ‘‘আমাদের প্রতিষ্ঠানের আশেপাশে সরকারি কর্মকর্তাদের বাসভবন থাকায় লোডশেডিং কম হয়৷ তবে যদি ১ ঘণ্টায় ইলেকট্রিসিটি না থাকে, আমাদের জেনারেটর চালানোর জন্য ডিজেল খরচ বাবদ ১৬ হাজার টাকা বাড়তি খরচ হয়৷ এটা আমাদের উৎপাদন খরচকে আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
ভোক্তা অধিদপ্তরের অভিযান
সরকার গত ১৯ জুলাই থেকে শিডিউল মেনে এলাকাভিত্তিক লোডশেডিং ঘোষণার পর থেকে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী রিচার্জেবল ফ্যান-লাইটের মূল্য বৃদ্ধি করে অন্যায়ভাবে মুনাফা লাভের চেষ্টা করছেন৷ এ প্রচেষ্টা রোধে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে নিয়োজিত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়মিতভাবে বিভিন্ন খুচরা ও পাইকারি মার্কেটে অভিযান পরিচালনা করে ব্যবসায়ীদের সতর্ক এবং জরিমানা করছেন৷
ছবি: Consumer association for Bangladesh
লোডশেডিংয়ের শিডিউল না মানার অভিযোগ
ঢাকার তেজগাঁওয়ের আজিজ স্টিল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের স্বত্বাধিকারী মোঃ আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘‘আমাদের ব্যবসা পুরাপুরি কারেন্টের সাথে সম্পর্কিত৷ কারেন্ট ছাড়া আমরা পুরা বসা৷ সরকার যে ঘোষণা দিসে সর্বোচ্চ দুই ঘণ্টা কারেন্ট থাকবে না, সেই নিয়ম তো মানা হইতেসে না৷ তাছাড়া নির্ধারিত যে সময়ে কারেন্ট যাওয়ার কথা, সে সময়েও যায় না, যায় আগে-পরে কোনো এক সময়ে৷ আমরা প্রস্তুতি রেখেও লাভ হয় না৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
ঢাকার বাইরে ভয়াবহ লোডশেডিং
ঢাকার তালতলা কাঁচাবাজারের শাকসব্জি ব্যবসায়ী নুরুল আমিন জানান, ‘‘আমি গ্রামের বাড়িতে আমার মাকে প্রতিদিন ফোন দেই৷ ফোন দিলেই শুনি কারেন্ট নাই৷ এমনকি অনেক সময় ফোনে চার্জও দিতে পারে না কারেন্টের অভাবে৷ আবার আছে ভোল্টেজের সমস্যা, এই সমস্যার কারণে কারেন্টে চলা অনেক জিনিস নষ্ট হইয়া যায়৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
সরকারি অফিস-আদালতে নির্দেশনা পালন
ঢাকার মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে এয়ার কন্ডিশনার কাগজ দিয়ে মুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে৷ এর কারণ জানতে চাইলে এক কনস্টেবল বলেন, ‘‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সরকারি অফিসে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হওয়ার নির্দেশনা দেওয়ার পর ওসি স্যার এই উদ্যোগ নিয়েছেন৷ এছাড়া প্রাকৃতিক আলো বাতাসের জন্য কক্ষে স্থায়ীভাবে লাগানো জানালাগুলোও খুলে দেওয়া হয়েছে৷’’
ছবি: Mortuza Rashed/DW
দাম বাড়ানোর যুক্তি
ঢাকার স্টেডিয়াম মার্কেট, চকবাজারসহ একাধিক পাইকারি ও খুচরা ইলেকট্রনিক্সের দোকানে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে রিচার্জেবল সকল পণ্যের দাম বেড়েছে দুইশ থেকে হাজার টাকা৷ যথেষ্ট মজুদ থাকার পরও দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, এটা বাজারের নিয়ম, চাহিদা বেশি থাকলে দাম বাড়বেই৷
ছবি: Mortuza Rashed/DW
‘এ সমস্যা ক্ষণস্থায়ী’
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের পেট্রোলিয়াম ও খনিজ সম্পদ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. মোহাম্মাদ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘‘বিশ্বব্যাপী কিন্তু জ্বালানি তেল এবং গ্যাসের সংকট চলছে৷ কোভিড পরিস্থিতির অনেকটাই উন্নতি হওয়ায় অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠান আবার খুলেছে এবং তেল-গ্যাসের চাহিদা বেড়েছে৷এর সাথে যুক্ত হয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের মতো সংকট৷ আগামী সেপ্টেম্বর-অক্টোবর নাগাদ এই সংকটের অনেকটাই সমাধান হয়ে যাবে৷’’
ছবি: Sergei Grits/AP Photo/picture alliance
14 ছবি1 | 14
তিনি বলেন, ‘‘বিদ্যুতের দাম বাড়ার ফলে সব ধরনের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাবে৷ ফলে বাজারে পণ্যের দাম বাড়বে৷ যা বহন করতে হবে ভোক্তাদের৷ একদিকে বিদ্যুৎ ব্যবহারের জন্য অতিরিক্ত দাম দিতে হবে৷ আবার পণ্যের জন্য বেশি দাম দিতে হবে৷ এই দুই মুখী চাপ পড়বে সাধারণ মানুষের ওপর৷''
তার কথা, ‘‘বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য কৃষিখাতে ব্যবহৃত বিদ্যুতের দাম কম রাখা প্রয়োজন৷ আমরা জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর সময়ও একই কথা বলেছিলাম৷ সেচের জন্য কৃষকদের কম দামে ডিজেল দেয়ার জন্য কার্ড সিস্টেম চালুর জন্য বলেছিলাম৷ বিদ্যুতের ক্ষেত্রেও তাই হওয়া উচিত৷ নয়তো খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়তে পারে৷''
তিনি আরো বলেন, ‘‘আমরাদের বিদ্যুৎ খাতকে র্যাশনালাইজ করা উচিত৷ এখানে ব্যাপক অপচয়, দুর্নীতি, অদক্ষতা এবং কোথাও কোথাও অপ্রয়োজনীয় ভর্তুকি আছে৷ সেগুলো ঠিক করা গেলে আসলে ভর্তুকি অনেক কম লাগত৷ তখন হয়তো বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রয়োজন পড়ত না৷ প্রয়োজন হলেও তা অনেক কম হারে বাড়াতে হতো৷''